ক্রীড়া ডেস্ক: কেন উইলিয়ামসনের জন্য তো বটেই, নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের জন্যও দিনটি বিশেষ কিছু। ৯ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ৮ হাজারের মতো ৯ হাজারেও তিনি নিউ জিল্যান্ডের একমাত্র প্রতিনিধি। কিন্তু উইলিয়ামসন ম্যাচে দ্বিতীয়বার পঞ্চাশে ছাড়ালেও ব্যাটে-বলে অন্যদের পারফরম্যান্স এমন যে, দিনটি তারা ভুলে যেতেই চাইবেন! ইংল্যান্ডের জন্য ঠিক উল্টো। আগের দিনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পথ ধরে লেজের ব্যাটসম্যানরাও ঝড় তুলে দলকে নিয়ে যায় পাঁচশর কাছে। এরপর ব্রাইডন কার্স ও ক্রিস ওকসের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ভেঙে পড়ে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপ। সব মিলিয়ে তিন দিন শেষেই ক্রাইস্টচার্চে জয় দেখছে ইংল্যান্ড। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড তোলে ৪৯৯ রান। প্রথম ইনিংসে ১৫১ রানে পিছিয়ে থাকা নিউ জিল্যান্ড শনিবার দিন শেষ করে ৬ উইকেটে ১৫৫ রান নিয়ে। চার উইকেট নিয়ে এখন মাত্র চার রানে এগিয়ে কিউইরা। আগের দিন নিউ জিল্যান্ডের ছয়টি ক্যাচ ছাড়ার সুযোগে তিনশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। চার বার জীবন পেয়ে হ্যারি ব্রুক অপরাজিত ছিলেন ১৩২ রানে। ব্রুক ও বেন স্টোকসের জুটি আরও এগিয়ে নেয় ইংল্যান্ডকে। ১৮৬ বলে দেড়শ স্পর্শ করেন ব্রুক, স্টোকসের ফিফটি আসে ১০৫ বলে। অবশেষে দ্বিতীয় নতুন বলের ষষ্ঠ ওভারে এ জুটি ভাঙতে পারে কিউইরা। ১৫ চার ও ৩ ছক্কায় ১৯৭ বলে ১৭১ রান করে ম্যাট হেনরির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্রুক। পরের ওভারে ক্রিস ওকসকে ১ রানে বিদায় করেন টিম সাউদি। তবে ইংলিশ ইনিংস শেষ হয়নি দ্রুত। বরং অষ্টম উইকেটে ৫৩ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন স্টোকস ও গাস অ্যাটকিনসন। এখানে অধিনায়ক স্টোকস ছিলেন মূলত দর্শক, অ্যাটকিনসন করেন ৩৬ বলে ৪৮।
এমনকি পরের জুটিতেও আসে ৩২ বলে ৪০ রান। ছক্কার চেষ্টায় ৮০ রান করে হেনরিকে উইকেট দিয়ে ফেরেন স্টোকস। কিউই বোলারদের আরেকটু যন্ত্রণা দিয়ে তিন ছক্কায় ২৪ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন কার্স। কার্স এরপর নিজের আসল কাজ বোলিংয়েও জ্বলে ওঠেন। প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকা ক্রিস ওকস মেলে ধরেন নিজের স্কিল। দুজনই তিনটি করে উইকেট নিয়ে পরাজয়ের দুয়ারে ঠেলে দেন কিউইদের। অধিনায়ক টম ল্যাথামকে ১ রানে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত করেন কার্স। আরেক ওপেনার ডেভন কনওয়েকে ৮ রানে ফেরান কার্স। উইলিয়ামসন এরপর প্রতিরোধের চেষ্টা করেন রাচিন রাভিন্দ্রাকে নিয়ে। সেই জুটি লম্বা হয়নি বেশি। চা-বিরতির পরপরই কার্সের শর্ট বলে ব্যাট চালিয়ে সীমনায় ধরা পড়েন ২৪ রান করা রাভিন্দ্রা। নিউ জিল্যান্ডকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করা উইলিয়ামসন বিপর্যয়ের মধ্যেই সাবলিল ব্যাটিং করছিলেন। তাকে ভরসা জুগিয়ে আরেকপ্রান্ত আগলে রাখেন মিচেল। দুজনের জুটি জমে ওঠে বেশ। ১৮২তম ইনিংসে ৯ হাজারে পা রাখেন উইলিয়ামসন। টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে ১৮ জন ব্যাটসম্যান দেখা পেলেন এই মাইলফলকের। উইলিয়ামসন সেখানে অষ্টম দ্রুততম। ১৭২ ইনিংসে ছুঁয়ে বিশ্বরেকর্ড কুমার সাঙ্গাকারার। কিন্তু দুই বলের মধ্যে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন ওকস। ৮৬ বলে ৬১ রান করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান উইলিয়ামসন। পরের বলেই উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন দুঃসময়ের চক্রে থাকা টম ব্লান্ডেল। চার ইনিংসের মধ্যে দ্বিতীয়বার শূন্য রানে আউট হলেন এই কিপার-ব্যাটার। সবশেষ ২৫ টেস্ট ইনিংসে তার ফিফটি একটি। শেষ বেলায় নিউ জিল্যান্ডকে আরও একটি ধাক্কা দেন কার্স। বিপজ্জনক গ্লেন ফিলিপসকে ১৯ রানে থামান তিনি। দিনশেষে মিচেল অপরাজিত ৩১ রানে। তবে নিউ জিল্যান্ডের সামনে আশার জায়গা খুব একটা নেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৪৮
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১০৩ ওভারে ৪৯৯ (আগের দিন ৩১৯/৫) (ব্রুক ১৭১, স্টোকস ৮০, ওকস ১, অ্যাটকিনসন ৪৮, কার্স ৩৩*, বাশির ৫; সাউদি ২০-৪-৮৫-২, হেনরি ২৩-৫-৮৪-৪, স্মিথ ২৬-০-১৪১-৩, ও’রোক ২৫-২-১৩৮-১, ফিলিপস ৯-০-৩৫-০)।
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৪৯ ওভারে ১৫৫/৬ (ল্যাথাম ১, কনওয়ে ৮, উইলিয়ামসন ৬১, রাভিন্দ্রা ২৪, মিচেল ৩১*, ব্লান্ডেল ০, ফিলিপস ১৯, স্মিথ ১*; ওকস ১৩-১-৩৯-৩, অ্যাটকিনসন ১৩-২-৩৭-০, কার্স ১২-৩-২২-৩, বাশির ৯-০-৪৭-০, স্টোকস ২-০-৯-০)।