নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের শুরুর দিকে নতুন করে করোনার সংক্রমণ দেখা দিলে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। ১০ জানুয়ারি হওয়া এই বিধিনিষেধ প্রায় দেড় মাস পরে উঠে যাচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে।
গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বিধিনিষেধ উঠে গেলেও সর্বস্তরের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলকই থাকছে। যে কোনও সভা-সেমিনার কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। মন্ত্রিসভার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধ উঠে যাচ্ছে বলে সবাই যেন রিল্যাক্স মনে না করেন, সচেতন থাকেন। সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন থাকার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা) খুলে যাচ্ছে, আর ১ মার্চ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও খুলে যাচ্ছে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে বিধিনিষেধের সময়সীমা আর বাড়ছে না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ যেকোনও সভাসমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
দেশে দিনে শনাক্ত নেমেছে ২ হাজারের নিচে : মাঝে ওমিক্রনের দাপটে রোগী বাড়লেও সংক্রমণ কমার ধারায় দেশে দিনে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা আবার দুই হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৯৮৭ রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও নেমেছে ৮ শতাংশের নিচে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯ হাজার ২৫২ জন। দিনে এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি, সেদিন ১ হাজার ৪৯১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এরপর ১০ জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার, ১৩ জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যায়। বাড়তে বাড়তে ২৫ জানুয়ারি শনাক্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়েছিল, যা মহামারীতে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যার কাছাকাছি। দিনে শনাক্তের হার ৮ শতাংশের নিচে ছিল গত ৯ জানুয়ারি। ১২ জানুয়ারি তা ১০ শতাংশ ছাড়ায়। ২৮ জানুয়ারি তা পৌঁছায় ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশের রেকর্ড উচ্চতায়। তবে এরপর সংক্রমণ দিন দিনই কমছে। এই কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ২১ ফেব্রুয়ারির পর নানা বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল রোববারের বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীদের নিয়ে দেশে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৯১ জন। আরও ২১ জনের মৃত্যুতে মহামারীতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৮ হাজার ৯৬৫। সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সেরে উঠেছেন ৯ হাজার ২৫২ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ৫৮৪ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
বিশ্বে এক দিনের ব্যবধানে আরও কমলো মৃত্যু ও শনাক্ত : এক দিনের ব্যবধানে বিশ্বজুড়ে কমেছে করোনাভাইরাসে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত এক দিনে সারাবিশ্বে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ জন। এ হিসেবে আগের দিনের তুলনায় নতুন রোগী কমেছে প্রায় চার লাখ। এ নিয়ে বিশ্বে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলেন ৪২ কোটি ৩৫ লাখ ২ হাজার ২৫৬ জন।
অন্যদিকে গত এক দিনে বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ৮১৫ জন। এ হিসেবে আগের দিনের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে প্রায় আড়াই হাজার। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৯ লাখ ১৬৭ জনে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারস থেকে গতকাল রোববার সকালে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
ওয়ার্ল্ডওমিটারস আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ায়। অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মেক্সিকো, পোল্যান্ড, তুরস্ক ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ায় মারা গেছেন ৭৯৮ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৭ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৭২০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৫ জনের।
অন্যদিকে ব্রাজিল আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ৮২৭ জন এবং নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৩৬৩ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৮১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৮৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩৮ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানি কিছুটা কমেছে। দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ হাজার ৪৪৩ জন এবং মারা গেছেন ৭১৫ জন। এখন পর্যন্ত ৮ কোটি ৭২ হাজার ৫৬১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৯ লাখ ৫৯ হাজার ১৩০ জন মারা গেছেন দেশটিতে।
জার্মানিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭২২ জন এবং মারা গেছেন ১৩৩ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৮২৬ জন মারা গেছেন।
করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ৬৭৩ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৮ হাজার ৪৮৮ জন। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ৯৯৩ জন এবং মারা গেছেন ৫ লাখ ১১ হাজার ৯৩৫ জন।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় পোল্যান্ডে ২৮৩ জন, কানাডায় ২১ জন, আর্জেন্টিনায় ১২৩ জন, গ্রিসে ৭৭ জন, ইরানে ১৯১ জন, জাপানে ২৩৫ জন, রোমানিয়ায় ১৪৬ জন, চিলিতে ১২৯ জন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩১৯ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ১৫৮ জন এবং ফিলিপাইনে ১৯৮ জন মারা গেছেন।
উঠে যাচ্ছে বিধিনিষেধ, থাকছে মাস্ক
ট্যাগস :
উঠে যাচ্ছে বিধিনিষেধ
জনপ্রিয় সংবাদ