ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই, তবে মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না

  • আপডেট সময় : ০২:৫৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ মে ২০২২
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পুরো বিষয় দেখে আশ্বস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ। তাঁরা বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত চমৎকার মেশিন। এখানে ম্যানিপুলেশন (কারচুপি) করার জায়গা নেই। তবে একটি মেশিনকে কখনোই শতভাগ বিশ্বাস করা উচিত হবে না।’
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গতকাল বুধবার ইভিএমবিষয়ক এক মতবিনিময় সভা করেছেন দেশের বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইভিএমের পুরো বিষয় খতিয়ে দেখার পর দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের পক্ষে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক এম কায়কোবাদ কথা বলেন।
৮ মে গণভবনে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে ইভিএমে। নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই অংশ নেবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। এর পর থেকে ইভিএম নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিরোধিতা করে আসছে।
বিএনপি ইভিএমকে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে। তারা বলছে, প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব যে যেখানেই ভোট দেওয়া হোক, নির্দিষ্ট প্রতীকেই ভোট পড়বে। ভোট কোন প্রতীকে পড়েছে, তার কোনো কাগজের প্রমাণও থাকে না। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি নেতা তৈমুর আলম (স্বতন্ত্র প্রার্থী) অভিযোগ করেছেন, ইভিএম কারসাজিতে তিনি হেরেছেন।
এ রকমই এক প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ওই মতবিনিময় সভা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। আলোচনায় অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অনেকেই। সভা শেষে ইভিএমে ভোটিং পদ্ধতি প্রদর্শন করে ইসি। আমন্ত্রিত অতিথিরা ইভিএমে ভোটিং পদ্ধতি ও এর কারিগরি বিষয়গুলো খুঁটিয়ে দেখেন।
মতবিনিময় সভা শেষে বেলা দুইটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে কথা বলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও এম কায়কোবাদ। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালও এ সময় কথা বলেন।
প্রথমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএম বিষয়টি পুরোটা দেখেছি। তার ভেতরে যে টেকনিক্যাল বিষয় আছে সেটাও তাঁদের (ইসির কর্মকর্তা) কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। সর্বশেষ তাঁরা আমাদের জন্য একটি মেশিন খুলে রেখেছিলেন, যাতে ভেতরে ঢুকে আইসি লেভেলে দেখতে পারি, কেউ যদি এটি ম্যানিপুলেট করতে চায় কতটুকু কঠিন হবে বা কতটুকু সোজা হবে সে ধারণা পাওয়া জন্য।’
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কনভিন্সড হয়েছি। এটা অত্যন্ত চমৎকার একটি মেশিন। যেহেতু আমাদের বায়োমেট্রিক ডেটা আছে, সে জন্য ভোট দেওয়া অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করা সম্ভব, একজন মানুষ অন্যজনের ভোট দেওয়া মোটামুটিভাবে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি আমাদের দেশের জন্য পারফেক্ট একটি মেশিন। অত্যন্ত সহজভাবে এটা চালানো সম্ভব।’
ইভিএমকে শতভাগ বিশ্বাস করা যায় কি না-এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, ‘যদি যন্ত্র হয়, সেখানে কখনোই বলবেন না বা বলা উচিত না, শতভাগ হবে। কিন্তু আমরা বলতে পারি যে এটি কতটুকু পারফেকশনে পৌঁছেছে। এখানে একটি সমস্যা হলে ঠিক করার ব্যবস্থা আছে কি না। এখানে বিভিন্ন স্তরে ডেটা রক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। ম্যানিপুলেশন করার জায়গা আপাতত নেই। ম্যানিপুলেশন করতে হলে যে লেভেলে যেতে হবে, সেই লেভেলে যাওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়।’
মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘কেউ বিশ্বাস করবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার বা রাজনৈতিক ব্যাপার। আমি কারিগরি বিষয়টি বলছি। কারিগরি দিক থেকে এটি ম্যানিপুলেট করার সম্ভাবনা নেই। যেকোনো জিনিস ম্যালফাংশন করতেই পারে। যেকোনো যন্ত্র ম্যালফ্যাংশন করতে পারে। যদি ম্যালফাংশন করে সেটাকে রিপ্লেস করার ব্যবস্থা রেখেছেন তাঁরা।’
কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না, জাফর ইকবালের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন অধ্যাপক এম কায়কোবাদ। তিনি বলেন, তবে ইভিএমে কোনো ম্যানিপুলেশনের মোটেই সুযোগ নেই। এর প্রতিটি অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, একজন ইচ্ছা করলেই সেখানে পরিবর্তন করতে পারবে না।
এম কায়কোবাদ বলেন, ‘আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট দক্ষ, তাঁদের আমরা বিশ্বাস করতে পারি। এই প্রকল্পের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের যে আত্মবিশ্বাস ও ওনারশিপ, সেটা আমি নিশ্চিত হয়েছি। এটি একটি ভালো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। আমি আশা করি, এটা ডিসপ্লে করা হবে। যেকেউ এসে এটা টেস্ট করতে পারবে।’
ইভিএমের আধুনিকায়ন করা উচিত কি না, জানতে চাইলে এম কায়কোবাদ বলেন, যেকোনো মেশিনের জন্যই আধুনিকায়ন করা জরুরি। তবে এর প্রতিটি ছোট ছোট অংশ যেভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, এটাকে কেউ এসে ম্যানিপুলেট করবে সেই সম্ভাবনা নেই আসলে।
সবশেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘জাফর ইকবাল বললেন, ‘‘এখানে ম্যানিপুলেশন করার সুযোগ নেই।’’ এটা তাঁরা বলেছেন। সে জন্য আমাকে কিন্তু আস্থা রাখতে হবে ওই সব মানুষের ওপর, যেসব মানুষ এই জিনিসগুলো বোঝেন।’
দু-একটি রাজনৈতিক দলকে ডাকা হবে যেন তাদের কারিগরি দল এসে ইভিএম পরীক্ষা করতে পারেন, জানান সিইসি। বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো (নেতারা) যেহেতু মাঠে বলছেন, এটা মন্দ মেশিন, তাঁদের কাছ থেকেও জানতে চাই, আপনারা কী কী সমস্যাবোধ করছেন; আমাদের অবগত করেন; আমরা যেন সেগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ পাই। আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করব না।’
ইভিএম ব্যবহার বিষয়ে ইসি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ৩০০ নাকি ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিংবা মোটেই ব্যবহার করা হবে না-এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান সিইসি।
মতবিনিময় সভায় সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার, বিএমটিএফের এমডি মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীরসহ ইসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও এম কায়কোবাদসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের শিক্ষকেরা অংশ নেন। এ ছাড়া অংশ নেন এমআইএসটি ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কর্মকর্তারাও।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক হত্যার দায় এড়াতে পারি না, আমাদের ব্যর্থতা আছে

ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই, তবে মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না

আপডেট সময় : ০২:৫৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পুরো বিষয় দেখে আশ্বস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ। তাঁরা বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত চমৎকার মেশিন। এখানে ম্যানিপুলেশন (কারচুপি) করার জায়গা নেই। তবে একটি মেশিনকে কখনোই শতভাগ বিশ্বাস করা উচিত হবে না।’
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গতকাল বুধবার ইভিএমবিষয়ক এক মতবিনিময় সভা করেছেন দেশের বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইভিএমের পুরো বিষয় খতিয়ে দেখার পর দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের পক্ষে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক এম কায়কোবাদ কথা বলেন।
৮ মে গণভবনে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে ইভিএমে। নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই অংশ নেবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। এর পর থেকে ইভিএম নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিরোধিতা করে আসছে।
বিএনপি ইভিএমকে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে। তারা বলছে, প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব যে যেখানেই ভোট দেওয়া হোক, নির্দিষ্ট প্রতীকেই ভোট পড়বে। ভোট কোন প্রতীকে পড়েছে, তার কোনো কাগজের প্রমাণও থাকে না। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি নেতা তৈমুর আলম (স্বতন্ত্র প্রার্থী) অভিযোগ করেছেন, ইভিএম কারসাজিতে তিনি হেরেছেন।
এ রকমই এক প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ওই মতবিনিময় সভা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। আলোচনায় অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অনেকেই। সভা শেষে ইভিএমে ভোটিং পদ্ধতি প্রদর্শন করে ইসি। আমন্ত্রিত অতিথিরা ইভিএমে ভোটিং পদ্ধতি ও এর কারিগরি বিষয়গুলো খুঁটিয়ে দেখেন।
মতবিনিময় সভা শেষে বেলা দুইটার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে কথা বলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও এম কায়কোবাদ। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালও এ সময় কথা বলেন।
প্রথমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএম বিষয়টি পুরোটা দেখেছি। তার ভেতরে যে টেকনিক্যাল বিষয় আছে সেটাও তাঁদের (ইসির কর্মকর্তা) কাছ থেকে জেনে নিয়েছি। সর্বশেষ তাঁরা আমাদের জন্য একটি মেশিন খুলে রেখেছিলেন, যাতে ভেতরে ঢুকে আইসি লেভেলে দেখতে পারি, কেউ যদি এটি ম্যানিপুলেট করতে চায় কতটুকু কঠিন হবে বা কতটুকু সোজা হবে সে ধারণা পাওয়া জন্য।’
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কনভিন্সড হয়েছি। এটা অত্যন্ত চমৎকার একটি মেশিন। যেহেতু আমাদের বায়োমেট্রিক ডেটা আছে, সে জন্য ভোট দেওয়া অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করা সম্ভব, একজন মানুষ অন্যজনের ভোট দেওয়া মোটামুটিভাবে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি আমাদের দেশের জন্য পারফেক্ট একটি মেশিন। অত্যন্ত সহজভাবে এটা চালানো সম্ভব।’
ইভিএমকে শতভাগ বিশ্বাস করা যায় কি না-এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, ‘যদি যন্ত্র হয়, সেখানে কখনোই বলবেন না বা বলা উচিত না, শতভাগ হবে। কিন্তু আমরা বলতে পারি যে এটি কতটুকু পারফেকশনে পৌঁছেছে। এখানে একটি সমস্যা হলে ঠিক করার ব্যবস্থা আছে কি না। এখানে বিভিন্ন স্তরে ডেটা রক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। ম্যানিপুলেশন করার জায়গা আপাতত নেই। ম্যানিপুলেশন করতে হলে যে লেভেলে যেতে হবে, সেই লেভেলে যাওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়।’
মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘কেউ বিশ্বাস করবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার বা রাজনৈতিক ব্যাপার। আমি কারিগরি বিষয়টি বলছি। কারিগরি দিক থেকে এটি ম্যানিপুলেট করার সম্ভাবনা নেই। যেকোনো জিনিস ম্যালফাংশন করতেই পারে। যেকোনো যন্ত্র ম্যালফ্যাংশন করতে পারে। যদি ম্যালফাংশন করে সেটাকে রিপ্লেস করার ব্যবস্থা রেখেছেন তাঁরা।’
কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না, জাফর ইকবালের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন অধ্যাপক এম কায়কোবাদ। তিনি বলেন, তবে ইভিএমে কোনো ম্যানিপুলেশনের মোটেই সুযোগ নেই। এর প্রতিটি অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, একজন ইচ্ছা করলেই সেখানে পরিবর্তন করতে পারবে না।
এম কায়কোবাদ বলেন, ‘আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট দক্ষ, তাঁদের আমরা বিশ্বাস করতে পারি। এই প্রকল্পের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের যে আত্মবিশ্বাস ও ওনারশিপ, সেটা আমি নিশ্চিত হয়েছি। এটি একটি ভালো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। আমি আশা করি, এটা ডিসপ্লে করা হবে। যেকেউ এসে এটা টেস্ট করতে পারবে।’
ইভিএমের আধুনিকায়ন করা উচিত কি না, জানতে চাইলে এম কায়কোবাদ বলেন, যেকোনো মেশিনের জন্যই আধুনিকায়ন করা জরুরি। তবে এর প্রতিটি ছোট ছোট অংশ যেভাবে কাস্টমাইজ করা হয়েছে, এটাকে কেউ এসে ম্যানিপুলেট করবে সেই সম্ভাবনা নেই আসলে।
সবশেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘জাফর ইকবাল বললেন, ‘‘এখানে ম্যানিপুলেশন করার সুযোগ নেই।’’ এটা তাঁরা বলেছেন। সে জন্য আমাকে কিন্তু আস্থা রাখতে হবে ওই সব মানুষের ওপর, যেসব মানুষ এই জিনিসগুলো বোঝেন।’
দু-একটি রাজনৈতিক দলকে ডাকা হবে যেন তাদের কারিগরি দল এসে ইভিএম পরীক্ষা করতে পারেন, জানান সিইসি। বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো (নেতারা) যেহেতু মাঠে বলছেন, এটা মন্দ মেশিন, তাঁদের কাছ থেকেও জানতে চাই, আপনারা কী কী সমস্যাবোধ করছেন; আমাদের অবগত করেন; আমরা যেন সেগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ পাই। আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করব না।’
ইভিএম ব্যবহার বিষয়ে ইসি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ৩০০ নাকি ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিংবা মোটেই ব্যবহার করা হবে না-এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান সিইসি।
মতবিনিময় সভায় সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার, বিএমটিএফের এমডি মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীরসহ ইসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও এম কায়কোবাদসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের শিক্ষকেরা অংশ নেন। এ ছাড়া অংশ নেন এমআইএসটি ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কর্মকর্তারাও।