রিয়াজ রহমান
উদারতা, মহত্ত্ব নিঃসন্দেহে দুটি বড়গুণ। কোনো মানুষের মধ্যে মেধা ও পরিশ্রমের সঙ্গে এই দুটি গুণের সমন্বয় ঘটলে তিনি গড় বুদ্ধিবৃত্তির মানুষের চেয়ে অনেক উপরে অবস্থান করতে পারেন। তাই তো জগতে যারা বড় বড় কাজ করেন তাদের মধ্যে এই দুটো গুণ প্রবল হয়। বোধ করি এ জন্যই তাদের কর্মতৎপরতায় সৃষ্ট মহীরুহের ডালপালা বা ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারেন বহু মানুষ। আশ্রিত এসব মানুষের অনেকে আবার সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি স্বার্থে মহীরুহের ডালপালা ভেঙ্গে নেন। ক্ষত-বিক্ষত করেন নিজের আশ্রয়ের জায়গাটিকে, সুযোগ বুঝে কোপ মারতেও ক্ষান্ত হন না। কিন্তু তাতে মহীরুহের হয়তো সামান্যই ক্ষতি হয় বা কষ্টের অশ্রু ঝরে। মহীরুহ তার বিশালত্ব দিয়ে সেই ক্ষতকে স্বল্প সময়েই আড়াল করে আবার নতুনভাবে ডালপালা বিস্তার করে। আশ্রিতকে ছায়া দেয়, আশ্রয় দেয়, ক্লান্তি মোচন করে। এভাবে দূরের কণ্টাকাকীর্ণ পথটি খুব সহজেই দেখে নিয়ে বৃক্ষসদৃশ কীর্তিমান মানবদের সঠিক পথে পা ফেলতে কোনো সমস্যা হয়না। বর্ণিত এই কীর্তিমান মহীরুহের মানবসত্তায় স্বার্থক প্রতিচ্ছবি ছিলেন ইমামুল কবীর শান্ত।
প্রাণদায়ী, ছায়াদায়ী ও জীবনদায়ী প্রশান্তির অনুঘটক হিসেবে ইমামুল কবীর শান্তর নাম আজ হাজারো কণ্ঠে সমুজ্জ্বল। ভবিষ্যতের পথপরিক্রমায় আরো শত-সহস্র কণ্ঠে তার নামটি উচ্চারিত হলেও তা কোনোভাবেই বেমানান মনে হবে না। কেন না শান্ত সেই শৈশবে যে বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ বাস্তব জীবনের প্রতিঘাতে হারিয়ে ফেলেননি। বরং অনেক সাধনার পথ ধরে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সযত্নে তিনি তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অটল ছিলেন। তার এই বিশালত্বের কারণেই মধ্যবয়সের কোঠায় দেহত্যাগ করেও অকালমৃত্যুর মহিমায় সবার মাঝে অমর হয়ে রয়েছেন ইমামুল কবির শান্ত। তার কৃতকর্ম হাজার হাজার মানুষের মানবিক জীবন যাপনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে আজ। জাগতিক-আধ্যাত্মিক-মানবিক উৎকর্ষসাধনের অভিপ্রায়ে তার সৃষ্ট উদ্যোগগুলো আজ দীপ্তি ছড়াতে শুরু করেছে সবার মাঝে। যে আলোয় প্রস্ফুটিত হচ্ছে নিরন্নকে অন্ন দান, নিঃসহায়কে সহায়তা, অসুস্থকে নিরাময় আর কর্মহীনকে কর্মীতে রূপান্তরের কার্যক্রম। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করার পাঁচ বছর পরে ২০২৫ সালেও আগের মতোই সমান প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছেন ইমামুল কবীর শান্ত। প্রতিটি মৃত্যুবার্ষিকীর সন্ধিক্ষণে তাঁর স্মৃতি আরো উজ্জ্বল হয়ে ফুলে ফুলে ঢাকা পড়ছে অন্তিম সমাধিস্থলটি। সম্মিলিত মানুষের দোয়া, প্রার্থনা আর শুভ কামনায় সজীব হয়ে উঠছে শান্তর নিরব-নিস্তব্ধ ধ্যানমগ্ন সমাধিস্থল।
জীবন ও কর্ম
মো. ইমামুল কবীর শান্ত ১৯৫৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার নাখালপাড়ায় মধ্যবিত্ত একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক নিবাস খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামে। পিতা মরহুম দীন মোহাম্মদ লস্কর [ডি এম লস্কর] (মৃত্যু ৪ এপ্রিল ১৯৯১), মা মাহমুদা খাতুন (মৃত্যু ৩০ জুন ১৯৮৪)। দাদা ছিলেন খাদেম লস্কর, দাদি মোমেনা বেগম। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় ভাই প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইমামুল কবীর শান্ত ও ছোট ভাই ডা. মো. আহসানুল কবির (দুলাল)। বোনদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক মনোয়ারা বেগম (প্রয়াত), সাহানা মোস্তাফিজ, আঞ্জুমান আরা বেগম, আফরোজা বেগম, দিলরুবা বেগম। পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘যে সেক্রিফাইস করতে পারে, সেই সুখী।’ মো. ইমামুল কবীর শান্ত ছোটবেলা থেকেই খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। মার্জিত ও সাদাসিধে চলাফেরা পছন্দ করতেন তিনি। তেজগাঁওয়ের মিশনারি স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। স্কুলে যাবার পথে তিনি রেল লাইনের দুধারে গরিব-দুখি, অসহায় ও মেহনতি মানুষের দুর্বিষহ জীবন খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তখনই তাঁদের প্রতি মমত্ববোধ জেগেছিল, জেগেছিল প্রশ্ন- ‘মানুষ কেন গরিব?’ সেই থেকে তিনি এর সমাধানের পথে হেঁটেছেন আমৃত্যু। ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি চে’গুয়েভারার আত্মজীবনী পড়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ছাত্রজীবনে বাম (ছাত্র ইউনিয়ন) রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরে মাদার তেরেসার জীবনাদর্শে দীক্ষিত হয়ে মানবিক সমাজ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
স্বাধীনতার পর বাংলা মায়ের সন্তানরা মায়ের কোলে ফিরে গেলেও শান্ত ফেরেননি। মাকে তিনি বলেছিলেন, ‘মা, আমার যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।’ তাঁর যেন আরো কিছু করার বাকি আছে! তিনি স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর বিজয়ে উচ্ছোসিত হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা দলে দলে ঢাকায় ফেরার পথে ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা! বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবিতে মো. ইমামুল কবীর শান্তর সেক্টরের ১১ মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন। এ ঘটনা তাঁর জীবনব্যাপী কষ্টের এক বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সেই বন্ধু-মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখতে তিনি আজিমপুর কবরস্থানে জায়গা কিনে নিজ উদ্যোগে ‘শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ‘শহিদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফাউন্ডেশন।’ এই ফাউন্ডেশন প্রতিবছর ১৭ ডিসেম্বর ‘শহিদ মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ পালন করে আসছে শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশনের অধীনে। এ অনুষ্ঠানে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও অধ্যাপকগণ এতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইমামুল কবীর শান্ত নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়নে। কিন্তু পরে রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, আত্মগোপনসহ নানাবিধ নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুসহ মো. ইমামুল কবীর শান্ত দেশত্যাগ করেন। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, এ দেশে আর কখনোই ফিরে আসবেন না। ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে তিনি জার্মানিতে স্থায়ী হন। প্রায় অর্ধযুগ কেটে যায় সেখানে। জার্মানিদের জীবনধারা তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে, উজ্জীবিত করে। তাঁর উপলব্ধিতে আসে ‘দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়েও জার্মানিরা যদি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবো না? জার্মান জাতি কর্মমুখী, সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক শিক্ষায় বেশ সমৃদ্ধ। সে মন্ত্রবলে অতীতের সমস্ত গ্লানি ও ব্যর্থতাকে মুছে দিতে তারা দিনরাত পরিশ্রম করে। দেশ ও জীবন গঠনে তাদের কোনো ক্লান্তি নেই।
শান্ত উপলব্ধি করেছিলেন, সঠিক নেতৃত্ব পেলে বাঙালিরাও একদিন ঘুরে দাঁড়াবে, সোনা ফলাবে। সেই বিশ্বাসে জার্মানির অনুরূপ একটি ‘শিক্ষা-মডেল’ আস্থায় নিয়ে অবশেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হন। জার্মানির অনুরূপ শিক্ষা-পদ্ধতি চালু করতে অনেক টাকা দরকার, কিন্তু কোথায় পাবেন সে টাকা? অনেক ভেবেচিন্তে ব্যবসায় মনস্থির করেন। ১৯৮৩ সালের ১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস’। দিনরাত পরিশ্রম করে খুব অল্পসময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে যান সফলতার শীর্ষে। দেশের প্রথম দ্রুত ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুন্দরবন কুরিযার সার্ভিস দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় সুন্দরবন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও কুরিয়ার ব্যবসা বিস্তৃত করেছে। মো. ইমামুল কবীর শান্তর ত্যাগ, সততা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্যবসায়িক দর্শন
কুরিয়ার ব্যবসায় সফলতার পর তিনি গড়ে তোলেন অরাজনৈতিক, সেবাধর্মী ও মানবকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান ‘শান্ত-মারিয়াম ফাউন্ডেশন’। যার অধীনে বেশ কিছু ব্যবসা ও শিক্ষাসহায়ক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গড়ে তোলেন‘ শান্ত-মারিয়াম একাডেমি’ ও ‘শান্ত-মারিয়াম ইনস্টিটিউট’। আত্মীয়-ঘনিষ্ঠজন এবং শিক্ষানুরাগীদের সহায়তায় ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কর্মমুখী, সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার উচ্চ বিদ্যাপীঠ ‘শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি’। ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা অনুসারে এটি ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। অনেক বাধা অতিক্রম করে বর্তমানে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। স্থাপত্য শিল্পের অনন্য সৌন্দর্যে নির্মিত প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ক্যাম্পাস উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে বিস্তৃত পরিসরে অবস্থিত। এর পাশাপাশি তিনি শান্ত-নিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজসেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন। রাজধানীর উত্তরায় দক্ষিণখানে সুবিশাল পরিসরে গরিব-দুখী ও অসহায় শিশু-কিশোরদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করে কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে চলেছে শান্ত-মারিয়াম স্কুল অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি। এ ছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নজরকাড়া স্থাপত্য নকশার অতুলনীয় মসজিদ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইমামুল কবীর শান্ত একজন প্রকৃত শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তাঁর শিক্ষাদর্শন ছিল তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর। কর্মমুখী, সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক শিক্ষার প্রতি তিনি পুরোজীবনটাই বিনিয়োগ করে গেছেন। তিনি প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিপরীতে কর্মমুখী ও দূরশিক্ষণকে উৎসাহিত করেছেন। বলা যায়, এর জন্য অনেক বড় ত্যাগও স্বীকার করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার যুগে তিনি ‘শিক্ষিত বেকার’ বা ‘ডিগ্রি-কালচার’র দিকে ধাবিত না হয়ে কর্মজীবী শিক্ষিতসমাজ গড়ে তোলার পক্ষে মত দিয়েছেন। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি ছিল স্বচ্ছ ও নির্ভুল। বিগত সময়গুলিতে তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। সহশিক্ষার প্রতি তিনি বিশেষ যত্নবান ছিলেন। উন্নত বিশ্বের মতো ২৫-২৬ বছরের পরিবর্তে ১৮-১৯ বছরে শিক্ষার্থীদের ‘ইয়ারলস’ না করে কর্মে প্রবেশ করার যে ফর্মুলা তিনি দিয়েছেন, তা সময়োপযোগী এবং বিজ্ঞানসমর্থিত। তাতে সাত থেকে আট বছর তথা কোটি কোটি কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হয় শিক্ষার্থীর তথা দেশের।
কর্মমুখী ও মানবতাবাদী শান্ত
কর্মবীর মো. ইমামুল কবীর শান্ত বিশ্বাস করতেন পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি। তবে শান্ত উদারনৈতিক মতবাদে বিশ্বাস করতেন। এ জন্য বহুমুখী সংস্কৃতি চেতনায় তিনি ঋদ্ধ ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি শিক্ষাকে যেমন অনিবার্য করা হয়েছে, তেমনি তাঁর প্রতিষ্ঠানে ঠাঁই হয়েছে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির কর্মীর। তিনি বলতেন, ‘ধর্ম মানুষের বিশ্বাস, আর সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষ-মানুষের বন্ধন।’ তিনি মনে করতেন কেবল শিক্ষিত হলে চলে না, সংস্কৃতিবানও হতে হয়, তবেই মানুষ পূর্ণতা পায়। তিনি প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিতেন। আমাদের দেশ মিঠা পানির দেশ, এদেশের মাটি উর্বর। পাখির বিষ্টা থেকেও এখানে গাছ উৎপন্ন হয়। আমাদের পাট বিশ্বস্বীকৃত ‘সোনালি আঁশ’। বস্ত্র নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে মহাশক্তি চিনের সাথে। চামড়া, চা, রাবার, বাঁশ, বেত, জাহাজশিল্প প্রভৃতিতে বাংলাদেশ সম্ভাবনার নতুনদিগন্ত উন্মোচন করছে। তেল, কয়লা, গ্যাস সম্ভাবনাও প্রচুর। তিনি বিশ্বাস করতেন এসব প্রাকৃতিক সম্পদ সঠিকভাবে শিল্পে ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ সচ্ছল ও সফল রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি বিশ্বাস করতেন, বিশ্বমানবকে আপন করে নেয়ার দীক্ষা শিক্ষা ও সংস্কৃতি যতটা দিতে পারে, অন্য কিছু ততটা পারে না। তাই তো দেশের বৃহত্তর জনসমাজকে শিক্ষার আওতায় আনতে এবং উচ্চশিক্ষা বিস্তারে যুতসই বাহন হিসেবে দূরশিক্ষণ ও অনলাইনকে বেছে নিয়েছিলেন কয়েক দশক আগে। করোনা মহামারিতে তার সেই দর্শন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজই সম্পাদিত হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, কর্মই মানুষকে বড় করে তোলে। সৃজনশীলতা মানুষকে করে সমৃদ্ধ আর সংস্কৃতি মানুষকে পরিশীলিত করে পূর্ণতা দেয়। তাই এর সবটা ধারণ করেছিলেন মো. ইমামুল কবীর শান্ত। এ দেশে বেসরকারি পর্যায়ে প্রথম জীবনমুখী, সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব তাঁরই। তিনি যখন কাজ শুরু করেন, তখন এ সম্পর্কে অনেকের ধারণা ছিল না।
সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে মো. ইমামুল কবীর শান্ত একে একে অলাভজনক, মানবকল্যাণমুখী এবং সৃজনশীল প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলেন পরম মমতায়। যার অনেকগুলো আজ মহীরুহে পরিণত হয়ে ছায়া বিস্তার করে চলেছে একটি সুখী-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে।
লেখক: প্রধান সহ-সম্পাদক, আজকের প্রত্যাশা
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ