ক্রীড়া ডেস্ক : ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ইউএস ওপেন শুরু করেছিলেন নোভাক জোকোভিচ। ইউএস ওপেন জিতলেই ৫২ বছর পর ক্যালেন্ডার ইয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের কীর্তি গড়বেন তিনি। অস্ট্রেলীয় ওপেন জয় দিয়ে বছর শুরু করা জোকোভিচ জিতেছেন ফ্রেঞ্চ ওপেন আর উইম্বলডনও। ইউএস ওপেন জয়টা তাই তাঁকে ইতিহাসের অংশই বানিয়ে দেবে। ব্র্যাকেটবন্দী করবে ১৯৬৯ সালে বছরের সব গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতা জেতা কিংবদন্তি রড লেভারের পাশে।
ইতিহাস গড়ার পথে শুরুটা প্রত্যাশামতোই হয়েছে টেনিসের এক নম্বর তারকার। সার্বিয়ান তারকা কাল ইউএস ওপেনে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ডেনমার্কের ১৮ বছর বয়সী তরুণ হোলগার রুনেকে ৬-১, ৬-৭ (৫/৭), ৬-২ ও ৬-১ গেমে হারিয়েছেন।
এবার ইউএস ওপেনের ‘হট ফেবারিট’ ধরা হচ্ছে জোকোভিচকে। ৩৪ বছর বয়সী এই তারকা এবার ইউএস ওপেন জিতলে ক্যালেন্ডার ইয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম তো জিতবেনই, জিতবেন নিজের ক্যারিয়ারের ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। এবার তাঁকে ফেবারিট মনে করার মূল কারণ—‘প্রায় খালি মাঠ’। এবার যে তাঁর মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদাল আর রজার ফেদেরার নেই। তরুণেরাও যে জোকোভিচকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারবেন না, সেটিও নয়। রাশিয়ার দানিয়েল মেদভেদেভ, গ্রিসের স্তেফানেস সিৎসিপাস আর অলিম্পিকে সোনাজয়ী জার্মানির আলেকজান্ডার জভেরেভ কিন্তু আছেন। তবে ২০২১ সালে যে জোকোভিচকে দেখা গেছে, তাঁকে টপকাতে মেদভেদেভ-জভেরেভ-সিৎসিপাসদের যে নিজেদের সর্বোচ্চটাই দিতে হবে।
এবার ইউএস ওপেনে জোকোভিচ নেমেছেন গত বছরের দুঃস্বপ্নকে ভুলে গিয়েই। গত মৌসুমে (২০২০) ইউএস ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে দুর্ভাগ্যবশত সার্বিয়ান তারকার ব্যাট থেকে জোরে বেরিয়ে আসা বল আঘাত করেছিল একজন লাইন অফিশিয়ালকে। তিনি বেশ ভালোই আহত হয়েছিলেন। ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক হলেও জোকোভিচকে বেরিয়ে যেতে হয় টুর্নামেন্ট থেকে। সে ঘটনার জের ভুলতেই খুব সম্ভবত এ বছর রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন জোকোভিচ। যেন সবার সামনে নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার তীব্র আকঙ্ক্ষা তাঁর।
তাঁর ক্যারিয়ারের অসাধারণ অর্জন নিয়ে জোকোভিচের ভাবনা খুব পরিষ্কার। তিনি জানিয়েছেন সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলা আর কঠিন পরিস্থিতি সুন্দর করে সামাল দিয়েই তিনি আজ এ অবস্থায় পৌঁছেছেন। তাঁর সাফল্যের রহস্য এটিই। একই সঙ্গে আবেগ ও চাপের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি তো আছেই, ‘আপনার ওপর গোটা টেনিস দুনিয়ার প্রত্যাশার চাপ থাকতেই পারে, এমনকি নিজের চাপিয়ে দেওয়া চাপও থাকবে। যেকোনো বিচারেই আমি সবকিছু জিততে চাইব। আর এ ইচ্ছাই তো এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। আমি সব সময়ই নিজের সেরাটাতে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি প্রতিদিনই। সবচেয়ে বড় কথা অতীত, ভবিষ্যৎ ভুলে গিয়ে সব সময়ই বর্তমানে থাকতে হবে। আবেগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। মানসিকভাবে চাঙা হতে হবে। যখন যে পরিস্থিতি আসবে, সেটিকে সামাল দিতে হবে। এভাবেই উপকৃত হওয়া যায়।’
জোকোভিচের সাফল্যের পেছনে যে গোপন রহস্য আছে, সেটিই জানিয়েছেন তিনি, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমার সাফল্যের পেছনে কোনো গোপন রহস্য নেই। তবে বর্তমানে বিচরণ করা আর সামনে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, সেটিকেই ঠান্ডা মাথায় সামাল দেওয়াটাই আমার সাফল্যের গোপস রহস্য বলতে পারেন।’ ক্যারিয়ারে তাঁর জয় করা ২০ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে তিনটিই নিউইয়র্কের হার্ড কোর্ট জয় করে জেতা—মানে ইউএস ওপেনের শিরোপা। এ ছাড়া ৯টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ২টি ফ্রেঞ্চ ওপেন আর ৬টি উইম্বলডন জ্বলজ্বল করছে জোকোভিচের ক্যারিয়ারে।
ইউএস ওপেনের চতুর্থ শিরোপা হাতছানি দিচ্ছে জোকোভিচকে। টেনিসের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই তারকার এ অর্জন গোটা খেলার দুনিয়ারই যে বড় উদ্যাপনের, সেটি কিন্তু না বললেও চলছে।
ইউএস ওপেন টেনিস ২০২১
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ