প্রত্যাশা ডেস্ক: ইরানজুড়ে শুক্রবার (১৩ জুন) পাঁচটি ধাপে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। অজ্ঞাতনামা একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েল পত্রিকাকে এ কথা জানিয়েছেন। এই কর্মকর্তা বলেন, শত শত হামলা চালানো হয়েছে এবং অন্তত আটটি স্থানে (শহরে) লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। খবর আল জাজিরা।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইরানের ছয়টি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। আর ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় অন্তত দুটি ধাপে হামলা চালানো হয়। তবে নিশ্চিত না হলেও এখন তৃতীয় দফার হামলা চলমান থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ আরো বেশ কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
যেসব স্থানে হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেসব হলো রাজধানী তেহরান ও এর আশপাশের সামরিক স্থাপনা; তেহরানের দক্ষিণে নাতানজ শহর, যেখানে ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র অবস্থিত; তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহর, যেখানে একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও দুটি সামরিক ঘাঁটির কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে; তেহরানের দক্ষিণে ইস্পাহান শহর; তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে আরাক শহর ও পশ্চিমে কেরমানশাহ শহর।
ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তেহরানজুড়ে ৬ থেকে ৯টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। হামলা হয়েছে আবাসিক ভবনেও। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী এসব হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের মুখপাত্র আবুলফজল শেখারচি বলেন, ‘জায়নবাদী এই হামলার জবাব অবশ্যই ইরানি সশস্ত্র বাহিনী দেবে।’ মুখপাত্র আরো বলেন, ‘ইসরায়েলকে তার হামলার চড়া মূল্য দিতে হবে এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর কঠোর জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
এদিকে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘ইসরায়েলের হামলার জবাব হবে কঠোর ও ফলাফল নির্ণায়ক।’ হামলা কি অত্যাসন্ন-জানতে চাইলে একই সূত্র বলেছে, ইরানের প্রতিশোধ কেমন হবে, তার বিস্তারিত নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে।
হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি ছাড়াও ২৫ বছর ধরে দেশটির আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধানের দায়িত্বে থাকা ফারেদুন আব্বাসি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তেহরান থেকে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নাতানজ শহরে অবস্থিত ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে তাঁর দেশ। ইরানের যেসব বিজ্ঞানী দেশটির জন্য (পারমাণবিক) বোমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। তিনি আরো বলেন, ‘যত দিন প্রয়োজন, তত দিন এমন হামলা চলবে।’
ইরানের সেনাপ্রধান নিহত: ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ আরো বেশ কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইএনএন নিশ্চিত করেছে, ইসরায়েলি হামলায় সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল বাঘেরি নিহত হয়েছেন। পৃথক হামলায় আইআরজিসির প্রধান মেজর জেনারেল সালামিও নিহত হন। বাঘেরি ইরানের সর্বোচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলায় নিহত দ্বিতীয় উচ্চপদস্থ ব্যক্তি তিনি।
এর আগে শুক্রবার সকালে ইরানের একাধিক রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামিও ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন। ইরানি বার্তা সংস্থার খবরে জানানো হয়, ‘খাতাম আল-আনবিয়া’ সদর দপ্তরের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলী রশিদও একই হামলায় নিহত হয়েছেন। পরমাণুবিজ্ঞানী ও ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ-মেহদি তাহরাঞ্চি এবং পরমাণুবিজ্ঞানী ও ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফেরাইদুন আব্বাসিও পৃথক হামলায় নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সংবাদকর্মীরা জানান, তাঁরা নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশুর মরদেহ দেখতে পেয়েছেন।