আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ইউক্রেইন সীমান্তে রাশিয়া বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়েনের পর ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রথম প্রভাবশালী পশ্চিমা নেতা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, উত্তেজনা নিরসনের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে বলেই তার বিশ্বাস। গত মঙ্গলবার তিনি ইউক্রেইন সংকট সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে শান্ত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নেতারা ইউক্রেইন সংকট নিয়ে যতটা উৎকণ্ঠিত ম্যাক্রোঁকে ততটা বিচলিত মনে হচ্ছে না; রাশিয়া শিগগিরই তার প্রতিবেশী ইউক্রেইনে হানা দেবে- এ ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমনটা মনেও করছেন না। তবে সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা করতে ও যুদ্ধ এড়াতে মঙ্গলবার ম্যাক্রোঁ মস্কো থেকে কিয়েভে ছুটে যান। সেখানে নতুন কোনো ‘ব্রেকথ্রু’র ঘোষণা না দিলেও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার আলোচনা সংকটের আরও বিস্তৃতি ঠেকাতে সহায়ক হয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি।
পুতিন পিছু হটবেন, ‘এক সেকে-ের জন্যও’ এমনটা আশা করেননি বলেও জানান ম্যাক্রোঁ। পুতিন ও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কি, দুজনই তাকে ২০১৪ সালে স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; ওই চুক্তিতেই বিদ্যমান বিরোধ মীমাংসার পথ আছে, বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
“এই যৌথ সংকল্পই শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ, কার্যকর রাজনৈতিক সমাধান সৃষ্টির একমাত্র উপায়। কথা এবং কাজে শান্ত থাকাই সব পক্ষের জন্য জরুরি,” জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন ম্যাক্রোঁ।
রাশিয়া সীমান্তে এক লাখের বেশি সৈন্য, ট্যাঙ্ক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করার পরও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ও দেশটির জনগণ যে ‘সংযত’ ছিল সেজন্য তাদের প্রশংসাও করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ওই সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি জানান, ম্যাক্রোঁ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পেয়ে থাকলেও তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
“আমি কথায় বিশ্বাস করি না। প্রত্যেক রাজনীতিকই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেন,” বলেছেন তিনি।
মস্কো প্রথম থেকেই বলে আসছে, ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (নেটো) কাছে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। এসব দাবির মধ্যে আছে রাশিয়ার সীমান্তের কাছে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র না মোতায়েন করার প্রতিশ্রুতি, পূর্ব ইউরোপ থেকে নেটোর পিছু হটা এবং ইউক্রেইনকে কখনোই নেটোতে নেওয়া হবে না, তার আশ্বাস। মঙ্গলবার কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার তিনটি যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি ইউক্রেইনের কাছে মস্কোর সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করেছে; বুধবার আরও তিনটি যুদ্ধজাহাজ বসফোরাস প্রণালী অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের কর্মকর্তারা। পূর্বপরিকল্পিত মহড়ার অংশ হিসেবেই এসব জাহাজ সেখানে গেছে বলে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। ইউক্রেইন থেকে ম্যাঁক্রো পরে বার্লিনে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলাৎজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের বৈঠকের আগে ম্যাক্রোঁকে পাশে রেখে শলাৎজ সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইউরোপে যুদ্ধ ঠেকানো।”
ইউক্রেইনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তার ওপর আর কোনো হামলা হলে তার জন্য রাশিয়াকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিস্তৃত পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বার্লিনে পরে ম্যাক্রোঁ ও শলাৎজ পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই ডুডার সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে তিন নেতাই ইউক্রেইনের সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের যৌথ সমর্থন ব্যক্ত করেন বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।