ঢাকা ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম

ইসরায়েলে বন্দিদশায় মানসিক নির্যাতন বেশি হয়েছে

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৬:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

শনিবার দৃক পাঠ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আলোচিত্রী শহিদুল আলম -ছবি দৃক এর ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজাগামী নৌবহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার একটি জাহাজ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করার পর মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আলোকচিত্রী, মানবাধিকারকর্মী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।

তিনি বলেন, অনেক রকম নির্যাতনের মধ্যে মানসিক নির্যাতন বেশি করা হয়েছে। গভীর রাতে ইসরায়েলি সেনারা মেশিনগান নিয়ে কারাগারের সেলে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো।

গত বুধবার (৮ অক্টোবর) গাজাগামী নৌবহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজগুলো দখল করে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই বহরে ‘কনশানস’ নামের একটি জাহাজে ছিলেন শহিদুল আলম।

পরে অন্যদের সঙ্গে শহিদুল আলমকেও বন্দি করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে তুরস্ক হয়ে শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে ঢাকায় আসেন তিনি।
বিকালে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে ফ্লোটিলায় অবস্থান, আটক এবং আটকের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন এই আলোকচিত্রী। তিনি বলেন, অনেক রকমের নির্যাতন হয়েছে। প্রধান যদি বলি, সেটা মানসিক নির্যাতন, আঘাত যদিও আমরা তেমন পাইনি। গভীর রাতে হঠাৎ করে ইসরায়েলি বাহিনী মেশিনগান নিয়ে সেলের মধ্যে ঢুকে যেত। তারা জোরে আওয়াজ করত, চিৎকার করে দাঁড়ানো বা অন্য আদেশ দিত এবং আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করত। হামাসের সমর্থক দাবি করে আমাদের একজন সহযাত্রীকে গুলি করে মারারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

শহিদুল আলম বলেন, আমরা যখন জাহাজ থেকে নামি, তখন হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে যেখানে হাঁটুমুড়ে বসানো হয়েছিল। আমার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা এভাবে উবু হয়ে বসেছিলাম। আমার জন্য সবচেয়ে খারাপ লেগেছে তারা আমার পাসপোর্ট নিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল। এটা আমার জন্য বড় আঘাত ছিল।

দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান তাকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রার পরিকল্পনা করতে সাহস জুগিয়েছে। সে সময় রাস্তায় নেমেছি, আন্দোলন করেছি। এ রকম একজন স্বৈরাচারকেও আমরা হঠাতে পেরেছি। এখানেও সেই জিনিস, আন্তর্জাতিকভাবে সেরকম একটা জিনিস করা দরকার। পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে শহিদুল আলম বলেন, তারা আন্তর্জাতিক একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।

অসাধারণ কিছু ব্যক্তি একসঙ্গে হওয়ার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা এখন আন্তর্জাতিকভাবে একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করাব। যেহেতু গ্লোবাল লিডাররা করবে না, আমরা অ্যাকটিভিস্টরা কীভাবে করতে পারি সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। একটা ‘ব্লুপ্রিন্ট’ আমরা করে রেখেছি এবং আমরা ফেরার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আবার আমরা যাব এবং হাজারটা জাহাজ যাবে।

জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ও কিউরেটর তানজিম ইবনে ওয়াহাবের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৃকের পরিচালক ও লেখক রেহনুমা আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক ও কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক মো. কামাল হোসেন।

গেল ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছেড়েছিলেন শহিদুল আলম। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালি থেকে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন-এফএফসির উদ্যোগে ‘কনশানস’ জাহাজে চড়ে প্রায় ১০০ জনসহ গাজা অভিমুখে রওনা হন। বুধবার ভূমধ্যসাগরে গাজাগামী নৌববহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজগুলো আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকে শুরুতেই অপহৃতদের ইসরায়েলের আশদদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের দেশটির কেৎজিয়েত কারাগারে বন্দি রাখে ইসরায়েলি বাহিনী। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় তুরস্ক হয়ে শনিবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছান তিনি।
সানা/আপ্র/১১/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম

ইসরায়েলে বন্দিদশায় মানসিক নির্যাতন বেশি হয়েছে

আপডেট সময় : ০৯:৪৬:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজাগামী নৌবহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার একটি জাহাজ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করার পর মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আলোকচিত্রী, মানবাধিকারকর্মী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।

তিনি বলেন, অনেক রকম নির্যাতনের মধ্যে মানসিক নির্যাতন বেশি করা হয়েছে। গভীর রাতে ইসরায়েলি সেনারা মেশিনগান নিয়ে কারাগারের সেলে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো।

গত বুধবার (৮ অক্টোবর) গাজাগামী নৌবহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজগুলো দখল করে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই বহরে ‘কনশানস’ নামের একটি জাহাজে ছিলেন শহিদুল আলম।

পরে অন্যদের সঙ্গে শহিদুল আলমকেও বন্দি করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে তুরস্ক হয়ে শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে ঢাকায় আসেন তিনি।
বিকালে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে ফ্লোটিলায় অবস্থান, আটক এবং আটকের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন এই আলোকচিত্রী। তিনি বলেন, অনেক রকমের নির্যাতন হয়েছে। প্রধান যদি বলি, সেটা মানসিক নির্যাতন, আঘাত যদিও আমরা তেমন পাইনি। গভীর রাতে হঠাৎ করে ইসরায়েলি বাহিনী মেশিনগান নিয়ে সেলের মধ্যে ঢুকে যেত। তারা জোরে আওয়াজ করত, চিৎকার করে দাঁড়ানো বা অন্য আদেশ দিত এবং আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করত। হামাসের সমর্থক দাবি করে আমাদের একজন সহযাত্রীকে গুলি করে মারারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

শহিদুল আলম বলেন, আমরা যখন জাহাজ থেকে নামি, তখন হাত পেছনে নিয়ে বেঁধে যেখানে হাঁটুমুড়ে বসানো হয়েছিল। আমার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা এভাবে উবু হয়ে বসেছিলাম। আমার জন্য সবচেয়ে খারাপ লেগেছে তারা আমার পাসপোর্ট নিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল। এটা আমার জন্য বড় আঘাত ছিল।

দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান তাকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রার পরিকল্পনা করতে সাহস জুগিয়েছে। সে সময় রাস্তায় নেমেছি, আন্দোলন করেছি। এ রকম একজন স্বৈরাচারকেও আমরা হঠাতে পেরেছি। এখানেও সেই জিনিস, আন্তর্জাতিকভাবে সেরকম একটা জিনিস করা দরকার। পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে শহিদুল আলম বলেন, তারা আন্তর্জাতিক একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।

অসাধারণ কিছু ব্যক্তি একসঙ্গে হওয়ার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা এখন আন্তর্জাতিকভাবে একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করাব। যেহেতু গ্লোবাল লিডাররা করবে না, আমরা অ্যাকটিভিস্টরা কীভাবে করতে পারি সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। একটা ‘ব্লুপ্রিন্ট’ আমরা করে রেখেছি এবং আমরা ফেরার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আবার আমরা যাব এবং হাজারটা জাহাজ যাবে।

জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ও কিউরেটর তানজিম ইবনে ওয়াহাবের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৃকের পরিচালক ও লেখক রেহনুমা আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক ও কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক মো. কামাল হোসেন।

গেল ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছেড়েছিলেন শহিদুল আলম। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর ইতালি থেকে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন-এফএফসির উদ্যোগে ‘কনশানস’ জাহাজে চড়ে প্রায় ১০০ জনসহ গাজা অভিমুখে রওনা হন। বুধবার ভূমধ্যসাগরে গাজাগামী নৌববহর ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজগুলো আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকে শুরুতেই অপহৃতদের ইসরায়েলের আশদদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের দেশটির কেৎজিয়েত কারাগারে বন্দি রাখে ইসরায়েলি বাহিনী। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় তুরস্ক হয়ে শনিবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছান তিনি।
সানা/আপ্র/১১/১০/২০২৫