শাহ আলম ডাকুয়া
উজিরপুর। একটা উপজেলার নামই নয়- এটা দক্ষিণাঞ্চলের পুরনো জনপদের একটি ইতিহাস। উজিরপুরসহ বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও কোটালিপাড়া (২০২৪ সালের সীমানাগত নাম) ছিল মূল ভূখন্ড। উজিরপুর নামের আদি ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে ছিল প্রমত্তা সুগন্ধা নদীর একচ্ছত্র আধিপত্য। এবং উত্তর-পূর্ব দিকে সরিকল, আগরপুর ও বর্তমান উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের ঘন্টেশ্বর এলাকা দিয়ে অন্য একটি বড় নদী “ঘন্টেশ্বর নদী” প্রবাহিত ছিল। এই ঘন্টেশ্বর নদী এখন একটি মরা খাল- যে খালে গ্রীষ্মকালে কোনো পানিই থাকে না। এই ঘন্টেশ্বর খালে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখনো (২০২৪) তীর্থস্থান হিসেবে “গঙ্গাস্নান” করে থাকে।
এই অঞ্চলের (উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া) কৃষ্টি-কালচারই সমগ্র বরিশাল বিভাগকে প্রভাবিত করেছে।
বর্তমান (২০২৪ সাল) বরিশাল বিভাগের যে আঞ্চলিক ভাষা পরিলক্ষিত হয়- তার অনেক উপাদান- শব্দ, শব্দের ব্যবহার উত্তরের এ জনপদ থেকেই ছড়িয়েছে।
নিচে উজিরপুর এলাকা থেকে সংগৃহিত মানুষের মুখের ভাষার কয়েকটি বাক্য দেয়া হলো-
১. ‘মোনু, তোর বাহে ব্যান অইতে আল চইতাছে। যা- হ্যার লইগ্যা ওক্কা-তাওয়াডা কোলায় দিয়া আয়।’
মোনু= উজিরপুর এলাকার বহুল ব্যবহৃত সম্বোধনসূচক শব্দ। বাহে= বাপ, ব্যান=সকাল, অইতে=হতে, আল= হাল চাষ, চইতাছে= চাষ করতেছে, হ্যার=তার, ওক্কা= হুক্কা/ হুকো, তাওয়া= দীর্ঘ সময় আগুন রাখার মাটির বাসনাকৃতি পাত্র, কোলায়= মাঠ, খেত, ফসলি মাঠ ইত্যাদি।
২. ‘বোহোরকাডির আডে গেইল্যি? তরে না হাদা তামাক আনতে কইছিলাম?’
‘হ্যা মোর মোনে নাই মা। কাইল বাজাইরদা আইননা দিমু নে’।
বোহোরকাডি আড= হাটের নাম (হস্তিশুন্ড গ্রামের হাট), গেইল্যি= গিয়েছিল কিনা?, তরে = তোকে, হাদা তামাক= পানের সাথে যে তামাক খাওয়া হয়, হ্যা= সেটা বা তা, মোর= আমার, মোনে= মনে, কাইল= সময়/ সামনের দিন/ আগামীকাল, আইননা= এনে।
৩. ‘এ মাগি- তরে কি ঝোলায় ধরছিলো? কাইল না কইয়া গ্যাললাম কোনডা অওয়ার লইগ্যা ধানগুলা পানতে ভিজাইয়া রাকতে?’
মাগি= স্ত্রীকে সম্বোধনসূচক শব্দ, গালি, ঝোলায়= পাতলা পায়খানা, কলেরা, ডায়রিয়া বুঝাতে, কাইল= সময়, গতকাল, আগামীকাল বুঝাতে, কইয়া= বলে যাওয়া, কোনডা= অংকুরোধগম, অওয়ার= হওয়ার, লইগ্যা=জন্য, পানতে= পানিতে।
সংগ্রহকারী= শাহ আলম ডাকুয়া
সংগ্রহস্থান= হস্তিশুন্ড, উজিরপুর, বরিশাল।
সংগ্রহের সময়= জানুয়ারি, ২০২৩ সাল
মোবাইল= ০১৯৮৫১৮৪৬৯৮
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ