ক্রীড়া ডেস্ক : শেষ বলে ছক্কা, তবু শটের পর ব্যাটসম্যান ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের চোখে-মুখে বিষাদ। বোলার কাগিসো রাবাদা ও তার দলের উল্লাস। ওই ছক্কায় ব্যবধান কমল বটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের, কিন্তু যন্ত্রণা যে বাড়ল! উচ্ছ্বাস ও হতাশার পার্থক্য সেখানে ১ রানের। সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রেনাডায় মঙ্গলবার ২০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ১৬৭ রান। রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাঝে পথ হারিয়ে শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত আটকে যায় খুব কাছে গিয়ে। শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন পড়ে ১৫ রানের। রাবাদা শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। দ্বিতীয় বলে চার মারেন অ্যালেন। কিন্তু দুর্দান্ত তিনটি ইয়র্কারে তিনটি মহামূল্য ডট বলও করেন রাবাদা। শেষ বলে ছক্কাও তাই যথেষ্ট হয়নি ক্যারিবিয়ানদের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১ রানে জয়ের ষোড়শ ঘটনা এটি, সর্বোচ্চ চারবার জিতল দক্ষিণ আফ্রিকাই। সিরিজের টানা তৃতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিজের ৫০তম টি-টোয়েন্টিতে কুইন্টন ডি ককের ফিফটি দলকে গড়ে দেয় ভালো ভিত। রিজা হেনড্রিকসের সঙ্গে ডি ককের জুটিতে প্রথম ৪ ওভারে আসে ৪২ রান। পঞ্চম ওভারে বাঁহাতি পেসার ওবেড ম্যাককয় ফিরিয়ে দেন হেনড্রিকস (১১ বলে ১৭) ও প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে (১)। তৃতীয় উইকেটে ডি কক ও একাদশে ফেরা এইডেন মারক্রাম আরেকটু এগিয়ে নেন দলকে। ডি কক ফিফটি স্পর্শ করে ৩৪ বলে। ১৮ বলে ২৩ রান করে মারক্রাম আউট হন ডোয়াইন ব্রাভোর ফুলটসে।
ডি কক ও রাসি ফন ডার ডাসেন এরপর গড়েন ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটি। তবে রানের গতিতে জোয়ার আনতে পারেননি দুজন। ৬০ রান যোগ করেন তারা ৪৫ বলে। শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় পড়ে দ্রুত উইকেট। ৫১ বলে ৭২ করে বিদায় নেন ডি কক, ২৪ বলে ৩২ ফন ডার ডাসেন। শেষ তিন ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে তারা যোগ করতে পারে কেবল ২০ রান। বাঁহাতি পেসার ম্যাককয় দেখা পান ক্যারিয়ারের প্রথম চার উইকেটের। রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি এনে দেন এভিন লুইস ও লেন্ডল সিমন্স। দুজনকেই পরপর দুই ওভারে ফেরান দুই প্রোটিয়া স্পিনার। জর্জ লিন্ডার দারুণ ডেলিভারিতে সিমন্স ফেরেন ২২ বলে ২২ করে। তাবরাইজ শামসি থামান বিপজ্জন লুইসকে (২১ বলে ২৭)। প্রমোশন পেয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনে নেমে জেসন হোল্ডার দুটি ছক্কা মারেন মারক্রামকে। তবে থমকে যান ১৬ রানেই। ক্রিস গেইলের বিশ্রামে সুযোগ পাওয়াম শিমরন হেটমায়ারের দৌড়ও শেষ দুই ছক্কার পরই (১০ বলে ১৭)। অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড ব্যর্থ আবার। ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৮৯ রান থেকে দিশা হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস। শেষ ৪ ওভারে যখন প্রয়োজন ৪৪ রান, নিকোলাস পুরান ও আন্দ্রে রাসেল আবার জমিয়ে তোলেন ম্যাচ। আনরিক নরকিয়াকে পরপর দুটি ছক্কা মারেন রাসেল। তবে তিন ছক্কায় তার ১৬ বলে ২৫ রানের ইনিংস শেষও হয় ওই ওভারেই। শেষের আগের ওভারে নরকিয়া বিদায় করে দেন ২৬ রান করা পুরানকেও। শেষ ওভারে আর পেরে ওঠেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা চায়নাম্যান বোলার শামসি। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ একই মাঠে, শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৬৭/৮ (ডি কক ৭২, হেনড্রিকস ১৭, বাভুমা ১, মারক্রাম ২৩, ফন ডার ডাসেন ৩২, মিলার ২, লিন্ডা ০, রাবাদা ৪, নরকিয়া ০, শামসি ০; ম্যাককয় ৪-০-২২-৪, হোল্ডার ৩-০-১৮-০, রাসেল ২-০-২৫-০, সিনক্লেয়ার ৩-০-২৯-০, অ্যালেন ২-০-২৩-০, ব্রাভো ৪-০-২৫-৩, পোলার্ড ২-০-১৯-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৬/৭ (লুইস ২৭, সিমন্স ২২, হোল্ডার ১৬, হেটমায়ার ১৭, পুরান ২৬, পোলার্ড ১, রাসেল ২৫, অ্যালেন ১৪, ব্রাভো ০; লিন্ডা ৩-০-৩৩-১, মারক্রাম ২-০-২৪-০, নরকিয়া ৪-০-২৯-২, এনগিডি ৩-০-২২-১, রাবাদা ৪-০-৪১-১, শামসি ৪-০-১৩-২)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাবরাইজ শামসি।
উইন্ডিজের বিপক্ষে ১ রানের রোমাঞ্চকর জয় দ. আফ্রিকার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ