নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে গণমানুষের মুক্তির জন্য, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য। বঙ্গবন্ধু যে নীতি-আদর্শের ওপর এই দল পরিচালনা করেছিলেন, সেখান থেকে এখন দলটির বিচ্যুতি ঘটেছে। আওয়ামী লীগ একটা সময় গণমানুষের দল ছিল, সেই অবস্থান পুনরায় অর্জন করতে আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শে ফিরে যেতে হবে।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদাতা দল আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কথাগুলো বলছিলেন রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনরা। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। দীর্ঘ পথচলায় রক্তের আখরে লেখা দলটির সংগ্রাম ও সাফল্যের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাসহ অগণিত নেতাকর্মীর আত্মদানে সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ। লক্ষ্য একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠন ও বিশ্বের বুকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ এ রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন। নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে গড়ে তোলেন ‘গণফোরাম’ নামে আলাদা দল।
ড. কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সারাজীবন কেটেছে গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছি। মানুষের ভালোবাসা দেখেছি আওয়ামী লীগের প্রতি। অথচ, এই ভালোবাসা এখন কল্পনা করা যায়? কোথায় ভোট আর ভাতের অধিকার? আওয়ামী লীগ তার আদর্শ থেকে এখন বহু দূরে। এই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর নয়।’
‘আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শের ধারায় ফিরে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দল পরিচালিত হচ্ছে। সেই নীতি-আদর্শে আওয়ামী লীগ ফিরে গেলে তবেই আগের মতো মানুষের ভালোবাসা পাবে আওয়ামী লীগ’— বলেন ড. কামাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখনো তুঙ্গে। তবে রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে দলটির, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
তিনি বলেন, ‘১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা ছিল বাস্তবতা আর বিশেষ আদর্শের ভিত্তিতে। ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরোধী অবস্থান নিয়েই আওয়ামী লীগ রীতিমত গণমানুষের দলে রূপ পায়। আমরা বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগকে সমানতালে জনপ্রিয় হতে দেখেছি আদর্শের কারণেই। অথচ আওয়ামী লীগ সে আদর্শ থেকে এখন বহুদূরে।’
ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলেন, ‘বাস্তবতার নিরিখে একটি দলের নীতিতে সংযোজন-বিয়োজন হতেই পারে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের মতো সংগঠনের সঙ্গে আপস করা কোন ধরনের বাস্তবতা, তা অবশ্যই ভাববার আছে। হেফাজতের কারণে পাঠ্যবই থেকে ১৭টি রচনা বাতিল করা হলো। আধুনিক শিক্ষার বালাই না থাকলেও কওমি শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি পাসের সনদ দেয়া হলো। সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকেই রাখা হলো। এসব আওয়ামী লীগের আদর্শের সঙ্গে যায় না। অথচ আওয়ামী লীগের কাছে ধর্মনিরপেক্ষ নীতির প্রত্যাশা একটু বেশি-ই।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপার্চায অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে দীর্ঘদিন দল পরিচালনা করে গেছেন, বলতে গেলে মৃত্যুর আগমুহূর্ত র্পযন্ত যেভাবে দল পরিচালনা করে গেছেন, আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই পথ অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। আওয়ামী লীগের যে প্রাক্তন শক্তি সেটা জনগণ। জনগণের দল আওয়ামী লীগ। জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে সম্পৃক্ততা সেটা বজায় আছে বলেই শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে নানা ধরনের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
‘আজকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রাচীনতম দল। আওয়ামী লীগ থেকে সবসময় একটা উদ্যোগ থাকবে, যেন সকল রাজনৈতিক দলের মাঝে সত্য ও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সত্য ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না, তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। যারা রাজনীতি করবে তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে। এটাই স্বাভাবিক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
আ.লীগকে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শে ফিরে যেতে হবে’ :ড. কামাল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ