ঢাকা ০৭:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইতিহাসের সেরা মেসির মতো হতে চান না ইয়ামাল

  • আপডেট সময় : ০৬:৪৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

ক্রীড়া ডেস্ক: লিওনেল মেসির মতোই বার্সেলোনার একাডেমি থেকে উঠে আসা তার। আর্জেন্টাইন মহাতারকার মতো খেলেন ফরোয়ার্ড হিসেবে। চলতি মৌসুমে মেসির রেখে যাওয়া ১০ নম্বর জার্সিও তারই গায়ে উঠেছে। লামিনে ইয়ামালকে ‘ভবিষ্যতের লিওনেল মেসি’ ট্যাগ না দিয়ে উপায় কী! তবে স্পেনের ১৮ বছর বয়সী তারকা নিজেকে মেসির ‘নতুন সংস্করণ’ হিসেবে দেখতে চান না।

আর্জেন্টাইন মহাতারকার সঙ্গে প্রতিনিয়ত তুলনা টানা লামিনে ইয়ামালকে বিরক্ত করে তুলেছে। দুজনই লা মাসিয়ার গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় তুলনা হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু এই প্রজন্মের সেরা কিশোর প্রতিভা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ—তিনি নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে চান, গড়তে চান নতুন ইতিহাস।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে বার্সেলোনার সিনিয়র দলে অভিষেকের পর ইয়ামালকে আর আটকে রাখা যায়নি। এরপর থেকেই একের পর এক রেকর্ডগুলো নতুন করে লিখছেন । মাত্র ১৮ বছর বয়সেই এই স্প্যানিশ তারকা এর মধ্যেই লা লিগা ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। দুবার কোপা ট্রফি ও গোল্ডেন বয় জেতার পাশাপাশি ২০২৫ সালের ব্যালন ডি’অরে হয়েছেন দ্বিতীয়। ফুটবল মহলে বিশ্বাস, খুব শিগগিরই ইয়ামাল তার ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যালন ডি’অর জিতবেন, যা তাকে মেসির আটবার জেতার অবিশ্বাস্য রেকর্ডের দিকে ধাওয়া করতে সাহায্য করবে।

তবে ইয়ামাল পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন—তিনি মেসির পথ অনুসরণ করতে চান না। সিবিএস’কে এই তরুণ তারকা বলেছেন, ‘লিওনেল মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলার, কিন্তু সে-ও জানে আমি একজন ভালো খেলোয়াড়। আমরা যদি মুখোমুখি খেলি, পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকবে। আমি মেসি হতে চাই না, তার মতো খেলতেও চাই না, ১০ নম্বর জার্সি পরতেও চাই না। আমি আমার নিজের পথ অনুসরণ করতে চাই।’

মেসির মতো হতে চান না ঠিকই, কিন্তু তার দ্বারা অনুপ্রাণিত তো বটেই। ইয়ামাল আরও বলেন, ‘শৈশবে আমি মেসির পাসগুলো দেখতাম। অন্য খেলোয়াড়রাও ভালো পাস দিত, কিন্তু মেসির পাসগুলো প্রায়ই গোলের সমান ছিল। ড্রিবলিংয়ের চেয়ে পাসিং আমাকে বেশি টানত, কারণ এগুলো অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত। মজার বিষয় হচ্ছে, ছোটবেলায় আমি তেমন ড্রিবলারই ছিলাম না—বরং বেশি গোল করতাম এবং অনেক দৌড়াতাম।’

এখন অবশ্য তিনিও মেসির মতো অনায়াসেই ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বের হয়ে আসতে পারেন। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের রেখা দেখা গেলেও ইয়ামাল নিজের চারপাশের হাইপ কিংবা প্রশংসায় ভেসে যেতে চান না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো প্রত্যাশা স্থির করি না। শুধু খেলাটাকে উপভোগ করতে চাই। প্রত্যাশা ভালো নয়—কারণ আপনি তা পূরণ করলে মনে হয় আর কিছু বাকি নেই, আর পূরণ না হলে হতাশ লাগে। ফুটবলই একমাত্র জিনিস যা আমাকে সব ভুলিয়ে দেয়। বড় সমস্যা থাকলেও ম্যাচ এলে শুধু খেলাটাই মাথায় থাকে।’

সময় এখনো তার পক্ষে, সামনে অনেক রেকর্ডই ভাঙতে পারেন। কিন্তু ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে ভাবনা তার খুব একটা নেই। ইয়ামাল বলেন, ‘আমার লক্ষ্য সব রেকর্ড ভাঙা নয়, লাখ লাখ গোল করা নয়, লাখ লাখ ম্যাচ খেলা নয়। আমি একজন অ্যাথলেট, যে খেলাটা উপভোগ করতে চায়। আশা করি বাচ্চারা আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য একটাই—মানুষ যেন উপভোগ করে, ফুটবলে একটু বিনোদন পায়।’

ইয়ামাল এখন নিয়মিতই দর্শকদের হাততালি পান। তার খেলায় মেসির ছায়া দেখা যায়; দু’জনই প্রতিপক্ষের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে ভালোবাসেন, সাহসিকতার সঙ্গে খেলা সাজান।

মাঠে নামলে তার মানসিকতা কেমন থাকে? জবাবটা ইয়ামাল নিজেই দিয়েছেন, ‘আমি যদি সামনে তিনজন খেলোয়াড় দেখি, আমি ড্রিবল করবই। আমার আত্মবিশ্বাস খুব বেশি—এটাই আমার খেলার ধরন। বল কেড়ে নিলেও সমস্যা নেই। আমি যদি দুই-তিনজন দেখলেই থেমে যেতাম, তাহলে আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের খেলোয়াড় হতাম।’

এই মৌসুমে বার্সার হয়ে ১৪ ম্যাচে ইয়ামালের গোল ৭টি, অ্যাসিস্টও ৭টি। তার নৈপুণ্যে বার্সা এখন লা লিগার শীর্ষে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে। আর সামনে এগিয়ে আসছে ২০২৬ বিশ্বকাপ—স্পেনের হয়ে মহাগৌরবের স্বপ্ন এখন তার মনেও।

ওআ/আপ্র/১/১২/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

ইতিহাসের সেরা মেসির মতো হতে চান না ইয়ামাল

আপডেট সময় : ০৬:৪৪:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক: লিওনেল মেসির মতোই বার্সেলোনার একাডেমি থেকে উঠে আসা তার। আর্জেন্টাইন মহাতারকার মতো খেলেন ফরোয়ার্ড হিসেবে। চলতি মৌসুমে মেসির রেখে যাওয়া ১০ নম্বর জার্সিও তারই গায়ে উঠেছে। লামিনে ইয়ামালকে ‘ভবিষ্যতের লিওনেল মেসি’ ট্যাগ না দিয়ে উপায় কী! তবে স্পেনের ১৮ বছর বয়সী তারকা নিজেকে মেসির ‘নতুন সংস্করণ’ হিসেবে দেখতে চান না।

আর্জেন্টাইন মহাতারকার সঙ্গে প্রতিনিয়ত তুলনা টানা লামিনে ইয়ামালকে বিরক্ত করে তুলেছে। দুজনই লা মাসিয়ার গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় তুলনা হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু এই প্রজন্মের সেরা কিশোর প্রতিভা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ—তিনি নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে চান, গড়তে চান নতুন ইতিহাস।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে বার্সেলোনার সিনিয়র দলে অভিষেকের পর ইয়ামালকে আর আটকে রাখা যায়নি। এরপর থেকেই একের পর এক রেকর্ডগুলো নতুন করে লিখছেন । মাত্র ১৮ বছর বয়সেই এই স্প্যানিশ তারকা এর মধ্যেই লা লিগা ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। দুবার কোপা ট্রফি ও গোল্ডেন বয় জেতার পাশাপাশি ২০২৫ সালের ব্যালন ডি’অরে হয়েছেন দ্বিতীয়। ফুটবল মহলে বিশ্বাস, খুব শিগগিরই ইয়ামাল তার ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যালন ডি’অর জিতবেন, যা তাকে মেসির আটবার জেতার অবিশ্বাস্য রেকর্ডের দিকে ধাওয়া করতে সাহায্য করবে।

তবে ইয়ামাল পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন—তিনি মেসির পথ অনুসরণ করতে চান না। সিবিএস’কে এই তরুণ তারকা বলেছেন, ‘লিওনেল মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলার, কিন্তু সে-ও জানে আমি একজন ভালো খেলোয়াড়। আমরা যদি মুখোমুখি খেলি, পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকবে। আমি মেসি হতে চাই না, তার মতো খেলতেও চাই না, ১০ নম্বর জার্সি পরতেও চাই না। আমি আমার নিজের পথ অনুসরণ করতে চাই।’

মেসির মতো হতে চান না ঠিকই, কিন্তু তার দ্বারা অনুপ্রাণিত তো বটেই। ইয়ামাল আরও বলেন, ‘শৈশবে আমি মেসির পাসগুলো দেখতাম। অন্য খেলোয়াড়রাও ভালো পাস দিত, কিন্তু মেসির পাসগুলো প্রায়ই গোলের সমান ছিল। ড্রিবলিংয়ের চেয়ে পাসিং আমাকে বেশি টানত, কারণ এগুলো অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত। মজার বিষয় হচ্ছে, ছোটবেলায় আমি তেমন ড্রিবলারই ছিলাম না—বরং বেশি গোল করতাম এবং অনেক দৌড়াতাম।’

এখন অবশ্য তিনিও মেসির মতো অনায়াসেই ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বের হয়ে আসতে পারেন। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের রেখা দেখা গেলেও ইয়ামাল নিজের চারপাশের হাইপ কিংবা প্রশংসায় ভেসে যেতে চান না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো প্রত্যাশা স্থির করি না। শুধু খেলাটাকে উপভোগ করতে চাই। প্রত্যাশা ভালো নয়—কারণ আপনি তা পূরণ করলে মনে হয় আর কিছু বাকি নেই, আর পূরণ না হলে হতাশ লাগে। ফুটবলই একমাত্র জিনিস যা আমাকে সব ভুলিয়ে দেয়। বড় সমস্যা থাকলেও ম্যাচ এলে শুধু খেলাটাই মাথায় থাকে।’

সময় এখনো তার পক্ষে, সামনে অনেক রেকর্ডই ভাঙতে পারেন। কিন্তু ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে ভাবনা তার খুব একটা নেই। ইয়ামাল বলেন, ‘আমার লক্ষ্য সব রেকর্ড ভাঙা নয়, লাখ লাখ গোল করা নয়, লাখ লাখ ম্যাচ খেলা নয়। আমি একজন অ্যাথলেট, যে খেলাটা উপভোগ করতে চায়। আশা করি বাচ্চারা আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য একটাই—মানুষ যেন উপভোগ করে, ফুটবলে একটু বিনোদন পায়।’

ইয়ামাল এখন নিয়মিতই দর্শকদের হাততালি পান। তার খেলায় মেসির ছায়া দেখা যায়; দু’জনই প্রতিপক্ষের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে ভালোবাসেন, সাহসিকতার সঙ্গে খেলা সাজান।

মাঠে নামলে তার মানসিকতা কেমন থাকে? জবাবটা ইয়ামাল নিজেই দিয়েছেন, ‘আমি যদি সামনে তিনজন খেলোয়াড় দেখি, আমি ড্রিবল করবই। আমার আত্মবিশ্বাস খুব বেশি—এটাই আমার খেলার ধরন। বল কেড়ে নিলেও সমস্যা নেই। আমি যদি দুই-তিনজন দেখলেই থেমে যেতাম, তাহলে আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের খেলোয়াড় হতাম।’

এই মৌসুমে বার্সার হয়ে ১৪ ম্যাচে ইয়ামালের গোল ৭টি, অ্যাসিস্টও ৭টি। তার নৈপুণ্যে বার্সা এখন লা লিগার শীর্ষে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে। আর সামনে এগিয়ে আসছে ২০২৬ বিশ্বকাপ—স্পেনের হয়ে মহাগৌরবের স্বপ্ন এখন তার মনেও।

ওআ/আপ্র/১/১২/২০২৫