অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ : ঈদ মুসলমানদের প্রধান উৎসব। ঈদ উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রাম বা মফস্বলে নিজ পরিবারের কাছে চলে যান। এ বছর ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে গ্রামমুখী মানুষের ভিড় আরও বেশি। এ দীর্ঘ ঈদযাত্রায় সুস্থ থাকতে কিছু বিষয়ে সতর্কতা মেনে চলা ভালো।
ব্যাগ গোছানোর সময় খেয়াল করুন পর্যাপ্ত ওষুধ নিয়েছেন কি না। ঈদে সবখানে ওষুধের দোকান খোলা নাও থাকতে পারে আর গ্রামগঞ্জে সব ওষুধ নাও মিলতে পারে। তাই যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল ইত্যাদির জন্য নিয়মিত ওষুধ খান, তারা যথেষ্ট পরিমাণে ওষুধ সঙ্গে নিন। যারা ইনহেলার বা ইনসুলিন ব্যবহার করেন, তারাও দেখে নিন পর্যাপ্ত আছে কি না। বাস বা ট্রেনযাত্রায় ইনসুলিন একটি বরফ দেওয়া ফ্লাস্কে নেওয়া ভালো; যাতে নষ্ট না হয়। সঙ্গে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে কিছু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, বমির ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেট ও ফার্স্ট এইড সামগ্রী নিতে পারেন।
ঈদযাত্রার আগে ভারী খাবার না খাওয়া ভালো। এতে পথে বমি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পথে যদি ইফতার বা সেহরি করতে হয়, সঙ্গে হালকা শুকনা খাবার- মুড়ি, বিস্কুট, খই, স্যান্ডউইচ, বাদাম ও ফলমূল নিতে পারেন। সেহরি বা ইফতারে পথের কেনা খাবার খাবেন না। বিশুদ্ধ পানি রাখুন। শিশুদের খাবার আলাদা করে সঙ্গে নিন। যানজট থাকলে রান্না করা ঝোল-মসলাযুক্ত খাবার নষ্ট হতে পারে, তাই শুকনা খাবার নেওয়া ভালো।
অনেকের বাস বা ট্রেনে মাথা ঘোরে, বমি হয়। এক্ষেত্রে বাস বা গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসা ভালো। বাতাস আসে এমন জায়গায় বসুন। মনোযোগ সরাতে বাইরের দিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখবেন বা ভালো কিছু শুনবেন। পলিথিন ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। যাত্রার আগে সেহরি বা ইফতারে বমির ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
ঈদের সময় অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য বাড়ে। তাই সতর্ক থাকুন।
বাস বা গাড়ি গ্যাস স্টেশনে গ্যাস নেওয়ার সময়, ফেরিতে ওঠানামার সময় নেমে পড়াই ভালো। এমন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওঠানামা বা রাস্তা পেরোনোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। বাসচালক অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার করলে যাত্রীদের উচিত প্রতিবাদ করা। লঞ্চ বা বাসে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যাবেন না। ট্রেন-বাসের ছাদে কখনো ভ্রমণ করবেন না।
ঈদযাত্রায় শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিন। কখনো শিশুদের কোথাও একা ছাড়বেন না। অপরিচিত কারো কাছে দেবেন না। পথে টয়লেটে যেতে হলে নিজে সঙ্গে থাকুন। ধুলাবালু বা গাড়ির ধোঁয়া থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা ভালো অথবা বারবার ভেজা টিস্যু বা রুমাল দিয়ে চোখ-মুখ মুছে দিন। শিশুদের কিছু খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে দিন। সঙ্গে হ্যান্ডওয়াশ রাখা ভালো।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ