এবার ঈদুল আজহায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তারাও টানা ১০ দিনের ছুটি কাটাবেন। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে লাখো মানুষ রাজধানী শহর ছেড়ে নাড়ির টানে ছুটছেন বিভিন্ন গন্তব্যে। ফলে তাদের শহুরে বাড়িঘর, ফ্ল্যাট ও অফিস জনশূন্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে ঈদের ছুটিতে আনন্দের পাশাপাশি নানা রকম শঙ্কাও ভর করেছে জনমনে। এ বিষয় নিয়েই আসন্ন ঈদুল আজহায় আমাদের বিশেষ আয়োজন
ঈদের দীর্ঘ ছুটির সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। বাসচালক, স্টাফদের মাঝে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, মহাসড়কে প্রশাসনের বাড়তি নিরাপত্তা না থাকলে যাত্রী ও চালকদের ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহাসড়কে বেশকিছু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটকে ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। তবে ঈদ কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত ও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ বলছে, তিনটি পর্যায়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তা হলো ঈদ-পূর্ববর্তী, ঈদের সময় ও ঈদ-পরবর্তী।
অন্যদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেড় কোটি মানুষ এবার ঈদে ঢাকা ছাড়বে, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
মহাসড়কের বাসচালকরা অভিযোগ করেছেন, প্রায়ই মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। কক্সবাজারের চকরিয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, যমুনা সেতু, টাঙ্গাইল হাইওয়েসহ বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীবেশে অথবা বাস থামিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মহাসড়কে তেমন দেখা যায় না। মাঝে মাঝে মহাসড়কে দেখা গেলেও লক্ষ্য করা যায়, তারা এক জায়গায় দীর্ঘ সময় বসে আছেন। অথচ হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের সব সময় সড়কে টহলের উপরে থাকার কথা। তাদের ডিউটির গাফিলতির কারণে প্রায় সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন বাসচালকরা।
ডাকাতি প্রসঙ্গে বাসচালকরা: এনা পরিবহনের চালক মো. আবুল কাশেম জানান, তিনি মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কক্সবাজার ও সিলেট জেলায় শিফটিং অনুযায়ী দিনেরাতে যাত্রী বহন করে থাকেন। মহাসড়কে প্রায় সময় বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এটির কারণ তিনি মনে করেন, সড়কে পুলিশ উপস্থিতি খুবই কম। পুলিশকে মাঝে মাঝে সড়কে দেখা গেলেও তারা দলবদ্ধভাবে সড়কের কোনো কোনো দোকানের সামনে দীর্ঘ সময় চা পানে ব্যস্ত থাকে। অথচ পুলিশের নিয়ম হচ্ছে, সব সময় চলমান টহলের উপরে থাকা। তাদের এই অবহেলার কারণেই হাইওয়েতে বাসে ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। অনেক সময় দেখা যায়, চলন্ত বাসে ঢিল মারছে ও বাসের চাকা লক্ষ্য করে নানারকম জিনিস ছুড়ে মারা হচ্ছে। এগুলো পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ঈদযাত্রায় মহাসড়কে ডাকাতির আতঙ্কে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, চালক হিসেবে সবার আগে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হয় আমাদের। কারণ আমাদের রুটি-রুজি তাদের দিয়ে।
রাজধানীর মহাখালী থেকে সিলেটগামী বিলাস পরিবহনের চালক মো. সোবহান মিয়া বলেন, শুধু ঈদে নয়; ৯-১০ মাস ধরে ডাকাত আতঙ্কে আমাদের থাকতে হচ্ছে। প্রায় সময় মহাসড়কে বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। পুলিশের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি মহাসড়কের চলাচলকারী যেকোনো বাসে নিরাপত্তার জন্য কেঁচিগেট ব্যবহার করা উচিত।
সর্বসাধারণ মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কা: হস্তশিল্প ব্যবসায়ী খিলগাঁও এলাকার ভাড়াটিয়া শরিফুল ইসলাম বলেন, নাড়ির টানে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে জামালপুর যেতে হবে। বাড়ি যাওয়ার আগে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বর্তমান ঠিকানার বাসা তালাবদ্ধ করে যেতে হয়। গণমাধ্যমে প্রতিদিনই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনার খবর পাই। আর ঈদে খালি বাসায় চুরির ঘটনা একটু বেশি হয়ে থাকে। তালাবদ্ধ করে রেখে যাওয়ার পরও বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে চিন্তায় আছি। তবুও বাড়ি যেতে হবে।
পুরান ঢাকার একটি কারখানার শ্রমিক বিলকিস আক্তার বলেন, বোনাস পেয়েছি, মানুষজনের কাছে শুনছি, বাসে ডাকাতি হয়। অজ্ঞান পার্টি ও চুরি-ছিনতাই অনেক বেড়ে গেছে। আমি আতঙ্কে আছি। যদি আমার টাকা ছিনিয়ে নেয়, তাহলে আমি তো টাকা হারানোর শোকে মরেই যাব!
সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা: দেশের অধিকাংশ মহাসড়কে ছোট বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলছে। ডাকাতির হাত থেকে রক্ষা পায়নি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সও। চলতি বছরের মে মাসে টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় একটি ডাকাতদল। ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে আল ইমরান পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে। যেতে যেতে পথে অনেক যাত্রীকে তোলা হয় বাসটিতে। বাসে থাকা যাত্রীবেশী ৮-১০ জন ডাকাত জিমি করে বাকি যাত্রীদের কাছ থেকে সবকিছু লুটে নেয়। কয়েক ঘণ্টা ডাকাতরা বাসের ভেতরে তাণ্ডব চালায়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এই মহাসড়কে ইউনিক রয়েলসের একটি বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালের ২ আগস্ট একই কায়দায় কুষ্টিয়াগামী একটি বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল।
অন্যদিকে ডাকাতদের খপ্পর থেকে পার পায়নি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স। গত ২২ মে রাত একটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়ায় সড়কে গাছ ফেলে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল লাশের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মারধর করে অর্ধলক্ষাধিক টাকা ও কয়েকটি মোবাইল ফোন লুটে নিয়েছে। এসময় ডাকাতদের হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যারিকেড দিয়ে রামদা হাতে ডাকাতির চেষ্টার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। গত ৬ মে রাত ২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ওমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চালকের দক্ষতায় ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পান ওই গাড়ির আরোহীরা। ঘটনার সময় গাড়ির একটি ড্যাসবোর্ড ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটি রেকর্ড হয়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে রাস্তা বন্ধ করে ওৎ পেতে থাকা ডাকাতরা একটি গাড়ি আসতেই বড় রামদা নিয়ে গাড়িটির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু গাড়িচালক ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে না গিয়ে দ্রুত গাড়িটি নিয়ে কেটে পড়তে সমর্থ হন।
গত ২৪ মে রাত ২টায় হবিগঞ্জ বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়কের কুন্ডুর পাড় এলাকার অদূরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতরা পুলিশের গাড়ি জিম্মি করে কয়েকটা যানবাহনে ডাকাতি করে মালামাল লুট করে। ঘটনার পরে এ বিষয়ে বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ডাকাতরা পুলিশের গাড়িটি যাত্রী ভেবে আটকে দেয়। পরে পুলিশ সদস্যরা ডাকাতদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বক্তব্য: বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মহাসড়কের নিরাপত্তা এবার নড়বড়ে। প্রতিদিন মহাসড়কের কোথাও না কোথাও এমনিতেই ডাকাতি হচ্ছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকলে এবার ডাকাতের কবলে পড়ার আশঙ্কা আছে। আর লম্বা ছুটির কারণে ঢাকা থেকে ধাপে ধাপে মানুষ ঢাকার বাইরে যাবে। এবার ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষ ঈদের সময় যার যার এলাকায় যাবে। লম্বা ছুটি হওয়ার কারণে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তিনি বলেন, এই ঈদে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। তাই শুধু তিন-চার দিনের জন্য নিরাপত্তা বাড়ালে হবে না। আরেকটি বিষয় হলো যেভাবে ছিনতাই হচ্ছে, তাতে ঈদে ঘরমুখী মানুষ বাসা থেকে বাস, রেল বা লঞ্চ টার্মিনাল পর্যন্ত নিরাপদে যেতে পারেন কি না, তাও আশঙ্কার বিষয়। পাশাপাশি অজ্ঞান পার্টি, প্রতারক দল, টানা পার্টি, মলম পার্টিসহ নানা ধরনের অপরাধীরা সক্রিয় রয়েছে। দেশের সড়ক মহাসড়কের নিরাপত্তায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি কমিউনিটি ট্রাফিক পুলিশ, বাংলাদেশ স্কাউট ও শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মাঠে সক্রিয় করার অনুরোধ জানান তিনি।
নিরাপত্তা বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের বার্তা: পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর বলেন, আমাদের মূলত তিনটি পর্যায়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে—ঈদ পূর্ববর্তী, ঈদের সময় এবং ঈদ পরবর্তী। পবিত্র ঈদুল আজহা শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কৌশলগত স্থানে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, রাত্রিকালীন টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় সবাই যাতে নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারেন এবং ঈদ পরবর্তী সময়েও স্বস্তিতে কর্মস্থলে ফিরতে পারেন, এ জন্য মহাসড়কগুলোয় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তায় আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। মোতায়েনকৃত পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে কাজ করবে। ‘মানি এসকট’ সুবিধা যদি কেউ নিতে চাইলে তাহলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। পুলিশের কন্ট্রোল রুম এবং সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হবে। জরুরি প্রয়োজনে ‘৯৯৯’ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। তাছাড়া কন্ট্রোল রুমের নম্বর সমূহেও প্রয়োজনবোধে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া পশুর হাটে নিরাপত্তার পাশাপাশি কোরবানির পশু আনা নেওয়ায় সড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে আমাদের সাইবার পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপির বক্তব্য: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাজধানীতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর পুলিশ নিয়মিত টহল কার্যক্রম জোরদার করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চেকপোস্ট পরিচালনা করছে। এ ছাড়া আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকায় ২০টি পশুর হাটে পুলিশের কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা পুলিশের উপস্থিতি থাকবে।
র্যাবের বাড়তি নিরাপত্তা: র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি মুত্তাজুল ইসলাম বলেন, জনগণের নিরাপত্তায় সব সময় সজাগ থাকে র্যাব। আসন্ন ঈদুল আজহায় র্যাবের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার সব পশুর হাটের পাশাপাশি দেশের সব হাটের নিরাপত্তার কাজ করছে র্যাব। ঈদে মানুষের নিরাপত্তায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এ সময় ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা তৎপর আছেন। র্যাব জানিয়েছে, ঈদে নিরাপত্তায় গোয়েন্দা, ফুট প্যাট্রল, মোবাইল প্যাট্রল, সাইবার ওয়ার্ল্ডের নজরদারি থাকবে। সব ধরনের নিরাপত্তার পাশাপাশি নকল টাকার ব্যবহার প্রতিরোধে বরাবরের মতো সজাগ আছে র্যাব।
হাইওয়ে পুলিশের কর্মতৎপরতা: অ্যাডিশনাল আইজিপি (হাইওয়ে পুলিশ) মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেছেন, দেশের হাইওয়ে সড়কগুলোতে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও র্যাব মিলে প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য জনগণের নিরাপত্তার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনী আমাদের অনেক সহযোগিতা করছে। ঈদযাত্রা আরো সুন্দর করতে হাইওয়ে পুলিশের এএসপি থেকে ডিআইজি পর্যন্ত শিফটিং ভিত্তিতে এখন সরাসরি সড়কে অবস্থান করছেন এবং আমিও বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। তিনি বলেন, দুই-একদিন আগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এক প্রবাসী ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন। ডাকাতরা মাইক্রোবাস নিয়ে ডাকাতি করার চেষ্টা করলে আমাদের পুলিশ প্রতিরোধ করে। পরে ডাকাতরা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। পরে মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। টাঙ্গাইল মহাসড়ক, যমুনা সেতু মহাসড়ক, চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও পদ্মা সেতু মহাসড়কসহ অন্যান্য যত সড়ক আছে সব জায়গাই পর্যাপ্ত পুলিশ রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করছে। এক প্রশ্নের জবাবে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান বলেন, পুলিশ সব সময় টহলের উপরেই থাকে, একটু ক্লান্ত হলে চা-নাস্তা করতেই পারে। তবে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য হাইওয়েতে কাজ করছেন।
প্রযুক্তিকে ভয় পায় অপরাধীরা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, আমাদের দেশে উৎসবের সময়, বিশেষ করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সঙ্গে নানা ধরনের অপরাধের একটি সুস্পষ্ট যোগ রয়েছে। ঈদ ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে যে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দেয়, তা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হতে হবে আরো তৎপর ও প্রযুক্তিসম্পৃক্ত। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে আমরা দেখতে পাই গরুর হাট ও এর আশেপাশে ছিনতাই, চুরি, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। গ্রামের সহজ-সরল মানুষজন হাটে পশু নিয়ে আসেন, আর অপরাধীরা নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। ফলে উৎকণ্ঠার মধ্যেই মানুষকে ঈদ উদযাপন করতে হয়। এ বছরের বাস্তবতা আরো জটিল। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি এবং বাহিনীর কার্যকারিতায় ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা দৃশ্যমান না হলে অপরাধীরা তা সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে এবং নানাভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে ।
ড. হক বলেন, ঈদের সময় অনেক মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে যান। ফলে শহরে ফাঁকা বাসা-বাড়িতে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে তার পরামর্শ- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এখনই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। গরুর হাট ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, বাড়াতে হবে টহল। সেইসাথে বাড়ি ও অফিস এলাকায় বসানো সিসি ক্যামেরা সচল এবং কার্যকর করতে হবে। বাড়িতে সিসি ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণ করা বাড়িওয়ালাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনেরও তৎপরতা বাড়ানো দরকার। অনেক মূল সড়ক ও গলিতে পর্যাপ্ত স্ট্রিটলাইট নেই। অন্ধকারেই অপরাধ বেশি ঘটে। এখনো ঈদের আগে কিছুদিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে যেসব এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বাড়ির প্রহরীদের পরিচয়পত্র ও জীবনবৃত্তান্ত থানায় জমা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, ডিএমপি ও সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অপরাধীরা প্রযুক্তিকে ভয় পায়—সেই ভয়ের জায়গাটা তৈরি করতে হবে। আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যদি সিসি ক্যামেরা তদারকি ও টহল বাড়ানোসহ প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে উৎসবের সময় মানুষ অনেকটাই নিরাপদে থাকতে পারবে। এর পাশাপাশি সবাইকে নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতা করতে হবে।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ