ঢাকা ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অধ্যাদেশ জারি===========

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ কাউন্সিলের মাধ্যমে

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৬:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ হবে স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে। এমন বিধান রেখে গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেট জারির কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, এতে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে একটি কাউন্সিলের বিধান করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের দুজন বিচারক (একজন অবসরপ্রাপ্ত ও একজন কর্মরত), হাইকোর্টের দুজন বিচারক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়ে ছয় সদস্যের এই কাউন্সিল গঠন করা হবে।
এই কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়াও তুলে ধরেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এই কাউন্সিল নিজ উদ্যোগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করবে। একই সঙ্গে যেকোনো মানুষ, যেকোনো আইনজীবী যাতে নিজের ইচ্ছায় আবেদন বা কারও নাম প্রস্তাব করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আছে। এই কাউন্সিল প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার পর সাক্ষাৎকার নেবে। এই কাউন্সিলের নাম হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল।
হাইকোর্টে বিচারক পদে পরবর্তী নিয়োগ এই প্রক্রিয়ায় দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আইন উপদেষ্টা।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বিগত সরকারের আমলে যে অনাচার হতো, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হতো, মানুষকে যে দমন-নিপীড়ন করা হতো, তার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম ছিল উচ্চ আদালত। সেখানে মানুষ প্রতিকার পেত না। এর কারণ ছিল রাজনৈতিক সরকারগুলো উচ্চ আদালতে সম্পূর্ণভাবে দলীয় বিবেচনায়, অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষ লোকদের বিচারক নিয়োগ দিত। উচ্চ আদালতের নিয়োগ নিয়ে একজন সাবেক বিচারপতি ‘প্রলয় ঘটে গেছে’, এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। উচ্চ আদালতে যদি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা বিচারক হিসেবে নিয়োগ না পান, তাহলে দেশের ১৭ কোটি মানুষের মানবাধিকারের প্রশ্নটি অমীমাংসিত ও ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়। উচ্চ আদালতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ, দক্ষ ও দলনিরপেক্ষ এবং প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা বিচারক হিসেবে নিয়োগ হবে-এমন একটি চাহিদা সমাজে বহু বছর ধরে ছিল। এখন এ বিষয়ে আইন হয়েছে। একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারকেরা নিয়োগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পৃথক সচিবালয় হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি সমাজে দীর্ঘদিন ধরে আছে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্যে পরিণত হয়েছে। এটির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। একটু সময় লাগছে খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।
এর আগে গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার আনয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ: স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগের কথা জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগ আছে, সরকারি কৌঁসুলিরা যেহেতু দলীয়ভাবে নিয়োগ পান সে জন্য তাঁরা অনেক সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন না। রাষ্ট্রের পক্ষে ভূমিকা পালন না করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করেন। এর সমাধান হচ্ছে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে আইন তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এটি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, ৩৬ ধরনের কাগজপত্র আইন মন্ত্রণালয় সত্যায়ন করে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে এগুলো অনলাইনে করা হচ্ছে।
এক সপ্তাহে হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা প্রত্যাহার: আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে দায়ের করা আড়াই হাজার হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাকি যত গায়েবি মামলা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হবে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইনে দায়ের করা স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত সব মামলা দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইনে দায়ের করা স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত সব মামলার মধ্যে ৩৩২টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে ১১৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। একইসঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি আইন সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের ২৫ জেলায় আড়াই হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বা গায়েবি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মামলায় লাখ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গায়েবি মামলা চিহ্নিত করতে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, মামলাগুলো পুলিশ করেছে কিনা। দ্বিতীয়ত, এসব মামলার বেশির ভাগই ছিল বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়া। তৃতীয়ত, এসব মামলায় অনেক বেশি আসামি অর্থাৎ অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার আসামি থাকে। চতুর্থত, বিরোধী দলগুলোর বড় কোনও সমাবেশের আগে বা পরে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে তিনটি ভুয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে করা মামলাগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রবণতাকে আমলে নিয়ে ২৫ জেলায় ২ হাজার ৫০০ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাকি মামলাগুলো প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।’
শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া হবে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন: গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত না দিলে সেটি প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি কতদূর- জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রত্যর্পণের জন্য চিঠি লিখেছি। এরপর ভারত যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে তবে সেটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি, তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। এ ব্যাপারে আমরা বিশ্বসমাজে কী পদক্ষেপ নেবো, সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আমাদের যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি। আরও কিছু করণীয় থাকলে ক্ষেত্রবিশেষে চিন্তা করে আমরা করবো।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অধ্যাদেশ জারি===========

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ কাউন্সিলের মাধ্যমে

আপডেট সময় : ০৮:৫৬:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ হবে স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে। এমন বিধান রেখে গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেট জারির কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, এতে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে একটি কাউন্সিলের বিধান করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের দুজন বিচারক (একজন অবসরপ্রাপ্ত ও একজন কর্মরত), হাইকোর্টের দুজন বিচারক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়ে ছয় সদস্যের এই কাউন্সিল গঠন করা হবে।
এই কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়াও তুলে ধরেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এই কাউন্সিল নিজ উদ্যোগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করবে। একই সঙ্গে যেকোনো মানুষ, যেকোনো আইনজীবী যাতে নিজের ইচ্ছায় আবেদন বা কারও নাম প্রস্তাব করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আছে। এই কাউন্সিল প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার পর সাক্ষাৎকার নেবে। এই কাউন্সিলের নাম হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল।
হাইকোর্টে বিচারক পদে পরবর্তী নিয়োগ এই প্রক্রিয়ায় দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আইন উপদেষ্টা।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বিগত সরকারের আমলে যে অনাচার হতো, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হতো, মানুষকে যে দমন-নিপীড়ন করা হতো, তার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম ছিল উচ্চ আদালত। সেখানে মানুষ প্রতিকার পেত না। এর কারণ ছিল রাজনৈতিক সরকারগুলো উচ্চ আদালতে সম্পূর্ণভাবে দলীয় বিবেচনায়, অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষ লোকদের বিচারক নিয়োগ দিত। উচ্চ আদালতের নিয়োগ নিয়ে একজন সাবেক বিচারপতি ‘প্রলয় ঘটে গেছে’, এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। উচ্চ আদালতে যদি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা বিচারক হিসেবে নিয়োগ না পান, তাহলে দেশের ১৭ কোটি মানুষের মানবাধিকারের প্রশ্নটি অমীমাংসিত ও ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়। উচ্চ আদালতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ, দক্ষ ও দলনিরপেক্ষ এবং প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা বিচারক হিসেবে নিয়োগ হবে-এমন একটি চাহিদা সমাজে বহু বছর ধরে ছিল। এখন এ বিষয়ে আইন হয়েছে। একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারকেরা নিয়োগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পৃথক সচিবালয় হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি সমাজে দীর্ঘদিন ধরে আছে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্যে পরিণত হয়েছে। এটির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। একটু সময় লাগছে খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।
এর আগে গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার আনয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ: স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগের কথা জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, কিছু অভিযোগ আছে, সরকারি কৌঁসুলিরা যেহেতু দলীয়ভাবে নিয়োগ পান সে জন্য তাঁরা অনেক সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন না। রাষ্ট্রের পক্ষে ভূমিকা পালন না করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করেন। এর সমাধান হচ্ছে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে আইন তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এটি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, ৩৬ ধরনের কাগজপত্র আইন মন্ত্রণালয় সত্যায়ন করে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে এগুলো অনলাইনে করা হচ্ছে।
এক সপ্তাহে হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা প্রত্যাহার: আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে দায়ের করা আড়াই হাজার হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাকি যত গায়েবি মামলা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হবে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইনে দায়ের করা স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত সব মামলা দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আইনে দায়ের করা স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত সব মামলার মধ্যে ৩৩২টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে ১১৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। একইসঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি আইন সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের ২৫ জেলায় আড়াই হাজার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বা গায়েবি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মামলায় লাখ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গায়েবি মামলা চিহ্নিত করতে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, মামলাগুলো পুলিশ করেছে কিনা। দ্বিতীয়ত, এসব মামলার বেশির ভাগই ছিল বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়া। তৃতীয়ত, এসব মামলায় অনেক বেশি আসামি অর্থাৎ অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার আসামি থাকে। চতুর্থত, বিরোধী দলগুলোর বড় কোনও সমাবেশের আগে বা পরে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে তিনটি ভুয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে করা মামলাগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রবণতাকে আমলে নিয়ে ২৫ জেলায় ২ হাজার ৫০০ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাকি মামলাগুলো প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।’
শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া হবে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন: গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত না দিলে সেটি প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি কতদূর- জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রত্যর্পণের জন্য চিঠি লিখেছি। এরপর ভারত যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে তবে সেটি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি, তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। এ ব্যাপারে আমরা বিশ্বসমাজে কী পদক্ষেপ নেবো, সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আমাদের যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি। আরও কিছু করণীয় থাকলে ক্ষেত্রবিশেষে চিন্তা করে আমরা করবো।