প্রত্যাশা ডেস্ক: একাত্তরের ১৬ মার্চ ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বৈঠকে যান গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে। গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা আর দলীয় প্রতীক নৌকা। প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি। পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ ইপিআর জওয়ানদের হাত থেকে সেদিন অস্ত্র তুলে নেয়।
নির্বাচনে জয়ী পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লিগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, আমি রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আরও আলোচনা হবে। কাল সকালে আমরা আবার বসছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।
প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা চলে।
সংবাদ সংস্থা এএফপির খবরে সেদিন বলা হয়, ভারত সরকার তার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে সব বিদেশি বিমানের পূর্ব পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিদেশি বিমানে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য পরিবহন বন্ধ করার জন্যই এ ব্যবস্থা। ঢাকায় আর্ট কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সভা করেন। সভাশেষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন নেতৃত্বে মিছিল হয়। শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠনে পিপিপি চেয়ারম্যান ভুট্টোর প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করে এদিনও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা বিবৃতি দেন। করাচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ বলেন, গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল একটি, তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, অন্যের কাছে নয়। বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনা ও অস্ত্র পরিবহনের কাজে শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ব্যবহার করার প্রতিবাদ জানিয়ে করাচিতে করপোশেন কার্যালয়ে চিঠি দেন দুজন পরিচালক। তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’