ঢাকা ১০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উজিরপুর উপজেলার লোকসংস্কৃতি

  • আপডেট সময় : ০৩:৩২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
  • ৫৩ বার পড়া হয়েছে

আব্বাস আলী তালুকদার

 

বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মানুষের মুখে মুখে যে সব শব্দ, বাক্য উচ্চারিত তা যেন আমাদের সংস্কৃতির মায়াসভ্যতায় নিয়ে যায়। গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোর এসব কথাবার্তার মধ্যে নীতিকথা, জ্ঞান, শিক্ষণীয় তথ্য লুকিয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে মৌখিকভাবে এসব লোককথা, ছড়া, নীতিকথার প্রচলন হয়ে আসছে। শত শত বছর আগের সেই কথাগুলো এখনো গ্রামের মানুষের মৌখিক মাধ্যমে বেঁচে আছে। নগরসভ্যতা যেভাবে আমাদের মন-মানসিকতাকে প্রভাবিত করছে তাতে অদূর-ভবিষ্যতে এসব হয়তো ভুলেও যেতে পারে মানুষেরা। লোকপরম্পরায় এসব কথা এলাকাভেদে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। তবে কথাগুলোর বা লোকাচারের মৌলিক সুর ঠিকই থাকে।
তেমনি উজিরপুর থেকে সংগ্রহ করা একটি লোককথা-

১.
‘নাইড়্যা
ভাত খায় বাইড়্যা
সালুন খায় কোম
পাদ দেওয়ার জোম’ (হস্তিশুন্ড, বামরাইল)
২.
‘নাইড়্যা
ভাত খায় বাইড়্যা
সালুন খায় কোম
পাদে ভোম ভোম’ (পশ্চিম ধামুড়া, শোলক)
৩.
‘নাইড়্যা
চুল নেছে কাইড়্যা
সালুন খায় কোম
পাদে ভোম ভোম’ (মালিকান্দা, বড়াকোঠা)

শব্দ পরিচিতি: নাইড়্যা#চুলবিহীন মাথা, বাইড়্যা# কোনো খাদ্যবস্তু গামলা বা পাতিল থেকে প্লেটে তুলে নেওয়া, সালুন# রান্না করা তরকারি। কোম#কম
প্রেক্ষাপট: এই লোককথাটি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামের যুবক-যুবতিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বলিত হয়। শিশুর জন্ম থেকে ১২/১৩ বছরের মধ্যে কয়েকবার তাদের মাথার চুল সম্পূর্ণ ছেটে ফেলা হয় বা নেড়ে করা হয়। পিতা-মাতাদের ধারণা ছোট সন্তানদের মাথা নেড়ে করে দিলে চুল ঘন হয়ে ওঠবে। মাথা নেড়ে (নাইড়্যা) করার পরে অন্য ছেলেরা হাসি-মশকারা হিসেবে এ বাক্য ছড়ার আকারে বলে থাকে। যার মাথা নেড়ে তাকে এসব বলে উত্তেজিত করে। বরিশালের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘চ্যাতায়’।

গ্রামের এই অপরিপক্ব শিশুদের মুখের হাসি-তামশামূলক ছড়ার মধ্যে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সত্য লুকিয়ে আছে। বিশ্বজুড়েই চলছে শ্বেতসার বা কারবোহাইড্রেট (ভাত, আটা, ফাস্টফুড) খাওয়ার ধুম। বেশি বেশি কারবোহাইড্রেট খেলে শরীরে “ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স” দেখা দেয় যা মানুষের অধিকাংশ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী। তাই ভাত, আটা, ফাস্টফুড না খেয়ে তরকারি, সালুন, শাক-সবজি খাওয়ার উপর জোর দিচ্ছে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান। তরিতরকারি কম খেয়ে কারবোহাইড্রেটসমৃদ্ধ ভাত খেলে পেটে গ্যাস হতেই পারে।
‘ভাত কম তরকারি বেশি
বেঁচে থাকো সত্তর-আশি’। (শাহ আলম ডাকুয়ার ছড়ার অংশ)

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

উজিরপুর উপজেলার লোকসংস্কৃতি

আপডেট সময় : ০৩:৩২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

আব্বাস আলী তালুকদার

 

বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মানুষের মুখে মুখে যে সব শব্দ, বাক্য উচ্চারিত তা যেন আমাদের সংস্কৃতির মায়াসভ্যতায় নিয়ে যায়। গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোর এসব কথাবার্তার মধ্যে নীতিকথা, জ্ঞান, শিক্ষণীয় তথ্য লুকিয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে মৌখিকভাবে এসব লোককথা, ছড়া, নীতিকথার প্রচলন হয়ে আসছে। শত শত বছর আগের সেই কথাগুলো এখনো গ্রামের মানুষের মৌখিক মাধ্যমে বেঁচে আছে। নগরসভ্যতা যেভাবে আমাদের মন-মানসিকতাকে প্রভাবিত করছে তাতে অদূর-ভবিষ্যতে এসব হয়তো ভুলেও যেতে পারে মানুষেরা। লোকপরম্পরায় এসব কথা এলাকাভেদে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। তবে কথাগুলোর বা লোকাচারের মৌলিক সুর ঠিকই থাকে।
তেমনি উজিরপুর থেকে সংগ্রহ করা একটি লোককথা-

১.
‘নাইড়্যা
ভাত খায় বাইড়্যা
সালুন খায় কোম
পাদ দেওয়ার জোম’ (হস্তিশুন্ড, বামরাইল)
২.
‘নাইড়্যা
ভাত খায় বাইড়্যা
সালুন খায় কোম
পাদে ভোম ভোম’ (পশ্চিম ধামুড়া, শোলক)
৩.
‘নাইড়্যা
চুল নেছে কাইড়্যা
সালুন খায় কোম
পাদে ভোম ভোম’ (মালিকান্দা, বড়াকোঠা)

শব্দ পরিচিতি: নাইড়্যা#চুলবিহীন মাথা, বাইড়্যা# কোনো খাদ্যবস্তু গামলা বা পাতিল থেকে প্লেটে তুলে নেওয়া, সালুন# রান্না করা তরকারি। কোম#কম
প্রেক্ষাপট: এই লোককথাটি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামের যুবক-যুবতিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বলিত হয়। শিশুর জন্ম থেকে ১২/১৩ বছরের মধ্যে কয়েকবার তাদের মাথার চুল সম্পূর্ণ ছেটে ফেলা হয় বা নেড়ে করা হয়। পিতা-মাতাদের ধারণা ছোট সন্তানদের মাথা নেড়ে করে দিলে চুল ঘন হয়ে ওঠবে। মাথা নেড়ে (নাইড়্যা) করার পরে অন্য ছেলেরা হাসি-মশকারা হিসেবে এ বাক্য ছড়ার আকারে বলে থাকে। যার মাথা নেড়ে তাকে এসব বলে উত্তেজিত করে। বরিশালের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘চ্যাতায়’।

গ্রামের এই অপরিপক্ব শিশুদের মুখের হাসি-তামশামূলক ছড়ার মধ্যে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সত্য লুকিয়ে আছে। বিশ্বজুড়েই চলছে শ্বেতসার বা কারবোহাইড্রেট (ভাত, আটা, ফাস্টফুড) খাওয়ার ধুম। বেশি বেশি কারবোহাইড্রেট খেলে শরীরে “ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স” দেখা দেয় যা মানুষের অধিকাংশ রোগ হওয়ার জন্য দায়ী। তাই ভাত, আটা, ফাস্টফুড না খেয়ে তরকারি, সালুন, শাক-সবজি খাওয়ার উপর জোর দিচ্ছে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান। তরিতরকারি কম খেয়ে কারবোহাইড্রেটসমৃদ্ধ ভাত খেলে পেটে গ্যাস হতেই পারে।
‘ভাত কম তরকারি বেশি
বেঁচে থাকো সত্তর-আশি’। (শাহ আলম ডাকুয়ার ছড়ার অংশ)