ঢাকা ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ইউটিউবের খ্যাতিই ফাঁসিয়ে দিল ফেরারি আসামি হেলালকে

  • আপডেট সময় : ০২:০১:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২২
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : ‘ভাঙা তরি ছেড়া পাল’ শিরোনামে একটি গানের ভিডিওতে ‘মডেল’ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছিলেন বাউলবেশী হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির, সেই খ্যাতিই তার কাল হয়েছে। ইউটিউবে সেই ভিডিও দেখে চিনতে পেরে এক ব্যক্তি খবর দেন র‌্যাবে। সেই খবরের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি হেলালকে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৪৫ বছর বয়সী হেলাল তিনটি হত্যা মামলা এবং একটি চুরির মামলার আসামি। আগেও চুরির একটি মামলায় তিনি সাজা খেটেছিলেন। “২০০১ সালের একটি হত্যা মামলায় ২০১৫ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরিচয় গোপন করে বড় চুল আর দাড়ি রেখে ‘বাউল সেলিম’ নাম নেন। কমান্ডার আল মঈন বলেন, বছর পাঁচেক আগে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে ‘গামছা পলাশের’ একটি গানের শুটিংয়ের সময় রেললাইন এর পাশে এক লোক বাউল গান গাচ্ছিলেন। তখন শুটিংয়ের এক লোক তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। এরপর সেই ‘বাউলকে’ দেখা যায় ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল’ গানের ‘মডেল’ হিসেবে। গানটির সঙ্গে সঙ্গে বাউলবেশী ‘সেলিম ফকিরও’ পরিচিত পান। র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, “ছয় মাস আগে এক ব্যক্তি ইউটিউবে গানটি দেখে র‌্যাবকে জানায়, ওই মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি। পরে সেই তথ্য যাচাই বাছাই করে হেলাল ওরফে সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।” ২০০১ সালে বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হেলাল ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলারও আসামি।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর এলাকায় মুদি দোকানদার ছিলেন হেলাল। পরে বিভিন্ন রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে মানুষের সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন বলেন, ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে হেলালের বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়। পরে ওই হাত অকেজো হয়ে যায়। ওই ঘটনার পর তিনি ‘দুধর্ষ হেলাল’ ও ‘হাত লুলা’ হেলাল হিসেবে পরিচিতি পান সেলিম। ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানার এক চুরির মামলায় ২০১৫ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং জেলখেটে ওই বছরই জামিনে বের হন। পরে বিদ্যুৎ হত্যা মামলার রায় হলে ফের আত্মগোপনে চলে যান। আল মঈন বলেন, “প্রথমে তিনি বগুড়া থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন। পরে ট্রেনে করে চট্টগ্রামে গিয়ে আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। এরপর সেখান থেকে সিলেটের শাহজালাল মাজারে গিয়ে আরও কিছুদিন কাটান।” সেলিম বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করেছেন বলে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক। তিনি বলেন, “কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেল স্টেশনে নাম ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করেন। প্রায় সাত বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবন যাপন করেছেন। চার বছর ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে এক নারীর সঙ্গে সংসারও করেছেন।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

ইউটিউবের খ্যাতিই ফাঁসিয়ে দিল ফেরারি আসামি হেলালকে

আপডেট সময় : ০২:০১:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২২

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : ‘ভাঙা তরি ছেড়া পাল’ শিরোনামে একটি গানের ভিডিওতে ‘মডেল’ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছিলেন বাউলবেশী হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির, সেই খ্যাতিই তার কাল হয়েছে। ইউটিউবে সেই ভিডিও দেখে চিনতে পেরে এক ব্যক্তি খবর দেন র‌্যাবে। সেই খবরের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি হেলালকে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৪৫ বছর বয়সী হেলাল তিনটি হত্যা মামলা এবং একটি চুরির মামলার আসামি। আগেও চুরির একটি মামলায় তিনি সাজা খেটেছিলেন। “২০০১ সালের একটি হত্যা মামলায় ২০১৫ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরিচয় গোপন করে বড় চুল আর দাড়ি রেখে ‘বাউল সেলিম’ নাম নেন। কমান্ডার আল মঈন বলেন, বছর পাঁচেক আগে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে ‘গামছা পলাশের’ একটি গানের শুটিংয়ের সময় রেললাইন এর পাশে এক লোক বাউল গান গাচ্ছিলেন। তখন শুটিংয়ের এক লোক তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। এরপর সেই ‘বাউলকে’ দেখা যায় ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল’ গানের ‘মডেল’ হিসেবে। গানটির সঙ্গে সঙ্গে বাউলবেশী ‘সেলিম ফকিরও’ পরিচিত পান। র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, “ছয় মাস আগে এক ব্যক্তি ইউটিউবে গানটি দেখে র‌্যাবকে জানায়, ওই মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি। পরে সেই তথ্য যাচাই বাছাই করে হেলাল ওরফে সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।” ২০০১ সালে বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হেলাল ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলারও আসামি।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর এলাকায় মুদি দোকানদার ছিলেন হেলাল। পরে বিভিন্ন রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে মানুষের সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন বলেন, ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে হেলালের বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়। পরে ওই হাত অকেজো হয়ে যায়। ওই ঘটনার পর তিনি ‘দুধর্ষ হেলাল’ ও ‘হাত লুলা’ হেলাল হিসেবে পরিচিতি পান সেলিম। ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানার এক চুরির মামলায় ২০১৫ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং জেলখেটে ওই বছরই জামিনে বের হন। পরে বিদ্যুৎ হত্যা মামলার রায় হলে ফের আত্মগোপনে চলে যান। আল মঈন বলেন, “প্রথমে তিনি বগুড়া থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন। পরে ট্রেনে করে চট্টগ্রামে গিয়ে আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। এরপর সেখান থেকে সিলেটের শাহজালাল মাজারে গিয়ে আরও কিছুদিন কাটান।” সেলিম বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করেছেন বলে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক। তিনি বলেন, “কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেল স্টেশনে নাম ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করেন। প্রায় সাত বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবন যাপন করেছেন। চার বছর ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে এক নারীর সঙ্গে সংসারও করেছেন।”