ঢাকা ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

ইউক্রেইনের বুচায় যত্রতত্র পোড়া রুশ ট্যাংক আর লাশ

  • আপডেট সময় : ০১:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : কিইভ ঘিরে ফেলে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাতের যে স্বপ্ন রুশ বাহিনী দেখছিল, তার শবাগারে পরিণত হয়েছে ইউক্রেইনের ছোট্ট শহর বুচার একটি রাস্তা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কিইভের উপকণ্ঠে বুচা নামের ওই মফস্বল শহরে পৌঁছে গিয়েছিল রুশ বাহিনী। সেখানে রাশিয়ার ট্যাংক ও সামরিক বাহনের একটি কলাম ইউক্রেইনীয় বাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর এরকম আরও অনেক প্রতিরোধ যুদ্ধে রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা থমকে যায়। পাঁচ সপ্তাহ তুমুল লড়াইয়ের পর ওই এলাকা থেকে সরে গেছে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেইনের সৈন্যরা কিইভের আশপাশের পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি কিইভ থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়া। এখন ইউক্রেইনের পূর্ব অংশের যুদ্ধে মনোযোগ বাড়ানোর কথা বলছে মস্কো। ক্রেমলিন বলছে, মধ্য ইউক্রেইনে তাদের বাহিনীর যে লক্ষ্য ছিল, তা ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। কিইভ দখলের কোনো পরিকল্পনাই তাদের ছিল না। তবে বিবিসি লিখেছে, সত্যটা হল, ইউক্রেনীয় বাহিনীর অপ্রত্যাশিত প্রবল ও সুসংগঠিত প্রতিরোধই রুশ বাহিনীকে রাজধানীর বাইরে ঠেকিয়ে দিয়েছে। বুচার রাস্তায় পড়ে থাকা পোড়া এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়া সামরিক যানের দীর্ঘ সারিই তার প্রমাণ। রুশ সৈন্যদের শেষ দলটি গত শুক্রবার ওই শহর থেকে সরে যায়। এরপর বিবিসির সাংবাদিকদের একটি দল সেখানে যায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তারা।
সেখানে বলা হয়েছে, আগ্রাসন শুরুর দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুশ বাহিনী কেন গতি হারিয়েছিল, তার ধারণা পাওয়া যায় বুচার রাস্তার পরিস্থিতি দেখে।
বিমানে করে নিয়ে আসা যায় এমন হালকা সাঁজোয়া যানে চেপে রাশিয়ার ছত্রীসেনারা বুচায় ঢুকেছিল; তারা এসেছিল কয়েক মাইল দূরের হস্টোমেল বিমানবন্দর থেকে; বিশেষ অভিযানের শুরুর দিকেই হেলিকপ্টারে নামা রুশ ছত্রীসেনারা ওই বিমানবন্দরটিতে হামলা চালিয়ে তার দখল নিয়েছিল। অবশ্য তারপর থেকেই তাদেরকে ইউক্রেইনীয় বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধ মোকাবেলা করে যেতে হয়েছে। রুশ সেনাদের কলামটি বুচার দিকে অগ্রসর হওয়ার পরই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়ে। শহরটিতে ঢোকার রাস্তাটি ছিল সোজা, সরু, অতর্কিতে হামলা চালানোর উপযুক্ত।
ইউক্রেইনীয় বাহিনী ওই রুশ বহরের ওপর তুরস্ক থেকে আনা বায়রাকতার অ্যাটাক ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ওই এলাকায় সেসময় ইউক্রেইনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকরা ছিল। ইউক্রেইনীয়দের হামলায় রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, অনেককে আটকও করা হয়। তরুণ শিক্ষানবীসে সেনারা পালিয়ে যান; তারা স্থানীয়দের কাছে প্রাণভিক্ষা চান এবং তাদেরকে ইউক্রেইনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে না দিতে অনুরোধ জানান।
“তাদের জন্য কষ্ট হয়েছিল আমার। তারা ছিল অল্পবয়সী, ১৮ থেকে ২০ এর মতো বয়স, যাদের পুরো জীবন পড়ে আছে,” বলেছেন নিজেকে আঙ্কেল ঋষা নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ৭০-র কাছাকাছি বয়সী এক ব্যক্তি।
অবশ্য বুচা ছেড়ে যাওয়ার সময় রুশরা যে মোটেও দয়া দেখায়নি, তাই মনে হচ্ছে। ইউক্রেইনীয় বাহিনী যখন শহরটিতে প্রবেশ করে তখন অন্তত ২০ জনের মৃতদের সড়কে পড়ে ছিল বলে তারা দাবি করেছে; মৃতদের অনেকের হাত ছিল পেছন দিকে বাঁধা। শহরটির মেয়র বলছিলেন, ২৮০ জনের লাশ জড়ো করে তারা গণকবরে শুইয়েছেন। রুশ বাহিনী থাকার সময় যে অল্প ক’জন বেসামরিক শহরটিতে ছিলেন তারাও রুশদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। তারা ক্রুশ্চেভ আমলের ফ্ল্যাটের বাইরে কাঠ জ্বালাতেন, বাইরেই রান্না করতেন, কেননা তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবকরা এখন পশ্চিম ইউক্রেইনের লিভভ ও অন্যত্র থেকে তাদের জন্য খাবারসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসছে। “৩৮ দিনে এই প্রথম রুটি খাচ্ছি আমরা,” বলেছেন মারিয়া নামের এক নারী।
কয়েক মাইল দূরে হস্টোমেল বিমানবন্দরেও ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপক চিহ্ন রয়ে গেছে। রাশিয়ার ছত্রীসেনারা এই বিমানবন্দরকে ঘাঁটি বানিয়ে কিইভের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। সেখানেই রাখা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবহন বিমান আন্তোনভ আন-২২৫ ‘ম্রিয়া’। রাশিয়ার গোলায় বিমানটি ধ্বংস হয়ে যায়। বিবিসি জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাদের একজন প্রতিবেদক ওই বিমানঘাঁটি ঘুরে দেখেছে। সেখানে হ্যাঙ্গারে এখনও আন্তোনভ উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আবু সাঈদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা

ইউক্রেইনের বুচায় যত্রতত্র পোড়া রুশ ট্যাংক আর লাশ

আপডেট সময় : ০১:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : কিইভ ঘিরে ফেলে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাতের যে স্বপ্ন রুশ বাহিনী দেখছিল, তার শবাগারে পরিণত হয়েছে ইউক্রেইনের ছোট্ট শহর বুচার একটি রাস্তা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কিইভের উপকণ্ঠে বুচা নামের ওই মফস্বল শহরে পৌঁছে গিয়েছিল রুশ বাহিনী। সেখানে রাশিয়ার ট্যাংক ও সামরিক বাহনের একটি কলাম ইউক্রেইনীয় বাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর এরকম আরও অনেক প্রতিরোধ যুদ্ধে রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা থমকে যায়। পাঁচ সপ্তাহ তুমুল লড়াইয়ের পর ওই এলাকা থেকে সরে গেছে রুশ বাহিনী।
ইউক্রেইনের সৈন্যরা কিইভের আশপাশের পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি কিইভ থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়া। এখন ইউক্রেইনের পূর্ব অংশের যুদ্ধে মনোযোগ বাড়ানোর কথা বলছে মস্কো। ক্রেমলিন বলছে, মধ্য ইউক্রেইনে তাদের বাহিনীর যে লক্ষ্য ছিল, তা ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। কিইভ দখলের কোনো পরিকল্পনাই তাদের ছিল না। তবে বিবিসি লিখেছে, সত্যটা হল, ইউক্রেনীয় বাহিনীর অপ্রত্যাশিত প্রবল ও সুসংগঠিত প্রতিরোধই রুশ বাহিনীকে রাজধানীর বাইরে ঠেকিয়ে দিয়েছে। বুচার রাস্তায় পড়ে থাকা পোড়া এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়া সামরিক যানের দীর্ঘ সারিই তার প্রমাণ। রুশ সৈন্যদের শেষ দলটি গত শুক্রবার ওই শহর থেকে সরে যায়। এরপর বিবিসির সাংবাদিকদের একটি দল সেখানে যায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তারা।
সেখানে বলা হয়েছে, আগ্রাসন শুরুর দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুশ বাহিনী কেন গতি হারিয়েছিল, তার ধারণা পাওয়া যায় বুচার রাস্তার পরিস্থিতি দেখে।
বিমানে করে নিয়ে আসা যায় এমন হালকা সাঁজোয়া যানে চেপে রাশিয়ার ছত্রীসেনারা বুচায় ঢুকেছিল; তারা এসেছিল কয়েক মাইল দূরের হস্টোমেল বিমানবন্দর থেকে; বিশেষ অভিযানের শুরুর দিকেই হেলিকপ্টারে নামা রুশ ছত্রীসেনারা ওই বিমানবন্দরটিতে হামলা চালিয়ে তার দখল নিয়েছিল। অবশ্য তারপর থেকেই তাদেরকে ইউক্রেইনীয় বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধ মোকাবেলা করে যেতে হয়েছে। রুশ সেনাদের কলামটি বুচার দিকে অগ্রসর হওয়ার পরই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়ে। শহরটিতে ঢোকার রাস্তাটি ছিল সোজা, সরু, অতর্কিতে হামলা চালানোর উপযুক্ত।
ইউক্রেইনীয় বাহিনী ওই রুশ বহরের ওপর তুরস্ক থেকে আনা বায়রাকতার অ্যাটাক ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ওই এলাকায় সেসময় ইউক্রেইনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকরা ছিল। ইউক্রেইনীয়দের হামলায় রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, অনেককে আটকও করা হয়। তরুণ শিক্ষানবীসে সেনারা পালিয়ে যান; তারা স্থানীয়দের কাছে প্রাণভিক্ষা চান এবং তাদেরকে ইউক্রেইনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে না দিতে অনুরোধ জানান।
“তাদের জন্য কষ্ট হয়েছিল আমার। তারা ছিল অল্পবয়সী, ১৮ থেকে ২০ এর মতো বয়স, যাদের পুরো জীবন পড়ে আছে,” বলেছেন নিজেকে আঙ্কেল ঋষা নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ৭০-র কাছাকাছি বয়সী এক ব্যক্তি।
অবশ্য বুচা ছেড়ে যাওয়ার সময় রুশরা যে মোটেও দয়া দেখায়নি, তাই মনে হচ্ছে। ইউক্রেইনীয় বাহিনী যখন শহরটিতে প্রবেশ করে তখন অন্তত ২০ জনের মৃতদের সড়কে পড়ে ছিল বলে তারা দাবি করেছে; মৃতদের অনেকের হাত ছিল পেছন দিকে বাঁধা। শহরটির মেয়র বলছিলেন, ২৮০ জনের লাশ জড়ো করে তারা গণকবরে শুইয়েছেন। রুশ বাহিনী থাকার সময় যে অল্প ক’জন বেসামরিক শহরটিতে ছিলেন তারাও রুশদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। তারা ক্রুশ্চেভ আমলের ফ্ল্যাটের বাইরে কাঠ জ্বালাতেন, বাইরেই রান্না করতেন, কেননা তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবকরা এখন পশ্চিম ইউক্রেইনের লিভভ ও অন্যত্র থেকে তাদের জন্য খাবারসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসছে। “৩৮ দিনে এই প্রথম রুটি খাচ্ছি আমরা,” বলেছেন মারিয়া নামের এক নারী।
কয়েক মাইল দূরে হস্টোমেল বিমানবন্দরেও ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপক চিহ্ন রয়ে গেছে। রাশিয়ার ছত্রীসেনারা এই বিমানবন্দরকে ঘাঁটি বানিয়ে কিইভের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। সেখানেই রাখা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবহন বিমান আন্তোনভ আন-২২৫ ‘ম্রিয়া’। রাশিয়ার গোলায় বিমানটি ধ্বংস হয়ে যায়। বিবিসি জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাদের একজন প্রতিবেদক ওই বিমানঘাঁটি ঘুরে দেখেছে। সেখানে হ্যাঙ্গারে এখনও আন্তোনভ উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।