নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ২৯ জুলাই ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ মুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি ‘সুপার ফ্লপের’ পর যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে বিরতি নেয় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর। চলতি সপ্তাহেও কর্মসূচিতে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তবে, চলতি আগস্ট মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে যুগপৎ নতুন কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধী দলগুলোর। কিন্তু আগামী দিনে ‘উড়ো কর্মসূচি’ না দিয়ে রাজনৈতিক মাঠের বাস্তবতার নিরিখে কর্মসূচি দিতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে দলটির যুগপৎ সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যরা।
একটি সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন মোতাবেক গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন-উড়ো নির্দেশে রাজনৈতিক মাঠের বাস্তবতা বিবেচনা না করে ২৯ জুলাই মহররমের দিনে বিএনপি উড়ো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের ছিল তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি সুপার ফ্লপ হয়েছে। যার কারণে গত ১ সপ্তাহে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলো বৈঠকে পরামর্শ দিয়েছে যে আগামী দিনে যেন মাঠের পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। আর যদি বিএনপি আগামীতেও উড়ো নির্দেশে ‘উড়ো কর্মসূচি’ প্রণয়ন করে এবং সেটা যদি ভুল মনে হয় তাহলে তা গ্রহণ করবে না গণতন্ত্র মঞ্চ। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৯ জুলাইয়ে কর্মসূচি নিয়ে আমাদের মধ্যে পর্যালোচনা হয়েছে। এটা একটা অভিজ্ঞতা ছিল। সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর কি ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন চালাতে পারে সেটা আমরা ধারণা পেয়েছি। তবে, মামলা-হামলা করে, বাসে আগুন দিয়ে তারা গদি রক্ষা করতে পারবে না। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। আরও আলোচনা হবে। আশা করি শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়া হবে। গণতন্ত্র মঞ্চের একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বিএনপিকে আগামীতে মাঠের পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মসূচি দিতে হবে। দেশের বাস্তবতা না দেখে, না বুঝে লন্ডন থেকে পাওয়া নির্দেশে ‘উড়ো কর্মসূচি’ দেওয়া থেকে বিএনপিকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে আগামীতে তাদের যে কর্মসূচি আমাদের কাছে ভুল কিংবা যে কর্মসূচি হটকারী ও আত্মঘাতী মনে হবে সেটা আমরা যুগপৎভাবে পালন করবো না। এ বিষয়টি বিএনপিকে আকার-ইঙ্গিতে ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাদের (বিএনপি) সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া যে সঠিক হচ্ছে না সেটা তারাও বুঝতে পারছে। কিন্তু সেটা কীভাবে দলীয় ফোরামে উপস্থাপন করবে তা নিয়ে তারা কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। আশা করি, এটা তাদের দলের শীর্ষ নেতারাও বুঝতে পারবেন। নাম না প্রকাশের শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শীর্ষ নেতা বলেন, ১৫ আগস্টের শোক দিবসের পরে আবারও যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন বিএনপি কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার বিষয়। তবে, অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আগামী দিনের নতুন কর্মসূচি আসবে। ১২ দলীয় জোটের একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা বলেছি, বহু তো সমাবেশে, মহা-সমাবেশ করেছে। এসব কর্মসূচিতে লাখ-লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে দেশি-বিদেশিদের দেখানো হয়েছে। ফলে, এখন এসব কর্মসূচি বাদ দিয়ে অবস্থান ধর্মঘট, ঘেরাও এবং অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। এই নেতা আরও বলেন, গত ২৯ জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচিকে বিভিন্নভাবে স্যাবোটেজ করা হয়েছে। এরমধ্যে বিএনপির যেসব নেতাদের ওপর এ কর্মসূচি সফল করার দায়িত্ব ছিল তাদের একটা অংশ হয়তো দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে নিজেদের ক্ষমতা বোঝাতা গিয়ে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করেনি। যার ফলে, আগের দিন মহা-সমাবেশে লাখ-লাখ নেতাকর্মী অংশ নিলেও পরের দিনের অবস্থান কর্মসূচি ৩০ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম করতে পারেনি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির শুরুতে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এরপর নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়া, গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে আদালত, সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ ভবন ঘেরাও মতো কর্মসূচি দেওয়া পরামর্শ এসেছে শরিকদের কাছ থেকে। এখন এগুলো পর্যালোচনা চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের নতুন সঙ্গীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা শেষ পর্যায়ে। তাদের সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা দরকার ছিল, করেছি। এখন সবকিছু বিবেচনা করে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি দ্রুত ঘোষণা করা হবে।
উড়ো নির্দেশে নয়, বাস্তবতার নিরিখে নতুন কর্মসূচি চায় বিএনপির সঙ্গীরা
জনপ্রিয় সংবাদ