স্নিগ্ধ নীলিমা: উজিরপুর উপজেলা। বরিশাল জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির এক পীঠস্থান। এই জনপদে বিভিন্ন ধর্মের লোকজন মিলেমিশে যেমন আছেন তেমনি তাদের কথ্যভাষার মধ্যেও রয়েছে কিছু ভিন্নতা। একই প্রবাদ-প্রবচন ও কথ্যভাষা উজিরপুরের এলাকাভেদে সামান্য পরিবর্তিতরূপে উচ্চারিত হতে দেখে যায়। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার পশ্চিমে সাতলা, হারতা, জল্লা, ওটরা ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় একই বাক্য সামান্য পরিবর্তিতরূপে দেখা যায়। তা উপজেলার বামরাইল, উজিরপুর, বড়াকোঠা, শোলক, গুঠিয়া ইউনিয়নগুলোর সাথে সামান্য পার্থক্য নির্দেশ করে। উজিরপুর এলাকার বৈচিত্র্যময় কথ্যভাষার একটা উদাহরণ নিচে দেয়া হলো।
ক.
‘‘হিন্নাগো ফেদি
ভাতেরে কয় পেসসাদ’’(হস্তিশুন্ড, উজিরপুর)
খ.
‘‘হেদনাগো বৈরাগী
ভাতেরে কয় পেসসাদ’’ (সাতলা, উজিরপুর)
গ.
‘‘দুইদিনের বৈরাগী
ভাতেরে কয় পেসসাদ’’ (চকমান, ওটরা, উজিরপুর)
ঘ.
‘‘হেন্নাগো ছ্যামড়া
ভাতেরে কয় অন্ন’’ (নারায়ণপুর, গুঠিয়া, উজিরপুর)
ঙ.
‘‘দুইদিনের বৈরাগী
ভাতের কয় অন্ন’’ (বাহেরঘাট, জলস্না, উজিরপুর)
শব্দ পরিচিতি: হেন্না বা হেন্নাগো/হেদনা/হ্যাদনা/হেদিন = কিছুদিন আগের/প্রায় নতুন/ কম বয়সী/অল্প সময় আগের। বৈরাগী = সন্ন্যাস ধর্মগ্রহণকারী, বৈষ্ণব ভিড়্গুক, পেসসাদ = প্রসাদ (হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে দেবতাদের উৎসর্গ করা ভোগ)। অন্ন = ভাত/খাবার। ছ্যামড়া = অল্পবয়সী ছেলেদের ছ্যামড়া/মেয়েদের ‘ছেমড়ি’ বলা হয়। এ ‘ছ্যামড়া’/‘ছেমড়ি’ শব্দ দুটি উজিরপুর (বরিশাল) এলাকায় বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত শব্দ।
প্রেক্ষাপট : বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উপরে উল্লেখিত প্রবাদ-প্রবচনটি বহুল পরিচিত। কোনো ব্যক্তি হঠাৎ এসে এমন ভাব ধরে- সে যেন সব সমস্যার সমাধান জানে। অনেকের ওপর খবরদারি করতে চায়। তখন বয়োজ্যেষ্ঠরা ওই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে প্রবাদটি বলে থাকেন। আবার কোনো ব্যক্তি গ্রাম থেকে কিছুদিন শহরে গিয়ে থেকে আসার পর এমন সব কথাবার্তা বলে, ভাব ধরে- যেন সে অনেক জ্ঞানী। তখন এ প্রবাদ-প্রবচনটির ব্যবহার দেখা যায়।
সংগ্রহকারী : স্নিগ্ধ নীলিমা
গ্রাম : খোলনা, ইউনিয়ন: বামরাইল, উপজেলা: উজিরপুর, জেলা: বরিশাল
সংগ্রহের সময়: ২০১০-২০১৫ ইং
মোবাইল নম্বর : ০১৭১৬০০১০৫৮