ঢাকা ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

ইউরোপ বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের নজিরবিহীন রেকর্ড

  • আপডেট সময় : ০১:২৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ইইউ প্লাস অঞ্চলের দেশগুলোতে গত বছর বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের নজিরবিহীন এক রেকর্ড হয়েছে। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ইউরোপে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন; যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা এজেন্সি ফর অ্যাসাইলামের (ইইউএএ) প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ওই অঞ্চলে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন প্রায় ৪০ হাজার ৩৩২ জন। তাদের মধ্যে কেবল জানুয়ারি থেকে জুনে আবেদন করেছেন ২০ হাজার ৯২৬ জন বাংলাদেশি। এ ছাড়া জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন ১৯ হাজার ৪০৬ বাংলাদেশি।
উল্লেখ্য, ইইউ প্লাসের মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশ এবং নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশিদের ওই অঞ্চলে আশ্রয় আবেদন গত বছরের তুলনায় ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইইউএএর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালেই সর্বাধিকসংখ্যক বাংলাদেশি ইইউ প্লাসে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ওই অঞ্চলে আশ্রয় আবেদন করেছিলেন ১৭ হাজার ২১৭ জন বাংলাদেশি। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৮৭ জন, ২০১৭ সালে ১৯ হাজার ১২৮ জন, ২০১৮ সালে ১৩ হাজার ৩৪০ জন, ২০১৯ সালে ১৪ হাজার ৩৭৫ জন, ২০২০ সালে ১১ হাজার ২৬৯ জন, ২০২১ সালে ১৯ হাজার ৯৯৪ জন বাংলাদেশি আশ্রয় আবেদন করেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পায়। ওই বছর ৩৩ হাজার ৭৩১ জন বাংলাদেশি আশ্রয়ের আবেদন করেন। আর গত বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সংখ্যা। ২০২৩ সালে রেকর্ড ৪০ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশি ইইউ প্লাসে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন।
ইইউএএ বলেছে, গত বছর বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের প্রধান গন্তব্য ছিল ইতালি। ইইউ প্লাসে আশ্রয় চেয়ে করা বাংলাদেশিদের আবেদনের ৫৮ শতাংশই ইতালিতে করেছেন। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২৩ হাজার ৪৪৮ জন বাংলাদেশি ইতালিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। দেশটিতে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের ৬৯ শতাংশ আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। এরপরই বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে ফ্রান্স এবং রোমানিয়ায়। ইইউ প্লাসে বাংলাদেশিদের মোট আশ্রয় আবেদনের ২৫ শতাংশই ফ্রান্সে জমা দিয়েছেন। গত বছর ১০ হাজার ২১৫ জন বাংলাদেশি ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। একই সময়ে রোমানিয়ায় আশ্রয় চেয়েছেন ২ হাজার ৮২২ জন বাংলাদেশি। এরপর অস্ট্রিয়ায় ১ হাজার ৪০৯ জন, গ্রিসে ৬৪০ জন, আয়ারল্যান্ডে ৪৪৫ জন, স্পেনে ৩৮০ জন, সাইপ্রাসে ৩১৪ জন, জার্মানিতে ১৬৪ জন, মাল্টায় ১১৮ জন এবং অন্যান্য দেশে ৩৭৭ জন বাংলাদেশি আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। ইইউএএর পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশিদের মোট আবেদনের মধ্যে ৩২ হাজার ৯৪৬টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। পাশাপাশি দুই হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশি তাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ইউরোপে আশ্রয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন ১ শতাংশেরও কম বাংলাদেশি। গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশিদের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার হার ছিল প্রায় একই, অর্থাৎ ১ শতাংশেরও কম। তবে ২০১৯ সালে মাত্র ২ শতাংশ বাংলাদেশি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলেন। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ওই অঞ্চলে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন প্রায় ৪০ হাজার ৩৩২ জন। তাদের মধ্যে কেবল জানুয়ারি থেকে জুনে আবেদন করেছেন ২০ হাজার ৯২৬ জন বাংলাদেশি। এ ছাড়া জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন ১৯ হাজার ৪০৬ বাংলাদেশি।
সংস্থাটি বলেছে, ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) আশ্রয় আবেদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে গত বছর। ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ব্লকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এই পরিসংখ্যানে ইউরোপের দোরগোড়ায় জেঁকে বসা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে ইইউর ওপর তৈরি হওয়া ক্রমবর্ধমান চাপ ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির হুমকিও প্রতিফলিত হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ইউরোপে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ২০১৫-১৬ সালে বিশ্বজুড়ে তৈরি শরণার্থী সংকটকালীনের তুলনায় সর্বোচ্চ। ওই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। ইইউএএ বলেছে, গত বছর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিই ছিল আশ্রয়প্রার্থীদের এক নম্বর গন্তব্য। আশ্রয়ের আবেদনে সবার শীর্ষে আছেন সিরীয় নাগরিকরা। এরপরই এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আরেক দেশ আফগানিস্তান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই শরণার্থী সংস্থার প্রতিবেদনে আশ্রয় আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের প্রবণতাও তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় কম হলেও ইইউর দোরগোড়ায় শুরু হওয়া সহিংসতা এবং যুদ্ধের প্রভাবে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সূত্র: ইইউএএ।
যুক্তরাজ্যে অবৈধ প্রবেশের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ১৬৫ অভিবাসী
এদিকে ২০২২ সালের জুন থেকে গত বছরের মে পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্যে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অবৈধ প্রবেশের দায়ে ১৬৫ জন অভিবাসীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ এছাড়া দেশটিতে নতুন সীমান্ত ও জাতীয়তা বিষয়ক আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে ছোট নৌকায় আসা অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের হার বেড়েছে৷ ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এবং দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি যৌথ সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷ ২০২২ সালের জুনে সীমান্ত ও জাতীয়তা বিষয়ক নতুন আইন কার্যকর করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ৷ আইনটির ২৪ অনুচ্ছেদে অবৈধ প্রবেশের দায়ে দোষী সাব্যস্ত অভিবাসীদের জন্য সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদ-ের বিধান রাখা হয়৷ এছাড়া ২৫ ধারায় অবৈধ উপায়ে কাউকে ব্রিটেনে প্রবেশে সহায়তাকারী ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান রাখা হয়৷ নতুন আইনটি বাস্তবায়নের পর থেকে ব্রিটেনে আসা অভিবাসীদের অবৈধ প্রবেশের দায়ে আটক ও সাজার হার বেড়েছে৷ অক্সফোর্ড এবং এনজিওগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয়তা এবং সীমান্ত আইন অনুসরণ করে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ২৪০ জনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের’ অভিযোগ আনা হয়েছে৷
এছাড়া ১৬৫ জনকে অবৈধ উপায়ে চ্যানেল পাড়ি দেয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে ব্রিটিশ আদালত৷ গবেষকদের মতে, বেআইনি প্রবেশে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আলবেনিয়ান, সুদান এবং মিশর থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা বেশি৷ নতুন নিয়মটি কার্যকরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৯ জনকে অবৈধ অভিবাসনে সহায়তার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ, চ্যানেলের ছোট নৌকা চালানোর অপরাধে সাত জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ দুবছর ধরে ব্রিটেন সমুদ্রপথে আসা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একটি শাস্তিমূলক নীতি শুরু করেছে৷ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের নেওয়া এমন সিদ্ধান্ত মূলত ইউরোপে প্রথম শুরু করেছিল গ্রিস৷ ক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্রিমিনোলজির পিএইচডি গবেষক এবং বর্ডার ক্রিমিনোলজিস রিসার্চ ল্যাবরেটরির সদস্য ভিক্টোরিয়া টেলর বলেন, ব্রিটেনের নতুন আইনে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য শুধু নৌকার নেতৃত্বে থাকাই যথেষ্ট৷ প্রায়ই ব্রিটিশ উপকূলরক্ষীরা ড্রোন এবং লং-লেন্স ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবির মাধ্যমে ছোট নৌকা কারা পরিচালনা করছে সেটি খুঁজে বের করে থাকে৷ এছাড়া কখনও কখনও নৌকার অন্যান্য যাত্রীদের সাক্ষ্যই অভিবাসীদের দোষী প্রমাণে যথেষ্ট বলে ধরে নেয় কর্তৃপক্ষ৷ সম্প্রতি ইব্রাহিমা বাহ নামের এক সেনেগালিজ নাগরিককে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৪৩ জন যাত্রী পরিবহনের দায়ে সাড়ে নয় বছরের কারাদ- দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত৷ পাচারকারীদের অর্থ দেয়ার পরিবর্তে ফরাসি উপকূল থেকে নৌকা চালিয়ে নেয়ার দায়িত্ব ছিলেন তিনি৷ সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইউরোপ বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের নজিরবিহীন রেকর্ড

আপডেট সময় : ০১:২৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : ইইউ প্লাস অঞ্চলের দেশগুলোতে গত বছর বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের নজিরবিহীন এক রেকর্ড হয়েছে। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ইউরোপে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন; যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা এজেন্সি ফর অ্যাসাইলামের (ইইউএএ) প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ওই অঞ্চলে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন প্রায় ৪০ হাজার ৩৩২ জন। তাদের মধ্যে কেবল জানুয়ারি থেকে জুনে আবেদন করেছেন ২০ হাজার ৯২৬ জন বাংলাদেশি। এ ছাড়া জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন ১৯ হাজার ৪০৬ বাংলাদেশি।
উল্লেখ্য, ইইউ প্লাসের মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশ এবং নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশিদের ওই অঞ্চলে আশ্রয় আবেদন গত বছরের তুলনায় ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইইউএএর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালেই সর্বাধিকসংখ্যক বাংলাদেশি ইইউ প্লাসে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ওই অঞ্চলে আশ্রয় আবেদন করেছিলেন ১৭ হাজার ২১৭ জন বাংলাদেশি। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৮৭ জন, ২০১৭ সালে ১৯ হাজার ১২৮ জন, ২০১৮ সালে ১৩ হাজার ৩৪০ জন, ২০১৯ সালে ১৪ হাজার ৩৭৫ জন, ২০২০ সালে ১১ হাজার ২৬৯ জন, ২০২১ সালে ১৯ হাজার ৯৯৪ জন বাংলাদেশি আশ্রয় আবেদন করেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পায়। ওই বছর ৩৩ হাজার ৭৩১ জন বাংলাদেশি আশ্রয়ের আবেদন করেন। আর গত বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সংখ্যা। ২০২৩ সালে রেকর্ড ৪০ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশি ইইউ প্লাসে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন।
ইইউএএ বলেছে, গত বছর বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের প্রধান গন্তব্য ছিল ইতালি। ইইউ প্লাসে আশ্রয় চেয়ে করা বাংলাদেশিদের আবেদনের ৫৮ শতাংশই ইতালিতে করেছেন। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২৩ হাজার ৪৪৮ জন বাংলাদেশি ইতালিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। দেশটিতে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের ৬৯ শতাংশ আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। এরপরই বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে ফ্রান্স এবং রোমানিয়ায়। ইইউ প্লাসে বাংলাদেশিদের মোট আশ্রয় আবেদনের ২৫ শতাংশই ফ্রান্সে জমা দিয়েছেন। গত বছর ১০ হাজার ২১৫ জন বাংলাদেশি ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। একই সময়ে রোমানিয়ায় আশ্রয় চেয়েছেন ২ হাজার ৮২২ জন বাংলাদেশি। এরপর অস্ট্রিয়ায় ১ হাজার ৪০৯ জন, গ্রিসে ৬৪০ জন, আয়ারল্যান্ডে ৪৪৫ জন, স্পেনে ৩৮০ জন, সাইপ্রাসে ৩১৪ জন, জার্মানিতে ১৬৪ জন, মাল্টায় ১১৮ জন এবং অন্যান্য দেশে ৩৭৭ জন বাংলাদেশি আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। ইইউএএর পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশিদের মোট আবেদনের মধ্যে ৩২ হাজার ৯৪৬টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। পাশাপাশি দুই হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশি তাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ইউরোপে আশ্রয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন ১ শতাংশেরও কম বাংলাদেশি। গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশিদের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার হার ছিল প্রায় একই, অর্থাৎ ১ শতাংশেরও কম। তবে ২০১৯ সালে মাত্র ২ শতাংশ বাংলাদেশি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলেন। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ওই অঞ্চলে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন প্রায় ৪০ হাজার ৩৩২ জন। তাদের মধ্যে কেবল জানুয়ারি থেকে জুনে আবেদন করেছেন ২০ হাজার ৯২৬ জন বাংলাদেশি। এ ছাড়া জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন ১৯ হাজার ৪০৬ বাংলাদেশি।
সংস্থাটি বলেছে, ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) আশ্রয় আবেদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে গত বছর। ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ব্লকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এই পরিসংখ্যানে ইউরোপের দোরগোড়ায় জেঁকে বসা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে ইইউর ওপর তৈরি হওয়া ক্রমবর্ধমান চাপ ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির হুমকিও প্রতিফলিত হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ইউরোপে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ২০১৫-১৬ সালে বিশ্বজুড়ে তৈরি শরণার্থী সংকটকালীনের তুলনায় সর্বোচ্চ। ওই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। ইইউএএ বলেছে, গত বছর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিই ছিল আশ্রয়প্রার্থীদের এক নম্বর গন্তব্য। আশ্রয়ের আবেদনে সবার শীর্ষে আছেন সিরীয় নাগরিকরা। এরপরই এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আরেক দেশ আফগানিস্তান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই শরণার্থী সংস্থার প্রতিবেদনে আশ্রয় আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের প্রবণতাও তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় কম হলেও ইইউর দোরগোড়ায় শুরু হওয়া সহিংসতা এবং যুদ্ধের প্রভাবে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সূত্র: ইইউএএ।
যুক্তরাজ্যে অবৈধ প্রবেশের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ১৬৫ অভিবাসী
এদিকে ২০২২ সালের জুন থেকে গত বছরের মে পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্যে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অবৈধ প্রবেশের দায়ে ১৬৫ জন অভিবাসীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ এছাড়া দেশটিতে নতুন সীমান্ত ও জাতীয়তা বিষয়ক আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে ছোট নৌকায় আসা অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের হার বেড়েছে৷ ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এবং দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি যৌথ সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷ ২০২২ সালের জুনে সীমান্ত ও জাতীয়তা বিষয়ক নতুন আইন কার্যকর করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ৷ আইনটির ২৪ অনুচ্ছেদে অবৈধ প্রবেশের দায়ে দোষী সাব্যস্ত অভিবাসীদের জন্য সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদ-ের বিধান রাখা হয়৷ এছাড়া ২৫ ধারায় অবৈধ উপায়ে কাউকে ব্রিটেনে প্রবেশে সহায়তাকারী ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান রাখা হয়৷ নতুন আইনটি বাস্তবায়নের পর থেকে ব্রিটেনে আসা অভিবাসীদের অবৈধ প্রবেশের দায়ে আটক ও সাজার হার বেড়েছে৷ অক্সফোর্ড এবং এনজিওগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয়তা এবং সীমান্ত আইন অনুসরণ করে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ২৪০ জনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের’ অভিযোগ আনা হয়েছে৷
এছাড়া ১৬৫ জনকে অবৈধ উপায়ে চ্যানেল পাড়ি দেয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে ব্রিটিশ আদালত৷ গবেষকদের মতে, বেআইনি প্রবেশে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আলবেনিয়ান, সুদান এবং মিশর থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা বেশি৷ নতুন নিয়মটি কার্যকরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৯ জনকে অবৈধ অভিবাসনে সহায়তার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ, চ্যানেলের ছোট নৌকা চালানোর অপরাধে সাত জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ দুবছর ধরে ব্রিটেন সমুদ্রপথে আসা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একটি শাস্তিমূলক নীতি শুরু করেছে৷ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের নেওয়া এমন সিদ্ধান্ত মূলত ইউরোপে প্রথম শুরু করেছিল গ্রিস৷ ক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্রিমিনোলজির পিএইচডি গবেষক এবং বর্ডার ক্রিমিনোলজিস রিসার্চ ল্যাবরেটরির সদস্য ভিক্টোরিয়া টেলর বলেন, ব্রিটেনের নতুন আইনে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য শুধু নৌকার নেতৃত্বে থাকাই যথেষ্ট৷ প্রায়ই ব্রিটিশ উপকূলরক্ষীরা ড্রোন এবং লং-লেন্স ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবির মাধ্যমে ছোট নৌকা কারা পরিচালনা করছে সেটি খুঁজে বের করে থাকে৷ এছাড়া কখনও কখনও নৌকার অন্যান্য যাত্রীদের সাক্ষ্যই অভিবাসীদের দোষী প্রমাণে যথেষ্ট বলে ধরে নেয় কর্তৃপক্ষ৷ সম্প্রতি ইব্রাহিমা বাহ নামের এক সেনেগালিজ নাগরিককে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৪৩ জন যাত্রী পরিবহনের দায়ে সাড়ে নয় বছরের কারাদ- দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত৷ পাচারকারীদের অর্থ দেয়ার পরিবর্তে ফরাসি উপকূল থেকে নৌকা চালিয়ে নেয়ার দায়িত্ব ছিলেন তিনি৷ সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস