নিজস্ব প্রতিবেদক : ২৪ জুলাই নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে নেমে প্রচুর ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা। গতকাল সোমবার দক্ষিণাঞ্চল থেকে একদিনেই তিন হাজার মণের বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে চাঁদপুরের মাছঘাটে। তবে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশের আমদানি তুলনামূলক কম। সাগরের ইলিশের আমদানি আরও কয়েক মাস থাকবে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে শহরের বড়স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সাগর থেকে বড় বড় ট্রলার মাছঘাটে এসে ভিড়েছে। ট্রলার থেকে ইলিশগুলো তোলা হচ্ছে আড়তে। অর্ধশতাধিক আড়তের সামনে স্তূপ করা হচ্ছে। বড় এবং ছোট সাইজের ইলিশ আলাদা করে হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জেলার ভেতরে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব ইলিশ কিনছেন। এছাড়া মাছঘাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইলিশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি হওয়া ইলিশ প্যাকেট ও বক্স করে ট্রাকে করে পাঠানোর জন্য বরফ দিয়ে প্রস্তুত করছেন শ্রমিকরা। ইলিশের সঙ্গে জড়িত সব শ্রমিকই এখন খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারির পাশাপাশি খুচরা ইলিশও বিক্রি করছেন কিছু ব্যবসায়ী। এর মধ্যে স্থানীয় ইলিশই বেশি। কারণ চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের জন্যই বেশি আসেন ক্রেতারা। মাছঘাটের শ্রমিক নিজাম বন্দুকশী বলেন, গত কয়েকদিন মাছের আমদানি কম ছিল। তখন দৈনিক আয় ছিল ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। আজ দু’দিন আয় হচ্ছে কমপক্ষে হাজার টাকা করে। চাঁদপুর মৎস্য ও বণিক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান ভুঁইয়া কালু বলেন, আমরা এখন সাগরের ইলিশের ওপর নির্ভরশীল। গত তিনদিন আগেও মাছঘাট ফাঁকা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কারণে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। আমার জানা মতে আজ প্রায় তিন হাজার মণের বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম। আগে এ সময়ে চাঁদপুরের ইলিশের আমদানি ছিল অনেক বেশি। নদীর নাব্য সংকট, ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং নদীতে দূষণের কারণে এখন খুব কম ইলিশ পান জেলেরা। তারপরও প্রতিদিন চাঁদপুর নৌ-সীমানায় কমপক্ষে হাজার মণ ইলিশ ২ শতাধিক আড়তে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয়। সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। রোববার থেকেই সাগরের ইলিশের ভালো আমদানি আছে। গতকাল প্রায় ২ হাজার মণের ওপরে ইলিশ চাঁদপুর মাছঘাটে বিক্রি হয়েছে। গভীর সমুদ্রের মাছ হওয়ার কারণে অধিকাংশ ইলিশের সাইজ ছোট। ৪শ’, ৫শ’ ও ৬শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশই বাজারে বেশি। এগুলো প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকায়। মৌসুম হওয়ায় আশা করছি, আরও দুই মাস বেশ ভালোই ইলিশ পাওয়া যাবে।
এদিকে চট্টগ্রামের সমুদ্রেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। সেই মাছ নিয়ে ট্রলার ভর্তি করে জেলেরা ফিরছেন চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাটে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাছের আড়ত ফিশারি ঘাটে ইলিশে সয়লাব হলেও দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। পাইকারিতেই প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে এই দাম প্রতি কেজি হাজার টাকা। জানা গেছে, জেলেরা প্রচুর পরিমাণে ইলিশ শিকার করে ট্রলার নিয়ে তীরে ফিরছে। আবদুর রশিদ নামের এক জেলে বলেন, মাছ ধরা শুরুর পর প্রথম চালানেই আমরা প্রচুর ইলিশ ধরেছি। সমুদ্রে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। আফজাল হোসেন নামের একজন আড়তদার জানান, প্রচুর ইলিশ মাছ আসছে। তবে দাম এখনও বেশি। ইলিশের দাম নাগালের মধ্যে আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তিনি জানান, প্রতিমণ ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৬ হাজার টাকা। সাইজ বেশি বড় হলে দাম আরও বেশি। কেজি হিসেবে পাইকারিতে প্রতি কেজি ইলিশের বর্তমান মূল্য ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে দাম হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। অপরদিকে সাগর থেকে ট্রলারে ইলিশ বোঝাই করে পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে ফিরতে শুরু করেছেন বরগুনা উপকূলের জেলেরা। জেলেরা বলছেন, যে পরিমাণ মাছ আশা করেছিলেন তার চেয়েও বেশি মাছ আটকা পড়েছে তাদের জালে। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পরিচালক মো. লুৎফর রহমান (বিএন) বলেন, গতকাল সোমবার বিএফডিসির মৎস্য বাজারে মোট ১১ হাজার ৮৬৯ কেজি বিক্রি মাছ হয়েছে। তার মধ্যে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৭৮০ কেজি। মোট মাছ বিক্রি হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকার। এতে প্রায় ১লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার।’
ইলিশে সয়লাব ঘাট, দাম চড়া
ট্যাগস :
ইলিশে সয়লাব ঘাট
জনপ্রিয় সংবাদ