ঢাকা ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশে লাগবে চেয়ারম্যানের স্বামীর অনুমতি

  • আপডেট সময় : ০১:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে চেয়ারম্যানের স্বামীর অনুমতি লাগবে বলে এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে; যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের লোকজনসহ অনেকে। তবে চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল এই বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।
সম্প্রতি জেলার টুঙ্গী উপজেলার বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, শিমুল জন্মসনদ দিতে পাঁচশ থেকে দুই হাজার করে টাকা আদায় করছেন এবং জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধনে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করছেন।
সাংবাদিকরা সেই সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ার পর গত মঙ্গলবার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়। প্রায় আড়াই মিনিটের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম মোল্লা বলছেন, “তুমি (সাংবাদিক) এখানে ঢুকছ কেন? তুমি আগে আমার কাছে আসবা। আমার অনুমতি সাপেক্ষে এ জায়গায় কাজ করতে হবে।”
আমিনুল বলেন, “আমরা তো সময় দেব। সাংবাদিক তো আমাদেরও দরকার। আপনারা আমার ওখানে যাবেন, আপনাদের দিয়ে কাজ করাব! তারপর আমার পরিষদের যদি কোনো সুবিধা-অসুবিধা থাকে সেটা আমি উত্থাপন করব, যাতে আমার জন্য সুবিধা হয়। আপনারা আমার ভাই-ব্রাদার সাংবাদিক। আপনাদের আমার কাজে লাগবে। আপনারা আমার ওখানে আসেন।”
ভিডিওতে আরও দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকরা হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রসঙ্গ তুললে চেয়ারম্যানের স্বামী বলেন, “ও তো আমার স্টাফ! অভিযোগটা তো আমার কাছে দেবে। আপনারা জানতে আসছেন, সেটা তো আমার কাছ থেকে জানবেন। আমার যদি কোনো কাজে সমস্যা হয় সেটার জন্য আমি সাফারার হব। সে ক্ষেত্রে আমি অবজেকশন দেব। আমি সাংবাদিকদের ডাকব। তারপরে যে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার সেটা আমি নেব।”
ভিডিওটি ফেইসবুকে ছড়ানোর পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে তাহলে? মিলিয়া নাকি তার স্বামী আমিনুল? তাহলে কি আমরা সাধারণ জনগণ ধরে নেব যে ওখানে দুর্নীতি হচ্ছে?” তাছাড়া ভিডিওটি শেয়ার করে নানাজন নানা রকম কটূক্তি করেছেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমরান শেখ বলেন, “চেয়ারম্যানের স্বামীর এ রকম ব্যবহার খুবই দুঃখজনক। পরিষদে ঢুকতে চেয়ারম্যানের স্বামীর অনুমতি লাগবে এটা কোন্ ধরনের কথা?”
চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল কোনো পেশাগত কাজের সঙ্গে জড়িত নেই। তিনি ঠিকাদারি করার চেষ্টায় আছেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। ভিডিও সম্পর্কে চেয়ারম্যান মিলিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পরিষদে ঢুকতে সাংবাদিকদের আমার স্বামীর অনুমতি নিতে হবে তিনি এটা বলেননি। বলেছেন, চেয়ারম্যানের অনুমতি না নিয়ে এখানে আসা উচিত ছিল না।”
মিলিয়া বলেন, “হিসাব সহকারীকে আমার স্বামী তার স্টাফ বলেও দাবি করেননি।” ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে কিভাবে কাজ করতে হবে তা জানিয়ে দিয়েছেন মিলিয়া। তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা বর্নি ইউনিয়ন পরিষদে আসলে তার ভিজিটিং কার্ড অথবা প্রেস কার্ড দেখিয়ে তারপর কাজ করলে কোনো অসুবিধা নেই।” বিষয়টি সরকারের স্থানীয় কর্মকর্তারা অবগত হয়েছেন।
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, “ফেইসবুকের মাধ্যমে ভিডিওটি আমিও দেখেছি। সাংবাদিকদের চেয়ারম্যানের স্বামীর অনুমতি নিতে হবে এটা দুঃখজনক। চেয়ারম্যানকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। জন্মসনদ ও জন্মনিবন্ধন ফি বেশি নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল বিশ্বাস অতিরিক্ত ফি নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কিছু সদস্যের জন্মনিবন্ধন আমরা সরকারি ফি ছাড়াই করে দেই। সেই টাকা অ্যাডজাস্ট করতে অন্যদের কাছ থেকে একটু বাড়তি রেট নিতে হয়। পাঁচ হাজার দশ হাজার টাকা দাবি করার বিষয়টি সত্য নয়।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এই রক্তস্রোত যেন বৃথা না যায়, ঐক্য বজায় রাখতে হবে: খালেদা জিয়া

ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশে লাগবে চেয়ারম্যানের স্বামীর অনুমতি

আপডেট সময় : ০১:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে চেয়ারম্যানের স্বামীর অনুমতি লাগবে বলে এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে; যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের লোকজনসহ অনেকে। তবে চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল এই বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।
সম্প্রতি জেলার টুঙ্গী উপজেলার বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, শিমুল জন্মসনদ দিতে পাঁচশ থেকে দুই হাজার করে টাকা আদায় করছেন এবং জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধনে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করছেন।
সাংবাদিকরা সেই সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ার পর গত মঙ্গলবার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়। প্রায় আড়াই মিনিটের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম মোল্লা বলছেন, “তুমি (সাংবাদিক) এখানে ঢুকছ কেন? তুমি আগে আমার কাছে আসবা। আমার অনুমতি সাপেক্ষে এ জায়গায় কাজ করতে হবে।”
আমিনুল বলেন, “আমরা তো সময় দেব। সাংবাদিক তো আমাদেরও দরকার। আপনারা আমার ওখানে যাবেন, আপনাদের দিয়ে কাজ করাব! তারপর আমার পরিষদের যদি কোনো সুবিধা-অসুবিধা থাকে সেটা আমি উত্থাপন করব, যাতে আমার জন্য সুবিধা হয়। আপনারা আমার ভাই-ব্রাদার সাংবাদিক। আপনাদের আমার কাজে লাগবে। আপনারা আমার ওখানে আসেন।”
ভিডিওতে আরও দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকরা হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রসঙ্গ তুললে চেয়ারম্যানের স্বামী বলেন, “ও তো আমার স্টাফ! অভিযোগটা তো আমার কাছে দেবে। আপনারা জানতে আসছেন, সেটা তো আমার কাছ থেকে জানবেন। আমার যদি কোনো কাজে সমস্যা হয় সেটার জন্য আমি সাফারার হব। সে ক্ষেত্রে আমি অবজেকশন দেব। আমি সাংবাদিকদের ডাকব। তারপরে যে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার সেটা আমি নেব।”
ভিডিওটি ফেইসবুকে ছড়ানোর পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে তাহলে? মিলিয়া নাকি তার স্বামী আমিনুল? তাহলে কি আমরা সাধারণ জনগণ ধরে নেব যে ওখানে দুর্নীতি হচ্ছে?” তাছাড়া ভিডিওটি শেয়ার করে নানাজন নানা রকম কটূক্তি করেছেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমরান শেখ বলেন, “চেয়ারম্যানের স্বামীর এ রকম ব্যবহার খুবই দুঃখজনক। পরিষদে ঢুকতে চেয়ারম্যানের স্বামীর অনুমতি লাগবে এটা কোন্ ধরনের কথা?”
চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল কোনো পেশাগত কাজের সঙ্গে জড়িত নেই। তিনি ঠিকাদারি করার চেষ্টায় আছেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন। ভিডিও সম্পর্কে চেয়ারম্যান মিলিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পরিষদে ঢুকতে সাংবাদিকদের আমার স্বামীর অনুমতি নিতে হবে তিনি এটা বলেননি। বলেছেন, চেয়ারম্যানের অনুমতি না নিয়ে এখানে আসা উচিত ছিল না।”
মিলিয়া বলেন, “হিসাব সহকারীকে আমার স্বামী তার স্টাফ বলেও দাবি করেননি।” ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে কিভাবে কাজ করতে হবে তা জানিয়ে দিয়েছেন মিলিয়া। তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা বর্নি ইউনিয়ন পরিষদে আসলে তার ভিজিটিং কার্ড অথবা প্রেস কার্ড দেখিয়ে তারপর কাজ করলে কোনো অসুবিধা নেই।” বিষয়টি সরকারের স্থানীয় কর্মকর্তারা অবগত হয়েছেন।
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, “ফেইসবুকের মাধ্যমে ভিডিওটি আমিও দেখেছি। সাংবাদিকদের চেয়ারম্যানের স্বামীর অনুমতি নিতে হবে এটা দুঃখজনক। চেয়ারম্যানকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। জন্মসনদ ও জন্মনিবন্ধন ফি বেশি নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শিমুল বিশ্বাস অতিরিক্ত ফি নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কিছু সদস্যের জন্মনিবন্ধন আমরা সরকারি ফি ছাড়াই করে দেই। সেই টাকা অ্যাডজাস্ট করতে অন্যদের কাছ থেকে একটু বাড়তি রেট নিতে হয়। পাঁচ হাজার দশ হাজার টাকা দাবি করার বিষয়টি সত্য নয়।”