নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউরিয়া সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার, কৃষি পণ্যের বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গা, বিএডিসি’র মাধ্যমে ন্যায্য দামে কৃষি উপকরণ বিতরণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠন।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২ টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইউরিয়া সারের দাম বাড়িয়ে কৃষকদের আবারও সমস্যায় ফেলেছে সরকার। কৃষকরা এমনিতেই উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। এরইমধ্যে আবার সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে কৃষকদের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে।
‘সরকার নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছে অথচ কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন না ঘটিয়ে বরং কৃষকদের বিরুদ্ধে নানা সিদ্ধান্ত নেয়। কৃষি পণ্য উৎপাদন না করে আমদানি নির্ভর হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা দেখেছি এতে সরকার সংকটে পড়েছে। তাই আমরা আশা করবো সরকার কৃষিমুখী ও উৎপাদনমুখী কাজে আরও বেশি গুরুত্ব দিবে।’ বক্তারা আরও বলেন, সরকার পদ্মা সেতু করেছে। মেট্রোরেলের কাজ করছে। এতো উন্নয়ন কোনো কাজে আসবে না যদি কৃষি উৎপাদনের দিকে নজর না দেয়। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয় সেদিকে নজর নেই। অথচ কৃষি উৎপাদনে ইউরিয়া সারের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একধরনের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে কৃষি পণ্যের বাজারে। আমরা এই ধরনের অযৌক্তিক সিন্ডিকেট ও কাজ বন্ধের দাবি জানাই। সমাবেশে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক বাঁচাতে সারের মূল্য কমানোর দাবি সিপিবির : কৃষক বাঁচাতে সারের মূল্য কমানো এবং গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-সিপিবি(এম)। বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মার্কসবাদী’র সভাপতি কমরেড ডা. এম. এ. সামাদ বলেন, সরকার হঠাৎ করেই কেজি প্রতি ৬ টাকা করে ইউরিয়া সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এ যেন কৃষকদের উপর মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ। তিনি অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য কমানোর দাবি জানান। সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাহিদুর রহমান বলেন, কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে চলছে লোডশেডিং। এসময় অন্যান্য বক্তারা পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সেক্টরে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে বলে মন্তব্য করেন এবং অবিলম্বে বর্ধিত সারের মূল্য প্রত্যাহার ও দুর্নীতি লুটপাট বন্ধের দাবি জানান। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কমরেড তালেবুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড জাহিদ আনসারী, কমরেড তারেক ইসলাম বিডি, কমরেড নূর আফসানা নীপা প্রমুখ।
সারের মূল্যবৃদ্ধি কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে: বাংলাদেশ ন্যাপ : ইউরিয়া সারের মূল্য প্রতি কেজিতে ৬ টাকা বৃদ্ধি করায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ। তারা বলেন, লোডশেডিংয়ে যেখানে কৃষকের সেচ ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে ইউরিয়ার মূল্য বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা বৃদ্ধি কৃষি উৎপাদন বেশী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ফলে খাদ্য নিরাপত্তাও অনিশ্চয়তায় পড়বে। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া এসব কথা বলেন। তারা ইউরিয়া সারের মূল্য পূর্বাবস্থায় রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে সারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল ও প্রকৃত কৃষকের কাছে সরাসরি ভেজালমুক্ত সার পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। নেতারা বলেন, বর্তমান বিশ্বে যে সংকট শুরু হয়েছে তা থেকে রক্ষার অন্যতম উপায় হলো দেশের কৃষি উৎপাদন। দেশের কৃষক পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন করলেও মধ্যসত্তভোগি ও দালাল শ্রেণীর কারণে তারা সব সময় ফসলের লাভজনক মূল্য পায় না। সারের মূল্য বৃদ্ধিতে ফসলের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাবে। যার তার প্রভাব পড়বে উৎপাদিত মূল্যের ওপর। ফলে সাধারণ মানুষের সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে, যা কোনোভাবেই দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা কম মূল্যে প্রকৃত কৃষকের কাছে কৃষি উপকরণ পৌঁছানোর দাবি জানিয়ে বলেন, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের স্বার্থ রক্ষার কারণেই সরকারকে সারের মূল্যবৃদ্ধি করতে হচ্ছে। আর এই দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা শ্রেণীর কারণে সরকার ক্রমান্বয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যর অসহনীয় মূল্য বৃদ্ধি, নজিরবিহীন লোডশেডিং, জ্বালানির অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে, জনগণ সোচ্চার হয়ে উঠছে তখনই সরকারের সারের মূল্য বৃদ্ধি জনবিরোধী সিদ্ধান্ত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
ইউরিয়া সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ