বিদেশের খবর ডেস্ক : তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে এসেছে। অবশ্য মেয়রকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত চারদিন ধরে দেশটির বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয় ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে। এমন সময় ইস্তাম্বুলের মেয়রকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো, যখন তার দল সিএইচপির প্রাইমারিতে (প্রার্থী বাছাই) ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে দলের প্রার্থী করতে ভোটাভুটি চলছে। দলীয় সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এতে ভোট দিতে পারছেন।
তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রবিবার রাতে তুরস্কে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় অস্থিরতা দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রবিবার সন্ধ্যার আগেই হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ইস্তানবুল সিটি হলের সামনে জড়ো হয়। তুর্কি পতাকা হাতে নিয়ে তারা দাঙ্গা পুলিশের সামনে স্লোগান দেয়। পুলিশ কিছু বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করে এবং পিপার স্প্রে প্রয়োগ করে।
সিটি হলের সামনে জড়ো হওয়া বিশাল জনতার উদ্দেশে ইমামোগলুর স্ত্রী দিলেক কায়া ইমামোগলু বলেন, ‘আমার স্বামীর বিরুদ্ধে করা এই অবিচার প্রতিটি বিবেককে নাড়া দিয়েছে।‘ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হওয়া এই বিক্ষোভ ২০১৩ সালের গেজি পার্ক আন্দোলনের পর তুরস্কে সবচেয়ে বড় গণআন্দোলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির হিসাবে, তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে কমপক্ষে ৫৫টিতে বিক্ষোভ হয়েছে, যা পুরো দেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। গত বুধবার একটি তদন্তের অংশ হিসেবে ইমামোগলুসহ ১০০ জনের বেশি রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।
রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকে ‘অপরাধী সংগঠন গঠন ও পরিচালনা, ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ ও টেন্ডার জালিয়াতি’র অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এএফপি ও স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, তাকে সিলিভ্রি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইমামোগলুকে মেয়রের পদ থেকেও বরখাস্ত করা হয়েে ইমামোগলু তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘আমি কখনও মাথা নত করব না।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে সিএইচপিকে ‘জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা’ করার অভিযোগ করেছেন।
এদিকে রোববার রাতভর বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করা ৯ জন সাংবাদিককে কর্তৃপক্ষ আটক করেছে। গতকাল সোমবার তুরস্কের সাংবাদিক ইউনিয়ন এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, সাংবাদিকদেরকে তাদের বাড়ি থেকে আটক করা হয়। সাংবাদিকদেরকে কেন আটক করা হল তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে সাংবাদিক ইউনিয়ন বলছে, বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে। বাড়তে থাকা বিক্ষোভের মধ্যে একে দমনপীড়ন আখ্যা দিয়েছে সাংবাদিক ইউনিয়ন। তারা বলছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মানুষের সত্য জানার অধিকারের ওপর হামলা হয়েছে। এক্সে এক পোস্টে সাংবাদিক ইউনিয়ন বলেছে, সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে দিয়ে সত্য লুকানো যাবে না।
আটক সাংবাদিকদের মধ্যে একজন এজেন্সি ফ্রান্স প্রেসের (এএফপি) আলোকচিত্রীও আছেন বলে জানিয়েছে তারা। তবে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক আটক নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করেনি। ওদিকে, তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া তুরস্কে গত সপ্তাহে বিক্ষোভের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়াদের সংখ্যা জানিয়ে বলেছে, মোট ১ হাজার ১৩৩ জন আটক হয়েছে। এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে ত্রাস, জাতির শান্তি ও নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করাটা কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না। ইস্তাম্বুলের মেয়র ইকরাম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পর রোববার রাতে তুরস্কজুড়ে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতা দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর ছোড়া হয়েছে কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট।