ঢাকা ০৩:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

ঈদে বৃষ্টি ও গরমের আবহে এসেছে আরামদায়ক পোশাক

  • আপডেট সময় : ০৮:০২:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

ঈদ মানে খুশি। এই খুশি বাড়িয়ে দিতে নতুন পোশাকের কোনো জুড়ি নেই। বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবার জন্য চাই নতুন পোশাক। ঈদুল আজহা সামনে রেখে আরামদায়ক পোশাক এনেছে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো। দোকানগুলো এখন নতুন পোশাকে জমজমাট। প্রতি বছরের মতো সব হাউস নতুন থিম ও মোটিফে ঈদের পোশাক এনেছে। এ বিষয় নিয়ে এবারের লাইফস্টাইল পাতার প্রধান ফিচার

নিউ মার্কেটের স্টাইল জোনের স্বত্বাধিকারী জানান, আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছেন ক্রেতারা। আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। কারণ ঈদের সময় বৃষ্টি ও গরমের যৌথ আবহ থাকবে। এমন আবহাওয়ার জন্য আরামদায়ক পোশাকই ভালো।

মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের দোকানি আফজাল হোসেন বলেন, গরমের জন্য সুতি কাপড় ভালো। কারণ বৃষ্টিতে ভিজলেও শুকাতে বেশি সময় নেয় না। তবে তাদের কাছে সুতি থেকে শুরু করে সিল্ক, হাফ সিল্ক, জর্জেট, সিকোয়েন্স, বলাকা, অ্যান্ডি, লিনেন, মসলিন, শিফনসহ অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।

নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, বিকেলের পর থেকে সেখানে ভিড় জমতে শুরু করে। আর সন্ধ্যার পর সেখানে পা ফেলার জায়গা থাকে না। ক্রেতা সমাগম নিয়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেক দোকানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নতুন কালেকশনগুলো বাইরে টানিয়ে রাখা হয়েছে।

নিউ মার্কেটের দোকানি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে বাহারি রঙের পোশাকের সমাহার আছে। ঈদের পোশাকে মূল রঙের মধ্যে আছে অ্যাশ, লাইট ব্রাউন, মেরুন, সাদা, ক্রিম, মিন্ট, লাল, পিংক, সবুজ, নীল, গ্রিন পিচ ও সি গ্রিন। আর সহ-রঙ হিসেবে জায়গা পেয়েছে ম্যাজেন্টা, স্কাই ব্লু ও মাস্টার্ড।
কিছু ফ্যাশন হাউসে কাপল পোশাক বেশ নজর কেড়েছে। পরিবারের সবার জন্যই ম্যাচিং পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাশন হাউসে ম্যাচিং পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। দামও মোটামুটি নাগালের মধ্যে।

টোকিও স্কয়ারের দোকানগুলো নতুন শাড়ির সংগ্রহে সেজে উঠেছে। শাড়ির নকশায় ব্যবহার করা হয়েছে জরি, জারদৌসি, চুমকি। এ যেন শাড়িতে মুঘল আভিজাত্যের ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা। কাফতান, গাউন ও হাওয়াই পোশাকের চল এবারও আছে বলে জানালেন দোকানিরা। নারীদের জন্য আরো আছে সালোয়ার, টপস, কুর্তি। তবে এসব পোশাকের হাতা ও গলায় ফ্রিল বা কুঁচিতে কিছুটা নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

ছেলেদের পোশাকে সাদা রঙের প্রাধান্য বেশি। দোকানিরা বলছেন, গরম সাদা আরামদায়ক, তাই চাহিদা বেশি। সাদা শার্টে প্রিন্টের ফ্লোরাল, হাওয়াইসহ নানা মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্যান্টের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্যান্টের চল আছে। তবে চিনো কাট, সিøম কাট ও স্ট্রেট কাট বেশি দেখা যাচ্ছে। অবশ্য শার্টের চেয়ে ঈদের বাজারে পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি থাকে। অন্যান্য রঙের তুলনায় সাদা রঙের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হয় বলে জানালেন নিউ মার্কেটের কয়েকজন বিক্রেতা। তাদের মতে, যাদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান থাকে তারাই মূলত নকশা করা পাঞ্জাবির সঙ্গে ভারী কাজের কটি কিনে থাকে।

পরিবার-স্বজন নিয়ে ঈদুল আজহা উৎসব আরো প্রাণবন্ত করতে বৈচিত্র্যময় পোশাকের বিশেষ আয়োজন নিয়ে এসেছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড কে-ক্রাফট। আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই সব পোশাক এনেছে তারা।
কে ক্র্যাফটের পরিচালক খালিদ মাহামুদ খান জানিয়েছে, তাদের আয়োজনে মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ ও কুর্তিতে ফ্রক স্টাইল, এ লাইন এবং রেগুলার শেপ ছাড়াও স্ট্রেইট কাট, রাফল, প্লিটেড, বক্স প্লিটেড স্টাইল থাকবে। নিজস্ব ডিজাইনের শাড়িতে মোটিফের ব্যবহার, কালার কম্বিনেশন ও ভ্যালু অ্যাডিশনে নানা মিডিয়ার ব্যবহার সবার দৃষ্টি কাড়বে। ছেলেদের জন্য রয়েছে রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এ ছাড়া পাওয়া যাবে স্মার্ট ক্যাজুয়াল শার্ট, এথনিক শার্ট, ফতুয়া।

শিশুদের জন্য থাকছে কে ক্র্যাফটের আলাদা আয়োজন। শিশুদের পোশাকে প্যাটার্ন, ফেব্রিক ও রঙের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। মেয়েশিশুদের জন্য তারা এনেছে সালোয়ার-কামিজ সেট, টপস-স্কার্ট সেট, টপস-পালাজো সেট, ফ্রক, কুর্তি, টপ। ছেলেশিশুদের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়াসহ নানা আয়োজন। বরাবরের মতো ফ্যামিলি পোশাক থাকছে কে-ক্রাফটের আয়োজনে। মা ও মেয়ের মিলিয়ে পরার মতো সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি এবং বাবা ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি। তাদের পোশাকে মেরুন, ম্যাজেন্টা, অরেঞ্জ, গ্রিন, ব্রাউন, নেভি ব্লুর মতো উজ্জ্বল রং ছাড়াও গরমের কথা মাথায় রেখে হোয়াইট, অফ-হোয়াইট, স্কাই, ল্যাভেন্ডার, রয়্যাল ব্লু, আইস ব্লু, লাইট পিংক, চেরি রেড, নিওন লাইম, ব্রোঞ্জ গ্রিন, পার্সিয়া ভায়োলেট রঙে থাকবে বেশির ভাগ পোশাক। বর্ষাকাল হলেও গরম থাকবে এবারের ঈদে, তাই আবহাওয়া মাথায় রেখেই ব্যবহার করেছে কটন, জ্যাকার্ড কটন, সুইস কটন, জর্জেট, লিনেন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, অরগানজা, ডুয়েল-টোন, নীব কটন, ভয়েল ফেব্রিক। কাঁথা, জামদানি, জিওমেট্রিক, টামজারা, ট্র্যাডিশনাল, মুঘলিও আর্ট, ইজিপশিয়ান মোটিফের অনুপ্রেরণা থেকে তাদের ঈদ আয়োজন। নকশা ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার হয়েছে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট।

ঈদ মানেই ভিন্ন আয়োজন নিয়ে হাজির হয় রঙ বাংলাদেশ। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। রঙ বাংলাদেশ বলছে, কোরবানির ঈদ ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হয়। তাই পোশাকেও সেই ভাবটা থাকা প্রয়োজন। রঙ বাংলাদেশ সবসময় স্থান, কাল, পাত্র বিবেচনায় পোশাক ডিজাইন ও তৈরি করে। রঙ বাংলাদেশের ঈদ আয়োজনের পোশাকে এবার থাকছে শাড়ি, ব্লাউজ, কামিজ, ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ (থ্রি-পিস), টপস, টিউনিক, পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, টি-শার্ট। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, সিরামিক মগ, উত্তরীয়। পোশাকের সঙ্গে আছে মানানসই মেটাল ও কাঠের তৈরি জুয়েলারি।

রঙ বাংলাদেশ জানিয়েছে, থিমভিত্তিক কালেকশনের পোশাক রঙ বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য। মূল থিম ক্ল্যাসিকাল ফোর এলিমেন্টস ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিটি পোশাকের মধ্যেই। তবে যেহেতু গ্রীষ্মকাল শেষে বর্ষার প্রারম্ভে ঈদ, তাই পোশাক ডিজাইনে সচেতনভাবেই রাখা রয়েছে ফোর এলিমেন্টসের ওয়াটার বা পানি থিম। পাশাপাশি আলপনা ও জিওমেট্রিক থিমেও পোশাক ডিজাইন করা হয়েছে।

পোশাক তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে উন্নতমানের কটন, সø্যাব কটন, লিনেন, হাফ সিল্ক, জর্জেট ফেব্রিকসের বিভিন্ন কম্বিনেশন। একই সঙ্গে ভ্যালু অ্যাড করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লকপ্রিন্ট, কারচুপি, এমব্রয়ডারি, প্যাচওয়ার্ক ও কাট অ্যান্ড স্যুর মাধ্যমে। পোশাকের কাপড়ে রাখা হয়েছে কটন, ডবি, জ্যাকার্ড, বিভিন্ন ধরনের জর্জেট, প্রিন্টেড কটন, প্রিন্টেড জর্জেট, নিট, ডেনিম, স্যাটিন, টিস্যু ইত্যাদি।

পোশাকে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন ট্রেন্ড ও নানারকমের টেক্সচারকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করেছে সারা। প্যাটার্নে থাকছে এ লাইন, ট্রাপিজি, ন্যারো কাট, ফিট অ্যান্ড ফ্লেয়ার, বিভিন্ন ধরনের সিলুইট প্যাটার্ন। রঙের ক্ষেত্রে লাল, সবুজ, সি-গ্রিন, নীল, ম্যাজেন্টা, কালো, সাদা, বাদামি, বেগুনি ও ল্যাভেন্ডারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

সারার আয়োজনে ছেলেদের জন্য থাকছে পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফরমাল শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ডেনিম প্যান্ট, চিনো প্যান্ট, কার্গো প্যান্ট, পায়জামা, কটি ইত্যাদি। মেয়েদের জন্য থাকছে সিঙ্গেল এথনিক কুর্তি, এথনিক টু-পিস ও থ্রি-পিস সেট, ফ্যাশন টপস, শার্ট, শাড়ি স্কার্ফ, টি-শার্ট এবং ম্যাটার্নিটি ওয়্যারের কালেকশন। কো-অর্ড পোশাক ঢিলেঢালা বা ওভারসাইজ ধরনের হওয়ায় দেখতে যেমন স্মার্ট, তেমন গরমে আরামদায়ক।

‘হুর’-এর সৌমিন আফরিন জানান, গরমের কথা মাথায় রেখেই কো-অর্ড সেটে তারা মলমল কটন কাপড়ের ব্যবহার করেছেন। তবে যেহেতু সামনে ঈদ তাই ডাবল জর্জেটের তৈরি কো-অর্ড সেটও এনেছেন তারা। আরামদায়ক ঢিলেঢালা পোশাকেও ঈদের আমেজ ফুটিয়ে তুলতে করা হয়েছে মেশিন এমব্রয়ডারি এবং জারদৌসি কাজের ব্যবহার। কো-অর্ড পোশাকের একটি বিশেষত্ব হলেও এর স্টাইলিং নিয়ে আপনাকে তেমন চিন্তা করতে হবে না। কো-অর্ডের সেট একসঙ্গে পরার জন্যই ডিজাইন করা হয়। এই পোশাকে গরমে আরামও হয় আবার স্টাইলটাও সহজে দেখায় ।

সারায় শিশুদের জন্য থাকছে পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, শার্ট-প্যান্ট সেট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, নিমা সেট, কাতুয়া, ডেনিম প্যান্ট ইত্যাদি। মেয়েশিশুদের জন্য কুর্তি, ফ্রক সেট, থ্রি-পিস, এথনিক থ্রি-পিস ও টু-পিস, লেহেঙ্গা, ফ্যাশন টপস, জাম্পস্যুট, নিমা সেট, সিঙ্গেল ফ্রক, ডুঙ্গারি, পোলো শার্ট, টি-শার্ট, পার্টি ফ্রক, গার্লস প্যান্ট ইত্যাদি। এ ছাড়া থাকছে বাবা-ছেলের পাঞ্জাবি ও পোলো শার্টের মিনিমি।

সম্পূর্ণ পশ্চিমা ধাঁচের সারা লাইফস্টাইলের ওয়েস্টার্ন সাব-ব্র্যান্ড ঢেউ-এর কালেকশনেও থাকছে ঈদের ছোঁয়া। ফিটেড টি-শার্ট, ওভারসাইজড টি-শার্ট, শর্ট সিøভ ক্যাজুয়াল শার্ট, লং স্লিভ ক্যাজুয়াল শার্ট, শর্টস, কার্গো প্যান্ট, ডেনিম প্যান্ট, জগার্স, ফ্যাশন টপস, মিডি ড্রেস, পার্টি ওয়্যার, স্কার্ট, ওয়েস্টার্ন সেট, পালাজো, ক্রপ টপ, গাউন, বুট কাট প্যান্ট, বডিকন, কাফতান পাওয়া যাবে সেখানে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঈদে বৃষ্টি ও গরমের আবহে এসেছে আরামদায়ক পোশাক

আপডেট সময় : ০৮:০২:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

ঈদ মানে খুশি। এই খুশি বাড়িয়ে দিতে নতুন পোশাকের কোনো জুড়ি নেই। বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবার জন্য চাই নতুন পোশাক। ঈদুল আজহা সামনে রেখে আরামদায়ক পোশাক এনেছে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো। দোকানগুলো এখন নতুন পোশাকে জমজমাট। প্রতি বছরের মতো সব হাউস নতুন থিম ও মোটিফে ঈদের পোশাক এনেছে। এ বিষয় নিয়ে এবারের লাইফস্টাইল পাতার প্রধান ফিচার

নিউ মার্কেটের স্টাইল জোনের স্বত্বাধিকারী জানান, আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছেন ক্রেতারা। আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। কারণ ঈদের সময় বৃষ্টি ও গরমের যৌথ আবহ থাকবে। এমন আবহাওয়ার জন্য আরামদায়ক পোশাকই ভালো।

মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের দোকানি আফজাল হোসেন বলেন, গরমের জন্য সুতি কাপড় ভালো। কারণ বৃষ্টিতে ভিজলেও শুকাতে বেশি সময় নেয় না। তবে তাদের কাছে সুতি থেকে শুরু করে সিল্ক, হাফ সিল্ক, জর্জেট, সিকোয়েন্স, বলাকা, অ্যান্ডি, লিনেন, মসলিন, শিফনসহ অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।

নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, বিকেলের পর থেকে সেখানে ভিড় জমতে শুরু করে। আর সন্ধ্যার পর সেখানে পা ফেলার জায়গা থাকে না। ক্রেতা সমাগম নিয়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেক দোকানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নতুন কালেকশনগুলো বাইরে টানিয়ে রাখা হয়েছে।

নিউ মার্কেটের দোকানি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে বাহারি রঙের পোশাকের সমাহার আছে। ঈদের পোশাকে মূল রঙের মধ্যে আছে অ্যাশ, লাইট ব্রাউন, মেরুন, সাদা, ক্রিম, মিন্ট, লাল, পিংক, সবুজ, নীল, গ্রিন পিচ ও সি গ্রিন। আর সহ-রঙ হিসেবে জায়গা পেয়েছে ম্যাজেন্টা, স্কাই ব্লু ও মাস্টার্ড।
কিছু ফ্যাশন হাউসে কাপল পোশাক বেশ নজর কেড়েছে। পরিবারের সবার জন্যই ম্যাচিং পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাশন হাউসে ম্যাচিং পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। দামও মোটামুটি নাগালের মধ্যে।

টোকিও স্কয়ারের দোকানগুলো নতুন শাড়ির সংগ্রহে সেজে উঠেছে। শাড়ির নকশায় ব্যবহার করা হয়েছে জরি, জারদৌসি, চুমকি। এ যেন শাড়িতে মুঘল আভিজাত্যের ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা। কাফতান, গাউন ও হাওয়াই পোশাকের চল এবারও আছে বলে জানালেন দোকানিরা। নারীদের জন্য আরো আছে সালোয়ার, টপস, কুর্তি। তবে এসব পোশাকের হাতা ও গলায় ফ্রিল বা কুঁচিতে কিছুটা নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

ছেলেদের পোশাকে সাদা রঙের প্রাধান্য বেশি। দোকানিরা বলছেন, গরম সাদা আরামদায়ক, তাই চাহিদা বেশি। সাদা শার্টে প্রিন্টের ফ্লোরাল, হাওয়াইসহ নানা মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্যান্টের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্যান্টের চল আছে। তবে চিনো কাট, সিøম কাট ও স্ট্রেট কাট বেশি দেখা যাচ্ছে। অবশ্য শার্টের চেয়ে ঈদের বাজারে পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি থাকে। অন্যান্য রঙের তুলনায় সাদা রঙের পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হয় বলে জানালেন নিউ মার্কেটের কয়েকজন বিক্রেতা। তাদের মতে, যাদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান থাকে তারাই মূলত নকশা করা পাঞ্জাবির সঙ্গে ভারী কাজের কটি কিনে থাকে।

পরিবার-স্বজন নিয়ে ঈদুল আজহা উৎসব আরো প্রাণবন্ত করতে বৈচিত্র্যময় পোশাকের বিশেষ আয়োজন নিয়ে এসেছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড কে-ক্রাফট। আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই সব পোশাক এনেছে তারা।
কে ক্র্যাফটের পরিচালক খালিদ মাহামুদ খান জানিয়েছে, তাদের আয়োজনে মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ ও কুর্তিতে ফ্রক স্টাইল, এ লাইন এবং রেগুলার শেপ ছাড়াও স্ট্রেইট কাট, রাফল, প্লিটেড, বক্স প্লিটেড স্টাইল থাকবে। নিজস্ব ডিজাইনের শাড়িতে মোটিফের ব্যবহার, কালার কম্বিনেশন ও ভ্যালু অ্যাডিশনে নানা মিডিয়ার ব্যবহার সবার দৃষ্টি কাড়বে। ছেলেদের জন্য রয়েছে রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি। এ ছাড়া পাওয়া যাবে স্মার্ট ক্যাজুয়াল শার্ট, এথনিক শার্ট, ফতুয়া।

শিশুদের জন্য থাকছে কে ক্র্যাফটের আলাদা আয়োজন। শিশুদের পোশাকে প্যাটার্ন, ফেব্রিক ও রঙের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। মেয়েশিশুদের জন্য তারা এনেছে সালোয়ার-কামিজ সেট, টপস-স্কার্ট সেট, টপস-পালাজো সেট, ফ্রক, কুর্তি, টপ। ছেলেশিশুদের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়াসহ নানা আয়োজন। বরাবরের মতো ফ্যামিলি পোশাক থাকছে কে-ক্রাফটের আয়োজনে। মা ও মেয়ের মিলিয়ে পরার মতো সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি এবং বাবা ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি। তাদের পোশাকে মেরুন, ম্যাজেন্টা, অরেঞ্জ, গ্রিন, ব্রাউন, নেভি ব্লুর মতো উজ্জ্বল রং ছাড়াও গরমের কথা মাথায় রেখে হোয়াইট, অফ-হোয়াইট, স্কাই, ল্যাভেন্ডার, রয়্যাল ব্লু, আইস ব্লু, লাইট পিংক, চেরি রেড, নিওন লাইম, ব্রোঞ্জ গ্রিন, পার্সিয়া ভায়োলেট রঙে থাকবে বেশির ভাগ পোশাক। বর্ষাকাল হলেও গরম থাকবে এবারের ঈদে, তাই আবহাওয়া মাথায় রেখেই ব্যবহার করেছে কটন, জ্যাকার্ড কটন, সুইস কটন, জর্জেট, লিনেন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, অরগানজা, ডুয়েল-টোন, নীব কটন, ভয়েল ফেব্রিক। কাঁথা, জামদানি, জিওমেট্রিক, টামজারা, ট্র্যাডিশনাল, মুঘলিও আর্ট, ইজিপশিয়ান মোটিফের অনুপ্রেরণা থেকে তাদের ঈদ আয়োজন। নকশা ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার হয়েছে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট।

ঈদ মানেই ভিন্ন আয়োজন নিয়ে হাজির হয় রঙ বাংলাদেশ। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। রঙ বাংলাদেশ বলছে, কোরবানির ঈদ ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হয়। তাই পোশাকেও সেই ভাবটা থাকা প্রয়োজন। রঙ বাংলাদেশ সবসময় স্থান, কাল, পাত্র বিবেচনায় পোশাক ডিজাইন ও তৈরি করে। রঙ বাংলাদেশের ঈদ আয়োজনের পোশাকে এবার থাকছে শাড়ি, ব্লাউজ, কামিজ, ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ (থ্রি-পিস), টপস, টিউনিক, পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, টি-শার্ট। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, সিরামিক মগ, উত্তরীয়। পোশাকের সঙ্গে আছে মানানসই মেটাল ও কাঠের তৈরি জুয়েলারি।

রঙ বাংলাদেশ জানিয়েছে, থিমভিত্তিক কালেকশনের পোশাক রঙ বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য। মূল থিম ক্ল্যাসিকাল ফোর এলিমেন্টস ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিটি পোশাকের মধ্যেই। তবে যেহেতু গ্রীষ্মকাল শেষে বর্ষার প্রারম্ভে ঈদ, তাই পোশাক ডিজাইনে সচেতনভাবেই রাখা রয়েছে ফোর এলিমেন্টসের ওয়াটার বা পানি থিম। পাশাপাশি আলপনা ও জিওমেট্রিক থিমেও পোশাক ডিজাইন করা হয়েছে।

পোশাক তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে উন্নতমানের কটন, সø্যাব কটন, লিনেন, হাফ সিল্ক, জর্জেট ফেব্রিকসের বিভিন্ন কম্বিনেশন। একই সঙ্গে ভ্যালু অ্যাড করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লকপ্রিন্ট, কারচুপি, এমব্রয়ডারি, প্যাচওয়ার্ক ও কাট অ্যান্ড স্যুর মাধ্যমে। পোশাকের কাপড়ে রাখা হয়েছে কটন, ডবি, জ্যাকার্ড, বিভিন্ন ধরনের জর্জেট, প্রিন্টেড কটন, প্রিন্টেড জর্জেট, নিট, ডেনিম, স্যাটিন, টিস্যু ইত্যাদি।

পোশাকে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন ট্রেন্ড ও নানারকমের টেক্সচারকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করেছে সারা। প্যাটার্নে থাকছে এ লাইন, ট্রাপিজি, ন্যারো কাট, ফিট অ্যান্ড ফ্লেয়ার, বিভিন্ন ধরনের সিলুইট প্যাটার্ন। রঙের ক্ষেত্রে লাল, সবুজ, সি-গ্রিন, নীল, ম্যাজেন্টা, কালো, সাদা, বাদামি, বেগুনি ও ল্যাভেন্ডারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

সারার আয়োজনে ছেলেদের জন্য থাকছে পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফরমাল শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ডেনিম প্যান্ট, চিনো প্যান্ট, কার্গো প্যান্ট, পায়জামা, কটি ইত্যাদি। মেয়েদের জন্য থাকছে সিঙ্গেল এথনিক কুর্তি, এথনিক টু-পিস ও থ্রি-পিস সেট, ফ্যাশন টপস, শার্ট, শাড়ি স্কার্ফ, টি-শার্ট এবং ম্যাটার্নিটি ওয়্যারের কালেকশন। কো-অর্ড পোশাক ঢিলেঢালা বা ওভারসাইজ ধরনের হওয়ায় দেখতে যেমন স্মার্ট, তেমন গরমে আরামদায়ক।

‘হুর’-এর সৌমিন আফরিন জানান, গরমের কথা মাথায় রেখেই কো-অর্ড সেটে তারা মলমল কটন কাপড়ের ব্যবহার করেছেন। তবে যেহেতু সামনে ঈদ তাই ডাবল জর্জেটের তৈরি কো-অর্ড সেটও এনেছেন তারা। আরামদায়ক ঢিলেঢালা পোশাকেও ঈদের আমেজ ফুটিয়ে তুলতে করা হয়েছে মেশিন এমব্রয়ডারি এবং জারদৌসি কাজের ব্যবহার। কো-অর্ড পোশাকের একটি বিশেষত্ব হলেও এর স্টাইলিং নিয়ে আপনাকে তেমন চিন্তা করতে হবে না। কো-অর্ডের সেট একসঙ্গে পরার জন্যই ডিজাইন করা হয়। এই পোশাকে গরমে আরামও হয় আবার স্টাইলটাও সহজে দেখায় ।

সারায় শিশুদের জন্য থাকছে পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, শার্ট-প্যান্ট সেট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, নিমা সেট, কাতুয়া, ডেনিম প্যান্ট ইত্যাদি। মেয়েশিশুদের জন্য কুর্তি, ফ্রক সেট, থ্রি-পিস, এথনিক থ্রি-পিস ও টু-পিস, লেহেঙ্গা, ফ্যাশন টপস, জাম্পস্যুট, নিমা সেট, সিঙ্গেল ফ্রক, ডুঙ্গারি, পোলো শার্ট, টি-শার্ট, পার্টি ফ্রক, গার্লস প্যান্ট ইত্যাদি। এ ছাড়া থাকছে বাবা-ছেলের পাঞ্জাবি ও পোলো শার্টের মিনিমি।

সম্পূর্ণ পশ্চিমা ধাঁচের সারা লাইফস্টাইলের ওয়েস্টার্ন সাব-ব্র্যান্ড ঢেউ-এর কালেকশনেও থাকছে ঈদের ছোঁয়া। ফিটেড টি-শার্ট, ওভারসাইজড টি-শার্ট, শর্ট সিøভ ক্যাজুয়াল শার্ট, লং স্লিভ ক্যাজুয়াল শার্ট, শর্টস, কার্গো প্যান্ট, ডেনিম প্যান্ট, জগার্স, ফ্যাশন টপস, মিডি ড্রেস, পার্টি ওয়্যার, স্কার্ট, ওয়েস্টার্ন সেট, পালাজো, ক্রপ টপ, গাউন, বুট কাট প্যান্ট, বডিকন, কাফতান পাওয়া যাবে সেখানে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ