ক্রীড়া ডেস্ক : বেশ কিছুদিন ধরেই জাতীয় দলের দুয়ারে কড়া নাড়ছিলেন জশ ইংলিস। সেই দুয়ার খুলে গেল বিশ্বকাপ দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে গেলেন সাম্প্রতিক সময়ে তুমুল আলোচিত এই আগ্রাসী কিপার-ব্যাটসম্যান।
গত মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নজর কাড়েন ইংলিস। তবে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ায় বড় ভূমিকা রেখেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স। চলতি টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট ও দা হানড্রেড-এ ২৬ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান যেন বোলারদের জন্য আতঙ্ক। অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর এখন পুনর্বাসনে থাকলেও তার নেতৃত্বেই ঘোষণা করা হয়েছে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড। চোটের কারণে সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ সফরে না থাকা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথও আছেন দলে। ব্যক্তিগত কারণে এই দুই সফরের দল থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া ক্রিকেটারদের দুজন ছাড়া সবাই ফিরেছেন বিশ্বকাপ দলে। সেই দুজন হলেন দুই পেসার জাই রিচার্ডসন ও ড্যানিয়েল স্যামস। অবশ্য স্যামস বিশ্বকাপে যাচ্ছেন অতিরিক্ত হিসেবে। গত বিগ ব্যাশের সফলতম বোলার জাই রিচার্ডসনের জায়গা না পাওয়া খানিকটা চমক জাগানিয়াই।
ইংলিসের ডাক পাওয়া অবশ্য সেই অর্থে চমক নয়। তাকে জাতীয় দলে নেওয়ার কথা বেশ কিছুদিন ধরেই উঠছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে। সেটি তার ব্যাটিং ও কিপিং দক্ষতার কারণেই। ওপেনিং থেকে মিডল অর্ডারের সব জায়গায় তিনি ব্যাট করতে পারেন। প্রথাগত শটের পাশাপাশি স্কুপ, রিভার্স স্কুপ, র্যাম্পের মতো শট খেলেন নিয়মিত। তার কিপিংও দুর্দান্ত। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডেই। ক্রিকেট শিক্ষাও নিয়েছেন ইয়র্কশায়ারের একাডেমিতে, খেলেছেন কাউন্টি দলটির বয়সভিত্তিক বিভিন্ন স্কোয়াডে। পরে তার বাবা-মা অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হলে তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়েই খেলার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সেই স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হলো। ইংল্যান্ডের চলতি টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে তিনি এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোরার। ১৪ ইনিংসে ৫৩১ রান করেছেন ২ সেঞ্চুরিতে। গড় ৪৮.২৭, স্ট্রাইক রেট ১৭৫.৮২। দা হানড্রেড-এ যদিও এতটা বিধ্বংসী হতে পারেননি। তার পরও এখনও পর্যন্ত ১৩৬.২২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৭৩ রান। দল ঘোষণার আগের দিনই খেলেছেন ৪৫ বলে ৭২ রানের ইনিংস। এসবের আগেই তিনি মাতিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সবশেষ মৌসুমে সব সংস্করণেই। বড় দৈর্ঘ্যের আসর শেফিল্ড শিল্ডে ৮ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরিতে ৫৮৫ রান করেছেন ৭৩.১২ গড়ে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ছাপ রাখেন এখানেও, স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৫.০২! এছাড়াও ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্টে ৫ ইনিংসে ২০৯ রান করেছেন ৪১.৮০ গড় ও ১২৩.৬৬ স্ট্রাইক রেটে। বিগ ব্যাশে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে রান ৪১৩।
সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার স্ট্রাইক রেট ১৫১.৬১। তবে ধারাবাহিক এই পারফরম্যান্সের পাশাপাশি তার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ায় বড় ভূমিকা আছে আরেকটি দক্ষতার। স্পিন বোলিং খেলায় দারুণ সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন তিনি নানা সময়ে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যা কাজে লাগতে পারে প্রবলভাবে। এই সামর্থ্যের কারণে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিং আরও মাস তিনেক আগেই বলেছিলেন, স্পিন ভালো খেলার কারণে ইংলিসকে বিশ্বকাপ দলে রাখা উচিত। অবশ্য ইংলিসের দলে জায়গা পাওয়ায় ভূমিকা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ সফরে অ্যালেক্স কেয়ারির ব্যর্থতার। এই দুই সফরের ব্যাট হাতে ভালো না করলেও টিকে গেছেন ম্যাথু ওয়েড। ওয়েডের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফরে আসা দলটির ১৭ জনের ১০ জনই জায়গা পাননি বিশ্বকাপ দলে। তাদের মধ্যে কেয়ারি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য নাম অ্যান্ড্রু টাই, জেসন বেহরেনডর্ফ, জশ ফিলিপি, মোইজেস হেনরিকেস ও অ্যাশটন টার্নার। বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে হ্যাটট্রিকের পর শেষ ম্যাচেও ভালো পারফর্ম করা পেসার ন্যাথান এলিস এবং সফরে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র জয়ের নায়ক ড্যান ক্রিস্টিয়ানও জায়গা পাননি মূল স্কোয়াডে। তবে পুরস্কার পেয়েছেন তারা ভিন্নভাবে। বিশ্বকাপে যাচ্ছেন তারা অতিরিক্ত ক্রিকেটার হিসেবে। মহামারীর সময়ে বিশ্বকাপে মূল স্কোয়াডের ১৫ জনের বাইরে ক্রিকেটার রাখার সুযোগ দিয়েছে আইসিসি। তবে তাদেরকে রাখতে হবে দলগুলির নিজেদের খরচেই। অস্ট্রেলিয়া বাড়তি নিয়ে যাচ্ছে স্যামস, এলিস ও ৩৮ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানকে।
অস্ট্রেলিয়া দল : অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), অ্যাশটন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স (সহ-অধিনায়ক), জশ হেইজেলউড, জশ ইংলিস, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কেন রিচার্ডসন, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস, মিচেল সোয়েপসন, ম্যাথু ওয়েড, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যাডাম জ্যাম্পা।
সফরসঙ্গী অতিরিক্ত : ড্যান ক্রিস্টিয়ান, ন্যাথান এলিস, ড্যানিয়েল স্যামস।
ইংল্যান্ডে ঝড় তুলে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে ইংলিস
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ