নিজস্ব প্রতিবেদক : ডুবতে বসা ইভ্যালিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের যে খবর এসেছিল, তা আদৌ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা। যমুনা গ্রুপের পরিচালক (কমার্শিয়াল) শামসুল হাসান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ইভ্যালির সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে, আর্থিক বিবরণী বুঝতে এখনও অডিট চলছে। সেসব কাজ শেষ হওয়ার আগে হ্যাঁ বা না কিছু সময় এখনও আসেনি। আর ইভ্যালির আগের ব্যবসার দায় নিতেও তারা রাজি নন। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পক্ষ থেকে জমা দেওয়া দায়-দেনার হিসাবে দেখা যায়, দুই লাখ ১৪ হাজার গ্রাহক ইভ্যালির কাছে পণ্য কেনার জন্য বুকিং দিয়েছেন। গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত বুকিং বাবদ গ্রাহকরা ইভ্যালির কাছে ৩১০ কোটি টাকা পাবেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ না করা কিংবা অর্থ ফেরত (রিফান্ড) না দেওয়া এবং পণ্য সরবরাহকারী মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধ না করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালির বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। আলোচিত ওই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের চেয়ারাম্যানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে, তাদের দেশত্যাগে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই জুলাইয়ের শেষে যমুনা গ্রুপের এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার খবর দেওয়া হয় ইভ্যালির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক বিনিয়োগ হবে ২০০ কোটি টাকা; ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে যমুনা গ্রুপ। এ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম এবং পরিচালক মনিকা ইসলামের দুটি বক্তব্যও সেখানে ছিল। সে সময় ইভ্যালির ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোনো আপত্তি না করলেও যমুনা গ্রুপের পরিচালক শামসুল হাসান শুক্রবার বলেন, “উনাদের সাথে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। তাদের কাগজপত্রগুলো অডিট করিয়ে দেখছি। পজেটিভ কিছু থাকলে সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা চাইনি এই পর্যায়ে গণমাধ্যমে কিছু আসুক। কারণ বলার মত কোনো অগ্রগতি আসলে হয়নি।” প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সম্মত হওয়ার কথাও অস্বীকার করেন শামসুল হাসান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ওখানে কোনো বিনিয়োগ যায়নি। নগদ কোনো টাকা পয়সা ইভ্যালিকে দেওয়া হয়নি। কীভাবে ২০০ কোটি টাকার প্রসঙ্গ এল বুঝলাম না। ওদের সঙ্গে আমাদের পণ্যভিত্তিক ব্যবসার লেনদেন রয়েছে।’ “২০০ কোটি শব্দটি আমরা উচ্চারণ করিনি। যমুনা গ্রুপ থেকে এ জাতীয় কোনো শব্দ উচ্চারণ করা হয়নি। যখন সবকিছু ঠিক থাকবে, ইনভেস্টমেন্ট তখনই হবে।”
কর্মীদের চাকরি খুঁজতে বলছে ‘ইভ্যালি’
এদিকে সরকার লকডাউন দিলে ইভ্যালির অফিস বন্ধ রাখা হয়েছিল। কর্মীদের অনেকে তখন ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ বাসায় নিয়ে হোম অফিস করছিলেন। অফিস চালু হওয়ার কথা বলে গত সপ্তাহে তাদের কাছ থেকে মালামাল বুঝে নিয়েছে ইভ্যালি। এখন তাদের অন্যত্র চাকরি খুঁজতে বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাকিব নামের একজন বলেন, ১৮০ জনের মতো কর্মী ছিল ইভ্যালির কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে। তাদের চাকরিতে আর না যেতে বলা হয়েছে। ইভ্যালি থেকে বলা হয়েছে আপানারা রিজাইন দিয়ে দেন। জব সুইচ করার চেষ্টা করেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এটা বিশ্বাসযোগ্য না। বিপুল দেনায় ডুবতে বসা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি এখন পেছনের সারির কর্মীদের বেতন বকেয়া রেখেই ‘বিদায় করতে’ শুরু করেছে। অর্থ সঙ্কটের কথা বলে তাদের ‘ভালো চাকরি খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ’ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের কয়েকজন। তারা অভিযোগ করে বলেন, ভোক্তাদের অব্যাহতভাবে ‘মিথ্যা আশ্বাস দিতে বাধ্য করা’, নিয়োগপত্র না দেওয়া এবং ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
ইভ্যালির দায় নিবেনা যমুনা গ্রুপ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ