প্রত্যাশা ডেস্ক: ইতালির পার্লামেন্ট সর্বসম্মতভাবে নারীহত্যাকে (ফেমিসাইড) স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর ফলে, লিঙ্গ-প্রণোদিত কোনো নারী হত্যাকে সরাসরি আজীবন কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। ফেমিসাইড হলো নারী হওয়ার কারণে কাউকে বিদ্বেষমূলকভাবে নিশানা করে হত্যা করা। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসেই ইতালির পার্লামেন্টে ফেমিসাইড-সংক্রান্ত বিলটি পাস হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইতালিতে নারীহত্যাবিষয়ক আইন নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছিল। তবে জুলিয়া চেক্কেত্তিননামের এক নারীকে তার সাবেক প্রেমিকের হাতে খুন হওয়ার ঘটনা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয় এবং আইনি পদক্ষেপে গতি আনে।
২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষদিকে, ২২ বছর বয়সি জুলিয়াকে ছুরি দিয়ে হত্যা করেন তার সাবেক প্রেমিক ফিলিপ্পো তুরেত্তা। পরে তার মরদেহ ব্যাগে ভরে একটি হ্রদের পাশে ফেলে দেন। তুরেত্তা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ড স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে ছিল। তবে সবচেয়ে গভীর প্রভাব ফেলে জুলিয়ার বোন এলেনার বক্তব্য। তিনি বলেন, হত্যাকারী কোনো দানব নয়। বরং একটি গভীর পিতৃতান্ত্রিক সমাজের ‘সুস্থ সন্তান’। তার ওই বক্তব্যের পরই ইতালিজুড়ে মানুষ রাস্তায় নেমে পরিবর্তনের দাবি জানায়।
দুই বছর ধরে বহু বিতর্ক আর আলোচনা-সমালোচনার পর, ইতালির সাংসদরা অবশেষে নারীহত্যাবিষয়ক আইনটি পাস করেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে নারী হত্যাকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হাতে গোনা কয়েকটি দেশের তালিকায় যুক্ত হলো ইতালি।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বিলটি উত্থাপন করেন। তার কট্টর ডানপন্থি সরকার যেমন এই আইনের পক্ষে ছিল, তেমনি বিরোধী সাংসদরাও সমর্থন দেন। ভোটের সময় অনেক সংসদ সদস্য নিহত নারীদের স্মরণে লাল ফিতে বা লাল পোশাক পরিধান করেন। এখন থেকে ইতালিতে, লিঙ্গের কারণে সংঘটিত প্রতিটি নারী হত্যাকে ‘ফেমিসাইড’ হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। নতুন আইনের অন্যতম প্রণেতা বিচারক পাওলা দি নিকোলা বলেন, এখন থেকে নারীহত্যা শ্রেণিবদ্ধ হবে, প্রকৃত প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ হবে এবং স্বীকৃতি পাবে। তিনি একটি বিশেষজ্ঞ কমিশনের সদস্য ছিলেন, যারা সাম্প্রতিক ২১১টি নারী হত্যাকাণ্ড বিশ্লেষণ করে এই আইনটি প্রণয়ন করেন। তিনি বলেন, প্রচণ্ড ভালোবাসা বা প্রবল ঈর্ষা থেকে এ ধরনের হত্যার ঘটনা ঘটছে বলাটা একধরনের বিকৃতি। এর মধ্য দিয়ে রোমান্টিক বা সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য শব্দ ব্যবহার করে বাস্তবতাকে ঢেকে দেওয়া হয়।
এর আগে সাইপ্রাস, মাল্টা ও ক্রোয়েশিয়া তাদের ফৌজদারি বিধিতে ফেমিসাইডের একটি আইনি সংজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এবার ইতালিও সে কাতারে যুক্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী নারীহত্যার কোনো অভিন্ন সংজ্ঞা না থাকায়, পরিসংখ্যান তুলনা ও হিসাব করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ইতালির নতুন আইন অনুযায়ী, নারীহত্যা বলতে বোঝাবে, নারী হিসেবে কোনো নারীকে ঘৃণা, বৈষম্য, আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে হত্যা। সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে হত্যা ও নারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমিত করার উদ্দেশ্যে হত্যা।
সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর ইতালিতে ১১৬ জন নারী খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৬টি ছিল লিঙ্গজনিত কারণে। ভবিষ্যতে এই হত্যাগুলো আলাদাভাবে নথিভুক্ত হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আজীবন কারাদণ্ড কার্যকর হবে-যা অপরাধ দমনে ভীতির প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্পর্কে ফিরতে রাজি না হওয়ায় জুলিয়ার সাবেক প্রেমিক তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছিল। এর কারণ হিসেবে নারীদের নিয়ে বিদ্যমান সামাজিক ধারণা, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং তরুণদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতাকে দায়ী করেন জুলিয়ার বাবা।
সানা/ওআ/আপ্র/২৬/১১/২০২৫

























