ঢাকা ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

ইউক্রেনে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য পুতিনের তিন দাবি

  • আপডেট সময় : ০১:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য মোটাদাগে তিনটি দাবি জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন- পুরো ডনবাস অঞ্চল, পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোতে কিয়েভের যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ এবং নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ইউক্রেনীয় সীমানায় পশ্চিমা মিত্রদের সেনাদের স্থান না দেওয়া। ক্রেমলিনের শীর্ষস্থানীয় তিন কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

আলাস্কায় গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। চার বছরেরও বেশি সময় পর এটি ছিল দুদেশের প্রথম শীর্ষ বৈঠক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের বড় অংশ জুড়েই ইউক্রেন ইস্যুতে সম্ভাব্য সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, এ বৈঠক ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দিতে পারে। তবে কেউই আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।

রুশ কর্মকর্তাদের বয়ানের ভিত্তিতে পুতিনের দাবিদাওয়ার একটা আভাস পাওয়ার চেষ্টা করছে রয়টার্স। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন পুতিন। ২০২৪ সালের জুনে তিনি ইউক্রেনের কাছ থেকে ডোনেস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়ার সম্পূর্ণ দখল চেয়েছিলেন। তখন এসব শর্তকে আত্মসমর্পণের সমতুল্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল কিয়েভ।

নতুন প্রস্তাবে ডনবাসের কিয়েভ নিয়ন্ত্রিত অংশ থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের দাবি ধরে রেখেছেন পুতিন। এটি মেনে নেওয়ার বিনিময়ে খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়ার বর্তমান ফ্রন্টলাইনে অবস্থান স্থগিত করবে বলে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ডনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং খেরসন-জাপোরিঝিয়ার প্রায় ৭৩ শতাংশ এলাকা ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রণ করছে।

এছাড়া রাশিয়া সম্ভাব্য সমঝোতার অংশ হিসেবে খারকিভ, সুমি ও দিনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলে দখলকৃত কিছু এলাকা ফেরত দিতে ইচ্ছুক বলেও জানা গেছে। তবে পুতিনের শর্তের মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনের ন্যাটো আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ, ন্যাটোর পূর্বদিকে সম্প্রসারণ না করার জন্য আইনগত নিশ্চয়তা, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর আকার সীমিত রাখা এবং পশ্চিমা সেনাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে ইউক্রেনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।

তবে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে হাজারো মানুষ হতাহত হওয়ার পরও দুই পক্ষের অবস্থানে এখনও রয়েছে বিস্তর ফারাক।

রুশ প্রস্তাবের বিষয়ে ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। হোয়াইট হাউজ ও ন্যাটোর তরফ থেকেও রুশ প্রস্তাব নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একাধিকবার বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূমি ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তার ভাষায়, ডনবাস অঞ্চল তাদের দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিরক্ষা দুর্গের ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরও জানান, ন্যাটোতে যোগদান ইউক্রেনের সাংবিধানিক লক্ষ্য এবং এটিকে নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা হিসেবে দেখা হয়।

মার্কিন চিন্তক সংস্থা (থিংক ট্যাংক) র‌্যান্ডের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল সেরাফ বলেন, ডনবাস থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি কিয়েভের জন্য রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রাম্পকে সামনে রেখে রাশিয়া লোক-দেখানো শান্তি প্রস্তাব দিয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এসি/

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউক্রেনে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য পুতিনের তিন দাবি

আপডেট সময় : ০১:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য মোটাদাগে তিনটি দাবি জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন- পুরো ডনবাস অঞ্চল, পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোতে কিয়েভের যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ এবং নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ইউক্রেনীয় সীমানায় পশ্চিমা মিত্রদের সেনাদের স্থান না দেওয়া। ক্রেমলিনের শীর্ষস্থানীয় তিন কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

আলাস্কায় গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। চার বছরেরও বেশি সময় পর এটি ছিল দুদেশের প্রথম শীর্ষ বৈঠক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের বড় অংশ জুড়েই ইউক্রেন ইস্যুতে সম্ভাব্য সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, এ বৈঠক ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দিতে পারে। তবে কেউই আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।

রুশ কর্মকর্তাদের বয়ানের ভিত্তিতে পুতিনের দাবিদাওয়ার একটা আভাস পাওয়ার চেষ্টা করছে রয়টার্স। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন পুতিন। ২০২৪ সালের জুনে তিনি ইউক্রেনের কাছ থেকে ডোনেস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়ার সম্পূর্ণ দখল চেয়েছিলেন। তখন এসব শর্তকে আত্মসমর্পণের সমতুল্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল কিয়েভ।

নতুন প্রস্তাবে ডনবাসের কিয়েভ নিয়ন্ত্রিত অংশ থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের দাবি ধরে রেখেছেন পুতিন। এটি মেনে নেওয়ার বিনিময়ে খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়ার বর্তমান ফ্রন্টলাইনে অবস্থান স্থগিত করবে বলে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ডনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং খেরসন-জাপোরিঝিয়ার প্রায় ৭৩ শতাংশ এলাকা ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রণ করছে।

এছাড়া রাশিয়া সম্ভাব্য সমঝোতার অংশ হিসেবে খারকিভ, সুমি ও দিনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলে দখলকৃত কিছু এলাকা ফেরত দিতে ইচ্ছুক বলেও জানা গেছে। তবে পুতিনের শর্তের মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনের ন্যাটো আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ, ন্যাটোর পূর্বদিকে সম্প্রসারণ না করার জন্য আইনগত নিশ্চয়তা, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর আকার সীমিত রাখা এবং পশ্চিমা সেনাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে ইউক্রেনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।

তবে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে হাজারো মানুষ হতাহত হওয়ার পরও দুই পক্ষের অবস্থানে এখনও রয়েছে বিস্তর ফারাক।

রুশ প্রস্তাবের বিষয়ে ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। হোয়াইট হাউজ ও ন্যাটোর তরফ থেকেও রুশ প্রস্তাব নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একাধিকবার বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূমি ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তার ভাষায়, ডনবাস অঞ্চল তাদের দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিরক্ষা দুর্গের ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরও জানান, ন্যাটোতে যোগদান ইউক্রেনের সাংবিধানিক লক্ষ্য এবং এটিকে নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা হিসেবে দেখা হয়।

মার্কিন চিন্তক সংস্থা (থিংক ট্যাংক) র‌্যান্ডের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল সেরাফ বলেন, ডনবাস থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের দাবি কিয়েভের জন্য রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রাম্পকে সামনে রেখে রাশিয়া লোক-দেখানো শান্তি প্রস্তাব দিয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এসি/