ঢাকা ০৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাপা নিষিদ্ধসহ জামায়াতের ৫ দাবি, ইসলামী আন্দোলনের ‘যুগপৎ’ কর্মসূচি

ইসলামী দলগুলোর জোট কাছাকাছি

  • আপডেট সময় : ০৮:৩৮:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

সোমবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধকরণসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এসব দাবি আদায়ে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলসহ দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয় এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
একই দিনে পাঁচটি দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। দুপুরে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহম্মাদ রেজাউল করীম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি রয়েছে।

পাঁচটি দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যায়। প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। দেশে কোনো সরকার না থাকায় সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সংবিধানের অনেক বিধানাবলী অকার্যকর হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতার উৎস ও ভিত্তি হচ্ছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৭ এ বর্ণিত বিধানাবলী ও জনগণের অভিপ্রায়। তিনি বলেন, সংবিধানের ত্রুটি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত অব্যবস্থাপনার সুযোগে কর্তৃত্ববাদী শাসন, ভিন্ন মত দমন, দুর্নীতি ও দলীয়করণের ফলে গোটা দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে, জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচারীর ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করে। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৭টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনায় বসে। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে দুই একটি রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জামায়াতের এ নায়েবে আমির বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদসহ নানা শ্রেণির মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু জনদাবি কার্যকরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাই জনদাবি আদায়ের লক্ষ্যে গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
দলের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো হলো-

১. জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা

২. জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা

৩. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা

৪. ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম নির্যাতন গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা

৫. স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

এই পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সকল বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সকল জেলা/উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন ডা. তাহের।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, আব্দুর রব, মোবারক হোসেন, মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আ. রহমান মূসা, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত, প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

ইসলামী দলগুলোর এক বাক্সে যাওয়ার ব্যাপারটি কাছাকাছি: দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (চরমোনাইর পীর) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশপ্রেমিক ও মানবতা প্রেমিকদের জোটবদ্ধ হয়ে একটি বাক্সে যাওয়ার বিষয়টি কাছাকাছি রয়েছে বলেন তিনি।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে আইএবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

‘আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, ফ্যাসিবাদী ও তার দোসরদের বিচার এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইসলামি আন্দোলন। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা ইসলামি দলগুলোর ব্যাপারে পাঁচ আগস্টের পরে বলেছিলাম, আমরা ইসলামি দলগুলো একটি বাক্সে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা একটা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছিলাম, এখন আলহামদুলিল্লাহ এটা অনেকটাই কাছাকাছি। এ রকম একটা পরিবেশ আল্লাহর রহমতে তৈরি হয়েছে।’

মুহম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে ১৪ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত মেয়াদও আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো জুলাই সনদ ঘোষণা করা যায় নাই। জুলাই সনদ নিয়ে অনেক বৈঠক হয়েছে কিন্তু আপনারা লক্ষ করলে দেখবেন, ভবিষ্যত স্বৈরতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার জন্য অপরিহার্য আইানি সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌছানো যায় নাই। তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট মহল থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধা এসেছে। ফলে জুলাইয়ের মূল প্রত্যাশা স্বৈরতন্ত্রকে চিরতরে বিলোপের যে চাহিদা তা পূরণে তেমন প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয় নাই। এমনকি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে কোনো কোনো সংস্কারের প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত হলেও সেখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে এখনই সেটা বাতিলযোগ্য করে রাখা হয়েছে। ফলে জুলাই সনদ কার্যত সংস্কার সম্পর্কিত বিভিন্ন দলের মতামত দলীলে পরিণত হয়েছে। অথচ প্রত্যাশা ছিল জুলাই সনদ হবে আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণের দিকনির্দেশনা।

চরমোনাই পীর বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন করা যায় না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জনপ্রশাসনের আচরণ ও সন্ত্রাসের যে ভয়াবহতা আমরা লক্ষ করছি, তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছি না। এখানে মনে রাখতে হবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও বটে। লন্ডন বৈঠক, এককভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমান সরকার একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি যে পক্ষপাত দেখাচ্ছেন তাতে মাঠপ্রশাসন তাদের দিকে ঝুঁকে পড়াই স্বাভাবিক।

ইসলামী আন্দোলনের ‘যুগপৎ’, জামায়াত বলছে ‘না’: পাঁচটি দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। এদিন দুপুরে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহম্মাদ রেজাউল করীম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

পাঁচ দফা দাবি হলো-জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন; নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি; সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

কর্মসূচি হলো-১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল; ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ ও ২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশে জেলা, উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল।

যদিও একইসময়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সংবাদ সম্মেলনে জানান, এখনও যুগপৎ কোনো আন্দোলন বা কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়নি জামায়াত ইসলামী।

সানা/আপ্র/১৫/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জাপা নিষিদ্ধসহ জামায়াতের ৫ দাবি, ইসলামী আন্দোলনের ‘যুগপৎ’ কর্মসূচি

ইসলামী দলগুলোর জোট কাছাকাছি

আপডেট সময় : ০৮:৩৮:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধকরণসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এসব দাবি আদায়ে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলসহ দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয় এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
একই দিনে পাঁচটি দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। দুপুরে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহম্মাদ রেজাউল করীম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি রয়েছে।

পাঁচটি দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন

জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যায়। প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। দেশে কোনো সরকার না থাকায় সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সংবিধানের অনেক বিধানাবলী অকার্যকর হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতার উৎস ও ভিত্তি হচ্ছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৭ এ বর্ণিত বিধানাবলী ও জনগণের অভিপ্রায়। তিনি বলেন, সংবিধানের ত্রুটি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত অব্যবস্থাপনার সুযোগে কর্তৃত্ববাদী শাসন, ভিন্ন মত দমন, দুর্নীতি ও দলীয়করণের ফলে গোটা দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে, জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচারীর ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করে। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৭টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনায় বসে। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে দুই একটি রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জামায়াতের এ নায়েবে আমির বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদসহ নানা শ্রেণির মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু জনদাবি কার্যকরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাই জনদাবি আদায়ের লক্ষ্যে গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
দলের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো হলো-

১. জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা

২. জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা

৩. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা

৪. ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম নির্যাতন গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা

৫. স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

এই পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সকল বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সকল জেলা/উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন ডা. তাহের।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, আব্দুর রব, মোবারক হোসেন, মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আ. রহমান মূসা, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াসিন আরাফাত, প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।

ইসলামী দলগুলোর এক বাক্সে যাওয়ার ব্যাপারটি কাছাকাছি: দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (চরমোনাইর পীর) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশপ্রেমিক ও মানবতা প্রেমিকদের জোটবদ্ধ হয়ে একটি বাক্সে যাওয়ার বিষয়টি কাছাকাছি রয়েছে বলেন তিনি।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে আইএবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

‘আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, ফ্যাসিবাদী ও তার দোসরদের বিচার এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইসলামি আন্দোলন। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা ইসলামি দলগুলোর ব্যাপারে পাঁচ আগস্টের পরে বলেছিলাম, আমরা ইসলামি দলগুলো একটি বাক্সে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা একটা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছিলাম, এখন আলহামদুলিল্লাহ এটা অনেকটাই কাছাকাছি। এ রকম একটা পরিবেশ আল্লাহর রহমতে তৈরি হয়েছে।’

মুহম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে ১৪ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত মেয়াদও আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো জুলাই সনদ ঘোষণা করা যায় নাই। জুলাই সনদ নিয়ে অনেক বৈঠক হয়েছে কিন্তু আপনারা লক্ষ করলে দেখবেন, ভবিষ্যত স্বৈরতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার জন্য অপরিহার্য আইানি সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌছানো যায় নাই। তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট মহল থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধা এসেছে। ফলে জুলাইয়ের মূল প্রত্যাশা স্বৈরতন্ত্রকে চিরতরে বিলোপের যে চাহিদা তা পূরণে তেমন প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয় নাই। এমনকি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে কোনো কোনো সংস্কারের প্রস্তাব জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত হলেও সেখানে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে এখনই সেটা বাতিলযোগ্য করে রাখা হয়েছে। ফলে জুলাই সনদ কার্যত সংস্কার সম্পর্কিত বিভিন্ন দলের মতামত দলীলে পরিণত হয়েছে। অথচ প্রত্যাশা ছিল জুলাই সনদ হবে আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণের দিকনির্দেশনা।

চরমোনাই পীর বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন করা যায় না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জনপ্রশাসনের আচরণ ও সন্ত্রাসের যে ভয়াবহতা আমরা লক্ষ করছি, তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছি না। এখানে মনে রাখতে হবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও বটে। লন্ডন বৈঠক, এককভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমান সরকার একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি যে পক্ষপাত দেখাচ্ছেন তাতে মাঠপ্রশাসন তাদের দিকে ঝুঁকে পড়াই স্বাভাবিক।

ইসলামী আন্দোলনের ‘যুগপৎ’, জামায়াত বলছে ‘না’: পাঁচটি দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। এদিন দুপুরে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহম্মাদ রেজাউল করীম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

পাঁচ দফা দাবি হলো-জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন; নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি; সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

কর্মসূচি হলো-১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল; ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ ও ২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশে জেলা, উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল।

যদিও একইসময়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সংবাদ সম্মেলনে জানান, এখনও যুগপৎ কোনো আন্দোলন বা কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়নি জামায়াত ইসলামী।

সানা/আপ্র/১৫/০৯/২০২৫