ঢাকা ০৪:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
গোলটেবিল বৈঠকে মাহ্ফুজ আনাম

ইউনিয়নে রাজনীতি থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতা কীভাবে সম্ভব?

  • আপডেট সময় : ০৩:১২:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

বুধবার প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংস্কার: সুপারিশ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায় হিসেবে সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে দায়ী করছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেছেন, যত দিন পর্যন্ত আমার সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো রাজনৈতিক ভিত্তির ওপরে নির্ভর করে বিভক্ত থাকবে, তত দিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতা হবে না।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংস্কার: সুপারিশ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মাহ্ফুজ আনাম।
বৈঠকটি আয়োজন করে প্রথম আলো। যার সঞ্চালনা করেন পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।

বৈঠকে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, আমি যতই স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা বলি, কিন্তু আমি একটা বিশিষ্ট দলের আনুগত্যে সাংবাদিক ইউনিয়ন করি; তো পাঠক কি আমাকে বিশ্বাস করবে? কেন বিশ্বাস করবে?

দর্শক, পাঠক, শ্রোতার কাছে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতার দিকটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তাঁর (পাঠক, দর্শক ও শ্রোতা) কনফিডেন্স অর্জন করা হচ্ছে আমার মূল কাজ। এবং আমার ভবিষ্যৎও কিন্তু পাঠকের ওপর নির্ভরশীল। ডেইলি স্টার কতজন পাঠক পড়ে, এটাই ডেইলি স্টারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। সরকার কী মনে করে, সেটাতে ডেইলি স্টারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে না।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে বলেন, স্বাধীন মিডিয়া কমিশন গঠনকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এটি গঠিত হলে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে। স্বাধীন সাংবাদিকতা এগিয়ে যাবে। তবে কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন এই সরকার কত দূর আগ্রহী হবে, আমার সন্দেহ আছে। আমরা কীভাবে এগোবো, এটাতে অনেক প্রতিকূলতা আছে। তাই আমি মনে করি যে সাংবাদিকেরা নিজেরা, অর্থাৎ সাংবাদিক সম্পাদক এবং সংবাদপত্রের মালিকেরা আমরা নিজেরা যেন আরো বেশি আমাদের স্বার্থের বিষয়ে সচেতন হই এবং আমরা নিজেরা আমাদের নিজের কতগুলো আদর্শিক জায়গাকে দৃঢ় করি।

গণমাধ্যমগুলোর কাজ কীভাবে চলবে, তা নিজেদেরই ঠিক করে নেওয়ার পক্ষে মত জানিয়ে তিনি কিছু বিষয়ের উল্লেখ করে বলেন, সাংবাদিকতার এথিক্স, সম্পাদকের এথিক্স, মালিকের এথিক্স; মালিকের কোথায় অধিকার কতটুক থাকবে, কতটুক থাকবে না; সম্পাদকের কী দায়িত্ব এবং সাংবাদিকদের কী দায়িত্ব।

গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদক সম্পর্ক নিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার কাজ হবে আমরা সাংবাদিকেরা, সম্পাদকেরা এবং মালিকেরা, আমরা নিজেদের স্বার্থে একটা জগৎ তৈরি করি, যেখানে বাইরের প্রভাব অতটা আসবে না।

জবাবদিহি যদি সরকারের কাছে থাকে, তাহলে সাংবাদিকতার বিকাশ কঠিন—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই দায়বদ্ধতা যত দিন থাকবে এবং আস্তে আস্তে ক্রমাগত না কমবে, সেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার সত্যিকার বিকাশ খুবই খুবই দুরূহ।

                                                          গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকৃবন্দ

গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য গীতি আরা নাসরীন, নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সদস্য এ কে আজাদ, সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) সভাপতি ও মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রাজা।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান মতিউর রহমান আকন্দ, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম রেজওয়ান উল আলম, এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সদস্য কামরুন্নেসা হাসান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সানা/আপ্র/২৯/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

গোলটেবিল বৈঠকে মাহ্ফুজ আনাম

ইউনিয়নে রাজনীতি থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতা কীভাবে সম্ভব?

আপডেট সময় : ০৩:১২:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায় হিসেবে সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে দায়ী করছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেছেন, যত দিন পর্যন্ত আমার সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো রাজনৈতিক ভিত্তির ওপরে নির্ভর করে বিভক্ত থাকবে, তত দিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতা হবে না।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংস্কার: সুপারিশ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন মাহ্ফুজ আনাম।
বৈঠকটি আয়োজন করে প্রথম আলো। যার সঞ্চালনা করেন পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।

বৈঠকে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, আমি যতই স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা বলি, কিন্তু আমি একটা বিশিষ্ট দলের আনুগত্যে সাংবাদিক ইউনিয়ন করি; তো পাঠক কি আমাকে বিশ্বাস করবে? কেন বিশ্বাস করবে?

দর্শক, পাঠক, শ্রোতার কাছে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতার দিকটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তাঁর (পাঠক, দর্শক ও শ্রোতা) কনফিডেন্স অর্জন করা হচ্ছে আমার মূল কাজ। এবং আমার ভবিষ্যৎও কিন্তু পাঠকের ওপর নির্ভরশীল। ডেইলি স্টার কতজন পাঠক পড়ে, এটাই ডেইলি স্টারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। সরকার কী মনে করে, সেটাতে ডেইলি স্টারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে না।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে বলেন, স্বাধীন মিডিয়া কমিশন গঠনকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এটি গঠিত হলে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে। স্বাধীন সাংবাদিকতা এগিয়ে যাবে। তবে কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন এই সরকার কত দূর আগ্রহী হবে, আমার সন্দেহ আছে। আমরা কীভাবে এগোবো, এটাতে অনেক প্রতিকূলতা আছে। তাই আমি মনে করি যে সাংবাদিকেরা নিজেরা, অর্থাৎ সাংবাদিক সম্পাদক এবং সংবাদপত্রের মালিকেরা আমরা নিজেরা যেন আরো বেশি আমাদের স্বার্থের বিষয়ে সচেতন হই এবং আমরা নিজেরা আমাদের নিজের কতগুলো আদর্শিক জায়গাকে দৃঢ় করি।

গণমাধ্যমগুলোর কাজ কীভাবে চলবে, তা নিজেদেরই ঠিক করে নেওয়ার পক্ষে মত জানিয়ে তিনি কিছু বিষয়ের উল্লেখ করে বলেন, সাংবাদিকতার এথিক্স, সম্পাদকের এথিক্স, মালিকের এথিক্স; মালিকের কোথায় অধিকার কতটুক থাকবে, কতটুক থাকবে না; সম্পাদকের কী দায়িত্ব এবং সাংবাদিকদের কী দায়িত্ব।

গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদক সম্পর্ক নিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার কাজ হবে আমরা সাংবাদিকেরা, সম্পাদকেরা এবং মালিকেরা, আমরা নিজেদের স্বার্থে একটা জগৎ তৈরি করি, যেখানে বাইরের প্রভাব অতটা আসবে না।

জবাবদিহি যদি সরকারের কাছে থাকে, তাহলে সাংবাদিকতার বিকাশ কঠিন—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই দায়বদ্ধতা যত দিন থাকবে এবং আস্তে আস্তে ক্রমাগত না কমবে, সেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার সত্যিকার বিকাশ খুবই খুবই দুরূহ।

                                                          গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকৃবন্দ

গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য গীতি আরা নাসরীন, নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সদস্য এ কে আজাদ, সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) সভাপতি ও মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রাজা।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান মতিউর রহমান আকন্দ, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম রেজওয়ান উল আলম, এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সদস্য কামরুন্নেসা হাসান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সানা/আপ্র/২৯/১০/২০২৫