ঢাকা ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

ইসরায়েলের জিম্মিমুক্তি ছাড়াই গাজা যুদ্ধে জেতার আশা

  • আপডেট সময় : ০৭:২৪:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, নাকি সেখানে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তথাকথিত ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ চলবে- এ প্রশ্নে দিন দিন বিভক্ত হয়ে পড়ছেন ইসরায়েলের জনগণ। তবে দেশটির সরকার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় পূর্ণ বিজয় চাইছে। এক্ষেত্রে সরকার দ্বিতীয় বিকল্পটিই বেছে নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। প্রথমে এই বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে না পারায় চাপের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। এরপর দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান না ঘটাতে পারা বা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা কেমন হবে, এর রূপরেখা তুলে ধরতে না পারার চাপে আছেন তিনি।

গত মার্চে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একতরফাভাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বাতিল করেন। চুক্তি অব্যাহত থাকলে গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যুদ্ধবিরতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটি যেন ইসরায়েলি সমাজের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি আরো প্রকট করে তুলেছে। কারণ সরকারবিরোধীরা বুঝে গেছেন, গাজা থেকে জিম্মিদের জীবিত ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একাধিক ইউনিট থেকে সরকারের উদ্দেশে একের পর এক খোলাচিঠি লেখা হয়েছে। এগুলোতে সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা গেছে। মে মাসের শুরুর দিকে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করতে ৬০ হাজার অতিরিক্ত রিজার্ভ সেনা (আপৎকালের জন্য মজুত সেনা) মোতায়েনে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ করেন তারা।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যে ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের বড় অংশই নারী ও শিশু।

গত এপ্রিলের মাঝামাঝি ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। চিঠিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে কোনো জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর জন্য নয়; বরং নেতানিয়াহুর ‘ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ’ রক্ষার জন্যই এ যুদ্ধ চালানো হচ্ছে। এই চিঠির পর ইসরায়েলের নৌবাহিনী, সামরিক বাহিনীর অন্যান্য অভিজাত ইউনিট, এমনকি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্যরাও নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেন।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত স্বার্থে যুদ্ধকে কাজে লাগানোর এ অভিযোগ নতুন নয়। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আগেই এ অভিযোগ উঠেছিল।

সমালোচকদের মতে, যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তত নেতানিয়াহু নিজেকে রক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের মতে, যুদ্ধের অজুহাতে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চাইছেন।

২০১৯ সাল থেকে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে নেতানিয়াহুকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে সরকারের রাজনৈতিক ব্যর্থতা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিও উঠেছে।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো, তার দপ্তরের সদস্যরা কাতার থেকে অর্থকড়ি নিয়েছেন। যদিও কাতার এ অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। কাতারের দাবি, সংঘাত অবসানে তার মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ভণ্ডুল করতে এ কথা বলা হচ্ছে।

সমালোচকদের মতে, যুদ্ধ চলমান থাকায় নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর সমর্থনও ধরে রাখতে পারছেন তিনি। দলগুলো স্পষ্ট বলে দিয়েছে, ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধের সমাপ্তি মানবে না। ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ না এলে তারা জোট থেকে সরে যাবে ও নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঘটাবে।

রিজার্ভ সেনাদের অনাগ্রহ: ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জনগণের মধ্যে যে তিক্ততা ছড়িয়েছে, তার প্রতিফলন রিজার্ভ সেনাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। তাদের অনেকেই এখন আর বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনে হাজির হচ্ছেন না। সরকারি ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না।
যেসব রিজার্ভ সেনা সরকারের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না, তাদের বেশির ভাগই ‘গ্রে রিফিউজার’ নামে পরিচিত; অর্থাৎ গাজায় গণহত্যার বিষয়ে তাদের মতাদর্শিক কোনো আপত্তি নেই। তবে তারা অনির্দিষ্টকাল ধরে চলা যুদ্ধ সামাল দিতে গিয়ে পরিবার ও পেশা থেকে লম্বা সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ক্লান্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধে রিজার্ভ সেনাদের প্রকৃত অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৬০ শতাংশের কাছাকাছি।
বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের সহযোগিতাকারী সংগঠন নিউ প্রোফাইল। সংগঠনটির এক মুখপাত্র বলেন, ইসরায়েলের রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে কাজে যুক্ত না হতে চাওয়ার প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। সাধারণত ইসরায়েল সরকারের নীতিতে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিবর্তন আনা হলে অস্বীকৃতির হার বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা কিংবা সরকারি বক্তব্য সম্পর্কে বলা যায়। শুরুতে ‘হামাসকে ধ্বংস’ বা ‘জিম্মিদের মুক্ত’ করাকে সামরিক অভিযানের মূল লক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হলেও কর্মকর্তারা এখন বলছেন, গাজা দখল এবং সেখানে নিধনযজ্ঞই মূল লক্ষ্য।

বিভক্তি বাড়ানো হচ্ছে: হারেদি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আট দশক ধরে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছিল হারেদিরা। তবে গত বছরের জুনে সুপ্রিম কোর্ট এ অব্যাহতিকে অবৈধ ঘোষণা করেন।

জোট সরকারকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে নেতানিয়াহু হারেদি সম্প্রদায়ের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট নেতানিয়াহুর কাছে একটি ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, রিজার্ভ সেনায় ঘাটতি থাকার পরও কেন আদালতের রুল পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি।

জিম্মিদের ভালো চাওয়া ও নেতানিয়াহুর ঘোষিত ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’-এ দুইয়ের মধ্যে যে স্পষ্ট দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তা যেন যুদ্ধের স্থায়িত্বের মতোই দীর্ঘ। বিভক্তির প্রতিটি মুহূর্তই প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করে তুলছে। মন্ত্রিসভার কট্টর জাতীয়তাবাদী অংশের সমর্থন থাকার কারণে এমনটা সম্ভব হচ্ছে।

আলজাজিরাকে মেকেলবার্গ বলেন, ‘এখন আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আছি, যখন কিনা কিছু মানুষ সেনাবাহিনীতে ৪০০ দিন পর্যন্ত সেবায় (রিজার্ভ সেনা হিসেবে) নিয়োজিত, আবার অন্যরা একেবারেই সেবা দিতে রাজি নন। তারা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এটা করছেন।’

অন্যদিকে কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলছেন, ‘সামরিক সাফল্যের’ বিনিময়ে জিম্মিদের ‘উৎসর্গ’ করা যেতে পারে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইসরায়েলের জিম্মিমুক্তি ছাড়াই গাজা যুদ্ধে জেতার আশা

আপডেট সময় : ০৭:২৪:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, নাকি সেখানে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তথাকথিত ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ চলবে- এ প্রশ্নে দিন দিন বিভক্ত হয়ে পড়ছেন ইসরায়েলের জনগণ। তবে দেশটির সরকার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় পূর্ণ বিজয় চাইছে। এক্ষেত্রে সরকার দ্বিতীয় বিকল্পটিই বেছে নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। প্রথমে এই বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে না পারায় চাপের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। এরপর দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান না ঘটাতে পারা বা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা কেমন হবে, এর রূপরেখা তুলে ধরতে না পারার চাপে আছেন তিনি।

গত মার্চে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একতরফাভাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বাতিল করেন। চুক্তি অব্যাহত থাকলে গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যুদ্ধবিরতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটি যেন ইসরায়েলি সমাজের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি আরো প্রকট করে তুলেছে। কারণ সরকারবিরোধীরা বুঝে গেছেন, গাজা থেকে জিম্মিদের জীবিত ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একাধিক ইউনিট থেকে সরকারের উদ্দেশে একের পর এক খোলাচিঠি লেখা হয়েছে। এগুলোতে সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা গেছে। মে মাসের শুরুর দিকে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করতে ৬০ হাজার অতিরিক্ত রিজার্ভ সেনা (আপৎকালের জন্য মজুত সেনা) মোতায়েনে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ করেন তারা।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যে ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের বড় অংশই নারী ও শিশু।

গত এপ্রিলের মাঝামাঝি ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। চিঠিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে কোনো জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর জন্য নয়; বরং নেতানিয়াহুর ‘ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ’ রক্ষার জন্যই এ যুদ্ধ চালানো হচ্ছে। এই চিঠির পর ইসরায়েলের নৌবাহিনী, সামরিক বাহিনীর অন্যান্য অভিজাত ইউনিট, এমনকি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্যরাও নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেন।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত স্বার্থে যুদ্ধকে কাজে লাগানোর এ অভিযোগ নতুন নয়। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আগেই এ অভিযোগ উঠেছিল।

সমালোচকদের মতে, যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তত নেতানিয়াহু নিজেকে রক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের মতে, যুদ্ধের অজুহাতে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চাইছেন।

২০১৯ সাল থেকে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে নেতানিয়াহুকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে সরকারের রাজনৈতিক ব্যর্থতা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিও উঠেছে।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো, তার দপ্তরের সদস্যরা কাতার থেকে অর্থকড়ি নিয়েছেন। যদিও কাতার এ অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। কাতারের দাবি, সংঘাত অবসানে তার মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ভণ্ডুল করতে এ কথা বলা হচ্ছে।

সমালোচকদের মতে, যুদ্ধ চলমান থাকায় নেতানিয়াহু তার বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর সমর্থনও ধরে রাখতে পারছেন তিনি। দলগুলো স্পষ্ট বলে দিয়েছে, ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধের সমাপ্তি মানবে না। ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ না এলে তারা জোট থেকে সরে যাবে ও নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঘটাবে।

রিজার্ভ সেনাদের অনাগ্রহ: ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জনগণের মধ্যে যে তিক্ততা ছড়িয়েছে, তার প্রতিফলন রিজার্ভ সেনাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। তাদের অনেকেই এখন আর বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনে হাজির হচ্ছেন না। সরকারি ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না।
যেসব রিজার্ভ সেনা সরকারের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না, তাদের বেশির ভাগই ‘গ্রে রিফিউজার’ নামে পরিচিত; অর্থাৎ গাজায় গণহত্যার বিষয়ে তাদের মতাদর্শিক কোনো আপত্তি নেই। তবে তারা অনির্দিষ্টকাল ধরে চলা যুদ্ধ সামাল দিতে গিয়ে পরিবার ও পেশা থেকে লম্বা সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ক্লান্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধে রিজার্ভ সেনাদের প্রকৃত অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৬০ শতাংশের কাছাকাছি।
বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের সহযোগিতাকারী সংগঠন নিউ প্রোফাইল। সংগঠনটির এক মুখপাত্র বলেন, ইসরায়েলের রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে কাজে যুক্ত না হতে চাওয়ার প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। সাধারণত ইসরায়েল সরকারের নীতিতে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিবর্তন আনা হলে অস্বীকৃতির হার বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা কিংবা সরকারি বক্তব্য সম্পর্কে বলা যায়। শুরুতে ‘হামাসকে ধ্বংস’ বা ‘জিম্মিদের মুক্ত’ করাকে সামরিক অভিযানের মূল লক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হলেও কর্মকর্তারা এখন বলছেন, গাজা দখল এবং সেখানে নিধনযজ্ঞই মূল লক্ষ্য।

বিভক্তি বাড়ানো হচ্ছে: হারেদি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আট দশক ধরে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছিল হারেদিরা। তবে গত বছরের জুনে সুপ্রিম কোর্ট এ অব্যাহতিকে অবৈধ ঘোষণা করেন।

জোট সরকারকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে নেতানিয়াহু হারেদি সম্প্রদায়ের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট নেতানিয়াহুর কাছে একটি ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, রিজার্ভ সেনায় ঘাটতি থাকার পরও কেন আদালতের রুল পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি।

জিম্মিদের ভালো চাওয়া ও নেতানিয়াহুর ঘোষিত ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’-এ দুইয়ের মধ্যে যে স্পষ্ট দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তা যেন যুদ্ধের স্থায়িত্বের মতোই দীর্ঘ। বিভক্তির প্রতিটি মুহূর্তই প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করে তুলছে। মন্ত্রিসভার কট্টর জাতীয়তাবাদী অংশের সমর্থন থাকার কারণে এমনটা সম্ভব হচ্ছে।

আলজাজিরাকে মেকেলবার্গ বলেন, ‘এখন আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আছি, যখন কিনা কিছু মানুষ সেনাবাহিনীতে ৪০০ দিন পর্যন্ত সেবায় (রিজার্ভ সেনা হিসেবে) নিয়োজিত, আবার অন্যরা একেবারেই সেবা দিতে রাজি নন। তারা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে এটা করছেন।’

অন্যদিকে কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলছেন, ‘সামরিক সাফল্যের’ বিনিময়ে জিম্মিদের ‘উৎসর্গ’ করা যেতে পারে।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ