ঢাকা ০১:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

উচ্চস্বরে কথা বললে যেসব ক্ষতি হয়

  • আপডেট সময় : ১১:০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • ১০১ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: আঙ্গুলের রেখার মতো গলার স্বর মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়। তবে উচ্চকণ্ঠে ভাব প্রকাশের কুফলই বেশি। বেশির ভাগ সময় ‘গলা ফাটিয়ে’ কথা বললে আশপাশের মানুষ বিরক্তই হয় না, পাশাপাশি ভাবতে পারে- আপনি হয়ত প্রচণ্ড রেগে আছেন বা মনোযোগ নিজের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করেন সব সময়- যাকে বলে ‘অ্যাটেনশন সিকার’ অথবা আপনার স্বভাবটাই বাজে যা হয়ত সত্যি না। ভয়েসঅ্যান্ডস্পিচ ডটকম’য়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে আরও জানানো হয়- প্রয়োজনে জোরে ডাক দেওয়া বা কথা বলা যায়। তবে উচ্চস্বরে কথা বললে দেহের শক্তি অতিরিক্ত ক্ষয় হয়। “কণ্ঠের ওঠা নামার ওপর ভিত্তি করে শব্দের বা কথার অর্থ ভিন্ন হয়ে যায়”- ব্যাখ্যা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়ের চিকিৎসক লানা শিকিম। এই প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আনন্দ, বিরক্ত, রাগ, ক্ষোভ- নানান ধরনের অনুভূতির প্রকাশ গলার স্বর দিয়েই প্রকাশ পায়। সেখানে শব্দের ব্যবহার নাও থাকতে পারে।” তিনি ব্যাখ্যা করেন- গলার যে পেশিদ্বয়ের সাহায্যে শব্দ বা স্বর তৈরি হয়- তাকে বলে ‘ভোকাল ফোল্ডস’। কণ্ঠের অতিরিক্ত ব্যবহার বা বেশিরভাগ সময় উচ্চস্বরে কথা বলা, চিল্লাচিল্লি করা, উচ্চশব্দের পাশে দাঁড়িয়ে জোরে কথা বলার ফলে এই ‘ভোকাল ফোল্ডস’য়ে টান পড়ে। এরফলে গলায় ব্যথা, ক্ষত হওয়া মতো বিপদ ঘটতে পারে। আর সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে গলার পেশিতে স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্স, মাথা বা গলার ক্যান্সার, স্নায়ুর সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
উচ্চস্বরে কথা বলার নানান কারণ
বেশির ভাগ সময় জোরে বা চিল্লিয়ে কথা বলার কারণ হতে পারে মানসিক ব্যাধি। ভেরিওয়েলহেল্থ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব মানসিক সমস্যার বৈশিষ্টগুলো সম্পর্কে জানান মার্কিন মনোবিজ্ঞানি মিশেল সি. ব্রুটেন-ব্রুকস।
বাইপোলার ডিজঅর্ডার: যারা দীর্ঘদিন ধরে আবেগ অনুভূতির বা মানসিক অবস্থার বিপরীতমুখী পরিবর্তনের শিকার হন তাদেকে এই ধরনের মানসিক রোগী বলা হয়। এদের মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকে বলে উচ্চস্বরে কথা বলেন বেশিরভাগ সময়।
সিৎসোফ্রেনিয়া: এই ধরনের মানসিক রোগীদের চিন্তা, অনুভূতি ও কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকে না। ফলে নিজে থেকে হোক বা অন্যের প্রভাবের কারণে, এরা জোর দিয়ে কথা বলতে থাকে।
পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার: বা ব্যক্তিত্বের ব্যাধিতে আক্রান্ত বিশেষ করে ‘নার্সিসিস্ট পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার’য়ে ভোগা ব্যক্তিরা অতিরিক্ত উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন।
অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার: উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তায় ভোগা মানুষদের মাঝে উচ্চস্বরে কথা বলার প্রবণতা দেখা দেয়। ‘সোশাল অ্যাংজাইটি’ বা সামাজিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে ‘গলা ফাটিয়ে’ কথা বলেন। আবার কেউ কেউ সামাজিক পরিস্থিতিতে ঘাবড়িয়ে গিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুরু করে।
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি): স্নায়ু-সংক্রান্ত এই সমস্যায় আক্রান্তরা অতিরিক্ত অস্থির থাকে। ফলে অন্যকে কথা বলতে না দিয়ে নিজেই জোর করে উচ্চস্বরে কোলাহলপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেন।
অতিরিক্ত জোরে কথা বলার নানান ভাগ
“কণ্ঠের ওঠা-নামা ও কথা বলার ধরন বুঝে মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করা যায়”- মন্তব্য করেন ব্রুটেন-ব্রুকস। এই হিসেবে কথার ঢংগুলো নানানভাবে ভাগ করা হয়েছে
চাপ বা জোর দিয়ে কথা বলা
দ্রুত, জরুরি ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট কেন্দ্রবিন্দুতে কথা বলার ফলে অন্যরা কোনো কিছু বলার সুযোগ পায় না। অতিরিক্ত উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠায় ভুগলে মানুষ এরকম করে। এটা সিৎসোফ্রেনিয়া’তে ভোগার লক্ষণ।
উচ্চস্বর
অতিরিক্ত উচ্চকণ্ঠে দ্রুত কথা বলতে গিয়ে শব্দের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটা হতে পারে উৎকণ্ঠায় ভোগার লক্ষণ। অথবা উন্মাদ হওয়ার প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে ধরা হয়।
অগোছালো
এলোমেলো ভাবে কথা বলার মানে হল- একটা বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে দ্রুত চলে যাওয়া; ফলে কী বলতে চাচ্ছে সেটা না বোঝা। একইভাবে অনেকগুলো মানুষ অগোছালো-ভাবে কথা বলে গেলে বুঝতে হবে, তারা কী চায় বা কোন বিষয়ে কথা বলছে সেটাতে নিজেরাই পরিষ্কার না।
কম্পালসিভ
বিরামহীনভাবে উচ্চস্বরে বা দ্রুত কথা বলতে বাধ্য হওয়ার নানান কারণ থাকতে পারে। যেমন- উৎকণ্ঠায় ভোগা, পরিস্থিতির প্রভাব এবং এডিএইচডি’তে ভোগা। যারা এডিএইচডি’তে ভোগেন তাদের মস্তিষ্ক একটি বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে দ্রুত লাফ দেয়। আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতার কারণে উৎকণ্ঠায় ভোগা থেকে দ্রুত কথা বলা বা স্বর উঁচু করার প্রবণতা দেখা দেয়।
উচ্চস্বরে ও দ্রুত কথা বলা থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায়
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণা অনুসারে, শতকরা চল্লিশভাগ লোক নিজের কথা বলতে ভালোবাসেন। এটা মস্তিষ্কে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি দেয়। তবে সামাজিকভাবে এই ধরনের স্বভাব অন্য মানুষের কাছে বিরক্তির কারণ হয়। তাই উচ্চস্বরে ও দ্রুত কথা বলা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন মনোচিকিৎসক ব্রুটেন-ব্রুকস।
কথা বলার চাইতে বেশি শুনুন: কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে যান। আর অন্যরা কী বলছে সেটা শোনার জন্য নিজেকে অভ্যস্ত করুন। অন্যদের কথার বিষয়বস্তু বিস্তারিত বোঝার মানে এই নয় নিজের মন্তব্য জোর করে চাপিয়ে দিতে হবে। আগে ভালো মতো শুনুন। তারপর নিজের কথা বলুন, ধীরে।
টেনিস বলের মতো আচরণ: টেনিস খেলায় বল যেভাবে কোর্টের একদিক থেকে অন্যদিকে যায় সেভাবে কথা বলায় নিজেকে প্রশিক্ষিত করা যায়। অন্যকে বলতে দিন, তারপর নিজে বলুন। আবার অন্যকে বলতে দিন। এভাবে কথাবার্তা চালনায় অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
মানসিক সময় নির্ধারণ: কথা শুরু করার প্রথম পর্যায়ে অন্যের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা হয়। তবে কথা দীর্ঘ হলে অন্যের মনোযোগ কমতে থাকে। তাই নিজেই মানসিকভাবে সময় নির্ধারণ করে নিন যেন মিনিটখানেকের বেশি কথা দীর্ঘ করবেন না।
সামাজিক চাহিদার দিকে লক্ষ করা: যদি উচ্চস্বরে বা অতিরিক্ত কথা বলার অভ্যাস থাকে তবে সামাজিকভাবে সেটা কী প্রভাব ফেলছে সেটা খেয়াল করতে হবে। যদি দেখা যায় উপস্থিত লোকজন উসখুস করছে, আশপাশ দেখছে বা মোবাইল ফোন ঘাটছে তাহলে বুঝতে হবে আপনি এত বেশি কথা বলছেন যে, মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। এই পর্যায়ে কথা সংক্ষিপ্ত করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ব্রুটেন-ব্রুকস বলেন, “এসব আত্মনিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পরও যদি উচ্চস্বরে বা বাড়তি কথা বলার অভ্যাস না যায় তবে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নানান ধরনের থেরাপি’র মাধ্যমে এই মানসিক অবস্থা উন্নত করা সম্ভব হয়।”

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

উচ্চস্বরে কথা বললে যেসব ক্ষতি হয়

আপডেট সময় : ১১:০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: আঙ্গুলের রেখার মতো গলার স্বর মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়। তবে উচ্চকণ্ঠে ভাব প্রকাশের কুফলই বেশি। বেশির ভাগ সময় ‘গলা ফাটিয়ে’ কথা বললে আশপাশের মানুষ বিরক্তই হয় না, পাশাপাশি ভাবতে পারে- আপনি হয়ত প্রচণ্ড রেগে আছেন বা মনোযোগ নিজের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করেন সব সময়- যাকে বলে ‘অ্যাটেনশন সিকার’ অথবা আপনার স্বভাবটাই বাজে যা হয়ত সত্যি না। ভয়েসঅ্যান্ডস্পিচ ডটকম’য়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে আরও জানানো হয়- প্রয়োজনে জোরে ডাক দেওয়া বা কথা বলা যায়। তবে উচ্চস্বরে কথা বললে দেহের শক্তি অতিরিক্ত ক্ষয় হয়। “কণ্ঠের ওঠা নামার ওপর ভিত্তি করে শব্দের বা কথার অর্থ ভিন্ন হয়ে যায়”- ব্যাখ্যা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়ের চিকিৎসক লানা শিকিম। এই প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আনন্দ, বিরক্ত, রাগ, ক্ষোভ- নানান ধরনের অনুভূতির প্রকাশ গলার স্বর দিয়েই প্রকাশ পায়। সেখানে শব্দের ব্যবহার নাও থাকতে পারে।” তিনি ব্যাখ্যা করেন- গলার যে পেশিদ্বয়ের সাহায্যে শব্দ বা স্বর তৈরি হয়- তাকে বলে ‘ভোকাল ফোল্ডস’। কণ্ঠের অতিরিক্ত ব্যবহার বা বেশিরভাগ সময় উচ্চস্বরে কথা বলা, চিল্লাচিল্লি করা, উচ্চশব্দের পাশে দাঁড়িয়ে জোরে কথা বলার ফলে এই ‘ভোকাল ফোল্ডস’য়ে টান পড়ে। এরফলে গলায় ব্যথা, ক্ষত হওয়া মতো বিপদ ঘটতে পারে। আর সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে গলার পেশিতে স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্স, মাথা বা গলার ক্যান্সার, স্নায়ুর সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
উচ্চস্বরে কথা বলার নানান কারণ
বেশির ভাগ সময় জোরে বা চিল্লিয়ে কথা বলার কারণ হতে পারে মানসিক ব্যাধি। ভেরিওয়েলহেল্থ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব মানসিক সমস্যার বৈশিষ্টগুলো সম্পর্কে জানান মার্কিন মনোবিজ্ঞানি মিশেল সি. ব্রুটেন-ব্রুকস।
বাইপোলার ডিজঅর্ডার: যারা দীর্ঘদিন ধরে আবেগ অনুভূতির বা মানসিক অবস্থার বিপরীতমুখী পরিবর্তনের শিকার হন তাদেকে এই ধরনের মানসিক রোগী বলা হয়। এদের মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকে বলে উচ্চস্বরে কথা বলেন বেশিরভাগ সময়।
সিৎসোফ্রেনিয়া: এই ধরনের মানসিক রোগীদের চিন্তা, অনুভূতি ও কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকে না। ফলে নিজে থেকে হোক বা অন্যের প্রভাবের কারণে, এরা জোর দিয়ে কথা বলতে থাকে।
পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার: বা ব্যক্তিত্বের ব্যাধিতে আক্রান্ত বিশেষ করে ‘নার্সিসিস্ট পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার’য়ে ভোগা ব্যক্তিরা অতিরিক্ত উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন।
অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার: উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তায় ভোগা মানুষদের মাঝে উচ্চস্বরে কথা বলার প্রবণতা দেখা দেয়। ‘সোশাল অ্যাংজাইটি’ বা সামাজিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে ‘গলা ফাটিয়ে’ কথা বলেন। আবার কেউ কেউ সামাজিক পরিস্থিতিতে ঘাবড়িয়ে গিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুরু করে।
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি): স্নায়ু-সংক্রান্ত এই সমস্যায় আক্রান্তরা অতিরিক্ত অস্থির থাকে। ফলে অন্যকে কথা বলতে না দিয়ে নিজেই জোর করে উচ্চস্বরে কোলাহলপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেন।
অতিরিক্ত জোরে কথা বলার নানান ভাগ
“কণ্ঠের ওঠা-নামা ও কথা বলার ধরন বুঝে মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করা যায়”- মন্তব্য করেন ব্রুটেন-ব্রুকস। এই হিসেবে কথার ঢংগুলো নানানভাবে ভাগ করা হয়েছে
চাপ বা জোর দিয়ে কথা বলা
দ্রুত, জরুরি ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট কেন্দ্রবিন্দুতে কথা বলার ফলে অন্যরা কোনো কিছু বলার সুযোগ পায় না। অতিরিক্ত উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠায় ভুগলে মানুষ এরকম করে। এটা সিৎসোফ্রেনিয়া’তে ভোগার লক্ষণ।
উচ্চস্বর
অতিরিক্ত উচ্চকণ্ঠে দ্রুত কথা বলতে গিয়ে শব্দের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটা হতে পারে উৎকণ্ঠায় ভোগার লক্ষণ। অথবা উন্মাদ হওয়ার প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে ধরা হয়।
অগোছালো
এলোমেলো ভাবে কথা বলার মানে হল- একটা বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে দ্রুত চলে যাওয়া; ফলে কী বলতে চাচ্ছে সেটা না বোঝা। একইভাবে অনেকগুলো মানুষ অগোছালো-ভাবে কথা বলে গেলে বুঝতে হবে, তারা কী চায় বা কোন বিষয়ে কথা বলছে সেটাতে নিজেরাই পরিষ্কার না।
কম্পালসিভ
বিরামহীনভাবে উচ্চস্বরে বা দ্রুত কথা বলতে বাধ্য হওয়ার নানান কারণ থাকতে পারে। যেমন- উৎকণ্ঠায় ভোগা, পরিস্থিতির প্রভাব এবং এডিএইচডি’তে ভোগা। যারা এডিএইচডি’তে ভোগেন তাদের মস্তিষ্ক একটি বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে দ্রুত লাফ দেয়। আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতার কারণে উৎকণ্ঠায় ভোগা থেকে দ্রুত কথা বলা বা স্বর উঁচু করার প্রবণতা দেখা দেয়।
উচ্চস্বরে ও দ্রুত কথা বলা থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায়
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণা অনুসারে, শতকরা চল্লিশভাগ লোক নিজের কথা বলতে ভালোবাসেন। এটা মস্তিষ্কে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি দেয়। তবে সামাজিকভাবে এই ধরনের স্বভাব অন্য মানুষের কাছে বিরক্তির কারণ হয়। তাই উচ্চস্বরে ও দ্রুত কথা বলা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন মনোচিকিৎসক ব্রুটেন-ব্রুকস।
কথা বলার চাইতে বেশি শুনুন: কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে যান। আর অন্যরা কী বলছে সেটা শোনার জন্য নিজেকে অভ্যস্ত করুন। অন্যদের কথার বিষয়বস্তু বিস্তারিত বোঝার মানে এই নয় নিজের মন্তব্য জোর করে চাপিয়ে দিতে হবে। আগে ভালো মতো শুনুন। তারপর নিজের কথা বলুন, ধীরে।
টেনিস বলের মতো আচরণ: টেনিস খেলায় বল যেভাবে কোর্টের একদিক থেকে অন্যদিকে যায় সেভাবে কথা বলায় নিজেকে প্রশিক্ষিত করা যায়। অন্যকে বলতে দিন, তারপর নিজে বলুন। আবার অন্যকে বলতে দিন। এভাবে কথাবার্তা চালনায় অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
মানসিক সময় নির্ধারণ: কথা শুরু করার প্রথম পর্যায়ে অন্যের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা হয়। তবে কথা দীর্ঘ হলে অন্যের মনোযোগ কমতে থাকে। তাই নিজেই মানসিকভাবে সময় নির্ধারণ করে নিন যেন মিনিটখানেকের বেশি কথা দীর্ঘ করবেন না।
সামাজিক চাহিদার দিকে লক্ষ করা: যদি উচ্চস্বরে বা অতিরিক্ত কথা বলার অভ্যাস থাকে তবে সামাজিকভাবে সেটা কী প্রভাব ফেলছে সেটা খেয়াল করতে হবে। যদি দেখা যায় উপস্থিত লোকজন উসখুস করছে, আশপাশ দেখছে বা মোবাইল ফোন ঘাটছে তাহলে বুঝতে হবে আপনি এত বেশি কথা বলছেন যে, মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। এই পর্যায়ে কথা সংক্ষিপ্ত করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ব্রুটেন-ব্রুকস বলেন, “এসব আত্মনিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পরও যদি উচ্চস্বরে বা বাড়তি কথা বলার অভ্যাস না যায় তবে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নানান ধরনের থেরাপি’র মাধ্যমে এই মানসিক অবস্থা উন্নত করা সম্ভব হয়।”