ঢাকা ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

ইউরোপ এবং চীনের বন্যা বিশ্ব রাজনীতিকদের জন্য সতর্কবার্তা

  • আপডেট সময় : ১০:২০:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ জুলাই ২০২১
  • ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

সাদরুল আহমেদ খান : বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক মারাত্মক বন্যার পিছনে জলবায়ু পরিবর্তনের সংযোগ রয়েছে। চীনের হেনান থেকে শুরু করে জার্মানির বাভারিয়া, এবং ইউরপের বিভিন্ন দেশ মারাত্মক বন্যায় কবলিত হয়েছে । পৃথিবীর এই অঞ্চলের মানুষ আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া কখনও দেখেনি।

এই বন্যা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন কমাতে আশু ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ব রাজনীতিবিদদের সচেতন ও একমত হওয়া উচিত। একটি উষ্ণ বায়ুম-ল ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার জন্য দায়ী, একই সাথে পৃথিবীর বিপরীত মেরুতে তীব্র দাবদাহ, খরা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।

চীনের হেনান প্রদেশের রাজধানী চেংঝুতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যার সময় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এই বৃষ্টিপাতটি সে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত, এক হিসাবে বলা হয় এ বন্যায় অন্তত দশ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । সরকারী জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি নগরীর সমস্ত সিনেমা হল এবং গ্রন্থাগারকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা সম্বলিত বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে রুপান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য পিএলএ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ।

চীনের এই ব্যাপক বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত । জলবায়ু পরিবর্তন না হলে এতো বেশি বৃষ্টিপাত দেখা যেত না । আজকাল বাতাস গরম এবং তাই বেশি আর্দ্রতা বহনে অক্ষম। ফলস্বরূপ, আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত এবং ঝড় হয়। মধ্য ইউরোপের দেশগুলিও সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক বন্যার কবলে পড়েছে। প্রচ- বৃষ্টিপাতের ফলে অঞ্চলজুড়ে নদীগুলির তীর ভেঙে পড়েছে, বিশেষত জলাধার এবং পানিপথ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে বসবাসরত লোকদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে, কয়েকশত নিখোঁজ এবং লক্ষাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা যায়।

আবহাওয়ার আগাম সতর্কবার্তাও যেন অকার্যকর দেখাচ্ছে, প্রকৃতিও যেন হিট অ্যান্ড রান টেকনিক খেলছে। সুতরাং, বিশ্বনেতা এবং রাজনীতিবিদদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন এবং এখনই সেরা সময়। এখন থেকে সমস্ত বৈশ্বিক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনা বিষয়সূচির তালিকায় শীর্ষে থাকা উচিত, নেতাদের একটি সমাধান পরিকল্পনা করা উচিত এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাস এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রীগণ যেন জলবায়ু পরিবর্তনকে কোনও পার্শ্ব সমস্যা হিসেবে বিবেচনা না করেন, বরং এটাই হবে মুখ্য আলোচনা ।
আমরা যদি প্রকৃতির যতœ না নেই, প্রকৃতিও আমাদের যতœ নিবে না। আমাদের কোন প্ল্যানেট বি নেই, আমাদের আছে কেবল একটিই পৃথিবী, আসুন একে বাঁচানোর জন্য, স্বাস্থ্যকর করার জন্য একসাথে কাজ করি। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, “জলবায়ু প্রত্যেকের চিন্তা, প্রতিদিনের চিন্তা”।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, যদিও এই পরিবর্তনে আমরা দায়ি না, দায় উন্নত বিশ্বের ।

উল্লেখ্য, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক আগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বুঝতে পেরেছিলেন এবং ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর প্রথম বক্তৃতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।

আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ফোরামের সভাপতি, তিনি সব সময় বিশ্বনেতাদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তিবিদ্যার উপর জোর দেওয়া এবং জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রতিবছর ভূমিকম্প, জলাবদ্ধতা, ভূমিধস, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বৃষ্টিপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়া স্বত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরে বাংলাদেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পর্যবেক্ষণে সক্ষমতা আরও একধাপ বেড়েছে । টেকসই উন্নয়নের একটি মডেল আজ বাংলাদেশ।
লেখক : বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট-এট-আর্মস। সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপ এবং চীনের বন্যা বিশ্ব রাজনীতিকদের জন্য সতর্কবার্তা

আপডেট সময় : ১০:২০:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ জুলাই ২০২১

সাদরুল আহমেদ খান : বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক মারাত্মক বন্যার পিছনে জলবায়ু পরিবর্তনের সংযোগ রয়েছে। চীনের হেনান থেকে শুরু করে জার্মানির বাভারিয়া, এবং ইউরপের বিভিন্ন দেশ মারাত্মক বন্যায় কবলিত হয়েছে । পৃথিবীর এই অঞ্চলের মানুষ আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া কখনও দেখেনি।

এই বন্যা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন কমাতে আশু ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ব রাজনীতিবিদদের সচেতন ও একমত হওয়া উচিত। একটি উষ্ণ বায়ুম-ল ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার জন্য দায়ী, একই সাথে পৃথিবীর বিপরীত মেরুতে তীব্র দাবদাহ, খরা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।

চীনের হেনান প্রদেশের রাজধানী চেংঝুতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যার সময় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এই বৃষ্টিপাতটি সে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত, এক হিসাবে বলা হয় এ বন্যায় অন্তত দশ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । সরকারী জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি নগরীর সমস্ত সিনেমা হল এবং গ্রন্থাগারকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা সম্বলিত বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে রুপান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য পিএলএ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ।

চীনের এই ব্যাপক বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত । জলবায়ু পরিবর্তন না হলে এতো বেশি বৃষ্টিপাত দেখা যেত না । আজকাল বাতাস গরম এবং তাই বেশি আর্দ্রতা বহনে অক্ষম। ফলস্বরূপ, আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত এবং ঝড় হয়। মধ্য ইউরোপের দেশগুলিও সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক বন্যার কবলে পড়েছে। প্রচ- বৃষ্টিপাতের ফলে অঞ্চলজুড়ে নদীগুলির তীর ভেঙে পড়েছে, বিশেষত জলাধার এবং পানিপথ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে বসবাসরত লোকদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে, কয়েকশত নিখোঁজ এবং লক্ষাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানা যায়।

আবহাওয়ার আগাম সতর্কবার্তাও যেন অকার্যকর দেখাচ্ছে, প্রকৃতিও যেন হিট অ্যান্ড রান টেকনিক খেলছে। সুতরাং, বিশ্বনেতা এবং রাজনীতিবিদদের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন এবং এখনই সেরা সময়। এখন থেকে সমস্ত বৈশ্বিক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনা বিষয়সূচির তালিকায় শীর্ষে থাকা উচিত, নেতাদের একটি সমাধান পরিকল্পনা করা উচিত এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাস এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রীগণ যেন জলবায়ু পরিবর্তনকে কোনও পার্শ্ব সমস্যা হিসেবে বিবেচনা না করেন, বরং এটাই হবে মুখ্য আলোচনা ।
আমরা যদি প্রকৃতির যতœ না নেই, প্রকৃতিও আমাদের যতœ নিবে না। আমাদের কোন প্ল্যানেট বি নেই, আমাদের আছে কেবল একটিই পৃথিবী, আসুন একে বাঁচানোর জন্য, স্বাস্থ্যকর করার জন্য একসাথে কাজ করি। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, “জলবায়ু প্রত্যেকের চিন্তা, প্রতিদিনের চিন্তা”।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, যদিও এই পরিবর্তনে আমরা দায়ি না, দায় উন্নত বিশ্বের ।

উল্লেখ্য, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক আগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বুঝতে পেরেছিলেন এবং ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর প্রথম বক্তৃতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।

আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ফোরামের সভাপতি, তিনি সব সময় বিশ্বনেতাদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তিবিদ্যার উপর জোর দেওয়া এবং জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রতিবছর ভূমিকম্প, জলাবদ্ধতা, ভূমিধস, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বৃষ্টিপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়া স্বত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরে বাংলাদেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পর্যবেক্ষণে সক্ষমতা আরও একধাপ বেড়েছে । টেকসই উন্নয়নের একটি মডেল আজ বাংলাদেশ।
লেখক : বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট-এট-আর্মস। সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটি।