ঢাকা ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
ইসরায়েলপন্থি সমাবেশে ‘হ্যাঁ’, ফিলিস্তিন সংহতিতে ‘না’

ইসরায়েলপন্থি সমাবেশে ‘হ্যাঁ’, ফিলিস্তিন সংহতিতে ‘না’

  • আপডেট সময় : ০২:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণ চলছে। হামলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু। গাজায় ইসরায়েলি হামলা সারা বিশ্বের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করেছে। দেশে দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে ভারতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা সরকারের লক্ষ্যবস্তু পরিণত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (পিএলও) স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম অ-আরব দেশ ভারত। তবে দেশটি বর্তমানে ইসরায়েল ও তার সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ। গাজায় হামলা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের হামিরপুর জেলার মুসলিম প-িত আতিফ চৌধুরী এবং সুহেল আনসারিকে খুঁজছিল পুলিশ। তাদের অপরাধ তারা হোয়াটসঅ্যাপে একটি ছবি পোস্ট করেন, যাতে লেখা ছিল— ‘আমি ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছি’। ওই দুজনের বিরুদ্ধে সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ জানায়, আনসারি গ্রেপ্তার হয়েছেন আর চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর একদিন পর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত উত্তর প্রদেশ রাজ্যের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি মিছিল করার দায়ে। অন্যদিকে, গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী বজরং দল একই আলিগড় শহরে ইসরায়েলপন্থী মিছিল বের করে ‘ফিলিস্তিন ধ্বংস হোক/ হামাস ধ্বংস হোক’ স্লোগান দিলেও কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য ছাত্র, অধিকারকর্মী ও নাগরিকদের আয়োজিত সমাবেশ চলাকালে অংশগ্রহণকারীদের আটকের বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে।
একটি আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট করে বিজেপি শাসিত পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে দুই প্রতিবাদকারী রুচির লাড ও সুপ্রীত রাভিশ গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে মিছিল করায় গত ১৩ অক্টোবর বেআইনি সমাবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ও ভারতের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য পূজা চিনচোল আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের আয়োজন করছি জানতে পেরে পুলিশ আমাদের ব্যাপকভাবে বাধা দিয়েছিল। তারা বিক্ষোভের একদিন আগে একজন সংগঠককে এবং প্রতিবাদের দিন সকালে তিনজন সংগঠককে আটক করে। আমরা যখন প্রতিবাদ করতে জড়ো হলাম, তখন তারা আমাদের মাইক্রোফোন ও প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নেয় এবং কিছুক্ষণ পর আমাদের কয়েকজনের ওপর বলপ্রয়োগ শুরু করে। ’ দমনপীড়ন শুধু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস শাসিত দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে ১৬ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে একটি মৌন মিছিলের আয়োজন করায় পুলিশ ১০ জনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের উপদ্রব সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে।
কর্ণাটক পুলিশ হোয়াটসঅ্যাপে হামাসের সমর্থনে একটি ভিডিও পোস্ট করার অভিযোগে ৫৮ বছর বয়সী এক মুসলিম ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করেছে। ফিলিস্তিনি পতাকা এবং ‘ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবী হোক’ বার্তাসহ নিজের হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস আপডেট করায় পুলিশ সরকারি কর্মচারী আলম নওয়াজকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটক করে। ২০ বছর বয়সী নওয়াজ বলেন, ‘লোকজন আমাকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে, যেন আমি ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কোনো অপরাধ করেছি!’ তবে এসব সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি জনগণের ভূমি, স্বায়ত্তশাসন ও মর্যাদার সাথে বসবাসের অধিকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে ৯ অক্টোবর কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি একটি প্রস্তাব পাস করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতজুড়ে ইসরায়েলপন্থি অনেক সমাবেশ হয়েছে, যা প্রধানত হিন্দু ডানপন্থি গোষ্ঠী আয়োজিন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেছেন। গত শনিবার কয়েক ডজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা ১৮২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাসে যান। তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইসরায়েলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী হিন্দু জাতীয়তাবাদী ইয়াতি নরসিংহানন্দ ইসরায়েলি সরকারকে ১০০০ হিন্দুকে ইসরায়েলে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানান যাতে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। গত ৮ অক্টোবর ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নাওর গিলন জানান, স্বেচ্ছায় ইসরায়েলের পক্ষে লড়াই করতে ইচ্ছুক ভারতীয়দের কাছ থেকে বেশকিছু অনুরোধ তিনি পেয়েছেন। অতি ডানপন্থি হিন্দু ব্যক্তিরা, যারা ইহুদিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য অ্যাডলফ হিটলারকে প্রকাশ্যে প্রশংসা করেন, তারাই এখন ইসরায়েলে ইহুদিবাদীদের সমর্থন করছেন বলে মোটেও বিস্মিত হননি দিল্লি ইউনিভার্সিটির হিন্দি ভাষার অধ্যাপক অপূর্বানন্দ।

তিনি বলেন, ‘ভারতের হিন্দু উগ্র ডানপন্থি সংগঠনগুলো সব সময় তাদেরই সমর্থন করে যারা সহিংসতায় আধিপত্য বিস্তার করে। হিটলার একবার আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তাই তারা তাকে সমর্থন করেছিল। এখন ইসরায়েল এটি করছে, তাই তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। অপূর্বানন্দ বলেন, ভারতের হিন্দু ডানপন্থিরা মনে করে তাদের এবং ইসরায়েলের ইহুদিবাদীদের মধ্যে আদর্শিক সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েল উগ্র হিন্দুদের পক্ষে প্রক্সি যুদ্ধ লড়ছে। তারা মনে করে, ইসরায়েল হিন্দুদের পক্ষ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং ধ্বংস করছে। তারা যেভাবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপালকে ভারতের সাথে একত্রিত করে অখ- ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা মনে করে ইসরায়েল একই সম্প্রসারণবাদী আদর্শ অনুসরণ করছে। ’
ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনিকে সমর্থন করেছে। ভারত ১৯৪৭ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল এবং তারপর ১৯৭৪ সালে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে পিএলও-কে স্বীকৃতি দেয়। ফিলিস্তিনে নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জিকরুর রহমান আল জাজিরাকে বলেন, ‘ভারতের ফিলিস্তিপন্থি অবস্থান ব্রিটিশ উপনিবেশের (ভারত ও ফিলিস্তিন) ইতিহাস দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। উত্তর ঔপনিবেশিক যুগে আমরা চিহ্নিত করেছি, এটি দেশকে বিভক্ত করার এবং অন্য একটি দেশ তৈরির একটি ঔপনিবেশিক প্রচেষ্টা। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ গড়ার পক্ষে ছিলাম না। ’ ফিলিস্তিনের বিষয়ে ভারতের অবস্থান পরিবর্তন না হলেও এটি আগের মতো শক্তিশালী নয় বলেও মনে করেন জিকরুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে ‘ভালো বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন। ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণের পর ইসরায়েলের সাথে সংহতি প্রকাশ করা প্রথম বিশ্বনেতাদের মধ্যে একজন মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিক্রিয়া জানানোর চার ঘণ্টা আগে নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স পোস্ট বলেন, ‘ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলার খবরে গভীরভাবে মর্মাহত’। নরেন্দ্র মোদি ১৮ অক্টোবর গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলারও নিন্দা করেছিলেন, যেখানে প্রায় ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। যদিও তার সেই বার্তা বাইডেনের পোস্টের প্রায় আট ঘণ্টা পরে প্রকাশিত হয়েছিল। সূত্র: আল জাজিরা

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইসরায়েলপন্থি সমাবেশে ‘হ্যাঁ’, ফিলিস্তিন সংহতিতে ‘না’

ইসরায়েলপন্থি সমাবেশে ‘হ্যাঁ’, ফিলিস্তিন সংহতিতে ‘না’

আপডেট সময় : ০২:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণ চলছে। হামলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু। গাজায় ইসরায়েলি হামলা সারা বিশ্বের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করেছে। দেশে দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে ভারতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা সরকারের লক্ষ্যবস্তু পরিণত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (পিএলও) স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম অ-আরব দেশ ভারত। তবে দেশটি বর্তমানে ইসরায়েল ও তার সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ। গাজায় হামলা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের হামিরপুর জেলার মুসলিম প-িত আতিফ চৌধুরী এবং সুহেল আনসারিকে খুঁজছিল পুলিশ। তাদের অপরাধ তারা হোয়াটসঅ্যাপে একটি ছবি পোস্ট করেন, যাতে লেখা ছিল— ‘আমি ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছি’। ওই দুজনের বিরুদ্ধে সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ জানায়, আনসারি গ্রেপ্তার হয়েছেন আর চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর একদিন পর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত উত্তর প্রদেশ রাজ্যের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি মিছিল করার দায়ে। অন্যদিকে, গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী বজরং দল একই আলিগড় শহরে ইসরায়েলপন্থী মিছিল বের করে ‘ফিলিস্তিন ধ্বংস হোক/ হামাস ধ্বংস হোক’ স্লোগান দিলেও কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য ছাত্র, অধিকারকর্মী ও নাগরিকদের আয়োজিত সমাবেশ চলাকালে অংশগ্রহণকারীদের আটকের বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে।
একটি আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট করে বিজেপি শাসিত পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে দুই প্রতিবাদকারী রুচির লাড ও সুপ্রীত রাভিশ গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে মিছিল করায় গত ১৩ অক্টোবর বেআইনি সমাবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ও ভারতের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য পূজা চিনচোল আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের আয়োজন করছি জানতে পেরে পুলিশ আমাদের ব্যাপকভাবে বাধা দিয়েছিল। তারা বিক্ষোভের একদিন আগে একজন সংগঠককে এবং প্রতিবাদের দিন সকালে তিনজন সংগঠককে আটক করে। আমরা যখন প্রতিবাদ করতে জড়ো হলাম, তখন তারা আমাদের মাইক্রোফোন ও প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নেয় এবং কিছুক্ষণ পর আমাদের কয়েকজনের ওপর বলপ্রয়োগ শুরু করে। ’ দমনপীড়ন শুধু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস শাসিত দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে ১৬ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে একটি মৌন মিছিলের আয়োজন করায় পুলিশ ১০ জনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের উপদ্রব সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে।
কর্ণাটক পুলিশ হোয়াটসঅ্যাপে হামাসের সমর্থনে একটি ভিডিও পোস্ট করার অভিযোগে ৫৮ বছর বয়সী এক মুসলিম ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করেছে। ফিলিস্তিনি পতাকা এবং ‘ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবী হোক’ বার্তাসহ নিজের হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস আপডেট করায় পুলিশ সরকারি কর্মচারী আলম নওয়াজকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটক করে। ২০ বছর বয়সী নওয়াজ বলেন, ‘লোকজন আমাকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে, যেন আমি ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কোনো অপরাধ করেছি!’ তবে এসব সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি জনগণের ভূমি, স্বায়ত্তশাসন ও মর্যাদার সাথে বসবাসের অধিকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে ৯ অক্টোবর কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি একটি প্রস্তাব পাস করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতজুড়ে ইসরায়েলপন্থি অনেক সমাবেশ হয়েছে, যা প্রধানত হিন্দু ডানপন্থি গোষ্ঠী আয়োজিন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেছেন। গত শনিবার কয়েক ডজন অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা ১৮২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাসে যান। তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইসরায়েলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী হিন্দু জাতীয়তাবাদী ইয়াতি নরসিংহানন্দ ইসরায়েলি সরকারকে ১০০০ হিন্দুকে ইসরায়েলে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানান যাতে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। গত ৮ অক্টোবর ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নাওর গিলন জানান, স্বেচ্ছায় ইসরায়েলের পক্ষে লড়াই করতে ইচ্ছুক ভারতীয়দের কাছ থেকে বেশকিছু অনুরোধ তিনি পেয়েছেন। অতি ডানপন্থি হিন্দু ব্যক্তিরা, যারা ইহুদিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য অ্যাডলফ হিটলারকে প্রকাশ্যে প্রশংসা করেন, তারাই এখন ইসরায়েলে ইহুদিবাদীদের সমর্থন করছেন বলে মোটেও বিস্মিত হননি দিল্লি ইউনিভার্সিটির হিন্দি ভাষার অধ্যাপক অপূর্বানন্দ।

তিনি বলেন, ‘ভারতের হিন্দু উগ্র ডানপন্থি সংগঠনগুলো সব সময় তাদেরই সমর্থন করে যারা সহিংসতায় আধিপত্য বিস্তার করে। হিটলার একবার আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তাই তারা তাকে সমর্থন করেছিল। এখন ইসরায়েল এটি করছে, তাই তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। অপূর্বানন্দ বলেন, ভারতের হিন্দু ডানপন্থিরা মনে করে তাদের এবং ইসরায়েলের ইহুদিবাদীদের মধ্যে আদর্শিক সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েল উগ্র হিন্দুদের পক্ষে প্রক্সি যুদ্ধ লড়ছে। তারা মনে করে, ইসরায়েল হিন্দুদের পক্ষ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং ধ্বংস করছে। তারা যেভাবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপালকে ভারতের সাথে একত্রিত করে অখ- ভারত প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা মনে করে ইসরায়েল একই সম্প্রসারণবাদী আদর্শ অনুসরণ করছে। ’
ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনিকে সমর্থন করেছে। ভারত ১৯৪৭ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল এবং তারপর ১৯৭৪ সালে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে পিএলও-কে স্বীকৃতি দেয়। ফিলিস্তিনে নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জিকরুর রহমান আল জাজিরাকে বলেন, ‘ভারতের ফিলিস্তিপন্থি অবস্থান ব্রিটিশ উপনিবেশের (ভারত ও ফিলিস্তিন) ইতিহাস দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। উত্তর ঔপনিবেশিক যুগে আমরা চিহ্নিত করেছি, এটি দেশকে বিভক্ত করার এবং অন্য একটি দেশ তৈরির একটি ঔপনিবেশিক প্রচেষ্টা। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ গড়ার পক্ষে ছিলাম না। ’ ফিলিস্তিনের বিষয়ে ভারতের অবস্থান পরিবর্তন না হলেও এটি আগের মতো শক্তিশালী নয় বলেও মনে করেন জিকরুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে ‘ভালো বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন। ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণের পর ইসরায়েলের সাথে সংহতি প্রকাশ করা প্রথম বিশ্বনেতাদের মধ্যে একজন মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিক্রিয়া জানানোর চার ঘণ্টা আগে নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স পোস্ট বলেন, ‘ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলার খবরে গভীরভাবে মর্মাহত’। নরেন্দ্র মোদি ১৮ অক্টোবর গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলারও নিন্দা করেছিলেন, যেখানে প্রায় ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। যদিও তার সেই বার্তা বাইডেনের পোস্টের প্রায় আট ঘণ্টা পরে প্রকাশিত হয়েছিল। সূত্র: আল জাজিরা