মোয়াজ্জেম শিকদার
উজিরপুর উপজেলা। বরিশালের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেকটাই দখল করে আছে এ উপজেলার সংস্কৃতি। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মানুষের মুখে মুখে যে সব শব্দ, বাক্য উচ্চারিত তা যেন আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের এসব কথাবার্তার মধ্যে নীতিকথা, জ্ঞান, শিক্ষণীয় তথ্য লুকিয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে মৌখিকভাবে এসব লোককথা, ছড়া, নীতিকথার প্রচলন হয়ে আসছে। শত শত বছর আগের সেই কথাগুলো এখনো গ্রামের মানুষের মৌখিক মাধ্যমে বেঁচে আছে। নগরসভ্যতা যেভাবে আমাদের মন-মানসিকতাকে প্রভাবিত করছে তাতে অদূর-ভবিষ্যতে এসব হয়তো ভুলেও যেতে পারে মানুষেরা। লোকপরম্পরায় এসব কথা এলাকাভেদে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। তবে কথাগুলোর বা লোকাচারের মৌলিক সুর ঠিকই থাকে।
তেমনি উজিরপুর থেকে সংগ্রহ করা একটি লোককথা-
১.
‘‘মাল যায় য্যার
ইমান যায় হ্যার’’ (হস্তিশুন্ড, বামরাইল, উজিরপুর)
২.
‘মাল যায় যার
ইমান যায় তার’ (হরিদ্রাপুর, গুঠিয়া, উজিরপুর)
৩.
মাল হারায় য্যার
ইমান হারায় হ্যার (দত্তসর, শোলক, উজিরপুর)
শব্দ পরিচিতি : মাল=জিনিসপত্র, মালপত্র,য্যার=যার, হ্যার=তার, ইমান=বিশ্বাস
প্রেক্ষাপট : প্রতিনিয়ত মানুষের বিভিন্ন দ্রব্যাদি চুরি হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। আবার ঘরে এক জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ বস্তুটি রেখেছে কিন্তু পরবর্তিতে কোথায় রেখেছে তার হদিস না মেলায় মানুষ হন্তদন্ত হয়ে পড়ে। টেনশনে পড়ে। তখন বলে থাকে ওমুকে বাড়িতে এসেছিল হয়তো সে চুরি করে নিয়ে গেছে। তমুকে নিয়েছে। আবার বাসায় গৃহকর্মী (কাজের বুয়া) থাকলে তার দিকেও মালিকের সন্দেহের তির যায়। হয়তো ২ দিন পরে দেখা গেল বস্তুটি নিজের ঘরেই আছে। এই যে জিনিস হারানো গেলে কর্তার চিন্তাধারা একেই ইমান যায় বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে লোককথায়।
সংগ্রহকারী : মোয়াজ্জেম শিকদার
সংগ্রহের স্থান : হস্তিশুন্ড, বামরাইল, উজিরপুর
সংগ্রহের সময় : ১৯৯০ ইং
(সংগ্রহকারী বর্তমানে জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক প্রবাসী)