ঢাকা ০৬:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

ইউক্রেন সংকট : কোথায় গিয়ে থামবেন পুতিন

  • আপডেট সময় : ০২:৪৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১০১ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েক সপ্তাহ ধরেই পশ্চিমা দেশগুলো সতর্ক করে আসছে, ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রাশিয়া। তবে মস্কো শুরু থেকেই তা অস্বীকার করে আসছে। এ উত্তেজনার মধ্যেই গত সোমবার ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে তিনি রুশ সেনা পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পুতিন কোথায় গিয়ে থামবেন, এ প্রশ্নই এখন জোরালো হয়ে উঠেছে।
গত সোমবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেন ও দেশটির নেতাদের অবৈধ বলে উল্লেখ করেন পুতিন। ইউক্রেনকে পরাধীন করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সামনের দিনগুলোতে পুতিন আসলে কী করতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে রয়টার্সের বিশ্লেষণে তিনটি আভাস দেওয়া হয়েছে—
১. রুশপন্থী বিদ্রোহীদের এলাকাগুলোতে কর্তৃত্ব নিশ্চিত করে থেমে যেতে পারেন : বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, বিদ্রোহীদের এলাকাগুলোতে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত বড় ধরনের অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এখানেই থেমে যেতে পারেন পুতিন। অন্তত স্থল অভিযান স্থগিত রাখা হবে এবং অন্য কোনো উপায়ে ইউক্রেনের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করা হবে।
‘লিটল গ্রিন মেন: পুতিন’স ওয়ারস সিন্স টু থাউজেন্ড ফোরটিন’ বইয়ের লেখক টিম রিপ্লে বলেন, ‘সম্ভাব্য অভিযানের দৃশ্যপট তৈরির মধ্য দিয়ে তিনি (পুতিন) কঠিন সময় থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি কিছু করতে পেরেছেন। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের বিজয় দাবি করতে পারবেন তিনি।’ রিপ্লে মনে করেন, রাশিয়া খুব দ্রুত ইউক্রেনের আরও ভূখ- দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে না। বরং অন্য উপায়ে ইউক্রেনের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করবে তারা। যেমন কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরে নৌ অবরোধ আরোপ করতে পারে মস্কো। রাশিয়ার লক্ষ্য হবে ধারাবাহিক সংকট তৈরি করে ইউক্রেনীয়দের আতঙ্কের মধ্যে রাখা। কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করবেন পুতিন। বোঝাতে চাইবেন, তারা শুধু মিথ্যা হুংকার দিতে জানে, বাস্তবে কোনো কাজে আসে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে কিছু বড় লক্ষ্য অর্জন করেছে। ন্যাটো ও এর মিত্রদের প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে যে তারা ইউক্রেনের সুরক্ষায় সেনা পাঠাবে না। প্রতিবেশী বেলারুশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেনা মোতায়েন রাখার ব্যাপারেও দেশটির কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছে মস্কো। রিপ্লে বলেন, বেলারুশের এ সম্মতিকে আঞ্চলিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে ন্যাটোকে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের দাবি করা দুই প্রদেশের অর্ধেকেরও কম অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। অন্য অংশগুলোতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও সেনা মোতায়েন রেখেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না তারা। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে পুরোদমে হামলা না চালিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এলাকাগুলো বিস্তৃত করার চেষ্টা করতে পারে রাশিয়া। ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এলাকাগুলোর স্বীকৃতি প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান কেমন হবে, তা নিয়ে মিশ্র আভাস দিয়েছে মস্কো।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান বন্দর মারিউপোলকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে রাশিয়া। ২০১৪-২০১৫ সালে এখানে হামলা চালানো বন্ধ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এ বন্দর দখল করা গেলে রুশ নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ার সঙ্গে অন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকাগুলোকে স্থলপথে সংযুক্ত করার সুযোগ পাবে মস্কো। আজভ সাগরের উপকূলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে তারা। এর মধ্য দিয়ে নিজেদের কৌশলগত অর্জন যেমন সম্ভব হবে, তেমনি কিয়েভের ওপর অর্থনৈতিক চাপও তৈরি করা যাবে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার দখল নিতে যুদ্ধ শুরু করার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার কৌশলগত অর্জন খুব সীমিত হবে। তবে এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার ওপর কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। ইউক্রেনে নিজেদের প্রতি অনুগত একটি সরকারকে বসানোর লক্ষ্য পূরণেও ব্যর্থ হতে পারে মস্কো। রিপ্লে বলেন, দোনেৎস্কের বাইরের ছয়টি গ্রাম দখল করলে এমন কিছু যায়-আসে না।
৩. বড় আকারের অভিযান : পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কয়েক সপ্তাহ ধরে সতর্ক করে আসছে যে পুরো ইউক্রেন দখলে নিতে বড় ধরনের অভিযান চালাতে পারে রাশিয়া, অন্তত ইউক্রেন সরকারকে উৎখাতের জন্য কিয়েভ পর্যন্ত অগ্রসর হবে তারা। কিছুসংখ্যক বিশ্লেষক মনে করছেন, রাশিয়ার কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেবে, এমন সরকার ইউক্রেনের ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারছেন না পুতিন। সোমবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তেমনই আভাস দিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক শন ওয়াকার বলেন, সম্ভবত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের প্রতি আগ্রহ দেখানো এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিতে চাওয়ার চেয়েও বেশি কিছু ঘুরছে পুতিনের মাথায়। ‘দ্য লং হ্যাংওভার, পুতিন’স নিউ রাশিয়া অ্যান্ড দ্য গোস্ট অব দ্য পাস্ট’ নামের বইও লিখেছেন শন ওয়াকার। তিনি আরও বলেন, পুতিনের শেষ কথাগুলো হলো, কিয়েভ যদি সহিংসতা বন্ধ না করে, তবে আসন্ন রক্তপাতের দায় তাদের নিতে হবে। এটি চরম অশুভ বার্তা। সহজ কথায়, এটিকে যুদ্ধের ঘোষণা বলেই মনে হয়েছে।
উপগ্রহ চিত্রে বেলারুশে রাশিয়ার সমর প্রস্তুতি : উপগ্রহ চিত্রে রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে নতুন করে শতাধিক সামরিক যান ও ডজন ডজন অস্থায়ী সেনা শিবির দেখা গেছে। খবর রয়টার্সের।
পুতিন পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার দিনই গত মঙ্গলবার বেসরকারি মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি মাক্সার টেকনোলজিস এসব ছবি প্রকাশ করল। কয়েক মাস ধরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক অবস্থানের ছবি প্রকাশ করা মাক্সারের উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি এককভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। মাক্সারের বিবৃতি অনুযায়ী, এসব ছবিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছেই পশ্চিম রাশিয়ার সামরিক অবস্থানে নতুন একটি ফিল্ড হাসপাতালও গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে আরও দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে ট্যাংক, কামান ও অন্যান্য ভারী সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত বড় বড় সামরিক যান নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে নতুন করে রাশিয়ার আরও অসংখ্য সেনা পাঠানোর বিষয়টিও দেখা যায়।
জরুরি অবস্থা জারি করছে ইউক্রেন : ইউক্রেনজুড়ে জারি হচ্ছে জরুরি অবস্থা। তবে দেশটির রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দুই এলাকা ডোনেস্ক ও লুহানস্ক এর আওতার বাইরে থাকবে। বুধবার ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেক্সি দানিলভ এ তথ্য জানিয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা ৩০ দিন স্থায়ী হবে। প্রয়োজনে এটি আরও ৩০ দিন বাড়ানো যেতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ডোনেস্ক ও লুহানস্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেখানে স্বতন্ত্র শাসন ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে সেখানে রুশ বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের জন্য যে কৌশলগত হুমকির কথা বলেছেন, সেদিকে ইঙ্গিত করে ওলেক্সি দানিলভ জানান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করেননি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইউক্রেন সংকট : কোথায় গিয়ে থামবেন পুতিন

আপডেট সময় : ০২:৪৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েক সপ্তাহ ধরেই পশ্চিমা দেশগুলো সতর্ক করে আসছে, ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রাশিয়া। তবে মস্কো শুরু থেকেই তা অস্বীকার করে আসছে। এ উত্তেজনার মধ্যেই গত সোমবার ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে তিনি রুশ সেনা পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পুতিন কোথায় গিয়ে থামবেন, এ প্রশ্নই এখন জোরালো হয়ে উঠেছে।
গত সোমবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেন ও দেশটির নেতাদের অবৈধ বলে উল্লেখ করেন পুতিন। ইউক্রেনকে পরাধীন করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সামনের দিনগুলোতে পুতিন আসলে কী করতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে রয়টার্সের বিশ্লেষণে তিনটি আভাস দেওয়া হয়েছে—
১. রুশপন্থী বিদ্রোহীদের এলাকাগুলোতে কর্তৃত্ব নিশ্চিত করে থেমে যেতে পারেন : বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, বিদ্রোহীদের এলাকাগুলোতে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত বড় ধরনের অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এখানেই থেমে যেতে পারেন পুতিন। অন্তত স্থল অভিযান স্থগিত রাখা হবে এবং অন্য কোনো উপায়ে ইউক্রেনের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করা হবে।
‘লিটল গ্রিন মেন: পুতিন’স ওয়ারস সিন্স টু থাউজেন্ড ফোরটিন’ বইয়ের লেখক টিম রিপ্লে বলেন, ‘সম্ভাব্য অভিযানের দৃশ্যপট তৈরির মধ্য দিয়ে তিনি (পুতিন) কঠিন সময় থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি কিছু করতে পেরেছেন। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের বিজয় দাবি করতে পারবেন তিনি।’ রিপ্লে মনে করেন, রাশিয়া খুব দ্রুত ইউক্রেনের আরও ভূখ- দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে না। বরং অন্য উপায়ে ইউক্রেনের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করবে তারা। যেমন কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরে নৌ অবরোধ আরোপ করতে পারে মস্কো। রাশিয়ার লক্ষ্য হবে ধারাবাহিক সংকট তৈরি করে ইউক্রেনীয়দের আতঙ্কের মধ্যে রাখা। কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করবেন পুতিন। বোঝাতে চাইবেন, তারা শুধু মিথ্যা হুংকার দিতে জানে, বাস্তবে কোনো কাজে আসে না। রাশিয়া ইতিমধ্যে কিছু বড় লক্ষ্য অর্জন করেছে। ন্যাটো ও এর মিত্রদের প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে যে তারা ইউক্রেনের সুরক্ষায় সেনা পাঠাবে না। প্রতিবেশী বেলারুশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেনা মোতায়েন রাখার ব্যাপারেও দেশটির কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছে মস্কো। রিপ্লে বলেন, বেলারুশের এ সম্মতিকে আঞ্চলিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে ন্যাটোকে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাদের দাবি করা দুই প্রদেশের অর্ধেকেরও কম অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। অন্য অংশগুলোতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও সেনা মোতায়েন রেখেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না তারা। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে পুরোদমে হামলা না চালিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এলাকাগুলো বিস্তৃত করার চেষ্টা করতে পারে রাশিয়া। ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এলাকাগুলোর স্বীকৃতি প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান কেমন হবে, তা নিয়ে মিশ্র আভাস দিয়েছে মস্কো।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান বন্দর মারিউপোলকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে রাশিয়া। ২০১৪-২০১৫ সালে এখানে হামলা চালানো বন্ধ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এ বন্দর দখল করা গেলে রুশ নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ার সঙ্গে অন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকাগুলোকে স্থলপথে সংযুক্ত করার সুযোগ পাবে মস্কো। আজভ সাগরের উপকূলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে তারা। এর মধ্য দিয়ে নিজেদের কৌশলগত অর্জন যেমন সম্ভব হবে, তেমনি কিয়েভের ওপর অর্থনৈতিক চাপও তৈরি করা যাবে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার দখল নিতে যুদ্ধ শুরু করার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার কৌশলগত অর্জন খুব সীমিত হবে। তবে এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার ওপর কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। ইউক্রেনে নিজেদের প্রতি অনুগত একটি সরকারকে বসানোর লক্ষ্য পূরণেও ব্যর্থ হতে পারে মস্কো। রিপ্লে বলেন, দোনেৎস্কের বাইরের ছয়টি গ্রাম দখল করলে এমন কিছু যায়-আসে না।
৩. বড় আকারের অভিযান : পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কয়েক সপ্তাহ ধরে সতর্ক করে আসছে যে পুরো ইউক্রেন দখলে নিতে বড় ধরনের অভিযান চালাতে পারে রাশিয়া, অন্তত ইউক্রেন সরকারকে উৎখাতের জন্য কিয়েভ পর্যন্ত অগ্রসর হবে তারা। কিছুসংখ্যক বিশ্লেষক মনে করছেন, রাশিয়ার কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেবে, এমন সরকার ইউক্রেনের ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারছেন না পুতিন। সোমবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তেমনই আভাস দিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক শন ওয়াকার বলেন, সম্ভবত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের প্রতি আগ্রহ দেখানো এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিতে চাওয়ার চেয়েও বেশি কিছু ঘুরছে পুতিনের মাথায়। ‘দ্য লং হ্যাংওভার, পুতিন’স নিউ রাশিয়া অ্যান্ড দ্য গোস্ট অব দ্য পাস্ট’ নামের বইও লিখেছেন শন ওয়াকার। তিনি আরও বলেন, পুতিনের শেষ কথাগুলো হলো, কিয়েভ যদি সহিংসতা বন্ধ না করে, তবে আসন্ন রক্তপাতের দায় তাদের নিতে হবে। এটি চরম অশুভ বার্তা। সহজ কথায়, এটিকে যুদ্ধের ঘোষণা বলেই মনে হয়েছে।
উপগ্রহ চিত্রে বেলারুশে রাশিয়ার সমর প্রস্তুতি : উপগ্রহ চিত্রে রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে নতুন করে শতাধিক সামরিক যান ও ডজন ডজন অস্থায়ী সেনা শিবির দেখা গেছে। খবর রয়টার্সের।
পুতিন পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার দিনই গত মঙ্গলবার বেসরকারি মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি মাক্সার টেকনোলজিস এসব ছবি প্রকাশ করল। কয়েক মাস ধরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক অবস্থানের ছবি প্রকাশ করা মাক্সারের উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি এককভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। মাক্সারের বিবৃতি অনুযায়ী, এসব ছবিতে ইউক্রেন সীমান্তের কাছেই পশ্চিম রাশিয়ার সামরিক অবস্থানে নতুন একটি ফিল্ড হাসপাতালও গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে আরও দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে ট্যাংক, কামান ও অন্যান্য ভারী সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত বড় বড় সামরিক যান নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে নতুন করে রাশিয়ার আরও অসংখ্য সেনা পাঠানোর বিষয়টিও দেখা যায়।
জরুরি অবস্থা জারি করছে ইউক্রেন : ইউক্রেনজুড়ে জারি হচ্ছে জরুরি অবস্থা। তবে দেশটির রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দুই এলাকা ডোনেস্ক ও লুহানস্ক এর আওতার বাইরে থাকবে। বুধবার ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেক্সি দানিলভ এ তথ্য জানিয়েছেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা ৩০ দিন স্থায়ী হবে। প্রয়োজনে এটি আরও ৩০ দিন বাড়ানো যেতে পারে। ২০১৪ সাল থেকে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ডোনেস্ক ও লুহানস্কের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেখানে স্বতন্ত্র শাসন ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে সেখানে রুশ বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের জন্য যে কৌশলগত হুমকির কথা বলেছেন, সেদিকে ইঙ্গিত করে ওলেক্সি দানিলভ জানান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করেননি।