ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদেও মলিন বেনারসি পল্লী

  • আপডেট সময় : ০১:৫৭:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মে ২০২১
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারী ঠেকানোর লকডাউনের মধ্যে রোজার ঈদের আগে রাজধানীর অন্যান্য বিপণিবিতানে জমিয়ে বিক্রি চললেও মিরপুরের বেনারসি পল¬ীতে ক্রেতার অভাবে হাহাকার চলছে। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ আর ভারতীয় ভিসা সহজ হওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরেই বিক্রি কমে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন এখানকার বিক্রেতারা। এর মধ্যে গত বছরও মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে ঈদ ভালো যায়নি তাদের। এবার তা পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সাজালেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সব হিসাব উলটপালট করে দিয়েছে। ঈদের কেনাকাটায় ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠার যে আশা দেখছিলেন বিক্রেতারা, ‘তার গুঁড়ে বালি’। উল্টো এখন কি পরিমাণ লোকসান হয় সেই চিন্তায় রয়েছেন তারা। শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুরে ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকার পাশে অবস্থিত এই বেনারসি পল¬ীতে ঐতিহ্যবাহী বেনারসিসহ সব ধরনের শাড়ির পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। দোকানের সামনে কর্মীরা হাঁকডাক করলেও ক্রেতা খুবই কম। ফলে অনেক দোকানিই পার করছেন অলস সময়। বিক্রয়কর্মীরা জানান, বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এক বছর ধরেই তাদের বিক্রি কম। এবার ঈদেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের তারা পাচ্ছেন না। আর আর্থিক সঙ্কটের কারণে মধ্যবিত্তরাও আসছেন কম। বেনারসি পল¬ীর নীল আঁচল শাড়িজ-এর ব্যবস্থাপক মো. মামুন বলেন, অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি ‘একেবারে নেই’। বিক্রি অনেক কম। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার শাড়িও বিক্রি করতে পারছি না। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কাস্টমার আসে না। মানুষের মনে তৃপ্তিও নাই। তৃপ্তি নিয়ে যে একটা উৎসব করবে, সে ব্যাপারটা নাই। গত বছর দোকানদারি করতেই পারি নাই। এই বছরও সেরকম অবস্থা। পল¬ীর মধ্যে বেশ বড় দোকানের এই ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমাদের মতো বড় দোকানগুলোতে কিছু শাড়ি তাও বিক্রি হচ্ছে, ছোট দোকানগুলোতে বিক্রি একেবারেই নেই।’ এ কারণে ‘সীমিত লাভে’ শাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান মামুন।
হতাশার সুর লাল বউ বেনারসির বিক্রয়কর্মী মহসীন রেজারও। তিনি বলেন, রোজায় একেবারেই বিক্রি নাই। একে তো করোনাভাইরাস, তার ওপর লকডাউন। আর সব মিলিয়ে মানুষের হাতে অর্থ নাই, শাড়ি কিনবে কীভাবে?’ দোকানের মালিক এফ হেলাল উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘শাড়ি ব্যবসায়ী বা কাপড় ব্যবসায়ীরা সাধারণত ঈদের উপর নির্ভরশীল থাকে। ঈদের সময় একটা ভালো বেচাকেনা হয়, সারা বছর কোনো রকম খেয়ে পরে থাকে। সেই জায়গায় গত বছরের পর এবারও খারাপ অবস্থা।’ বিয়ের অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় তাদের আরও বেশি সঙ্কটে ফেলেছে বলে জানান তিনি। অনলাইনে বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ধাক্কাও বেনারসি পল¬ীতে পড়েছে বলে মনে করেন তাওসিফ বেনারসি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম। করোনাভাইরাসের কারণে এখন ভিআইপি কাস্টমাররা বের হচ্ছে না। তারা অনলাইনে বসেই কেনাকাটা করছেন। আবার সাধারণ যারা, তারা বিলাসিতা বাদ দিয়ে খাবারের চিন্তা করছেন।’ মনে রেখ শাড়িজ’র ব্যবস্থাপক মাসুদ কবির লিটনের কাছে বিক্রির হাল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ২২ বছরের কর্মজীবনে এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতি আগে দেখেননি। এখন আর এগুলা নিয়ে কথাই বলতে ইচ্ছা করে না। মানুষের হাতে তো টাকা নাই। কিনবে কী করে? আগে কাস্টমারের কারণে কথা বলার সুযোগও হত না। আর এখন কাস্টমারের অপেক্ষায় সময় পার করতে হচ্ছে। তাওসিফ বেনারসি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, নিজেদের ১৮ জন কর্মীর মধ্যে ৯ জনকে মহামারীর মধ্যে ছাঁটাই করতে হয়েছে। একেবারেই বিক্রি নাই। বিক্রি না হলে মালিক বেতন দেবে কীভাবে? বিক্রি কমে যাওয়ায় নিজেদের ৪ জন কর্মীকে ছাঁটাই করতে হয়েছে বলে জানান মনে রেখ শাড়িজ’র ম্যানেজার মাসুদ কবির লিটন। লাল বউ বেনারসির মালিক হেলাল উদ্দীন বলেন, গত এক বছরে অনেক ব্যবসায়ী ‘পথে বসে গেছেন’। যারা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করেন, তাদের অনেকের ব্যবসাই বন্ধ হয়ে গেছে। আর আমরা কোন রকম আছি। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, আমরাও সমস্যায় পড়ে যাব।’ তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ীদেরই তো সরকার সুবিধা দিয়েছে। লোনের মাধ্যমে হোক বা যে কোনোভাবে সহযোগিতা করলে ব্যবসায়ীদের উপকার হত।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঈদেও মলিন বেনারসি পল্লী

আপডেট সময় : ০১:৫৭:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মে ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারী ঠেকানোর লকডাউনের মধ্যে রোজার ঈদের আগে রাজধানীর অন্যান্য বিপণিবিতানে জমিয়ে বিক্রি চললেও মিরপুরের বেনারসি পল¬ীতে ক্রেতার অভাবে হাহাকার চলছে। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ আর ভারতীয় ভিসা সহজ হওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরেই বিক্রি কমে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন এখানকার বিক্রেতারা। এর মধ্যে গত বছরও মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে ঈদ ভালো যায়নি তাদের। এবার তা পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সাজালেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সব হিসাব উলটপালট করে দিয়েছে। ঈদের কেনাকাটায় ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠার যে আশা দেখছিলেন বিক্রেতারা, ‘তার গুঁড়ে বালি’। উল্টো এখন কি পরিমাণ লোকসান হয় সেই চিন্তায় রয়েছেন তারা। শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরপুরে ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকার পাশে অবস্থিত এই বেনারসি পল¬ীতে ঐতিহ্যবাহী বেনারসিসহ সব ধরনের শাড়ির পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। দোকানের সামনে কর্মীরা হাঁকডাক করলেও ক্রেতা খুবই কম। ফলে অনেক দোকানিই পার করছেন অলস সময়। বিক্রয়কর্মীরা জানান, বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এক বছর ধরেই তাদের বিক্রি কম। এবার ঈদেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের তারা পাচ্ছেন না। আর আর্থিক সঙ্কটের কারণে মধ্যবিত্তরাও আসছেন কম। বেনারসি পল¬ীর নীল আঁচল শাড়িজ-এর ব্যবস্থাপক মো. মামুন বলেন, অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি ‘একেবারে নেই’। বিক্রি অনেক কম। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার শাড়িও বিক্রি করতে পারছি না। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কাস্টমার আসে না। মানুষের মনে তৃপ্তিও নাই। তৃপ্তি নিয়ে যে একটা উৎসব করবে, সে ব্যাপারটা নাই। গত বছর দোকানদারি করতেই পারি নাই। এই বছরও সেরকম অবস্থা। পল¬ীর মধ্যে বেশ বড় দোকানের এই ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমাদের মতো বড় দোকানগুলোতে কিছু শাড়ি তাও বিক্রি হচ্ছে, ছোট দোকানগুলোতে বিক্রি একেবারেই নেই।’ এ কারণে ‘সীমিত লাভে’ শাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান মামুন।
হতাশার সুর লাল বউ বেনারসির বিক্রয়কর্মী মহসীন রেজারও। তিনি বলেন, রোজায় একেবারেই বিক্রি নাই। একে তো করোনাভাইরাস, তার ওপর লকডাউন। আর সব মিলিয়ে মানুষের হাতে অর্থ নাই, শাড়ি কিনবে কীভাবে?’ দোকানের মালিক এফ হেলাল উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘শাড়ি ব্যবসায়ী বা কাপড় ব্যবসায়ীরা সাধারণত ঈদের উপর নির্ভরশীল থাকে। ঈদের সময় একটা ভালো বেচাকেনা হয়, সারা বছর কোনো রকম খেয়ে পরে থাকে। সেই জায়গায় গত বছরের পর এবারও খারাপ অবস্থা।’ বিয়ের অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় তাদের আরও বেশি সঙ্কটে ফেলেছে বলে জানান তিনি। অনলাইনে বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ধাক্কাও বেনারসি পল¬ীতে পড়েছে বলে মনে করেন তাওসিফ বেনারসি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম। করোনাভাইরাসের কারণে এখন ভিআইপি কাস্টমাররা বের হচ্ছে না। তারা অনলাইনে বসেই কেনাকাটা করছেন। আবার সাধারণ যারা, তারা বিলাসিতা বাদ দিয়ে খাবারের চিন্তা করছেন।’ মনে রেখ শাড়িজ’র ব্যবস্থাপক মাসুদ কবির লিটনের কাছে বিক্রির হাল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ২২ বছরের কর্মজীবনে এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতি আগে দেখেননি। এখন আর এগুলা নিয়ে কথাই বলতে ইচ্ছা করে না। মানুষের হাতে তো টাকা নাই। কিনবে কী করে? আগে কাস্টমারের কারণে কথা বলার সুযোগও হত না। আর এখন কাস্টমারের অপেক্ষায় সময় পার করতে হচ্ছে। তাওসিফ বেনারসি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, নিজেদের ১৮ জন কর্মীর মধ্যে ৯ জনকে মহামারীর মধ্যে ছাঁটাই করতে হয়েছে। একেবারেই বিক্রি নাই। বিক্রি না হলে মালিক বেতন দেবে কীভাবে? বিক্রি কমে যাওয়ায় নিজেদের ৪ জন কর্মীকে ছাঁটাই করতে হয়েছে বলে জানান মনে রেখ শাড়িজ’র ম্যানেজার মাসুদ কবির লিটন। লাল বউ বেনারসির মালিক হেলাল উদ্দীন বলেন, গত এক বছরে অনেক ব্যবসায়ী ‘পথে বসে গেছেন’। যারা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করেন, তাদের অনেকের ব্যবসাই বন্ধ হয়ে গেছে। আর আমরা কোন রকম আছি। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, আমরাও সমস্যায় পড়ে যাব।’ তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ীদেরই তো সরকার সুবিধা দিয়েছে। লোনের মাধ্যমে হোক বা যে কোনোভাবে সহযোগিতা করলে ব্যবসায়ীদের উপকার হত।’