ঢাকা ০২:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উচ্ছে ভাজি

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

মোঃ আরমান আলী : : নাজমা, চশমাটা একটু খুঁজে দেবে? নজমা, শুনতে পাচ্ছো?
সাজ্জাদ সাহেব উত্তর না পেয়ে বুঝতে পারে তার বড় ভুল হচ্ছে। মনের অজান্তেই সে মিছে স্ত্রীকে ডেকে চলেছে। দু’মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার স্ত্রী না ফেরার দেশে চলে গেছে।
সাজ্জাদ সাহেব বয়সে বৃদ্ধ। নীচতলার ভাড়াটিয়া ছাড়া দোতালায় তিনি একা বাস করেন। একজন কাজের লোক কিছুটা গুছিয়ে দিয়ে যায়। ভাড়াটিয়া জাহাঙ্গীর সাহেব যদিও তাকে পিতার মতো দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু করোনার বিস্তারে আতঙ্কিত হয়ে সেও ইদানিং এড়িয়ে চলছে।
২.
: মা, কতোদিন বন্ধুদের সাথে খেলিনা! আমাকে একটু বাইরে যেতে দাওনা!
ব্যালকনি থেকে বাইরে তাকিয়ে রাজিব তার কষ্টের কথা জানায়।
জাহাঙ্গীর সাহেবের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রাজিব। অনলাইনে তথাকথিত লেখাপড়ার ফাঁকে সারাদিন মোবাইলে গেম খেলে সময় পার করে। পিতা-মাতা বুঝতে পারে তাদের সন্তান মোবাইলে দিন দিন চরমভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আচরণে কেমন অদ্ভুত যান্ত্রিকতা প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু সন্তানকে যে করোনা থেকে দূরে রাখতে হবে।
৩.
: আমাকে ক্ষমা করো। আমি অবশ্যই মা হতে চাই। কিন্তু সেটা করোনাকালীন ঝুঁকিতে নয়।
পাশের বাড়ির স্কুল শিক্ষিকা রাজিয়া আক্তার। প্রায় দেড় বছর ধরে কথাটি তার স্বামীকে বলে আসছে। কিন্তু রাজিয়া আক্তারের শশুর মৃত্যু সজ্জায়। তিনি বৌমার সন্তানের মুখ দেখে মরতে চান।
৪.
: স্যার, করোনায় মরা ভালো, নাকি না খেয়ে মরা ভালো? ঘন ঘন লকডাউনে আমরা যে বাঁচিনা!
রিকশাওয়ালা মহব্বত মিয়া আমাকে প্রশ্ন করে। আমি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিব্রতভাবে দ্রুত ঘরে ঢুকতে চেষ্টা করি। কিন্তু সেখানেও বাধা। আমার স্ত্রী মৃদু ধমকের সুরে বলে,
: পাঁচ ফুট দূরে থাকো, স্নান করো, সাবান মাখো, হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগাও, তারপর শুনব কথা।
ভাবছি, জীবনটা দিন দিন উচ্ছে ভাজিতে পরিণত হচ্ছে। করোনার মৃত্যুর মিছিলটা কবে যে শেষ হবে!

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

উচ্ছে ভাজি

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১

মোঃ আরমান আলী : : নাজমা, চশমাটা একটু খুঁজে দেবে? নজমা, শুনতে পাচ্ছো?
সাজ্জাদ সাহেব উত্তর না পেয়ে বুঝতে পারে তার বড় ভুল হচ্ছে। মনের অজান্তেই সে মিছে স্ত্রীকে ডেকে চলেছে। দু’মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার স্ত্রী না ফেরার দেশে চলে গেছে।
সাজ্জাদ সাহেব বয়সে বৃদ্ধ। নীচতলার ভাড়াটিয়া ছাড়া দোতালায় তিনি একা বাস করেন। একজন কাজের লোক কিছুটা গুছিয়ে দিয়ে যায়। ভাড়াটিয়া জাহাঙ্গীর সাহেব যদিও তাকে পিতার মতো দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু করোনার বিস্তারে আতঙ্কিত হয়ে সেও ইদানিং এড়িয়ে চলছে।
২.
: মা, কতোদিন বন্ধুদের সাথে খেলিনা! আমাকে একটু বাইরে যেতে দাওনা!
ব্যালকনি থেকে বাইরে তাকিয়ে রাজিব তার কষ্টের কথা জানায়।
জাহাঙ্গীর সাহেবের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রাজিব। অনলাইনে তথাকথিত লেখাপড়ার ফাঁকে সারাদিন মোবাইলে গেম খেলে সময় পার করে। পিতা-মাতা বুঝতে পারে তাদের সন্তান মোবাইলে দিন দিন চরমভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আচরণে কেমন অদ্ভুত যান্ত্রিকতা প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু সন্তানকে যে করোনা থেকে দূরে রাখতে হবে।
৩.
: আমাকে ক্ষমা করো। আমি অবশ্যই মা হতে চাই। কিন্তু সেটা করোনাকালীন ঝুঁকিতে নয়।
পাশের বাড়ির স্কুল শিক্ষিকা রাজিয়া আক্তার। প্রায় দেড় বছর ধরে কথাটি তার স্বামীকে বলে আসছে। কিন্তু রাজিয়া আক্তারের শশুর মৃত্যু সজ্জায়। তিনি বৌমার সন্তানের মুখ দেখে মরতে চান।
৪.
: স্যার, করোনায় মরা ভালো, নাকি না খেয়ে মরা ভালো? ঘন ঘন লকডাউনে আমরা যে বাঁচিনা!
রিকশাওয়ালা মহব্বত মিয়া আমাকে প্রশ্ন করে। আমি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিব্রতভাবে দ্রুত ঘরে ঢুকতে চেষ্টা করি। কিন্তু সেখানেও বাধা। আমার স্ত্রী মৃদু ধমকের সুরে বলে,
: পাঁচ ফুট দূরে থাকো, স্নান করো, সাবান মাখো, হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগাও, তারপর শুনব কথা।
ভাবছি, জীবনটা দিন দিন উচ্ছে ভাজিতে পরিণত হচ্ছে। করোনার মৃত্যুর মিছিলটা কবে যে শেষ হবে!