ঢাকা ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
নজিরবিহীন হামলার পর পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরান

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

  • আপডেট সময় : ০৯:৪০:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

ইসরায়েলে ইরানের হামলায় ধ্বংসযজ্ঞ -ছবি রয়টার্স

প্রত্যাশা ডেস্ক: ইরান থেকে ইসরায়েলে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নতুন করে দফায় দফায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে ছোড়ার খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি এলাকায় সতর্কতা সাইরেন বেজে উঠেছে। ইসরায়েলের বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করা এবং যেখানে প্রয়োজন হমকি ঠেকাতে পাল্টা হামলার জন্য অভিযান চালাচ্ছে। ইসরায়েলের নাগরিকদেরকে সেনাবাহিনীর দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওদিকে ইরানের রাজধানী তেহরানও আরও বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ছয়জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। এছাড়া আরো সাতজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি পরিষেবার সদস্যরা। খবর আল জাজিরার। জরুরি পরিষেবা এবং স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উত্তর আরব শহর তামরাতে হামলায় আরো চারজন নিহত হয়েছেন। চিকিৎসক এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, হাইফা এবং তেল আবিবসহ ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী ইরানজুড়ে বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালানোর পর ইরান একযোগে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানি সরকারের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

শনিবার (১৪ জুন) রাতের হামলায় পুরো ইসরায়েলে সাইরেন বেজে উঠেছে। হাইফা এবং তেল আবিবসহ বেশ কিছু শহর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান। এদিকে ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন শিশুও রয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি বলছে, ‘ট্রু প্রমিজ ৩’ অভিযানের দ্বিতীয় ধাপে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে ইসরায়েলে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হাইফা এবং কিরিয়াত এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে আঘাত করেছে না কি বাধা দেওয়া হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানি কম: ইরানে নজিরবিহীন ইসরায়েলি হামলার পর পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরান। হামলার তীব্রতাও বাড়ছে। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণ এবং আগাম সতর্কতার কারণে ইসরায়েলে প্রাণহানি কম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ‘হোম ফ্রন্ট কমান্ড অ্যাপ’।

এই অ্যাপের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ১৫-৩০ মিনিট আগেই সতর্কবার্তা পেয়ে যাচ্ছেন ইসরায়েলিরা। এরপর তাঁরা আশ্রয় নিচ্ছেন বোমা সুরক্ষা কেন্দ্র (বোম্ব শেল্টার) ও নিরাপদ কক্ষে। প্রাণহানি এড়াতে ‘বোম্ব শেল্টার’ ও নিরাপদ কক্ষের কার্যকারিতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ‘হোম ফ্রন্ট কমান্ড’ শনিবার জানিয়েছে, তারা ইরানের সম্ভাব্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ১৫-৩০ মিনিট আগে ইসরায়েলিদের ফোনে সতর্কবার্তা পাঠানো শুরু করেছে, যাতে মানুষ বোম্ব শেল্টারে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পান।

হোম ফ্রন্ট কমান্ড অ্যাপের মাধ্যমে এই আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকদের বোম্ব শেল্টারের কাছাকাছি থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, যাঁদের বাড়িতে বোমা প্রতিরোধী কক্ষ নেই, তাঁদের সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে এটি সহায়তা করবে।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর ইরান থেকে ইসরায়েলে পৌঁছাতে সাধারণত প্রায় ১০ মিনিট সময় লাগে। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সাধারণত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কয়েক মিনিট আগেই ইরানি সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে হামলার বিষয়টি শনাক্ত করতে পারে।

একবার নিশ্চিত উৎক্ষেপণ শনাক্ত হলেই হোম ফ্রন্ট কমান্ড তাদের অ্যাপ ও মুঠোফোন সম্প্রচার পদ্ধতি (সেল ব্রডকাস্ট সিস্টেম) উভয়টি ব্যবহার করে একটি আগাম সতর্কতা দেয়, যাতে বেসামরিক নাগরিকেরা বোম্ব শেল্টারে যেতে পারেন। শুক্রবার থেকে এমনটি করে করে আসছে হোম ফ্রন্ট কমান্ড। এতে বেসামরিক নাগরিকেরা আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে প্রায় ১০ মিনিট সময় পাচ্ছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার প্রায় ৯০ সেকেন্ড আগে সাইরেন বাজে। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই তাৎক্ষণিক বোম্ব শেল্টারে প্রবেশ করতে হবে আর ‘অল-ক্লিয়ার (সবকিছু স্বাভাবিক)’ বার্তা না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে।

শুক্রবার রাতে ইরান যখন প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন হোম ফ্রন্ট কমান্ড বেসামরিক নাগরিকদের বোম্ব শেল্টারের কাছাকাছি থাকতে নির্দেশনা দেয়। শনিবার বিকেলে এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়। হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শেষ হয়েছে বলে মনে হলে তারা বেসামরিক নাগরিকদের বোম্ব শেল্টার ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি এবং সেগুলোর কাছাকাছি থাকার আর প্রয়োজন হবে না, এমন একটি হালনাগাদ বার্তা দেবে। যদি আরেকটি হামলার আশঙ্কা থাকে, তবে শুরু থেকে যে প্রক্রিয়াটি মেনে চলা হয়েছে, তা একইভাবে অনুসরণ করা হবে। হোম ফ্রন্ট কমান্ড জোর দিয়ে বলেছে, ভবন বা স্থাপনার ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের জায়গা বোম্ব শেল্টার হিসেবে বিবেচিত হবে না, যদি না এটি সেভাবে উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়।

একটি পৃথক ঘোষণায় হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, নতুন ওই মূল্যায়নের পরেও বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অন্যান্য নির্দেশনায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। যেমন সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ, রোববার স্কুল খুলবে না এবং কর্মস্থলও বন্ধ থাকবে। শুধু জরুরি পরিষেবাগুলো (অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দোকানসহ) চালু থাকবে। এই নির্দেশিকা রোববার রাত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তখন হোম ফ্রন্ট কমান্ড আরেক দফা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পুরো সপ্তাহ স্কুল বন্ধ থাকবে এবং ভার্চ্যুয়াল পাঠদান চালু থাকবে।

ভবনে বোমা প্রতিরোধী কক্ষ: শুক্র ও শনিবার ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বেসামরিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণের পর হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, যারা বোম্ব শেল্টারে ছিলেন, হামলায় তাঁদের বেশির ভাগেরই কিছু হয়নি। ইসরায়েলের দিকে মূল চারটি ধাপে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্রকে নিয়ম মেনে ভূপাতিত করার চেষ্টা করা হয়নি, কারণ সেগুলো খোলা জায়গার দিকে গিয়ে পড়ছিল। ‘স্বল্পসংখ্যক’ ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে পেরেছিল। মধ্য ইসরায়েলের তেল আবিব, রামাত গান ও রিশোন লেজিওনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। আহত হন প্রায় ৮০ জন। মধ্য ইসরায়েলে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাত সেনাও সামান্য আহত হয়েছেন। আর যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সময় তাঁরা বোম্ব শেল্টারে ছিলেন না। হোম ফ্রন্ট কমান্ড বলেছে, তেল আবিবের একটি বহুতল ভবনে ক্ষেপণাস্ত্রটি নবম তলায় আঘাত হানে। এতে বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস হয়ে যায়। তবে বোমা প্রতিরোধী কক্ষগুলো আঘাত সহ্য করতে সক্ষম হওয়ায় শত শত বেসামরিক নাগরিক অক্ষত অথবা সামান্য আহত অবস্থায় বেঁচে যান। রামাত গানে বোমা প্রতিরোধী কক্ষ না থাকা অপেক্ষাকৃত একটি পুরোনো বাড়িতে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। তবে যাঁরা ভবনের বেজমেন্টে (ভূগর্ভস্থ তলা) আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরা অক্ষত ছিলেন। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় বেসামরিক নাগরিকদের সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড। এসব ক্ষেপণাস্ত্রে কয়েক শ কেজি বিস্ফোরকের ওয়ারহেড থাকে এবং এগুলো ইরানের ছোড়া ড্রোনগুলোর চেয়ে অনেক বড় হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ড্রোন ইসরায়েলে পৌঁছানোর আগেই ভূপাতিত করা হয়।
এদিকে হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, তারা তাদের সব রিজার্ভ কর্মীকে তলব করেছে। দেশজুড়ে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে শনিবার ভোরে ইরানের একটি ধাপের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়নি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়েছে এবং সমাধান করা হয়েছে। এই ত্রুটি সেই হামলার সময় ঘটেছিল, যে হামলায় রিশোন লেজিওনে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। হোম ফ্রন্ট কমান্ডের তথ্য অনুযায়ী, ওই এলাকার ইসরায়েলিদের কাছে আগাম সতর্কবার্তা পাঠানো হয়নি, তবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণের বাসিন্দাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এখনো সাধারণত হামলার সময় সাইরেন বাজে, এতে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে প্রায় ৯০ সেকেন্ড সময় পান বাসিন্দারা।

ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে হুতিরা: ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন হুতিরা জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের ওপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং এই হামলা মিত্র ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ইরানঘনিষ্ঠ কোনো গোষ্ঠী হামলা চালানোর ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে তেহরানের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার কথা ঘোষণা করল।
রোববার (১৫ জুন) এক টেলিভিশন ভাষণে হুতিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা মধ্য ইসরায়েলের জাফা শহর লক্ষ্য করে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তিনি বলেন, নিপীড়িত ফিলিস্তিনি ও ইরানি জনগণের বিজয়ের জন্য এই অভিযান। এটি অপরাধী ইসরায়েলি শত্রুর বিরুদ্ধে ইরানি সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত অভিযানের সঙ্গে সমন্বিতভাবে চালানো হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ইরান ও ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়। গত শুক্রবার ইসরায়েল তার দীর্ঘদিনের শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালানোর পর থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে। ওই দিনই ইসরায়েল জানায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে গিয়ে পড়ে। তবে তখন হুতিরা ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেনি। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও এর মিত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধারা ইসরায়েলে আক্রমণ প্রাণঘাতী হামলা চালায়। ওই দিন থেকেই ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ভয়াবহ পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়, যা ২০ মাস ধরে চলছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হুতিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তারা বলছে, এসব হামলা গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে চালানো হয়েছে। তবে, ইসরায়েল এসব হামলার জবাবে ইয়েমেনে পাল্টা আঘাত হানে। এছাড়া, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রও হুতিদের বিভিন্ন লক্ষ্যস্থলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। তবে হুতিরা যখন মার্কিন জাহাজে হামলা বন্ধে সম্মত হয়, তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই সামরিক অভিযান স্থগিত করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নজিরবিহীন হামলার পর পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরান

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

আপডেট সময় : ০৯:৪০:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: ইরান থেকে ইসরায়েলে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নতুন করে দফায় দফায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে ছোড়ার খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি এলাকায় সতর্কতা সাইরেন বেজে উঠেছে। ইসরায়েলের বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করা এবং যেখানে প্রয়োজন হমকি ঠেকাতে পাল্টা হামলার জন্য অভিযান চালাচ্ছে। ইসরায়েলের নাগরিকদেরকে সেনাবাহিনীর দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওদিকে ইরানের রাজধানী তেহরানও আরও বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ছয়জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। এছাড়া আরো সাতজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি পরিষেবার সদস্যরা। খবর আল জাজিরার। জরুরি পরিষেবা এবং স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উত্তর আরব শহর তামরাতে হামলায় আরো চারজন নিহত হয়েছেন। চিকিৎসক এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, হাইফা এবং তেল আবিবসহ ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী ইরানজুড়ে বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালানোর পর ইরান একযোগে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানি সরকারের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

শনিবার (১৪ জুন) রাতের হামলায় পুরো ইসরায়েলে সাইরেন বেজে উঠেছে। হাইফা এবং তেল আবিবসহ বেশ কিছু শহর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান। এদিকে ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন শিশুও রয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি বলছে, ‘ট্রু প্রমিজ ৩’ অভিযানের দ্বিতীয় ধাপে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে ইসরায়েলে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হাইফা এবং কিরিয়াত এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে আঘাত করেছে না কি বাধা দেওয়া হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানি কম: ইরানে নজিরবিহীন ইসরায়েলি হামলার পর পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরান। হামলার তীব্রতাও বাড়ছে। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণ এবং আগাম সতর্কতার কারণে ইসরায়েলে প্রাণহানি কম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ‘হোম ফ্রন্ট কমান্ড অ্যাপ’।

এই অ্যাপের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ১৫-৩০ মিনিট আগেই সতর্কবার্তা পেয়ে যাচ্ছেন ইসরায়েলিরা। এরপর তাঁরা আশ্রয় নিচ্ছেন বোমা সুরক্ষা কেন্দ্র (বোম্ব শেল্টার) ও নিরাপদ কক্ষে। প্রাণহানি এড়াতে ‘বোম্ব শেল্টার’ ও নিরাপদ কক্ষের কার্যকারিতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ‘হোম ফ্রন্ট কমান্ড’ শনিবার জানিয়েছে, তারা ইরানের সম্ভাব্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ১৫-৩০ মিনিট আগে ইসরায়েলিদের ফোনে সতর্কবার্তা পাঠানো শুরু করেছে, যাতে মানুষ বোম্ব শেল্টারে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পান।

হোম ফ্রন্ট কমান্ড অ্যাপের মাধ্যমে এই আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকদের বোম্ব শেল্টারের কাছাকাছি থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, যাঁদের বাড়িতে বোমা প্রতিরোধী কক্ষ নেই, তাঁদের সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে এটি সহায়তা করবে।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর ইরান থেকে ইসরায়েলে পৌঁছাতে সাধারণত প্রায় ১০ মিনিট সময় লাগে। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সাধারণত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কয়েক মিনিট আগেই ইরানি সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে হামলার বিষয়টি শনাক্ত করতে পারে।

একবার নিশ্চিত উৎক্ষেপণ শনাক্ত হলেই হোম ফ্রন্ট কমান্ড তাদের অ্যাপ ও মুঠোফোন সম্প্রচার পদ্ধতি (সেল ব্রডকাস্ট সিস্টেম) উভয়টি ব্যবহার করে একটি আগাম সতর্কতা দেয়, যাতে বেসামরিক নাগরিকেরা বোম্ব শেল্টারে যেতে পারেন। শুক্রবার থেকে এমনটি করে করে আসছে হোম ফ্রন্ট কমান্ড। এতে বেসামরিক নাগরিকেরা আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে প্রায় ১০ মিনিট সময় পাচ্ছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার প্রায় ৯০ সেকেন্ড আগে সাইরেন বাজে। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই তাৎক্ষণিক বোম্ব শেল্টারে প্রবেশ করতে হবে আর ‘অল-ক্লিয়ার (সবকিছু স্বাভাবিক)’ বার্তা না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে।

শুক্রবার রাতে ইরান যখন প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন হোম ফ্রন্ট কমান্ড বেসামরিক নাগরিকদের বোম্ব শেল্টারের কাছাকাছি থাকতে নির্দেশনা দেয়। শনিবার বিকেলে এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়। হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শেষ হয়েছে বলে মনে হলে তারা বেসামরিক নাগরিকদের বোম্ব শেল্টার ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি এবং সেগুলোর কাছাকাছি থাকার আর প্রয়োজন হবে না, এমন একটি হালনাগাদ বার্তা দেবে। যদি আরেকটি হামলার আশঙ্কা থাকে, তবে শুরু থেকে যে প্রক্রিয়াটি মেনে চলা হয়েছে, তা একইভাবে অনুসরণ করা হবে। হোম ফ্রন্ট কমান্ড জোর দিয়ে বলেছে, ভবন বা স্থাপনার ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের জায়গা বোম্ব শেল্টার হিসেবে বিবেচিত হবে না, যদি না এটি সেভাবে উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়।

একটি পৃথক ঘোষণায় হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, নতুন ওই মূল্যায়নের পরেও বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অন্যান্য নির্দেশনায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। যেমন সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ, রোববার স্কুল খুলবে না এবং কর্মস্থলও বন্ধ থাকবে। শুধু জরুরি পরিষেবাগুলো (অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দোকানসহ) চালু থাকবে। এই নির্দেশিকা রোববার রাত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তখন হোম ফ্রন্ট কমান্ড আরেক দফা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পুরো সপ্তাহ স্কুল বন্ধ থাকবে এবং ভার্চ্যুয়াল পাঠদান চালু থাকবে।

ভবনে বোমা প্রতিরোধী কক্ষ: শুক্র ও শনিবার ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বেসামরিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণের পর হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, যারা বোম্ব শেল্টারে ছিলেন, হামলায় তাঁদের বেশির ভাগেরই কিছু হয়নি। ইসরায়েলের দিকে মূল চারটি ধাপে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্রকে নিয়ম মেনে ভূপাতিত করার চেষ্টা করা হয়নি, কারণ সেগুলো খোলা জায়গার দিকে গিয়ে পড়ছিল। ‘স্বল্পসংখ্যক’ ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে পেরেছিল। মধ্য ইসরায়েলের তেল আবিব, রামাত গান ও রিশোন লেজিওনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। আহত হন প্রায় ৮০ জন। মধ্য ইসরায়েলে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাত সেনাও সামান্য আহত হয়েছেন। আর যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সময় তাঁরা বোম্ব শেল্টারে ছিলেন না। হোম ফ্রন্ট কমান্ড বলেছে, তেল আবিবের একটি বহুতল ভবনে ক্ষেপণাস্ত্রটি নবম তলায় আঘাত হানে। এতে বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ধ্বংস হয়ে যায়। তবে বোমা প্রতিরোধী কক্ষগুলো আঘাত সহ্য করতে সক্ষম হওয়ায় শত শত বেসামরিক নাগরিক অক্ষত অথবা সামান্য আহত অবস্থায় বেঁচে যান। রামাত গানে বোমা প্রতিরোধী কক্ষ না থাকা অপেক্ষাকৃত একটি পুরোনো বাড়িতে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। তবে যাঁরা ভবনের বেজমেন্টে (ভূগর্ভস্থ তলা) আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরা অক্ষত ছিলেন। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় বেসামরিক নাগরিকদের সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড। এসব ক্ষেপণাস্ত্রে কয়েক শ কেজি বিস্ফোরকের ওয়ারহেড থাকে এবং এগুলো ইরানের ছোড়া ড্রোনগুলোর চেয়ে অনেক বড় হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ড্রোন ইসরায়েলে পৌঁছানোর আগেই ভূপাতিত করা হয়।
এদিকে হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, তারা তাদের সব রিজার্ভ কর্মীকে তলব করেছে। দেশজুড়ে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে শনিবার ভোরে ইরানের একটি ধাপের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়নি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়েছে এবং সমাধান করা হয়েছে। এই ত্রুটি সেই হামলার সময় ঘটেছিল, যে হামলায় রিশোন লেজিওনে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। হোম ফ্রন্ট কমান্ডের তথ্য অনুযায়ী, ওই এলাকার ইসরায়েলিদের কাছে আগাম সতর্কবার্তা পাঠানো হয়নি, তবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণের বাসিন্দাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এখনো সাধারণত হামলার সময় সাইরেন বাজে, এতে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে প্রায় ৯০ সেকেন্ড সময় পান বাসিন্দারা।

ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে হুতিরা: ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন হুতিরা জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের ওপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং এই হামলা মিত্র ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ইরানঘনিষ্ঠ কোনো গোষ্ঠী হামলা চালানোর ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে তেহরানের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার কথা ঘোষণা করল।
রোববার (১৫ জুন) এক টেলিভিশন ভাষণে হুতিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা মধ্য ইসরায়েলের জাফা শহর লক্ষ্য করে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তিনি বলেন, নিপীড়িত ফিলিস্তিনি ও ইরানি জনগণের বিজয়ের জন্য এই অভিযান। এটি অপরাধী ইসরায়েলি শত্রুর বিরুদ্ধে ইরানি সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত অভিযানের সঙ্গে সমন্বিতভাবে চালানো হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ইরান ও ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়। গত শুক্রবার ইসরায়েল তার দীর্ঘদিনের শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালানোর পর থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে। ওই দিনই ইসরায়েল জানায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে গিয়ে পড়ে। তবে তখন হুতিরা ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেনি। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও এর মিত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধারা ইসরায়েলে আক্রমণ প্রাণঘাতী হামলা চালায়। ওই দিন থেকেই ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ভয়াবহ পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়, যা ২০ মাস ধরে চলছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হুতিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তারা বলছে, এসব হামলা গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে চালানো হয়েছে। তবে, ইসরায়েল এসব হামলার জবাবে ইয়েমেনে পাল্টা আঘাত হানে। এছাড়া, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রও হুতিদের বিভিন্ন লক্ষ্যস্থলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। তবে হুতিরা যখন মার্কিন জাহাজে হামলা বন্ধে সম্মত হয়, তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই সামরিক অভিযান স্থগিত করেন।