লাইফস্টাইল ডেস্ক: দুর্গাপূজা বাঙালির সর্ববৃহৎ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এই পূজার সময় উৎসবের আবহ, আয়োজন, এবং খাবারের তালিকায় থাকে নানা ধরনের বৈচিত্র্য। তবে দুর্গাপূজার সঙ্গে ইলিশ মাছের যোগ কী? এটি কেবলই এক ধরনের রন্ধনশৈলী, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো ঐতিহ্য বা ধর্মীয় বিশ্বাস? নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলোÑ
ঐতিহ্যের মেলবন্ধন: ইলিশ মাছের সঙ্গে বাঙালির আত্মিক সম্পর্ক চিরন্তন। এটি শুধু একটি মাছ নয়; বরং বাঙালির সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইলিশের এই জনপ্রিয়তা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশÑ উভয় প্রান্তেই সমান। পূজার সময় ইলিশ খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, বিশেষ করে দুর্গাপূজার শুভমুহূর্তে। যদিও দুর্গাপূজা মূলত হিন্দু ধর্মের একটি বড় উৎসব, তবুও এর সঙ্গে ইলিশ খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় সংযোগ নেই; বরং এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে।
মৌসুমি উপাদান: দুর্গাপূজা সাধারণত শরৎকালে অনুষ্ঠিত হয়, যা ইলিশের মৌসুমও বটে। শরৎকালে, বিশেষত আশ্বিন মাসে ইলিশ মাছ ধরা পড়ে সবচেয়ে বেশি এবং এই সময়ের ইলিশ মাছ সুস্বাদু হয়। পূজার সময় যখন বাঙালির ঘরে ঘরে নানা পদের আয়োজন হয়, তখন ইলিশ মাছের পদ যেন আরও আলাদা গুরুত্ব পায়। তেল, ঝাল, ভাজা বা ভিন্নধর্মী পদে ইলিশ তখন পূজার খাবার টেবিলে এক বিশেষ স্থান দখল করে থাকে। পূজার সময়ের এই মৌসুমী ইলিশ খাওয়া এক ধরনের প্রাকৃতিক উৎসবের অংশ হিসেবেই গণ্য হয়।
মিথ ও লোকবিশ্বাস: অনেকেই মনে করেন, দুর্গাপূজায় দেবী দুর্গার প্রতি ইলিশ নিবেদন শুভ। এই লোকবিশ্বাস বিশেষত নদীমাতৃক পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের কিছু অংশে প্রচলিত। অনেকে মনে করেন, নবপত্রিকা বা কলাবউয়ের সঙ্গে ইলিশ মাছের নিবেদন করলে পরিবারের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি আসে। যদিও এর পেছনে সরাসরি ধর্মীয় যুক্তি নেই, তবুও সংস্কৃতিগত এই মিথের গুরুত্ব অনেক এলাকায় দেখা যায়।
ইলিশ বনাম মাংসের ঐতিহ্য: পূজার সময় মাংস, বিশেষ করে খাসির মাংস, অন্যতম প্রধান খাবার হলেও ইলিশের জনপ্রিয়তা তাকে কিছতা ছাপিয়ে যায়। যদিও দেবী দুর্গার ভোগে নিরামিষ খাবারের প্রচলন রয়েছে, পূজার দিনগুলিতে অনেক পরিবার ইলিশ মাছ রান্না করে থাকে। মাংসের বদলে ইলিশ খাওয়ার এই প্রবণতা অনেক বাড়িতেই দেখা যায়, বিশেষত মহালয়া থেকে মহাসপ্তমী পর্যন্ত।
সংস্কৃতি ও আধুনিক প্রভাব: আধুনিক সময়ে দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি বাঙালির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এক মিলনমেলা। পূজার দিনগুলোতে বাঙালি পরিবারে ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি নতুন ধরণের খাবার যোগ হওয়ায় খাবারের বৈচিত্র্যও বেড়েছে। ইলিশ মাছের বিভিন্ন পদ যেমন ভাপা, সর্ষে ইলিশ, ইলিশ পোলাও ইত্যাদি এখন দুর্গাপূজার রান্নাঘরে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি এখন এক রকম সামাজিক ও রন্ধনশৈলী বৈচিত্র্যের অংশ।
পরিশেষে বলা যায়, দুর্গাপূজার সঙ্গে ইলিশ খাওয়ার সম্পর্ক মূলত বাঙালি সংস্কৃতির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। পূজার মৌসুমে ইলিশ মাছ খাওয়ার এই প্রথা বা অভ্যাস কোনো ধর্মীয় বিধান নয়, বরং এটি বাঙালির ঐতিহ্য ও রন্ধনশৈলীর মেলবন্ধন। পূজার উৎসবকে আরও উপভোগ্য করতে এবং বিশেষ করে পূজার সময়ে পাওয়া সুস্বাদু ইলিশ মাছের স্বাদ নিতে বাঙালিরা এই সময় ইলিশ রান্না করে থাকে। সুতরাং, দুর্গাপূজা এবং ইলিশ মাছের সম্পর্ক আসলে বাঙালির মননের এক অপূর্ব সঙ্গম, যা উৎসবের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।


























