বিদেশের খবর ডেস্ক : ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আজ মঙ্গলবার হবে এই ফোনালাপ। ট্রাম্প নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলব। আমাদের এই আলাপের মূল লক্ষ্য থাকবে ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি কার্যকর পথ বের করা।
হয়তো আমরা সফল হবো, হয়তো (সফল) হবো না, কিন্তু গত সপ্তাহে এ ইস্যুতে বেশ কিছু কাজ হয়েছে এবং আমি মনে করি, (ইউক্রেনে যুদ্ধ অবসানের জন্য) আমাদের সামনে খুবই ভালো সময় ও সুযোগ এসেছে।” ইউক্রেনে যুদ্ধাবসান ইস্যুতে সম্প্রতি রাশিয়ার সরকারির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিনিধিরা। গেল সপ্তাহে মস্কোতে হয়েছে সেই বৈঠক। সোমবারের ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন, বৈঠকের ফলাফল ‘সন্তোষজনক’।
ইউক্রেনে আপাতত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি চাইছেন ট্রাম্প। তার প্রস্তাব অনুসারে প্রাথমিক এই যুদ্ধবিরতি চলার সময়েই কূটনৈতিক তৎপরতা-সংলাপ চলবে মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে, যার মূল লক্ষ্য থাকবে স্থায়ীভাবে এ যুদ্ধের অবসান ঘটানো। এতে সংশ্লিষ্ট থাকবে ওয়াশিংটনও। ইউক্রেন গত সপ্তাহে এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। এখন পুতিনকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। তাদের ফোনালাপেও এ বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। গত বৃহস্পতিবার মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।
সেখান থেকে ফিরে রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আলোচনার ফলাফল ইতিবাচক। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে এ ইস্যুতে আলোচনার ধারণাও দিয়েছিলেন তিনি। “চলতি সপ্তাহেই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে ফোনালাপ হবে বলে আশা করছি, এদিকে আমরা ইউক্রেইনীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ, আলাপ-আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছি,” রোববার সিএনএনকে বলেন উইটকফ। শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, “এই ভয়াবহ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানের বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে।” একই পোস্টে ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রুশ প্রদেশ ক্রুস্কে আটকে পড়া হাজারও সেনার জীবন বাঁচাতে রুশ প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধও করেন ট্রাম্প।
তার ওই অনুরোধের প্রেক্ষিতে পুতিন বলেন, ট্রাম্পের সম্মানে তিনি ওই সেনাদের নিষ্কৃতি দিতে রাজি আছেন, যদি তারা আত্মসমর্পণ করে। যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে রুশ প্রেসিডেন্ট যেসব শর্ত দিয়েছেন, উইটকফের মাধ্যমে তা ট্রাম্পের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে ক্রেমলিন। সংঘাত বন্ধে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে ‘সতর্ক আশাবাদও’ ব্যক্ত করেছে তারা। সূত্র : রয়টার্স
ইউক্রেনকে কোনোভাবেই ন্যাটোর অংশ করা যাবে না
এদিকে ইউক্রেনকে কোনোভাবেই সামরিক জোট ন্যাটোর অংশ করা যাবে না, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়া এমনই শর্ত দিয়েছে বলে জানা গেছে। রাশিয়ার একটি গণমাধ্যমে দেশটির সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দুইটি বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এক, ইউক্রেনকে কোনোভাবেই ন্যাটোর অংশ করা যাবে না এবং দুই, যেকোনও শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো জানিয়েছেন, “আমরা আশা করব, এই শান্তিচুক্তিতে নিরাপত্তার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে।
এবং সে জন্যই ইউক্রেনকে এই আলোচনায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।” একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনে ন্যাটো কোনোরকম কাজ করতে পারবে না। এমনকি, ন্যাটোর সেনাও ইউক্রেনে থাকতে পারবে না। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ জানিয়েছেন,ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তারা একটি বিষয়ে সম্পূর্ণ দ্বিমত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় ইউক্রেনে ন্যাটোর শান্তি সেনা মোতায়েন করতে। কিন্তু রাশিয়া কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স দুদেশই জানিয়েছিল, তারা ইউক্রেনে শান্তিসেনা মোতায়েন করতে চায়। এটাই হবে শান্তিপ্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি। কিন্তু রাশিয়ার আপত্তি ঠিক এই জায়গাতেই। বস্তুত, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রপ্রধানের এই পরিকল্পনাকে ‘বোকা’ বলে সম্বোধন করেছেন তিনি। তার কথায়, ন্যাটোর শান্তিসেনা যদি ইউক্রেনে মোতায়েন করা হয়, তাহলে রাশিয়া ধরে নেবে এবার তাদের যুদ্ধ ন্যাটোর সঙ্গে। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিশেল ওয়াল্টজ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে দুটি ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে। রাশিয়া তাদের যে ভূখণ্ড দখল করেছে, তা ছেড়ে দিতে হতে পারে এবং ন্যাটোয় যোগ দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হতে পারে। এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াল্টজ জানিয়েছেন, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি ইউক্রেনকে সম্ভবত পুরোপুরি ভুলে যেতে হবে। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দিলে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্ভব নয়।
এদিকে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল অধিগ্রহণ করেছে। অর্থাৎ, দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল এখন তাদের দখলে। জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনেও রাশিয়ার সেনা আছে। এই অঞ্চলের বদলে শান্তিচুক্তিতে যেতে রাজি মস্কো। অর্থাৎ, ইউক্রেনকে ওই ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। ঠিক এভাবেই একসময় ক্রিমিয়াকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল ইউক্রেনকে। সৌদি আরবে আমেরিকার সঙ্গে ইউক্রেনের যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিতে রাজি হয়নি কিয়েভ।