প্রত্যাশা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাঈ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে এসমাইল বাঘাঈ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিশ্চিত, কারণ এগুলোর ওপর একের পর এক হামলা হয়েছে। বাঘাঈ বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই, কারণ এটি একটি প্রযুক্তিগত বিষয়।’ তিনি জানান, ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি দেখছে।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলাসংক্রান্ত গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ক্ষোভ জানান তিনি।
ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভুয়া খবরের সিএনএন ডুবন্ত নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে মিলে ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযানের গুরুত্বকে খাটো করে দেখাতে চাইছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে! টাইমস আর সিএনএন-দুই প্রতিষ্ঠানকে নিয়েই সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ!’
১২ দিনের সংঘাতে ১৪ ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের, ইরানের ক্ষতি কতটা: ১২ দিনের সংঘাতে ইরানের অন্তত ১৪ বিজ্ঞানীকে হত্যা করার দাবি করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রসায়নবিদ, পদার্থবিদ ও প্রকৌশলী আছেন। বার্তা সংস্থা এপির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা।
ফ্রান্সে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত জোশুয়া জারকা দাবি করেছেন, এসব হত্যাকাণ্ডের ফলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলা থেকে যে পারমাণবিক অবকাঠামো ও উপকরণ টিকে আছে, সেগুলো দিয়ে ইরানের পক্ষে অস্ত্র তৈরি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। রাষ্ট্রদূত জোশুয়া বলেন, ইরানি বিজ্ঞানীদের গোটা দল নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অনেক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত জোশুয়া গত সোমবার এ কথা বলেন। এরপর গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি হামলায় ইরানের রাজধানী তেহরানে দেশটির আরো একজন পরমাণুবিজ্ঞানীর নিহত হওয়ার খবর জানা যায়। ইরানি টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে বলা হয়, এই বিজ্ঞানীর নাম মোহাম্মদ রেজা সেদিঘি সাবের। এর আগে সংঘাত শুরুর দিন, অর্থাৎ ১৩ জুন বিজ্ঞানী সাবেরের ওপর এক দফা হামলা হয়েছিল। তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। যদিও হামলায় নিহত হয় তাঁর ১৭ বছর বয়সী ছেলে। জোশুয়ার এমন দাবি সত্ত্বেও বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, ইরানে আরো বিজ্ঞানী বেঁচে আছেন। তাঁরা শিগগির নিহত বিজ্ঞানীদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। এসব হত্যার ঘটনা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দিতে পারে, তবে শেষ করতে পারবে না।
টানা ১২ দিনের নজিরবিহীন পাল্টাপাল্টি হামলার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটি। ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান। এই সংঘাতের মধ্যে ২১ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়। এর জবাব দেয় ইরান। ২৩ জুন কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নিশানা করে ইরান হামলা চালায়। টানা ১২ দিন ধরে চলা এমন সংকটের মধ্যে হঠাৎ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা গতকাল মঙ্গলবার কার্যকর হয়েছে।
ইরানে নিহত কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা শনিবার: ইসরায়েলের হামলায় নিহত ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার ও শীর্ষ বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা আগামী শনিবার (২৮ জুন) অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে টিআরটি ওয়ার্ল্ড এ খবর জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক দিন পর (২৫ জুন) বুধবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ১২ দিন ধরে চলা ইহুদি রাষ্ট্রের আগ্রাসনে শহীদ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা আগামী শনিবার রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে এই আয়োজন শুরু হবে।