ঢাকা ১১:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫

ইসাহাকের এক গাছের আম বিক্রিতেই আয় লাখ টাকা

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৫:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: তাবলিগে গিয়ে আমের বাগান দেখেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটার ইসাহাক মুন্সি। তখনই শখ জাগে তার। তাবলিগ থেকে ফিরে পরের বছর বাড়ির আঙিনায় আম চাষ করেন তিনি। এতেই রীতিমতো বাজিমাত করেছেন এই কৃষক। এক গাছ থেকেই বিক্রি করেছেন প্রায় লাখ টাকার ওপরে। শুধু তা-ই নয়, শখের বশে আম বাগান করে এখন পুরো এলাকার আমের চাহিদা মেটান। এমনকি উপজেলাজুড়ে ‘কুয়াকাটার আম’ নামে খ্যাতি পেয়েছে।

স্বাদে সুমিষ্ট, কীটনাশকমুক্ত এবং দেশি প্রজাতির হওয়ায় ১০০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় এ গাছের আম। একটি গাছ থেকে পেয়েছেন প্রায় ৪০ মণ আম। গাছটি ছাড়াও বাড়ির আশেপাশে ৩-৪ একর জায়গায় চাষ করেছেন ২০০টির বেশি আম গাছ। যার মধ্যে আছে ফজলি, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, হিমসাগর, লকনা, কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগোসহ নানা প্রজাজির আম। এসব আম ৪০-২০০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হয়। এলাকার যে কেউ চাইলে চাহিদামতো আম নিতে পারেন।

২০০৯ সালে কৃষক ইসাহাক মুন্সি তাবলিগে রাজশাহী গিয়ে দেখেন আম বাগান। পরের বছর রাজশাহী থেকে ৫০টি আমের চারা এনে বাড়ির আঙিনায় চাষ শুরু করেন। পরে ভালো ফলন দেখে পরিধি বাড়িয়ে বাগান তৈরি করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর আমের উৎপাদন বাড়তে থাকে। সাথে সাথে পুরো এলাকায় চাহিদা বাড়তে থাকতে তার আমের। সবমিলিয়ে তিনি প্রতি বছর ৫-৬ লাখ টাকার আম বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন।
প্রতিবেশী মো. ইলিয়াস হোসাইন বলেন, ‘আমাদের এখন আর উত্তরাঞ্চলের আমের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কারণ এলাকায় এখন পর্যাপ্ত আম উৎপাদন হয়। আমাদের যতটুকু প্রয়োজন; এসব বাগান থেকেই কিনে নিই।’

কুয়াকাটার চাষি আ. কুদ্দুস বলেন, ‘কুয়াকাটার আম নামে পরিচিত এই ইসাহাক মুন্সির আমকেই চিনে থাকি আমরা। একটি গাছ থেকে প্রায় ৩৫-৩৮ মণ আম বিক্রি করেছেন। এটা এই এলাকার আর কেউ পারেনি।’
কুয়াকাটায় আসা পর্যটক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঔষধ প্রশাসনের পটুয়াখালীর দায়িত্বে রয়েছি। কুয়াকাটায় কাজের পাশাপাশি ভ্রমণেও আসি। অনেক দিন যাবৎ গল্প শুনি এই আম বাগানের। এখানের মানুষের জন্য দ্বিতীয় রাজশাহী বলা যায়। এসে আম কিনে খেয়েছি, আবার নিয়েও যাচ্ছি। কুয়াকাটায় ভ্রমণের আলাদা মাত্রা যোগ হলো।’

ইসাহাক মুন্সি বলেন, ‘আমার বাড়ির আঙিনার একটি গাছ থেকে এরই মধ্যে এক লাখ টাকার বেশি বিক্রি করেছি। আরও যা আছে, তা দিয়ে ১০-২০ হাজার বিক্রি করতে পারবো। এটা পুরোনো গাছ হলেও বাড়ির আশেপাশে প্রায় ২০০টির মতো ১০-১২ প্রজাতির আম গাছ লাগিয়েছি। এখন অনেক মানুষ দেখতে আসেন। তারা ছবি তোলেন, আম নিয়ে যান, ফোন দিয়ে কুরিয়ার করতে বলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেক চাষি আছেন কুয়াকাটাসহ আশপাশের এলাকায়। আমরা আম চাষ করে বেশ সফল হলেও কৃষি অফিস থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ পাচ্ছি না। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দেয়, তাহলে আশা করি এলাকার পুরো চাহিদা মেটাতে পারবো।’

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ইসাহাক মুন্সির বাগানে আমরা গেছি। তাকে সফল চাষি বলা যায়। কলাপাড়ায় গত ৪-৫ বছরে আম চাষে পরিবর্তন এসেছে। এ বছর প্রচুর আম উৎপাদন হয়েছে। ২০০টি ছোট-বড় বাগান আছে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০০ হেক্টর জমি। এ বছর উপজেলায় সর্বমোট ৩০০ মেট্রিক টনের বেশি আম উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।’ তিনি বলেন, ‘কোনো চাষি বাগান শুরু করার আগে সব পরামর্শ ও পদ্ধতির দিকে আমরা নজর রাখি। তবে আমাদের চারা কিংবা কীটনাশক চাষিদের দেওয়ার কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। পরে বরাদ্দ দেওয়া হলে আমরা বিতরণ করবো।’

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইসাহাকের এক গাছের আম বিক্রিতেই আয় লাখ টাকা

আপডেট সময় : ০৭:৫৫:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: তাবলিগে গিয়ে আমের বাগান দেখেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটার ইসাহাক মুন্সি। তখনই শখ জাগে তার। তাবলিগ থেকে ফিরে পরের বছর বাড়ির আঙিনায় আম চাষ করেন তিনি। এতেই রীতিমতো বাজিমাত করেছেন এই কৃষক। এক গাছ থেকেই বিক্রি করেছেন প্রায় লাখ টাকার ওপরে। শুধু তা-ই নয়, শখের বশে আম বাগান করে এখন পুরো এলাকার আমের চাহিদা মেটান। এমনকি উপজেলাজুড়ে ‘কুয়াকাটার আম’ নামে খ্যাতি পেয়েছে।

স্বাদে সুমিষ্ট, কীটনাশকমুক্ত এবং দেশি প্রজাতির হওয়ায় ১০০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় এ গাছের আম। একটি গাছ থেকে পেয়েছেন প্রায় ৪০ মণ আম। গাছটি ছাড়াও বাড়ির আশেপাশে ৩-৪ একর জায়গায় চাষ করেছেন ২০০টির বেশি আম গাছ। যার মধ্যে আছে ফজলি, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, হিমসাগর, লকনা, কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগোসহ নানা প্রজাজির আম। এসব আম ৪০-২০০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হয়। এলাকার যে কেউ চাইলে চাহিদামতো আম নিতে পারেন।

২০০৯ সালে কৃষক ইসাহাক মুন্সি তাবলিগে রাজশাহী গিয়ে দেখেন আম বাগান। পরের বছর রাজশাহী থেকে ৫০টি আমের চারা এনে বাড়ির আঙিনায় চাষ শুরু করেন। পরে ভালো ফলন দেখে পরিধি বাড়িয়ে বাগান তৈরি করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর আমের উৎপাদন বাড়তে থাকে। সাথে সাথে পুরো এলাকায় চাহিদা বাড়তে থাকতে তার আমের। সবমিলিয়ে তিনি প্রতি বছর ৫-৬ লাখ টাকার আম বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন।
প্রতিবেশী মো. ইলিয়াস হোসাইন বলেন, ‘আমাদের এখন আর উত্তরাঞ্চলের আমের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কারণ এলাকায় এখন পর্যাপ্ত আম উৎপাদন হয়। আমাদের যতটুকু প্রয়োজন; এসব বাগান থেকেই কিনে নিই।’

কুয়াকাটার চাষি আ. কুদ্দুস বলেন, ‘কুয়াকাটার আম নামে পরিচিত এই ইসাহাক মুন্সির আমকেই চিনে থাকি আমরা। একটি গাছ থেকে প্রায় ৩৫-৩৮ মণ আম বিক্রি করেছেন। এটা এই এলাকার আর কেউ পারেনি।’
কুয়াকাটায় আসা পর্যটক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঔষধ প্রশাসনের পটুয়াখালীর দায়িত্বে রয়েছি। কুয়াকাটায় কাজের পাশাপাশি ভ্রমণেও আসি। অনেক দিন যাবৎ গল্প শুনি এই আম বাগানের। এখানের মানুষের জন্য দ্বিতীয় রাজশাহী বলা যায়। এসে আম কিনে খেয়েছি, আবার নিয়েও যাচ্ছি। কুয়াকাটায় ভ্রমণের আলাদা মাত্রা যোগ হলো।’

ইসাহাক মুন্সি বলেন, ‘আমার বাড়ির আঙিনার একটি গাছ থেকে এরই মধ্যে এক লাখ টাকার বেশি বিক্রি করেছি। আরও যা আছে, তা দিয়ে ১০-২০ হাজার বিক্রি করতে পারবো। এটা পুরোনো গাছ হলেও বাড়ির আশেপাশে প্রায় ২০০টির মতো ১০-১২ প্রজাতির আম গাছ লাগিয়েছি। এখন অনেক মানুষ দেখতে আসেন। তারা ছবি তোলেন, আম নিয়ে যান, ফোন দিয়ে কুরিয়ার করতে বলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেক চাষি আছেন কুয়াকাটাসহ আশপাশের এলাকায়। আমরা আম চাষ করে বেশ সফল হলেও কৃষি অফিস থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ পাচ্ছি না। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দেয়, তাহলে আশা করি এলাকার পুরো চাহিদা মেটাতে পারবো।’

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ইসাহাক মুন্সির বাগানে আমরা গেছি। তাকে সফল চাষি বলা যায়। কলাপাড়ায় গত ৪-৫ বছরে আম চাষে পরিবর্তন এসেছে। এ বছর প্রচুর আম উৎপাদন হয়েছে। ২০০টি ছোট-বড় বাগান আছে। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০০ হেক্টর জমি। এ বছর উপজেলায় সর্বমোট ৩০০ মেট্রিক টনের বেশি আম উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।’ তিনি বলেন, ‘কোনো চাষি বাগান শুরু করার আগে সব পরামর্শ ও পদ্ধতির দিকে আমরা নজর রাখি। তবে আমাদের চারা কিংবা কীটনাশক চাষিদের দেওয়ার কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। পরে বরাদ্দ দেওয়া হলে আমরা বিতরণ করবো।’

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ