প্রযুক্তি ডেস্ক: ইঁদুরের মুখ দেখে এদের মনের ভাব পড়তে পারার দাবি করলেন বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, কেবল ভিডিও দেখে মস্তিষ্কের কাজ বোঝা সম্ভব। এ গবেষণা মস্তিষ্কের কাজ বুঝতে ও সমস্যা খুঁজে বের করতে অনেক নতুন পথ খুলে দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। তবে একই সঙ্গে, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, এর মাধ্যমে মানুষের মনের গোপন তথ্যও অন্য কেউ জানতে পারবে, যা কারো মধ্যে ‘প্রাইভেসি’ হারানোর ভয়ও তৈরি করতে পারে।
পর্তুগালের ‘চ্যাম্পালিমাউড ফাউন্ডেশন’-এর একজন প্রধান গবেষক ও লেখক জ্যাখারি মাইনেন বলেছেন, আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, ইঁদুর কী ‘ভাবছে’ তা আমরা যতটা বুঝতে পারি ডজনখানেক নিউরনের কার্যকলাপ রেকর্ড করে ঠিক ততটাই তথ্য আমরা কেবল এদের মুখের দিকে তাকিয়েই পেতে পারি। মনের ভেতরের লুকানো বিভিন্ন বিষয় এভাবে সহজে জানার সুযোগ মস্তিষ্কের গবেষণায় বড় ধরনের অগ্রগতি আনতে পারে। তবে কারো মুখ দেখেই তার মনের ভাব বোঝার বিষয়টি প্রযুক্তির দারুণ অগ্রগতি হলেও এতে ব্যক্তিগত প্রাইভেসি হারানোর ভয় রয়েছে। ফলে আমাদের এখনই মানসিক প্রাইভেসি রক্ষার জন্য কিছু নিয়ম-কানুনের ওপর নজর দেওয়া উচিত।
এক ধাঁধার মাধ্যমে এ গবেষণাটি করেছেন গবেষকরা, যেখানে ইঁদুরদের নিজস্ব কৌশল তৈরি করতে হয়েছে যে, দুইটি পানির নলের মধ্যে কোনটি থেকে এরা চিনি মেশানো পানি বেছে নেবে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখেছেন, ইঁদুর কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, এরা ভবিষ্যতের সম্ভাবনা কীভাবে বোঝে এবং মুখের হাবভাব বা অভিব্যক্তির বিষয়টি এদের মনের চিন্তার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত হতে পারে। এক্ষেত্রে ইঁদুরদের মুখের নড়াচড়া ও এদের মস্তিষ্কে নিউরনের কার্যকলাপ– দুটোই রেকর্ড করেছেন গবেষকরা। এরপর তারা এসব তথ্য মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করেছেন।
গবেষণা দলটি বলেছে, কেবল মুখের ভিডিও দেখেই ইঁদুর কোন কৌশল ব্যবহার করছে তা ঠিক ততটাই ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে, যতটা বোঝা যায় মস্তিষ্কের নিউরনের রেকর্ড থেকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মস্তিষ্ক বুঝতে নতুন এক উপায়ে সাহায্য করতে পারে এই পদ্ধতি, যেখানে আর মস্তিষ্ক স্ক্যান করার জন্য জটিল, সার্জারি বা দামী যন্ত্রপাতির দরকার হবে না। তবে গবেষকরা এ-ও বলেছেন, এখন যেহেতু অসংখ্য ভিডিও রেকর্ডিং ও মেশিন লার্নিং টুল সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে ফলে আমাদের নিজেদের ভাবনার প্রাইভেসি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হতে পারে।
এক বিবৃতিতে গবেষণার লেখক আলফোনসো রেনার বলেছেন, আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ভিডিও কেবল কারো আচরণের রেকর্ড নয়, বরং এগুলো মস্তিষ্কের কার্যকলাপের দিকেও গভীরভাবে নজর দেওয়ার এক দুয়ার খুলে দিতে পারে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর। তবে একই সঙ্গে এটি আমাদের ব্যক্তিগত প্রাইভেসি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
‘ফেইশল এক্সপ্রেশন ইন মাইস রিভিল লেটেন্ট কগনিটিভ ভ্যারিয়েবলস অ্যান্ড দেয়ার নিউরাল কোরলেটেস’ শিরোনামে গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার নিউরোসায়েন্স’-এ।
সানা/ওআ/আপ্র/০৩/১০/২০২৫