ঢাকা ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

ইয়াসের প্রভাবে উপকূলীয় জেলার নিন্মাঞ্চলে প্লাবিত

  • আপডেট সময় : ১২:৩২:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

দেশের খবর ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক উচ্চতার জোয়ারে দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, বরগুনা এলাকার নি¤œাঞ্চল এবং চরাঞ্চলগুলোতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ টপকে ওই পানি প্রবেশ করছে। সুন্দরবনের দুবলার চরসহ জেলে পল্লিগুলোর বেশির ভাগ এলাকা এরই মধ্যে ডুবে গেছে। দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়-
বরগুনায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’র প্রভাবে বরগুনাতে নদীর পানি বেড়েছে। এতে জেলা সদরের থানাপাড়া, কলেজরোড, চরকলোনী ও তালতলী উপজেলার খোট্টারচড় এলাকার কয়েকহাজার বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পানিতে ভেসে গেছে ২৫টি ঘের ও প্রায় ৭০টি পুকুরের মাছ। সদরের থানাপাড়া এলাকার আবির মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মে সকাল থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর ১২টার দিকে জোয়ারের পানি উঠে যায় থানাপাড়া এলাকায়।’ কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা ও টেলিকম ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত বরগুনার আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিলো। তবে আজ সকালে পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের বসতঘর।’ চরকলোনী এলাকার শাফিন আহমেদ বলেন, ‘চরকলোনীর কয়েকশ ঘরে পানি ঢুকেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার।’ তালতলীর খোট্টার চড়ের সুলতান মিয়া বলেন, ‘বলেশ্বরের পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে খোট্টারচড়। আমার মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ একই এলাকার বাসিন্দা হাইরাজ মাঝি বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে এলাকার ২৫টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে।’ বরগুনা পানি উন্নায়ন বোর্ডের প্রকৌশলী কাইছার আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জেলায় প্রধান দুটি নদীর মধ্যে বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার আড়াই ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ ইঞ্চি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝূঁকিপূর্ণ রয়েছে।’ বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, মাছের ঘেরের ক্ষয়-ক্ষতির কথা তারা জানেন। পরে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। সবাইকে সতর্ক থেকে প্রশাসনের কথা মেনে চলার অনুরোধ করেন তিনি।
পটুয়াখালী, রাঙ্গাবালী উপজেলার ১৩ গ্রাম প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরআন্ডা, দক্ষিণ চরমোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবশে করে। এতে উপজেলার ১৩ গ্রাম ছাড়াও বেড়িবাঁধের বাইরের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলো হলো- চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা, নয়াচর, উত্তর চরমোন্তাজ, চরবেষ্টিন, মোল্লা গ্রাম, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরনজির, কোড়ালীয়া, কাউখালীচর, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মরাজাঙ্গী, চিনাবুনিয়া, বিবির হাওলা, গোলবুনিয়া ও চরলতা। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই এসব এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী। ধারণা করা হচ্ছে, বিগত দিনের রেকর্ড অতিক্রম করবে এবারের ঘূর্ণিঝড়। রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জানান, চালিতাবুনিয়া একটি ভাঙন কবলিত এলাকা। এখানে বেড়িবাঁধ বলতে কিছু নেই। অনেক আগেই বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। নতুন করে বেড়িবাঁধ তৈরি না করায় জোয়ারের পানিতে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।চরমোন্তাজের ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ মিয়া জানান, চরআন্ডার বেড়িবাঁধটি দীর্ঘদিন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হলেই পানি প্রবেশ করে লোকালয় তলিয়ে যায়। মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকে। রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি লোকালয় প্রবেশ করছে। এতে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এছাড়া বেড়িবাঁধের বাইরেও কয়েকটি গ্রামের মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নোয়াখালী, হাতিয়ায় ১১ গ্রাম প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে অন্তত ১১টি গ্রামের লোকালয়ে। প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে গৃহপালিত পশুগুলোকে পাশের আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে প্লাবিত হয় গ্রামগুলো। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জোয়ার আসে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জোয়ার বাড়তে থাকে। মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ে। এতে তিন-চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে চরঈশ্বর ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড। এছাড়াও অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের মদিনা গ্রাম, বান্দাখালী গ্রাম, মুন্সি গ্রাম, মোল্লা গ্রাম, আদর্শগ্রাম ও ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দিনাজ উদ্দিন জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট উচ্চতায় জোয়ার হওয়ায় নিঝুমদ্বীপের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবন্দি ৫০ হাজার মানুষ। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। তবে গরু, মহিষসহ গৃহপালিত পশুগুলোকে উঁচু রাস্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে কৃষি জমির ফসল। হাতিয়া উপজেলা সিপিপি কর্মকর্তা বদিউজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমার প্রভাব এক হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতের জোয়ারে পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা ও মানুষকে নিরাপদ রাখতে হাতিয়ায় সিপিপির ১৭৭টি ইউনিট ও সরকারি ১৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাগেরহাটে নিন্মাঞ্চলে প্লাবনের শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রধান নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে জেলার প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি বেড়েছে। বুধবার পূর্ণিমা তিথিতে পানি আরও বাড়বে। এতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘জেলার উপকূলীয় এলাকায় যেসব পোল্ডার আছে তাদের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ উপ-প্রকল্পের আওতায় শরণখোলায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষের পথে। অন্য আরও তিনটি পোল্ডারের অধীনে থাকা বেড়িবাঁধগুলো অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। ‘তার পরও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। জোয়ারের পানির চাপে কোথাও বাঁধ ভেঙে গেলে আমরা তা মেরামতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’ আর জেলার ৬৭ হাজারের অধিক চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের রক্ষার জন্য চাষিদের জাল দিয়ে ঘিরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল।
তাছাড়া ঝড়ের পূর্বাভাসের পর নদী ও সাগরে মাছ ধরার শথ শত ট্রলার কুলে ফিরে বাগেরহাটের কেবি মাছ বাজার ঘাটে অবস্থান নিয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার বলেন, জেলায় ৩৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। কয়েকশ সেচ্ছাসেবক সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। উপকূলবাসীকে সচেতন করতে মাইকিং করা হচ্ছে।
খুলনায় উচ্চ ঝুঁকিতে ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এক বছর পার হলেও খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে পাউবোর বেড়িবাঁধ। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকার সাধারণ মানুষ। আর এই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। খুলনা পাউবো সূত্র জানায়, জেলায় ৮৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ২০ কিলোমিটার বাঁধ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে স্থানীয়দের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের দৈর্ঘ্য আরও বেশি হবে। উপকূলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় বিধস্ত খুলনাঞ্চলের উপকূলে দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় অধিকাংশ বাঁধের বেহাল দশা। জোয়ার একটু বেশি হলেই বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ধেয়ে আসার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিধ্বস্ত খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপসহ উপকূলবাসী। নদ তীরবর্তী বেড়িবাঁধের বাইরে ও বাঁধের কাছাকাছি বাসিন্দারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আম্ফানের পর নড়বড়ে ও ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় রয়েছে কয়রাসহ উপকূলের বেড়িবাঁধ। এরফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে উপকূল। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে ইয়াস।’ তিনি বলেন, ‘বাঁধের যেসব জায়গায় এক বছর আগে আম্ফানে ভেঙে গিয়েছিল, সেসব জায়গার সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি। এখন জোয়ারে পানি ওঠে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যদি আঘাত হানে তাহলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে।’
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘খুলনা ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার আওতাধীন নয়, ঝুঁকিপূর্ণ এ উপজেলাটি সাতক্ষীরা পাউবোর অধীন।’ তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ও সিনথেটিক ব্যাগ মজুত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, ‘খুলনাঞ্চলের বেড়িবাঁধ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে কয়রা ও শ্যামনগরের প্রকল্প দুটি অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’
সাতক্ষীরায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ, আতঙ্কে উপকূলবাসী
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর কারণে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি এলাকায় লাল পতাকা উড়িয়ে ঝড়ের সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে। সাতক্ষীরার উপকূলে ৪৩টি পয়েন্টে নদীর বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে খোলপেটুয়া নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আগামীকাল (২৬ মে) বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘার মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়েই ইয়াস অতিক্রম করতে পারে। তবে এর প্রভাব উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার পড়তে পারে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের অফিসার ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, উপকূলীয় এলাকায় পাউবোর ১২৫ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা হয়েছে, যাতে পানি ঢুকতে না পারে। তারপরও দুর্বল স্থানগুলোতে মাটি দিয়ে উঁচু করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আশাশুনি উপজেলায় পাউবোর ৮০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এসব স্থানে মাটি ফেলা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব বড় জলোচ্ছ্বাস না হলে অসুবিধা হবে না। ’ সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বাবলু রেজা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় ১ হাজার ৬৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। একইসঙ্গে সাত উপজেলার প্রতি উপজেলায় ৫টি ও ৭৮টি ইউনিয়নে একটি করে মোট ১১৩টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার, অর্থ, চাল-ডাল প্রস্তুত রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।’ শ্যামনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজার গিফারি জানান, ইয়াস আঘাত আনতে পারে এমন আশঙ্কায় উপজেলার সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মানুষের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএস মোস্তফা কামাল জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলায় ১৪৫টি সাইক্লোন শেল্টারসহ ১ হাজার ৬৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য পর্যাপ্ত নৌযান, যানবাহন ও উদ্ধার সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও জানান, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। জেলা প্রশাসন সব সময় সজাগ থেকে বরাবরের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম হবে।
বরিশালে আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় গোটা বরিশাল বিভাগের সকল সাইক্লোন শেল্টারের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে বিভাগে প্রস্তুত রাখা প্রায় ৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবেন ২০ লাখের মতো মানুষ এবং কয়েক লাখ গবাদি পশু। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ চার হাজার ৯১৫ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলায় হাজারের ওপরে এবং ভোলা জেলায় হাজারের ওপরে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীতে ৯০০টির বেশি, পিরোজপুরে ৭০০টির বেশি, বরগুনায় ৬২৯ এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়গুলো থেকে ইতোমধ্যে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দুর্যোগ মোকবিলায় বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি ও নির্দেশনামূলক বেশকিছু সভা অনুষ্ঠিত হয়েছেন। যার মধ্যে সোমবার জুম এ্যাপের মাধ্যমে বিভাগীয় প্রশাসনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন করণীয় বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে সোমবার রাতে বরিশালে থেমে থেমে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকদিনের তীব্র তাবদাহের পর বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। ফলে জনজীবনেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. মাসুদ রানা রুবেল সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরিশালে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে বজ্রসহ ভারী এবং অতিভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ

ইয়াসের প্রভাবে উপকূলীয় জেলার নিন্মাঞ্চলে প্লাবিত

আপডেট সময় : ১২:৩২:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১

দেশের খবর ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক উচ্চতার জোয়ারে দেশের উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, বরগুনা এলাকার নি¤œাঞ্চল এবং চরাঞ্চলগুলোতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ টপকে ওই পানি প্রবেশ করছে। সুন্দরবনের দুবলার চরসহ জেলে পল্লিগুলোর বেশির ভাগ এলাকা এরই মধ্যে ডুবে গেছে। দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়-
বরগুনায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’র প্রভাবে বরগুনাতে নদীর পানি বেড়েছে। এতে জেলা সদরের থানাপাড়া, কলেজরোড, চরকলোনী ও তালতলী উপজেলার খোট্টারচড় এলাকার কয়েকহাজার বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পানিতে ভেসে গেছে ২৫টি ঘের ও প্রায় ৭০টি পুকুরের মাছ। সদরের থানাপাড়া এলাকার আবির মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মে সকাল থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর ১২টার দিকে জোয়ারের পানি উঠে যায় থানাপাড়া এলাকায়।’ কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা ও টেলিকম ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত বরগুনার আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিলো। তবে আজ সকালে পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের বসতঘর।’ চরকলোনী এলাকার শাফিন আহমেদ বলেন, ‘চরকলোনীর কয়েকশ ঘরে পানি ঢুকেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার।’ তালতলীর খোট্টার চড়ের সুলতান মিয়া বলেন, ‘বলেশ্বরের পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে খোট্টারচড়। আমার মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ একই এলাকার বাসিন্দা হাইরাজ মাঝি বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে এলাকার ২৫টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে।’ বরগুনা পানি উন্নায়ন বোর্ডের প্রকৌশলী কাইছার আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘জেলায় প্রধান দুটি নদীর মধ্যে বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার আড়াই ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ ইঞ্চি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝূঁকিপূর্ণ রয়েছে।’ বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, মাছের ঘেরের ক্ষয়-ক্ষতির কথা তারা জানেন। পরে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। সবাইকে সতর্ক থেকে প্রশাসনের কথা মেনে চলার অনুরোধ করেন তিনি।
পটুয়াখালী, রাঙ্গাবালী উপজেলার ১৩ গ্রাম প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরআন্ডা, দক্ষিণ চরমোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবশে করে। এতে উপজেলার ১৩ গ্রাম ছাড়াও বেড়িবাঁধের বাইরের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলো হলো- চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা, নয়াচর, উত্তর চরমোন্তাজ, চরবেষ্টিন, মোল্লা গ্রাম, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরনজির, কোড়ালীয়া, কাউখালীচর, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মরাজাঙ্গী, চিনাবুনিয়া, বিবির হাওলা, গোলবুনিয়া ও চরলতা। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই এসব এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলবাসী। ধারণা করা হচ্ছে, বিগত দিনের রেকর্ড অতিক্রম করবে এবারের ঘূর্ণিঝড়। রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জানান, চালিতাবুনিয়া একটি ভাঙন কবলিত এলাকা। এখানে বেড়িবাঁধ বলতে কিছু নেই। অনেক আগেই বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। নতুন করে বেড়িবাঁধ তৈরি না করায় জোয়ারের পানিতে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।চরমোন্তাজের ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ মিয়া জানান, চরআন্ডার বেড়িবাঁধটি দীর্ঘদিন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হলেই পানি প্রবেশ করে লোকালয় তলিয়ে যায়। মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকে। রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি লোকালয় প্রবেশ করছে। এতে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এছাড়া বেড়িবাঁধের বাইরেও কয়েকটি গ্রামের মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নোয়াখালী, হাতিয়ায় ১১ গ্রাম প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে অন্তত ১১টি গ্রামের লোকালয়ে। প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে গৃহপালিত পশুগুলোকে পাশের আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে প্লাবিত হয় গ্রামগুলো। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জোয়ার আসে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জোয়ার বাড়তে থাকে। মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ে। এতে তিন-চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে চরঈশ্বর ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড। এছাড়াও অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের মদিনা গ্রাম, বান্দাখালী গ্রাম, মুন্সি গ্রাম, মোল্লা গ্রাম, আদর্শগ্রাম ও ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দিনাজ উদ্দিন জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট উচ্চতায় জোয়ার হওয়ায় নিঝুমদ্বীপের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবন্দি ৫০ হাজার মানুষ। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। তবে গরু, মহিষসহ গৃহপালিত পশুগুলোকে উঁচু রাস্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে কৃষি জমির ফসল। হাতিয়া উপজেলা সিপিপি কর্মকর্তা বদিউজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমার প্রভাব এক হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতের জোয়ারে পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা ও মানুষকে নিরাপদ রাখতে হাতিয়ায় সিপিপির ১৭৭টি ইউনিট ও সরকারি ১৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাগেরহাটে নিন্মাঞ্চলে প্লাবনের শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রধান নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে জেলার প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি বেড়েছে। বুধবার পূর্ণিমা তিথিতে পানি আরও বাড়বে। এতে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘জেলার উপকূলীয় এলাকায় যেসব পোল্ডার আছে তাদের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ উপ-প্রকল্পের আওতায় শরণখোলায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষের পথে। অন্য আরও তিনটি পোল্ডারের অধীনে থাকা বেড়িবাঁধগুলো অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। ‘তার পরও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। জোয়ারের পানির চাপে কোথাও বাঁধ ভেঙে গেলে আমরা তা মেরামতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’ আর জেলার ৬৭ হাজারের অধিক চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের রক্ষার জন্য চাষিদের জাল দিয়ে ঘিরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল।
তাছাড়া ঝড়ের পূর্বাভাসের পর নদী ও সাগরে মাছ ধরার শথ শত ট্রলার কুলে ফিরে বাগেরহাটের কেবি মাছ বাজার ঘাটে অবস্থান নিয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার বলেন, জেলায় ৩৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। কয়েকশ সেচ্ছাসেবক সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। উপকূলবাসীকে সচেতন করতে মাইকিং করা হচ্ছে।
খুলনায় উচ্চ ঝুঁকিতে ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এক বছর পার হলেও খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে পাউবোর বেড়িবাঁধ। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকার সাধারণ মানুষ। আর এই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। খুলনা পাউবো সূত্র জানায়, জেলায় ৮৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ২০ কিলোমিটার বাঁধ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে স্থানীয়দের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের দৈর্ঘ্য আরও বেশি হবে। উপকূলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় বিধস্ত খুলনাঞ্চলের উপকূলে দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় অধিকাংশ বাঁধের বেহাল দশা। জোয়ার একটু বেশি হলেই বাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ধেয়ে আসার খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিধ্বস্ত খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপসহ উপকূলবাসী। নদ তীরবর্তী বেড়িবাঁধের বাইরে ও বাঁধের কাছাকাছি বাসিন্দারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আম্ফানের পর নড়বড়ে ও ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় রয়েছে কয়রাসহ উপকূলের বেড়িবাঁধ। এরফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে উপকূল। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে ইয়াস।’ তিনি বলেন, ‘বাঁধের যেসব জায়গায় এক বছর আগে আম্ফানে ভেঙে গিয়েছিল, সেসব জায়গার সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি। এখন জোয়ারে পানি ওঠে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যদি আঘাত হানে তাহলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে।’
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘খুলনা ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার আওতাধীন নয়, ঝুঁকিপূর্ণ এ উপজেলাটি সাতক্ষীরা পাউবোর অধীন।’ তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ও সিনথেটিক ব্যাগ মজুত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, ‘খুলনাঞ্চলের বেড়িবাঁধ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে কয়রা ও শ্যামনগরের প্রকল্প দুটি অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’
সাতক্ষীরায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ, আতঙ্কে উপকূলবাসী
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর কারণে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি এলাকায় লাল পতাকা উড়িয়ে ঝড়ের সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে। সাতক্ষীরার উপকূলে ৪৩টি পয়েন্টে নদীর বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে খোলপেটুয়া নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আগামীকাল (২৬ মে) বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘার মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়েই ইয়াস অতিক্রম করতে পারে। তবে এর প্রভাব উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার পড়তে পারে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের অফিসার ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, উপকূলীয় এলাকায় পাউবোর ১২৫ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা হয়েছে, যাতে পানি ঢুকতে না পারে। তারপরও দুর্বল স্থানগুলোতে মাটি দিয়ে উঁচু করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আশাশুনি উপজেলায় পাউবোর ৮০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এসব স্থানে মাটি ফেলা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব বড় জলোচ্ছ্বাস না হলে অসুবিধা হবে না। ’ সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বাবলু রেজা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় ১ হাজার ৬৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। একইসঙ্গে সাত উপজেলার প্রতি উপজেলায় ৫টি ও ৭৮টি ইউনিয়নে একটি করে মোট ১১৩টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার, অর্থ, চাল-ডাল প্রস্তুত রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।’ শ্যামনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজার গিফারি জানান, ইয়াস আঘাত আনতে পারে এমন আশঙ্কায় উপজেলার সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মানুষের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএস মোস্তফা কামাল জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলায় ১৪৫টি সাইক্লোন শেল্টারসহ ১ হাজার ৬৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য পর্যাপ্ত নৌযান, যানবাহন ও উদ্ধার সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও জানান, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। জেলা প্রশাসন সব সময় সজাগ থেকে বরাবরের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম হবে।
বরিশালে আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় গোটা বরিশাল বিভাগের সকল সাইক্লোন শেল্টারের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে বিভাগে প্রস্তুত রাখা প্রায় ৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবেন ২০ লাখের মতো মানুষ এবং কয়েক লাখ গবাদি পশু। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় সাইক্লোন শেল্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ চার হাজার ৯১৫ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলায় হাজারের ওপরে এবং ভোলা জেলায় হাজারের ওপরে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীতে ৯০০টির বেশি, পিরোজপুরে ৭০০টির বেশি, বরগুনায় ৬২৯ এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়গুলো থেকে ইতোমধ্যে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দুর্যোগ মোকবিলায় বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি ও নির্দেশনামূলক বেশকিছু সভা অনুষ্ঠিত হয়েছেন। যার মধ্যে সোমবার জুম এ্যাপের মাধ্যমে বিভাগীয় প্রশাসনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন করণীয় বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে সোমবার রাতে বরিশালে থেমে থেমে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকদিনের তীব্র তাবদাহের পর বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। ফলে জনজীবনেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. মাসুদ রানা রুবেল সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরিশালে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে বজ্রসহ ভারী এবং অতিভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।