বিদেশের খবর ডেস্ক : ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক আব্বাস বন্দরে শহিদ রেজায়ী পোর্টে একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ৭০ জনে পৌঁছেছে এবং ১২০০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন। দেশটির রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পীর হোসেন কোলিভান্দ জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে ১৯০ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) ইরানের একজন কর্মকর্তা দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, শনিবার (২৬ এপ্রিল) ইরানের দক্ষিণের বান্দর আব্বাস শহরের শহিদ রেজায়ী বন্দরে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বন্দরটির কাস্টমস অফিস জানায়, বিস্ফোরণটি সম্ভবত বিপজ্জনক ও রাসায়নিক সামগ্রীর গুদামে অগ্নিকা-ের ফলে ঘটেছে।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং ভিডিওতে দেখা গেছে যে, বিস্ফোরণের পর উদ্ধারকর্মী ও বেঁচে যাওয়া মানুষজন ধ্বংসস্তূপে ঢাকা প্রশস্ত সড়ক ধরে হাঁটছেন। মৃতের সংখ্যা তীব্রভাবে বাড়ছে। বিস্ফোরণটি ইরানের বৃহত্তম কন্টেইনার হাব বন্দরের শহিদ রেজাই অংশে ঘটার ফলে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার জানালা ভেঙে যায়, শিপিং কন্টেইনার থেকে ধাতব স্ট্রিপ ছিঁড়ে যায় এবং ভিতরে থাকা পণ্যগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস্কান্দার মোমেনি বলেন, বন্দরের কর্তৃপক্ষকে তাদের পরিচালনাগত ত্রুটি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তার দাবি, বন্দরে নিরাপত্তা সতর্কতা এবং নিষ্ক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তবে কিছু নির্দিষ্ট কন্টেইনার রয়েছে যেগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
আপাতত সেগুলো নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এই ব্যাপারে তদন্ত করতে বেশ কিছু লোককে তলব করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।এদিকে, ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি জানিয়েছে যে, বন্দরে ঘটা বিস্ফোরণের সঙ্গে রিফাইনারি, জ্বালানি ট্যাঙ্ক বা তেল পাইপলাইনের কোনো সম্পর্ক নেই। ইরানি কর্মকর্তারা বন্দরে কোনো সামরিক সরঞ্জাম মজুত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
ইরানি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতি কমিটির মুখপাত্র ইব্রাহিম রেজাই রোববার এক্সের এক পোস্টে বলেছেন, ‘প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে বিস্ফোরণের সঙ্গে ইরানের প্রতিরক্ষা খাতের কোনো সম্পর্ক নেই।’ ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুযায়ী, পরিস্থিতি তদন্ত এবং ত্রাণ তদারকির জন্য রোববার বিকেলে ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান বন্দর আব্বাসে পৌঁছেছেন। রাষ্ট্রপতি বিস্ফোরণে আহতদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। এক বৈঠকে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কেন এটি ঘটেছে।’ এদিকে, এই অঞ্চলটির গভর্নর মোহাম্মদ আশৌরি দেশটিতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। উল্লেখ্য, এই বন্দরটি মূলত বহুল গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালীর কাছে অবস্থিত। বিশ্ব তেল সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশ এই পথ দিয়েই পরিবাহিত হয়।