ঢাকা ০১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

ইউক্রেইন থেকে দূরে থাকো : নেটোকে রাশিয়া

  • আপডেট সময় : ১২:২৩:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো ইউক্রেইন ও পূর্ব ইউরোপে কোনো সামরিক কর্মকা- চালাবে না, রাশিয়া এমন আইনি বাধ্যতামূলক নিশ্চয়তা চায় বলে জানিয়েছে মস্কো। ইউরোপের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে এবং ইউক্রেইন সংকট নিরসনে তারা এ নিশ্চয়তা চেয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেইন ও পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেইন সীমান্তে রাশিয়ার ব্যাপক সৈন্য উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। ইউক্রেইন আক্রমণ করতেই রাশিয়া এ সৈন্য সমাবেশ করেছে বলেও অনুমান তাদের। অন্যদিকে মস্কো বলছে, ইউক্রেইনে হানা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। রাশিয়ার চাওয়ার মধ্যে আছে ইউক্রেইনকে কখনোই নেটোর সদস্যপদ দেওয়া হবে না, তার নিশ্চয়তা। আছে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র সরিয়ে নেওয়া এবং পোল্যান্ড ও বাল্টিক তিন দেশ লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া থেকে নেটোর বহুজাতিক বাহিনী প্রত্যাহারের কথাও।
বাল্টিক এই তিন দেশ একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিল।
রাশিয়ার এসব দাবিদাওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। “তাদের চাওয়ার মধ্যে এমন কিছু জিনিসও আছে, যা মেনে নেওয়া হবে না বলে রাশিয়াও জানে,” বলেছেন তিনি। কয়েকদিনের ভেতর ওয়াশিংটনও আলোচনার বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে হাজির হবে, জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র এ প্রসঙ্গে মিত্রদের সঙ্গে কথা বলবে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি।
“যার উপর ভিত্তি করে ইউরোপিয়ান নিরাপত্তা দাঁড়িয়েছে, তার মূল নীতির সঙ্গে আপোস করতে পারি না আমরা। এছাড়াও সব দেশেরই বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজের ভবিষ্যৎ ও পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে,” বলেছেন তিনি। নেটো কূটনীতিকরা রয়টার্সকে বলেছেন, নেটো সম্প্রসারণে ভিটো দেওয়ার এখতিয়ার নেই রাশিয়ার। আর নেটোর নিজের সামরিক অবস্থান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
“রাশিয়া নেটোর সদস্য নয় এবং নেটো সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে না,” বলেছেন পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুকাস জাসিনা। ইউক্রেইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নেটো ও কিয়েভের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হবে এবং ইউক্রেইন ওই জোটভুক্ত হবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল নেটো আর ইউক্রেইনেরই।
মস্কোর দাবিগুলো উত্থাপন করে রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে সম্পর্ক পুনর্গঠনে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। এখনকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আরও তীব্র হোক রাশিয়া এমনটা চায় না জানিয়ে রিয়াবকভ ওয়াশিংটনকে মস্কোর দাবিদাওয়া প্রসঙ্গে গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া জানাতে অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাশিয়া পারলে শনিবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়; সম্ভাব্য ভেন্যু জেনিভাও হতে পারে। রয়টার্স জানিয়েছে, মোট দুটো খসড়া চুক্তি প্রস্তাবনার মাধ্যমে রাশিয়ার তার দাবিগুলো তুলে ধরেছে।
তার মধ্যে প্রথমটিতে অন্যান্য পয়েন্টের সঙ্গে আছে ১৯৯৭ সালের মে মাসে রাশিয়া এবং নেটোর সৈন্য ও অস্ত্র যেসব দেশে ছিল, সেসব দেশের বাইরে অন্য কোথাও অস্ত্র ও সেনা মোতায়েন করা যাবে না। এটা মানলে নেটোকে ইউক্রেইন, পূর্ব ইউরোপ, ককেশাস ও মধ্য এশিয়ায় তার সামরিক কর্মকা- থেকে পিছু হটতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির যে খসড়া প্রস্তাবনা রাশিয়া দিয়েছে তাতে মস্কো ও ওয়াশিংটন তাদের নিজ নিজ ভূখ-ের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়ার দাবির বেশিরভাগই যে নেটো ও যুক্তরাষ্ট্র মানতে পারবে না, তা মস্কোও জানে। কিন্তু এসব দাবিদাওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন নেটোর সঙ্গে দরকষাকষির রাস্তা তৈরি হবে, অন্যদিকে ইউক্রেইনকে সামরিকভাবে চাপেও রাখা যাবে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে এ সংক্রান্ত কোনো আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র একলা যাবে না। “ইউরোপিয়ান নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আলোচনা আমাদের ইউরোপিয়ান মিত্র ও অংশীদারদের ছাড়া হবে না,” বলেছেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইউক্রেইন থেকে দূরে থাকো : নেটোকে রাশিয়া

আপডেট সময় : ১২:২৩:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো ইউক্রেইন ও পূর্ব ইউরোপে কোনো সামরিক কর্মকা- চালাবে না, রাশিয়া এমন আইনি বাধ্যতামূলক নিশ্চয়তা চায় বলে জানিয়েছে মস্কো। ইউরোপের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে এবং ইউক্রেইন সংকট নিরসনে তারা এ নিশ্চয়তা চেয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেইন ও পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেইন সীমান্তে রাশিয়ার ব্যাপক সৈন্য উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। ইউক্রেইন আক্রমণ করতেই রাশিয়া এ সৈন্য সমাবেশ করেছে বলেও অনুমান তাদের। অন্যদিকে মস্কো বলছে, ইউক্রেইনে হানা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। রাশিয়ার চাওয়ার মধ্যে আছে ইউক্রেইনকে কখনোই নেটোর সদস্যপদ দেওয়া হবে না, তার নিশ্চয়তা। আছে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র সরিয়ে নেওয়া এবং পোল্যান্ড ও বাল্টিক তিন দেশ লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া থেকে নেটোর বহুজাতিক বাহিনী প্রত্যাহারের কথাও।
বাল্টিক এই তিন দেশ একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিল।
রাশিয়ার এসব দাবিদাওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। “তাদের চাওয়ার মধ্যে এমন কিছু জিনিসও আছে, যা মেনে নেওয়া হবে না বলে রাশিয়াও জানে,” বলেছেন তিনি। কয়েকদিনের ভেতর ওয়াশিংটনও আলোচনার বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে হাজির হবে, জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র এ প্রসঙ্গে মিত্রদের সঙ্গে কথা বলবে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি।
“যার উপর ভিত্তি করে ইউরোপিয়ান নিরাপত্তা দাঁড়িয়েছে, তার মূল নীতির সঙ্গে আপোস করতে পারি না আমরা। এছাড়াও সব দেশেরই বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজের ভবিষ্যৎ ও পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে,” বলেছেন তিনি। নেটো কূটনীতিকরা রয়টার্সকে বলেছেন, নেটো সম্প্রসারণে ভিটো দেওয়ার এখতিয়ার নেই রাশিয়ার। আর নেটোর নিজের সামরিক অবস্থান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
“রাশিয়া নেটোর সদস্য নয় এবং নেটো সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে না,” বলেছেন পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুকাস জাসিনা। ইউক্রেইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নেটো ও কিয়েভের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হবে এবং ইউক্রেইন ওই জোটভুক্ত হবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল নেটো আর ইউক্রেইনেরই।
মস্কোর দাবিগুলো উত্থাপন করে রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে সম্পর্ক পুনর্গঠনে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। এখনকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আরও তীব্র হোক রাশিয়া এমনটা চায় না জানিয়ে রিয়াবকভ ওয়াশিংটনকে মস্কোর দাবিদাওয়া প্রসঙ্গে গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া জানাতে অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাশিয়া পারলে শনিবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়; সম্ভাব্য ভেন্যু জেনিভাও হতে পারে। রয়টার্স জানিয়েছে, মোট দুটো খসড়া চুক্তি প্রস্তাবনার মাধ্যমে রাশিয়ার তার দাবিগুলো তুলে ধরেছে।
তার মধ্যে প্রথমটিতে অন্যান্য পয়েন্টের সঙ্গে আছে ১৯৯৭ সালের মে মাসে রাশিয়া এবং নেটোর সৈন্য ও অস্ত্র যেসব দেশে ছিল, সেসব দেশের বাইরে অন্য কোথাও অস্ত্র ও সেনা মোতায়েন করা যাবে না। এটা মানলে নেটোকে ইউক্রেইন, পূর্ব ইউরোপ, ককেশাস ও মধ্য এশিয়ায় তার সামরিক কর্মকা- থেকে পিছু হটতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির যে খসড়া প্রস্তাবনা রাশিয়া দিয়েছে তাতে মস্কো ও ওয়াশিংটন তাদের নিজ নিজ ভূখ-ের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়ার দাবির বেশিরভাগই যে নেটো ও যুক্তরাষ্ট্র মানতে পারবে না, তা মস্কোও জানে। কিন্তু এসব দাবিদাওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন নেটোর সঙ্গে দরকষাকষির রাস্তা তৈরি হবে, অন্যদিকে ইউক্রেইনকে সামরিকভাবে চাপেও রাখা যাবে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে এ সংক্রান্ত কোনো আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র একলা যাবে না। “ইউরোপিয়ান নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আলোচনা আমাদের ইউরোপিয়ান মিত্র ও অংশীদারদের ছাড়া হবে না,” বলেছেন তিনি।